Saturday, August 31, 2013

স্ট্যাটাস আপডেট--২



    1. **রাবীন্দ্রিক প্রেম**

      আজ কদিন ধরেই মাথায় শুধু ঘুরছে রবীন্দ্রনাথ। মনে পড়ে, যৌবনে আমরা সবাই রবীন্দ্রনাথের প্রসঙ্গ উঠলেই বলতাম, " বুড়ো বড়ই রসিক ছিল, পুরো প্রেমকুমার। কাদম্বরী দেবী তো আছেনই, প্রিয়ম্বদা, ইন্দিরা দেবী, ওকাম্পোসহ আর কত নারীর প্রেমেই তো উনি মজেছিলেন"।
      এটি ছিল তরুণ বয়সের তরুণী ভাবনা।

      আজ পরিণত বয়সে মনে হচ্ছেঃ
      'রাবীন্দ্রিক প্রেম' হচ্ছে আসল প্রেম, এই প্রেমে বয়স কোন ম্যাটার করেনা, পারস্পরিক সম্পর্ক কোন ম্যাটার করেনা, প্রে্মের জন্য সাবজেক্ট কোন ম্যাটার করেনা, বিবাহিত/ অবিবাহিত স্ট্যাটাসও ম্যাটার করেনা।
      রাবীন্দ্রিক প্রেম মানে, 'তাহার' জন্য 'বিশুদ্ধ , নির্মল, ভালোবাসা ও মমতাময়' অনুভূতি! এই অনুভূতিতে থাকে পাগলা এক টান! যে অনুভূতিতে কোন স্বার্থ চিন্তা থাকেনা, কোন দাবী থাকেনা, অন্যায় ভাবনা থাকেনা, তাই অপরাধবোধও থাকেনা। যে কোন বয়সে, যে কারো জন্য হৃদয়ের গভীরে এই অনুভূতি জাগতেই পারে। মানুষের হৃদয় তো আর ছোট্ট ধূলিকণা নয় যে এক হৃদয়ে একজনের বেশী আর কারো স্থান সংকুলান হবেনা। এত বড় একটি হৃদয়ে কতজনের জন্যই ভালোবাসা সঞ্চিত থাকতে পারে, তারা হতে পারে পিতা-মাতা, হতে পারে স্বামী/স্ত্রী, হতে পারে সন্তান, হতে পারে 'আর কেউ'! এমনকি কারো কারো জীবনে 'ঈশ্বরও' হতে পারেন সেই 'আর কেউ'!

      প্রেমে সফলতা বলে কি কোন ব্যাপার আদৌ আছে? পাওয়ার আরেক নামই তো সাফল্য! কোন কিছু পাওয়া হয়ে গেলে কি তার জন্য সত্যিকারের কোন টান থাকে? আসলে সত্যিকারের প্রেমের সার্থকতা নিহিত থাকে না-পাওয়ার মাঝে। কারণ, যা কিছু হাতের নাগালে চলে আসে, তা আর মহার্ঘ্য থাকেনা, সহজলভ্য হয়ে যায়। সম্পর্কের মাঝে স্বার্থচিন্তা ঢুকে পড়ে। তা তখন আর প্রেম থাকেনা।
      এইজন্যই রবি এবং নতুন বৌঠানের সম্পর্ক পৃথিবীর আর কোন সম্পর্কের সাথে তুলনীয় নয়। তাদের সম্পর্ক ছিল একেবারে অন্যরকম, সে সম্পর্কে কোন মলিনতা ছিলনা, কোন কাঙালীপনা ছিলনা, কোন হিংসা-দ্বেষ, জিঘাংসা জাতীয় কোন ব্যাপারও ছিলনা। তাই একজন 'নতুন বৌঠানের' অপমৃত্যুতে একজন 'প্রেমিক কবি'র হৃদয় ভেঙ্গে চৌচির হতে পারে, একজন কবি নতুন সৃষ্টির নেশায় উজ্জিবীত হতে পারে! রবীন্দ্রনাথের যা কিছু অমর সৃষ্টি, তার শুরুই হয়েছে 'নতুন বৌঠানের' বিয়োগান্তক বিদায়ের পর থেকে।

      নতুন বৌঠানকে রবি কি যে ভালোটাই না বাসতেন, সেখানে শুধুই নিষ্কলুষ ভালোবাসা ছিল, কাব্যচর্চা ছিল, নতুন নতুন কবিতার ফুলঝুরি ছিল, স্বার্থহীন ভালোবাসা ছিল। এইজন্যই এতবড় মর্মান্তিক বিচ্ছেদের পরেও জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত কবির হৃদয়ের একটি কোনে 'নতুন বৌঠান' ঘুমিয়ে ছিলেন।

      বিবাহিত স্বামী-স্ত্রীর সম্পর্কে স্বার্থচিন্তা থাকে, কর্তব্যবোধের ব্যাপার থাকে, ভালোবাসা থাকে, স্নেহ-মমতাও থাকে, কিন্তু প্রেমটুকুই শুধু থাকেনা। যেমন ছিলনা রবীন্দ্রনাথ ও মৃনালিনী দেবীর মধ্যে। মৃনালিনী দেবীর প্রতি রবীন্দ্রনাথ দারুণ দায়িত্বশীল ছিলেন, পরম মমতাশীল ছিলেন, মৃনালিনী দেবীও তাঁর স্বামীর প্রতি কর্তব্যপরায়ণ ছিলেন, মমতাময়ী ছিলেন, কিন্তু দু'জনের সম্পর্ক 'প্রেমময়' ছিলনা। অথচ রবীন্দ্রনাথ ছিলেন ভীষণ প্রেমময় পুরুষ, কি রূপে, কি মেধায়, কি বিনয়ে, কি ভালোবাসায়!!

      রবীন্দ্র থেকে এবার আসি আমাদের কথায়, অনেক স্বামী/ স্ত্রীকে আফসোস করে বলতে শোনা যায়,
      " ও বিয়ের আগে একেবারেই অন্যরকম ছিল, কি রোমান্টিক ছিল, আর বিয়ে হতে না হতেই আসল রূপ বেরিয়ে এসেছে। প্রেম করার সময় কেমন ভেজা বেড়াল হয়ে থাকতো, যেন আমাকে ছাড়া সে আর কিছুই বুঝেনা, এখন সে সবই বুঝে, শুধু আমাকে বুঝেনা"।

      আসলে বিয়ের পর, স্বামী স্ত্রীর সম্পর্ক হয়ে যায়, 'পরম নির্ভরতা, পরম আশ্বাস, পরম বিশ্বাস, পরম ভরসার। এখানে ভালোবাসা থাকে পূর্ণ মাত্রায়, কিন্তু 'রাবিন্দ্রিক প্রেম' থাকেনা।
      এইজন্যই একজন স্বামী বা একজন স্ত্রী, সহধর্মী/সহধর্মীণির চোখের ভাষা পড়তে ব্যর্থ হয়।
      আর প্রেমে ব্যর্থ প্রেমিক-প্রেমিকাদের প্রায় সকলেই প্রেমে ব্যর্থ হয়ে ভাবে, জীবনটাই মূল্যহীন হয়ে গেল! আসলে তারা জানেইনা, প্রেমে ব্যর্থ হয়েছে বলেই কি অমূল্য সম্পদ, সারা জীবনের জন্য হৃদয়ে ধারণ করে রাখলো। এই অমূল্য সম্পদ শুধু তারই হয়ে থাকলো, কেউ ভাগ বসাতে আসবেনা। মাঝে মাঝেই 'তাহার' কথা মনে পড়বে, রাবীন্দ্রিক ভালোবাসায় বুকের গভীরে সূক্ষ্ম ব্যথা অনুভূত হবে, দুই চোখে জলের ধারা নামবে, মনে পড়ে যাবে, আমারও 'সে' ছিল, 'সে' এখনও শুধু আমারই আছে। হৃদয়ের এক কোনে, একজনের জন্য, অথবা আরও বেশী কারো জন্য একটু 'আলাদা' স্থান রেখে দেয়া, মাঝে মাঝে হৃদয়ের বাক্স খুলে সেই কুঠুরীগুলোতে নরম চোখে তাকানো, ভীষণ মন কেমন করা অনুভূতি, এটাই প্রেম, শুদ্ধভাবে বলতে হলে বলা যায়, এটিই 'রাবীন্দ্রিক প্রেম!!!
      Like · · Promote ·
        
       
       
      ' কোথাও কেউ নেই' নাটকে বদি বলেছিল, " বাকের ভাই, আমার বউ গান জানে, তবে রবীন্দর সঙ্গীত, প্যানপ্যান প্যানপ্যান"--ডায়লগটা আমার খুবই মনে ধরেছিল, কারণ আমার নিজের কাছেও মনে হতো, রবীন্দ্র সঙ্গীত হচ্ছে প্যানপ্যানানি সঙ্গীত।
      দেড় যুগ পরে এখন মনে হয়,
      রবীন্দ্র সঙ্গীত অন্যের কন্ঠে শুনে আনন্দ নেই, যত আনন্দ নিজ কন্ঠে গেয়ে পাওয়া যায়[ নিজে গাইলে রবীন্দ্র সঙ্গীতের গভীরে পৌঁছা যায়]
      আর আধুনিক গান অন্যের কন্ঠে শুনে যত আনন্দ পাওয়া যায়, নিজ কন্ঠে গাইলে তার অর্ধেকও পাওয়া যায়না। [মিঠু'স ল্যাবে পরীক্ষিত ]
      Like · · Promote ·


      ট্যাটুওয়ালী!

      ঘটনাটি গত শুক্রবার রাতের। আমার ছিল ক্লোজিং শিফট, রাত সাড়ে নয়টায় আমার ডিপার্টমেন্ট ক্লোজ করে ওয়ালমার্ট থেকে বের হয়েছি। বাসা থেকে ওয়ালমার্ট মাত্র চার মাইল, গত পাঁচ বছর ধরে এই চার মেইল রাস্তা আমিড্রাইভ করি, সেই থেকে আমার নাম 'চাইর মাইল্যা ড্রাইভার', আমার নিজের দেয়া নাম।
      আমি কোন প্রশিক্ষকের কাছে ড্রাইভিং শিখিনি, এখানেই মস্ত ভুল হয়ে গেছে। ড্রাইভিং শিখেছি আমার উত্তম কুমারের কাছে। উত্তম কুমার খুব ঠান্ডা মাথার মানুষ, ধীর-স্থির, কাজেই তার কাছে ড্রাইভিং শেখা নিরাপদ মনে করেছিলাম। আমি তো ড্রাইভিং এর কিছুই জানতামনা, তাই উত্তম যা বলেছে, সেটাকেই বেদবাক্য হিসেবে মনে করেছি। সে বলেছে, " লেইন চেঞ্জ করা শিখতে হবেনা, ওভারটেক করার দরকার নেই, ধীরে সুস্থে গাড়ী চালিয়ে ওয়ালমার্ট টু বাসা করবে, এত লেন চেঞ্জের দরকার কি"?"
      আমি উত্তমের কাছে শুধু শিখেছি, ট্রাফিক লাইট যতক্ষণ 'সবুজ' না হয়, বসে থকবে স্টপ সাইনে, যদি ডানে মোড় নিতে হয়, 'লাল' সিগন্যালেও নেয়া যায়, যদি অন্য পাশ থেকে কোন গাড়ী না আসে, কিন্তু তোমার অত 'ক্যারদানী' না দেখালেও চলবে। লাল লাইটেও তুমি ডান দিকে টার্ণ নিবেনা, অপেক্ষা করবে গ্রীনের জন্য।"
      বলেছি, " হাইওয়েতে চালাবোনা"?
      সে বলে, " ইস! এই চার মাইল রাস্তাই ঠিক মত চালান আগে, হাইওয়ের দরকার নাই"।
      প্রথম তিন বছর উত্তমের নির্দেশ মেনেই চলেছি, এবং তা করতে গিয়েই একসময় আবিষ্কার করলাম, আমি 'চাইর মাইল্যা ড্রাইভার'। ততদিনে রাস্তাঘাট আমার কাছে 'জলবৎ তরলং' ব্যাপার হয়ে গেছে, অর্থাৎ 'পানির লাহান সোজা'। নিজে নিজে 'ক্যারদানী' শুরু করলাম। নিজে নিজেই লেইন চেঞ্জ করতে শিখলাম, সামনের 'ঢিক্কুস গাড়ী'কে গ্রীন সিগন্যালে বসে থাকতে দেখলেই 'প্যাঁক দিতে শিখলাম, রেড লাইটেই চট করে রাইট টার্ণ নিতে শিখলাম, গ্রীণ লাইটে উলটো দিক থেকে গাড়ী আসছে দেখেও 'কুইক লেফট টার্ণ নিতে শিখলাম, স্পীড বাড়ীয়ে গাড়ী চালাতে শিখলাম, মানে চার মাইল রাস্তায় নিজেকে 'রাণী' ভাবতে শুরু করলাম। 'হাইওয়েতে' চালাতে দেয়না বলে আর কোন দুঃখ রাখলামনা মনে।

      শুক্রবার রাতে ওয়ালমার্টের রাস্তা থেকে ডানে টার্ণ নিয়ে হাইওয়ে ৪৫ এ উঠবো, নাক বরাবর 'রেড লাইট' জ্বলছে, অন্য পাশ থেকে সাঁই সাঁই করে গাড়ী ছুটে যাচ্ছে, শুক্রবার তো, তার উপর লং উইকেন্ড, আমার ধৈর্য্য ধরে আর বসে থাকতে ইচ্ছে করছিলনা, কিন্তু কিছু করার নেই, আমার ট্রেইনার বলেছে, বেশী ক্যারদানী না দেখাতে। আমি গ্রীন লাইটের অপেক্ষায় আছি, দেখি, বামপাশে আর কোন গাড়ী দেখা যাচ্ছেনা, একটি ছাড়া। সেই একটি গাড়ী ইন্ডিকেটা দিয়েছে ওয়ালমার্টের দিকে। আমি আমার 'ঢাউস ভ্যান' টাকে ডানে টার্ণ করাতেই আমার কান ফাটানো, পিলে চমকানো হর্ণ বাজিয়ে একটি গাড়ী আমার ভ্যানের চেয়ে আট হাত দূর দিয়ে পাস করে গেলো। আমার পা অটোমেটিক ব্রেইকে চলে গেছে, ভ্যান থেমে গেছে।

      ভুলটা আমিই করেছিলাম, ওয়ালমার্টের দিকে যে গাড়ীটা যাচ্ছিল, তার পেছনেই ছিল 'হর্ণ' বাজানো গাড়ী, অ্যাকসিডেন্ট হলে হতেও পারতো, আবার নাও হতে পারতো। এর চেয়েও বাজেভাবে এখানের মানুষ গাড়ী চালায়। তারপরেও নিজেই নিজের ভুল বুঝতে পারলাম, কিন্তু বুকের ধুকপুকুনী আর থামেনা। কিন্তু আমি হর্ণ বাজানোটা লাইক করিনি, মানুষ মাত্রেই ভুল করে, আমিও নাহয় 'মাইনর' ভুল করেছি, তার জন্য এভাবে হর্ণ বাজাবি? মনটা খারাপ করে ঢাউস ভ্যানের অ্যাকসেলারেটারে আলতো চাপ দিলাম, গাড়ী এগোতে শুরু করলো। তাকিয়ে দেখি আমার সামনের আছে সেই 'হর্ণোয়ালা ' গাড়ী। বুক তখনও ধুকপুক করছে, যদি অ্যাকসিডেন্ট হয়ে যেত ভেবে! সামনের গাড়ীটা মাঝপথেই থেমে গেল, আমি লেন পালটে চলে যেতে পারতাম, কিন্তু যাইনি, আমার গাড়ীও থামিয়ে ভাবছিলাম,
      " চান্দু, মাঝ রাস্তায় গাড়ী থামিয়ে রেখেছো, এখন আমি যদি হর্ণ দেই, তখন কি হবে?"
      গাড়ীর দরজা খুলে নেমেছে এক মহিলা, রাস্তার আলোতেই তার সারা গায়ের 'ট্যাটু' দেখা যাচ্ছে, শর্টস এন্ড ট্যাংটপ, পায়ে স্পোর্টিং শু, মাথার চুল লম্বা কিন্তু এলোমেলো। আমার কপাল ভালো যে আমি হর্ণ বাজাইনি। মহিলা আমার গাড়ীর দিকে এগিয়ে আসছিল, তার হাঁটার ভঙ্গী দেখেই আমার গলা শুকিয়ে গেছে। সে কিছুদূর এসে আমাকে গালিগালাজ করতে লাগলো [ তার হাত ও মুখের ভঙ্গী দেখেই বুঝে গেছি, গালি দিচ্ছে, এবং কি গালি দিচ্ছে , সেটাও বুঝে গেছি। তখন তো খুব ভয়ে পেয়েছিলাম, তাই তার গালির অসারতা নিয়ে মনে মনে হাসতে পারছিলামনা, আরে, গালি দিলেই হলো, গালি কার্যকরের ব্যাপার আছেনা? ]। গাড়ীর আরেক পাশের দরজা খুলে বের হলো আরেক 'ট্যাটুরাজ'। তবে সে কিছু করছিলনা, গাড়ীর ভেতরে থেকে হয়তো সঙ্গীনির দাপট দেখতে পারছিলনা।
      যাই হোক, আমার মাথায় চট করে এসে গেলো, এই মহিলার প্যান্টের পকেটে 'পিস্তল' থাকা অসম্ভব নয়, এগুলি হচ্ছে 'জাত খারাপ' মানুষ। সেদিন পুলিশ এসেছিল আমাদের ডিপার্টমেন্টে, একটা রক্তমাখা মোবাইল নিয়ে, রাস্তায় ঝগড়া লেগে একজন আরেকজনকে গুলী করে পালিয়ে গেছে, মোবাইল নিয়ে এসেছিল ফোন কোম্পাণীর সাথে যোগাযোগ করার জন্য বোধ হয়।

      আমি দুই হাত জোড় করে 'নমস্কার' এর ভঙ্গী করে রাখলাম। দেখি ট্যাটুরাণী গালি বন্ধ করে গাড়ীর ভেতর ঢুকে গেছে। আমি হাঁফ ছাড়লাম, কিন্তু সামনের গাড়ী আমাকে ছাড়লোনা। তিন মিনিট রাস্তা আটকে দাঁড়িয়ে থাকলো, আমি ইচ্ছে করলেই লেন চেঞ্জ করে যেতে পারি, কিন্তু মনের ভেতর থেকে কেউ বললো, ' লেন চেঞ্জ করিসনা, তুই যাবি, আর ঐ বান্দরী তোর গাড়ীর চাকা বরাবর গুলী করে দিবে, নাহলে তোর গাড়ীর নাম্বার টুকে ৯১১ কল করে তোর নামে বিচার দিবে"। আমি পুলিশ ভয় পাই, আমি গুলীও ভয় পাই, আর এই ট্যাটুওয়ালা/ওয়ালীদেরও ভয় পাই। এরপর সে গাড়ী ১০মাইল/ঘন্টা বেগে যাচ্ছে, কেমনটা লাগে তখন? আমি এর পেছন পেছন যাচ্ছি, দেখি তার সামনের একখানি ভ্যান হঠাৎ করে সাইডে দাঁড়িয়ে গেলো, মহিলা এগিয়ে গেল, আমি তার পেছনে পেছনে যাওয়ার সময় বাধ্য হয়ে সেই ভ্যানটাকে পাশ কাটিয়ে যেতেই আয়নাতে দেখি সেই ভ্যান আমার পিছু নিয়েছে।
      " কিসের মধ্যে পড়লামরে বাবা! উত্তম কুমারকে ফোন করার প্রশ্নই আসেনা, নিজের জান দিব, তবুও উত্তমের জান দিতে দেবোনা! এক সুচিত্রা গেলে আরেক সুপ্রিয়া আসে, কিন্তু এক উত্তম গেলে সৌমিত্র দিয়ে উত্তমের স্থান পূরণ হবেনা।"

      একটু ফাঁকাতে গিয়েই ট্যাটুওয়ালী তার গাড়ী আবার থামিয়ে দিল, এইবার আমার মাথা ঝিম ঝিম করে উঠলো, আমার ভ্যান যতই ঢাউস মার্কা হোকনা কেন, আমার আত্মাটা তো ঢাউস মার্কা নয়, একেবারেই 'ডরপুক' আত্মা আমার, এই ধরণের পরিস্থিতিতে আমি চুপ করে থাকি, ভাবটা এমন যেন কেউ মেরে ফেলতে চাইলে আমি মরে যাব, কোন প্রতিরোধ আসবেনা। যাই হোক, এমনও হতে পারে, ট্যাটুওয়ালী আমাকে নিয়ে মজা করেছে, নাহয়তো তার গাড়ীটা হয়তো গড়বড় করছিল। আমার খালি মনে হচ্ছিল, " পড়তি বাংলাদেশের ট্রাক ড্রাইভারের কবলে, তোরে সহ তোর গাড়ী চ্যাপ্টা করে দিত। একটু ভুল করেছি, এমন কিছু ভুলও নয়, তারপরেও তুই যা তামশা করতেছিস, কেন যে চাচ্ছিস আমি যেন তোকে পাশ কাটিয়ে যাই, তুই কি জানিস যে ভীতু হলেও বাঙ্গালী বহুত সেয়ানা, তোমার চাল বুঝে গেছি, তুমি যাও ঢিপিস ঢিপিস, তোমারই পার্টিতে যেতে দেরী হয়ে যাচ্ছে, আমার কি? কিসের মধ্যে যে পড়লাম"!!

      ক্লান্ত হয়ে ট্যাটুওয়ালী শেষ পর্যন্ত অন্য রাস্তায় চলে গেল, যাওয়ার আগে আরেকটা হর্ণ দিয়ে যেতে ভুললোনা। আমার তখন কি আনন্দ, যমদূত চলে গেছে ভেবে, শুধু পেছনের ভ্যানটার মতি গতি বুঝতে পারছিলামনা। এক সময় ভ্যানটাও ট্যাটু গ্যাছে যেপথে, সেপথেই চলে গেলো। বাড়ী ফিরে এসে কোন টুঁ টা শব্দ করলামনা। মিথীলা আমাকে খেতে ডাকে, আমি বলি, খাবনা , খিদে নেই। কম্পিউটারে বসলাম, আঙ্গুল কাঁপে, টাইপ করতে পারিনা, মাথায় কিছু লেখাও আসেনা, বার বার মনে হচ্ছিল, এখানে এভাবেই যখন তখন, যার তার হাতে, যে কারো প্রাণ বাঁধা থাকে। ঐ মহিলার মাথা ঠিক ছিল কিনা কে জানে! এই দেশে মানসিক রুগীরা কত কিছুই তো ঘটিয়ে ফেলে।

      উত্তমকে ভয় পাই, এইসব ক্যারদানী করতে সে না করেছে, তারপরেও 'চাইর মাইল রাস্তার রাণী' সাজতে গেছিলাম। উত্তমের একটি গুণের কথা না বললেই নয়, যে কোন বিপদে পড়লে তার কাছে গিয়ে বিপদের কথা বললেই হলো, খুব ঠান্ডা মাথায় 'অভয় বাণী' শোনাবে। যদি ভুল করে কাউকে খুনও করে এসে বলি, আমি খুন করে এসেছি, সে খুব ঠান্ডা মাথায় ধীরে ধীরে বুঝিয়ে দিবে, ভুল তো মানুষেই করে, ভুল মানুষেই শুধরে নেয়, ভুল শুধরাবার উপায় এমন সুন্দর করে বুঝিয়ে বলবে যে খুনী আনন্দের সাথে পুলিশের কাছে ধরা দিবে। সেই ভরসায় গিয়ে বললাম, সব কথা, শুরুতেই বলে নিয়েছি, " ভুল আমার হয়েছিল, তবে এমন কিছু ভুল করিনি, আচ্ছা, সে যেভাবে গাড়ী থেকে নেমে এসেছে এবং গালি দিচ্ছিল, আমি যদি হাত জোড় করার ভঙ্গী না করতাম, খবর ছিল, তাইনা? "।[এখানে আমেরিকানরা হাত জোড় করে]
      উত্তম আমার কথায় সায় দিয়েছে, স্বীকার করেছে, ওটা ক্যারদানী ছিলনা, ভুলই ছিল, এবং ভুলের কারণেই অ্যাকসিডেন্ট হয়। তবে সেই মহিলার কাহিনী শুনে তার মনটা খারাপ হয়েছে, ঘটনা ঘটলে ঘটতেও পারতো। যেইমাত্র উত্তম কুমার আমার কথায় সায় দিয়েছে, সাথে সাথে খিদেয় পেট চোঁ চোঁ করে উঠেছে, মিথীলাকে বললাম, " ও বাবলু, আসো, আমরা খেতে বসি।"।
      Like · · Promote ·
       
       
       
      'তাজ্জব কথা'!

      একটা মজার কথা বলি। প্রথমেই বলে নিচ্ছি, আমি যেমন ফেসবুকে অ্যাডিক্টেড, আমার উত্তম কুমার তার বিপরীত। সে ফেসবুক নাম শুনলেই 'দড়ি দেখে সর্পভ্রম' করে। তার ধারণা, দুই বছর ধরে আমি ফেসবুকে শুধু 'আজাইরা' সময় কাটাই, আমিও বিশ্বাস করি, ফেসবুকের পুরা সময়টাই আসলে 'আজাইরা'। এইজন্যই ফেসবুক এত এনজয় করি। আমি মানুষটাই তো 'আজাইরা', তাই 'আজাইরা' সময় খুব ভালোবাসি। কিন্তু কোন আড্ডা আসরে ফেসবুকের কথা উঠলেই ক্লাসের সবচেয়ে নীরস ছাত্রীর মত মুখ নীচু করে ঢোঁক গিলতে থাকি।
      আজকে আমাদের বন্ধুর বাড়ী নেমন্তন্ন খেতে গেছি, ওখানে একটি নতুন দম্পতীর সাথে পরিচয় হলো।
      উত্তম কুমার আমার পরিচয় দিল, " এই আমার স্ত্রী, শী ইজ আ রাইটার"~~~[ আমি তো তাজ্জব! কি আজব দুনিয়া, কি আজব ফেসবুক, কি আজব লেখিকা, তার কি আজব উত্তম কুমার স্বামী]



      সকালে ওয়ালমার্টে যাই, আট ঘন্টা চাকুরী শেষে বাড়ী ফিরি, ৩০ মিনিটের মধ্যে রেডী হয়ে নেমন্তন্ন খেতে যাই, এই রুটিনেই গতকাল গিয়েছি, আজ গেলাম, আগামীকালও যাব, ~~~~
      মনে হচ্ছে ফেসবুক থেকে শতবর্ষ আলোকমাইল দূরে আছি!!!
      Like · · Promote ·
       
      নাকের বদলে নরুণ পেলাম—তাক দুমা দুম দুম!

      আজকে মেজদার কথামত বাবাকে ফোন করেছিলাম। প্রচলিত প্রবাদ ‘পাগলের গো-বধে আনন্দ’-এর গল্পসূত্র জানার জন্য। এই প্রবাদের পেছনের গল্প যেটুকু জানি, এটিই প্রচলিত গল্প কিনা, তা জানার জন্য ভীষণ কৌতুহল হচ্ছিল। কারণ, বাংলাদেশের বর্তমান রাজনৈতিক পটভূমিকায় এই প্রবাদটি ইদানিং খুব বেশী করে মাথায় ঘুরছে। গতকালকেই স্ট্যাটাসে কাদের সিদ্দিকী সাহেবের একটি কমেন্ট উদ্ধৃত করে, ঈশপের বাণীর অনুকরণে উক্ত প্রবাদটি যোগ করেছিলাম।

      প্রাচীন লোকসাহিত্যের প্রচলিত গল্পগুলো আমার মায়ের মুখে মুখে ফিরতো, আমাদের যখন শাসন করতেন, প্রতি কথায় মা নানা শ্লোক, প্রবাদ, গল্প জুড়ে দিতেন। শাসনের সুরে গল্পগুলো শোনাতেন বলেই বোধ হয় গল্পগুলো শুনতে ভাল লাগতো না। বিপদের সময় ‘আদর্শ বাণী’ অসহ্য মনে হতো। তাই ছোটবেলায় গল্প থেকে শুরু করে অনেক উপদেশবাণীই আমরা গা থেকে ঝেড়ে ফেলে দিয়েছি, আজ লিখতে বসে সেইসব অসামান্য গল্প বা প্রবাদের প্রয়োজনীয়তা ভীষণভাবে টের পাচ্ছি, কিন্তু ততদিনে অনেক দেরী হয়ে গেছে। যাঁর কাছে জিজ্ঞেস করলে উত্তর পাওয়া যেত, তিনি মাস দশেক আগে এই পৃথিবী ছেড়ে অন্য পৃথিবীতে চলে গেছেন। এই মুহূর্তে উনার মুখ থেকে শোনা প্রবাদ, আইজ বুঝবিনা বুঝবি কাইল, কপাল থাপড়াইয়া পারবি গাইল” খুব বেশী করে মনে পড়ছে। এই প্রবাদটি অবশ্য মায়ের চাইতে বাবাই বেশী ব্যবহার করতেন।

      যাক গিয়ে, ধান ভানতে শীবের গীত গাইছিলাম। মূল গল্পে চলে আসি। আমার মেজদা খুব বই পড়ুয়া মানুষ, প্রখর স্মৃতিশক্তি, রাজনীতি সচেতন তো বটেই, তারুণ্যে ছাত্রলীগের রাজনীতি করতে গিয়ে বাবা-মায়ের শরীর থেকে কালঘাম ঝরিয়ে ছেড়েছে। এখন সে মোটামুটি শান্তভাবে জীবন-যাপন করছে। মায়ের অবর্তমানে মেজদাই হতে পারতো আমার গল্প সংগ্রহের মূলাধার। দূর্ভাগ্যক্রমে বছর তিনেক আগে অফিসিয়াল কাজে জাফলং যাওয়ার পথে সে অনেক বড় অ্যাকসিডেন্টে পতিত হয়, মাথায় প্রচন্ড চোট পায়(জ্ঞান হারিয়ে ফেলেছিল),হাতের তালুতে সিএনজি’র লোহার শিক ঢুকে এফোঁড়-ওফোঁড় হয়ে যায়। বীভৎস রকমের আঘাত সয়ে সে নতুন জীবন ফিরে পায়। কিন্তু কেউ টের পায়নি, ফিরে পাওয়া নতুন জীবনে তাঁর স্মৃতির ভান্ডার এলোমেলো হয়ে গেছে, ইদানিং এই ব্যাপারটি আমার কাছে ধরা পড়েছে, লিখতে গিয়ে কিছু তথ্যের জন্য তাকে জিজ্ঞেস করলে সে সঠিকভাবে বলতে পারেনা, অথবা এলোমেলোভাবে বলে, একটার সাথে আরেকটার যোগসূত্র থাকেনা, অথচ এগুলো সবই তার নখদর্পণে ছিল।

      আজ আমি রাত ৯টার দিকে মেজদাকে ফোন করেছিলাম, বললাম,
      “মেজদা, পাগলের গো-বধে আনন্দ’ প্রবাদের পেছনের গল্পটা কি তুমি জান?”
      মেজদা যে আধখেঁচড়া গল্প বললো, আমার জানা গল্পের সাথে মিললোনা, সেটা বলতেই মেজদা বলল,
      “মিঠু, এক কাজ কর, আমাদের পিতৃদেবকে জিজ্ঞেস কর, মনে আছে তোর, বাবাই এই প্রবাদটা বেশী ব্যবহার করতো? তুই আর আমি ছড়া কেটে বলতাম, পাগলের গোবধে আনন্দ, পাগলের সুবোধে আনন্দ”।

      আমি হেসে ফেললাম, সেদিনের কথা মেজদার মনে আছে, এটা খুব ভাল লক্ষ্মণ, তারপরেও, মেজদার স্মৃতিশক্তি কেন কমে গেছে, এই নিয়ে ইচ্ছেমত বকা দিলাম, বকাগুলো মেজদা হাসিমুখেই গ্রহণ করলো। ফোন ছেড়ে দিয়ে রাত ১০টার সময় বাবাকে ফোন দিলাম। ফোন ধরেছে আমার ছোট ভাইয়ের বউ অনীতা। অনীতাকে বললাম,

      “অনীতা, এই মুহূর্তে আমার একটা প্রশ্নের উত্তর জানা দরকার, একটি প্রবাদের পেছনের গল্প, তুমি, তোমার স্বামী এবং তোমার শ্বশুরমশাই, এই তিনজনের যে কোন একজন উত্তরটা দিলে আমি বাধিত থাকবো।

      আমার কথা শুনে অনীতা নিশ্চয়ই মনে মনে ভেবেছে, “রাত ১০টার সময় আমেরিকা থেকে ফোন করে ভাইবৌয়ের কাছে জানতে চায়, পাগলের গো-বধে আনন্দের মানে কি? এই জন্যই বাংলা সাহিত্যে ‘ননদ-ভাজে’ এত আড়াআড়ি। ফোন করেছে, কোথায় বলবে, “অনীতা, কেমন আছো গো? খেয়েছো কিছু? কেউ তো তোমার খাওয়া-দাওয়ার খোঁজ নিবেনা, তাই আমি খোঁজ নিচ্ছি”—তা না, জিজ্ঞেস করছে ‘পাগলের গো-বধে আনন্দ” মানে কি? আরে! এই প্রবাদের মানে তো আপনারই ভাল জানার কথা, পাগলেই বলতে পারবে পাগলের কিসে আনন্দ, কিসে দুঃখ! আমি কি করে জানবো পাগলের সুখ-দুঃখের কথা”
      মনের কথা মনে চেপে রেখে অনীতা বললো, “ ফুলদি, বাবার কাছে ফোন দিচ্ছি, বাবাকেই জিজ্ঞেস করেন, বাবা হয়তো জানবে”।

      আমার বাবার মনে অনেক দুঃখ, বাবাকে কেউ ফোন করেনা বলে। বাবার এই দুঃখটা মা খুব হাড়ে হাড়ে টের পেতো। কারণ, বাবা নাকি কথায় কথায় বলতো, “সবগুলি মায়ের চামচা, ফোন করে শুধু মায়ের সাথে পুটুর পুটুর”।
      কথা সত্যি, বাবার সাথে কথা বলে স্বস্তি পেতামনা, বাবা খালি শাসনের সুরে কথা বলে, উপদেশ দেয়, কাহাতক ভাল লাগে এত আদেশ উপদেশ। মায়ের কাছেই জেনে নিতাম, বাবার শরীর স্বাস্থ্যের কথা।
      আমি ফোন করলেই মা ফিস ফিস করে বলতো, “তোর বাবার সাথে একটু কথা কইস, নাইলে সব সময় আমারে শুনায়, পোলামাইয়ারা শুধু মায়ের সাথেই কথা কয়, আমারে কেউ পোঁছেওনা, প্রবাদ আছেনা, গাঙ পার হইলে মাঝি শালা, সেই অবস্থা হইছে আমার, সবাইরে গাঙ পার কইরা দিছি, আমি এখন মাঝি শালা হইয়া গেছি”।
      আমি হাসতে হাসতে গড়ায়ে পড়তাম, মা জানতো, আমি বাবাকে অনেক সাপোর্ট দেই, বাবার জন্য খুব ফীল করি, আমার ছোট ভাই তো এমনিতেই কথা মেপে বলে, তাই বাবার সাথে অত বেশী কথা বলেনা ঠিকই কিন্তু বাবার দিকে খুব নজর। যাক গিয়ে, মা যতদিন ছিলেন, ফোনে বাবার সাথে অত বেশী কথা বলতামনা, শুধু কেমন আছো জিজ্ঞেস করেই কথা শেষ করতাম, কারণ আমি জানি, আমার বাবা ভীষণ অপটিমিস্টিক মানুষ, সব সময় ভালো থাকেন।

      মা চলে যাওয়ার পর বাবাকে ফোন করি, সেই একই মোবাইল, মায়ের কাছে যেটা থাকতো, সেটাই এখন বাবার কাছে থাকে। ফোন করে জিজ্ঞেস করি,

      “বাবা, কেমন আছো”?

      আমার অপটিমিস্টিক বাবা উত্তরে বলেন,

      “রোজ রোজ একই প্রশ্ন করিস কেন? কালকে যেমন ছিলাম, আজকেও তেমন আছি, একদিনে তো খুব বেশী পাল্টাবোনা।“

      -বাবা, তোমার যা বয়স, প্রতি মুহূর্তে পাল্টাবে, এটাই জীবনে্র নিয়ম। কাজেই এত বেশী তেজ দেখিয়ে কথা বলবেনা। যতবার জিজ্ঞেস করবো কেমন আছো, ততবার উত্তর দিবে।

      -না, আমি তোদের মত অত পুতু পুতু জীবন নিয়ে চলিনা, আমাকে জিজ্ঞেস করবি, “ বাবা, তুমি কি একা একা বাথরুমে যেতে পার? তুমি কি কাঁটা বেছে মাছ খেতে পার? তুমি কি লাঠি ছাড়া হাঁটতে পার? তুমি কি নিজের কাজ নিজে করতে পার? যেদিন শুনবি, এই কাজগুলো করতে অন্যের সাহায্য নিতে হয়, সেদিন বুঝবি আমি ভালো নাই। এইবার অন্য কথা বল, তোদের ভাল কোন সংবাদ থাকলে বল।

      অনীতার হাত থেকে ফোন নিয়ে বাবা বলল, “হ্যালো, কালকেই তো ফোন করলি, আজকে আবার কেন? অযথা পয়সা নষ্ট করা ভাল না মিঠু”।

      -বাবা শোন, পয়সা নষ্ট করছিনা, জরুরী প্রয়োজন, মেজদাকে ফোন করেছিলাম একটা প্রশ্নের উত্তর জানতে, মেজদা বলেছে তোমাকে ফোন করতে।

      -বলবেই তো এই কথা, দায়িত্ব ঝেড়ে ফেলতে চেয়েছে আর কি!

      -হা হা হা! বাবা, আমার একটা তথ্য জানা প্রয়োজন, জরুরী প্রয়োজন। একটা প্রবাদ, ‘পাগলের গো-বধে আনন্দ’—এর পেছনের গল্পটা কি? আমি যে গল্প জানি, সে গল্প তোমাদের গল্পের সাথে মিলিয়ে দেখতে চাই। মেজদা বলেছে তার গল্প, আমার গল্পের সাথে মিলেনি। এবার তুমি বলো।

      বাবা বললেন, এই প্রবাদ তো আমাদের ঠাকুরমার আমল থেকে চলে আসছে। প্রবাদটা হচ্ছে “অবোধের গো-বধে আনন্দ” অবশ্য পাগলরা তো অবোধই হয়। যার কোন বোধ নাই, ভালও বুঝেনা, মন্দও বুঝেনা, সব কিছুতেই সে ফূর্তি খুঁজে পায়, ডাইনও বুঝেনা, বামও বুঝেনা, নিজের গায়ে কোপ পড়লেও রক্ত দেখেও খুশীতে হাসতে থাকে---

      -বাবা, আমি কি তোমারে ভাব-সম্প্রসারণ করতে বলেছি? এর পেছনের গল্পটা জানতে চাইছি। তোমরা কেউ কোন কাজের না, মায়ও আর মরে যাওয়ার সময় পাইলোনা, এখন আমার এই সব প্রাচীন গল্প, প্রবাদ জানা দরকার, আমার লেখালেখিতে কাজে লাগে, আর এখন কিনা তোমরা সবাই সব ভুলে ব্যোম ভোলানাথ হয়ে আছ। আমার মেজাজটা খারাপ হয়ে যাচ্ছে, শোন বাবা, মা’র কাছে গল্পটা শুনেছিলাম, অনেক আগে, আমার গল্পের অনেকটাই মনে আছে-----

      -শোন, রাগ করস ক্যান, গল্প তো গল্পই, যার যার সুবিধামত গল্প বানিয়ে নিলেই হয়, আসল কথা হচ্ছে প্রয়োগ, প্রবাদটা ঠিক মত প্রয়োগ করতে পারিস কিনা সেটাই মূখ্য। আর লেখালেখি করিস যখন, নিজের মত করেই একটা গল্প দাঁড় করিয়ে নে, অন্যের গল্পের সাথে মিলতেই হবে এমন কোন কথা তো নাই। এখন বল, কি কারণে এত মরীয়া হয়ে উঠছস এই গল্প জানার জন্য?

      -বাবা, আমি ইদানিং বাংলাদেশের রাজনীতির নেতা-নেত্রীদের কর্মকান্ডে হতাশ হয়ে যাচ্ছি। আজকেই কাদের সিদ্দিকীর একটি বক্তব্য পড়ে মনে হলো, “পাগলের গো-বধে আনন্দ’ প্রবাদের কথা।

      -এক্কেবারে ঠিক জায়গায় প্রবাদ বসাইছস, এই ত গল্প পেয়ে গেলি, কাদের সিদ্দিকীরে লইয়াই গল্প লিখে ফ্যাল, নতুন করে গল্প শোনার কি দরকার? আজ যে গল্প চালু করবি, এই গল্পই পরের প্রজন্ম ব্যবহার করবে।

      -হা হা হা!! বাবা, তুমি একটা জিনিয়াস, এত পজিটিভ চিন্তা করো, অথচ তোমার মেয়ে হয়ে আমি এতটুকুও পজিটিভ হইতে পারলামনা।

      --এতদূর থেকে ফোন করছস একটা গল্প শোনার জন্য, তোরে অন্য দুইটা গল্প বলি। তোর তো স্মৃতিশক্তি ভালো, মনে রাখিস, পরে লেখালেখিতে কাজে লাগবে।

      জোলার গল্পঃ

      এক জোলা (চরম বোকা) তার লোহার কাঁচিটা উঠানে ফেলে রেখেছিল। দুপুরের রোদে কাঁচি গরম হয়ে গেছে, জোলা কাঁচি হাতে নিয়ে দেখে কাঁচির শরীর জ্বরে পুড়ে যাচ্ছে। কাঁচিরে কোলে তুলে সে কবিরাজের বাড়ীর দিকে রওণা হয়েছে। পথে তার বন্ধুর সাথে দেখা, বন্ধুটি আবার খুবই ‘ট্যাটনা’(চালাক)। জোলাকে জিজ্ঞেস করলো, “ কিরে, এভাবে হন্তদন্ত হয়ে কই যাস?” জোলা বলে, “ আমার কাঁচিটার অনেক জ্বর, দ্যাখ শরীর পুড়ে যাচ্ছে, কবিরাজ মশায়ের কাছে নিয়ে যাই”। বন্ধু বলে, “ কবিরাজের কাছে যাবি কেন, আমিই তোর কাঁচির জ্বর সারাবার ব্যবস্থা করি, কিন্তু আমাকে কি খাওয়াবি বল?” জোলা বলে, “ জ্বর সারিয়ে দে, তোরে পেট পুরে খাওয়াবো”।
      বন্ধু কাঁচিটিকে নিয়ে পাশের পুষ্কুণীতে চুবালো, কাঁচি ঠান্ডা হয়ে গেল। জোলা তো দারুণ খুশী, বন্ধুকে নেমন্তন্ন করে দিল।

      মাসখানেক পর জোলার মায়ের জ্বর এলো, ভয়ানক অবস্থা, জোলার মায়ের সই জোলাকে ডেকে বলে, “বাপুরে, কোবরেজ মশাইকে খবর দে, তোর মায়ের শরীরতো পুড়ে যাচ্ছে”।
      জোলা বলে, “কোবরেজ মশায়কে দরকার নেই, দেখো আমিই মায়ের জ্বর সারিয়ে দিচ্ছি। মায়ের জ্বর সেরে গেলে আমাকে কি দেবে বলো?”
      সই মাসী বলে, “আগে তো জ্বর সারিয়ে দে, জ্বর সেরে গেলে তোকে পেট পুরে মিঠাই মন্ডা খেতে দেবো’খন”।
      জোলা তার মা’কে পাঁজাকোলা করে ঘরের পাশের পুষ্কুণীতে নিয়ে ডোবাল, ভাল করে ডুবিয়ে শরীর পুরোপুরি ঠান্ডা করে ঘরে এনে মায়ের সইয়ের কাছে দিয়ে বললো, “মাসী, এই নাও, মায়ের জ্বর সারিয়ে দিলাম। মা আর কোঁকাচ্ছেনা, এক্কেবারে চুপটি মেরে গেছে। এবার আমার মিঠাই মন্ডা দাও”।

      জোলার মায়ের মৃতদেহ দেখে সই মাসী ‘পাথর’ হয়ে গেলো।

      নাপিত ডাক্তারঃ

      গ্রামের জমিদারের সবচেয়ে আদরের হাতীটি অসুস্থ হয়ে পড়েছে, বেল গাছ থেকে পাকা বেল খাচ্ছিল হাতী, একটা বেল গলায় আটকে গেছে, শ্বাস বন্ধ হয়ে মরে যাওয়ার উপক্রম। জমিদার বাবু তো মহা চিন্তিত হয়ে পড়লেন, শহর-বন্দর, গ্রাম-গঞ্জের ডাক্তার-বদ্যিতে জমিদার বাটী ভরে গেছে, কিন্তু কেউ হাতীর গলা থেকে বেল বের করতে পারছেনা। জমিদারের লোক চারদিকে ঢ্যাঁড়া পিটিয়েছে, কেউ যদি জমিদারবাবুর প্রিয় হাতীর গলা থেকে বেল বের করে দিতে পারে, তাকে জমিদারবাবু পুরস্কার দিবেন।

      ঐ গ্রামে বাস করতো এক নাপিত। নাপিতের কাজ হচ্ছে ক্ষুর-কাঁচি দিয়ে লোকের দাড়ি-গোঁফ, মাথা চেঁছে সাফ করে দেয়া, ধারালো ক্ষুর নিয়ে কাজ করতে হয় বলেই নাপিতের বুদ্ধিও খুব ক্ষুরধার হয়ে থাকে। সেই ক্ষুরধার বুদ্ধির নাপিত জমিদার বাড়ী গিয়ে বলল,
      “বাবুমশাই, আমি পারবো হাতীর গলা থেকে বেল বের করে দিতে। আমার একটি মুগুর দরকার”।
      জমিদারের লোক একখানা বিশাল সাইজের মুগুর এনে নাপিতকে দিল। জমিদার বাবু হাসেন, ডাক্তার বদ্যিরা হাসেন, উপস্থিত পাইক পেয়াদারা হাসে, সবাই বলে, “ হাতী ঘোড়া গেল তল, ভেড়া বলে, কত জল”!

      নাপিত কিছুই বলেনা, হাতীর কাছে গিয়ে বসলো, হাতীর দেহ মাটিতে এলিয়ে পড়েছে, শ্বাস নিতে কষ্ট হচ্ছে, নাপিত প্রথমে হাতীর গলায় হাত বুলিয়ে দেখলো, বেলটা ঠিক কোথায় আটকেছে। বেলের অস্তিত্ব খুঁজে পেতে বেশী সময় লাগলোনা, এবার শুরু হলো তার চিকিৎসা। হাতের মুগুর মাথায় তুলে দিল ‘বেল’ বরাবর এক বারি(আঘাত করলো), হাতীর শরীরে মুগুরের বারি তো কিছুইনা, হাতী টেরও পেলোনা, কিন্তু বেলটা ফেটে চৌচির হয়ে গেল। হাতী সাথে সাথে শোয়া থেকে উঠে দাঁড়ালো। নাপিতের এই চিকিৎসা পদ্ধতি অন্য সকলের সাথে গ্রামের জোলাও দেখেছিল। জোলার মাথায় বুদ্ধি খেলে গেল। দ্রুত হেঁটে সে বাড়ী ফিরলো।

      জোলার বউয়ের ‘গলগল’ ব্যারাম আছে (‘গলগন্ড’ রোগ, আয়োডিনের অভাবে হয়, গলা ফুলে থাকে), জোলা গরীব মানুষ, গাছের শেকড়-বাকড়ে এতদিন চিকিৎসা চালিয়েছে, কোন লাভ হয়নি। আজ জমিদার বাড়ীতে গিয়ে দেখে এসেছে, মুগুরের এক বারিতেই এত বড় হাতী ভাল হয়ে গেল, আর তার বৌ তো ছোটখাট, রোগা-পটকা মানুষ, তার গলা সারাতে মুগুর লাগবেনা, একটা হাতুড়ী হলেই যথেষ্ট। বাড়ী ফিরে দেখে বৌ ঘুমে অচেতন। জোলা বেড়ায় গুঁজে রাখা হাতুরীটা টান দিয়ে হাতে নিল, শরীরের সমস্ত শক্তি জড়ো করে হাতুরী দিয়ে বৌয়ের গলায় এক বারি দিতেই বউয়ের দম বেরিয়ে গেল!

      -মিঠু, ও মিঠু, নে এইবার খুশী হইছস? এক গল্পের বদলে দুই গল্প শুনায়ে দিলাম। বলেই বাবা হাসতে লাগলো।

      অনেকদিন পর, অনেক অনেক দিন পর বাবার কন্ঠে হাসির আওয়াজ পেলাম, অনেক অনেক দিন পর, ‘জোলা’র গল্প শুনলাম। তাই অনেক অনেক দিন পর আরেকখানি প্রবাদ মনে পরে যেতেই বাবাকে বললাম,

      “হা হা হা!! বাবা, খারাপ হলোনা, এক গল্পের বদলে আরেক গল্প শুনে আরেকটা প্রবাদ মনে পড়ে গেলো,

      -কোন প্রবাদ?

      -“নাকের বদলে নরুণ পেলাম, তাক দুমা দুম দুম”!!!

      এবার বাবা আর মেয়ে দুজনেই ফোনের দুই প্রান্তে থেকে একসাথে হেসে উঠলাম, হা হা হা হা !!
      1Like · · Promote ·
       
       
      কাদের সিদ্দিকী বলেছেন, " একা নির্বাচন করলেও শেখ হাসিনা হেরে যাবে"!!!!
      হা হা হা হা হা হ হা!!! 'পিতা'র কন্যা, বইন শেখ হাসিনা হেরে গেলে , বইনের বাঘা ভাইয়ের কি লাভ হবে?
      পাগলের গো-বধে আনন্দ!!!
      4Like · · Promote ·
       
       

      বপ্নপূরণের প্রথম সিঁড়ি!

      খুব সংক্ষিপ্ত সময়ের চাকুরী, সপ্তাহে ২০/২২ ঘন্টা, 'কেয়ার' এর হেড কোয়ার্টারে। চাকুরীটা পেয়েছে মিশা, ও এখন 'পাবলিক হেলথ' এ মাস্টার্স করছে, স্কুলে থাকতেই ও 'বিল গেটস' স্কলারশীপ পেয়েছিল, যা ওর পিএইচডি ডিগ্রী ( যদি ওর মন চায়, মনে হয়না ওর মন চাইবে এত বেশী লেখাপড়া করতে, আমার মেয়ে কিনা) পর্যন্ত কভার করবে। তাহলে আর পার্ট টাইম চাকুরী কেন? পয়সা সবাই ভালোবাসে, আর এই পয়সা যদি মেধা বা পরিশ্রমের বিনিময়ে উপার্জিত হয়, এবং যদি সেটা পাওয়া যায় ' কেয়ার' এর মত বিশ্বখ্যাত এনজিও'র হেডকোয়ার্টার থেকে, তার মূল্য কত হতে পারে? আগের রাতে অ্যাপ্লাই করলো, পরের দিন সকালে ইন্টারভিউ কল পেলো, তার তিনদিন পর ইন্টারভিউ দিল এবং তার দুই দিন পর তাদের কাছ থেকে ডাক এলো। এমন একটি অফারের মূল্য কত হতে পারে!! (টাকার অংকে বলিনি কিন্তু, স্বীকৃতির অংকে বলেছি) । আর এই মুল্যটি অর্জন করে এসেছে সদ্য 'বাংলাদেশ' থেকে। মিশা এই সামারে গিয়েছিল 'সেভ দ্য চিলড্রেন' এর অধীনে কাজ করতে। শিশু শিক্ষামূলক প্রোগ্রাম। ওখানে ওর পরিচিত কেউ ছিলনা, প্রতিটি অপরিচিত মানুষ ওর আপা, দিদি, দাদা, ভাইয়া হয়ে গেছে, এমনকি মেহেরপুর গেস্ট হাউজের গেটকীপারটি পর্যন্ত।

      মিশা ফিরে এসেছে, দেশ সম্পর্কে বলতে গিয়ে বলেছে, যদি যেতে হয়, মানুষগুলোর জন্য যাব, চাকুরী নিয়ে যাব কিনা বলতে পারিনা। চাকরী করতে গেলে নানা বিষয়ে অসুবিধা হবে, সিস্টেমে গোলমাল আছে, সোজা বিষয়কে সোজা বলা যায়না, কিছু কিছু সত্যিকে সত্যি বলে স্বীকার করা যায়না, নানা অসুবিধা। কিন্তু মানুষগুলো বড় ভাল, আমাকে ভালোবাসা দিয়ে আগলে রেখেছে।

      আমি হেসেছি, বলেছি, তোমরাই তো যাবে, গিয়ে সব বিশৃংখলাকে শৃংখলায় ফিরিয়ে আনবে, আর তা করতে হলে তোমাকে 'বিগ বস' হয়ে যেতে হবে, বিগ বস যা বলবে, অধস্তনরা তাই করবে। কাজেই ওভাবেই তুমি ক্যারিয়ার তৈরী করবে, আমি চাই, আমার এক মেয়ে অন্ততঃ দেশে গিয়ে কাজ করুক, আশা করি ততদিনে দেশের অবস্থা আরেকটু ভাল হবে।

      মিশাকে 'সেভ দ্য চিলড্রেন'এর একটি শাখার অসংখ্য তরুণ-তরুণী, মিশার বস 'আসাদ ভাইয়া' এবং আরও কয়েকজন ভাইয়া ও দাদা যে স্নেহ-মমতা দেখিয়েছেন, মিশার বস যে সার্টিফিকেট মিশাকে দিয়েছেন, তার জন্য আমি তাঁদের প্রতি কৃতজ্ঞ। আশীর্বাদ করবেন, মিশা যেন অনেক বেশী উপযুক্ত হয়ে বাংলাদেশে গিয়ে তার মেধাকে কাজে লাগাতে পারে। যদিও আমার এই লেখা পড়ে মিশার চোখ চড়কগাছ হয়ে যাবে, নিরাপদ দূরত্বে থাকায় ওর তেজের আগুনে আমাকে পোড়াতে পারবেনা, কিন্তু একদিন ও ঠিকই দেশে যাবে ,আমি হয়তো তখন থাকবোনা, কিন্তু আমার ছায়া হয়ে মিশা থাকবে। এটা আমার অনেক দিনের স্বপ্ন, মিশা হয়তো আমার স্বপ্ন পূরণের প্রথম সিঁড়িতে দাঁড়িয়েছে মাত্র, উঠতে হবে অনেক উপরে!
      1Like · · Promote ·
       
       
       
      বিশেষ্য 'নোবেল' নয়, ‘সুদখোর’ বিশেষণেই যত বিরোধ!!! [লিয়াকত আলী ভাইয়ের প্রশ্নের জবাব]

      বাংলাদেশের রাজনৈতিক অঙ্গন হচ্ছে পৃথিবীর সবচেয়ে বড় নাট্যমঞ্চ। এই নাট্যমঞ্চে প্রতিদিন নতুন নাটক মঞ্চস্থ হয়ে থাকে। নাটকে হাসি,ভালোবাসা, কান্না, কলহ, পরকীয়া আছে, কবি আছে, ডাক্তার, মিলিটারী, গায়িকা, নায়িকা, ভিলেন আছে, মুক্তিযোদ্ধা আছে, মুক্তিযুদ্ধ বিরোধীরা আছে, এবার নতুন যোগ হয়েছে ‘নোবেল লরিয়েট’। নোবেল লরিয়েট ব্যাপারটি কি, তা বুঝিয়ে দেয়ার জন্য নাট্যমঞ্চে ‘বিবেক’ এর উপস্থিতিও যোগ করা হয়েছে।

      তেমনই একজন ‘বিবেক’ এর ভূমিকায় আমাদের মাঝে উপস্থিত হয়েছেন, জাতীয় পার্টির প্রাক্তন সংসদ সদস্য, লিয়াকত আলী ভাই। রাজনীতির ‘নাট্যমঞ্চে’ নোবেল লরিয়েটের উপস্থিতি দেখে কিছু বোকা সোকা দর্শক না বুঝেই হাউ কাউ শুরু করে দিয়েছে। দর্শক যদি বোকা সোকা ধরণের হয়,‘হাউ কাউ’ ব্যাপারটি খুবই দ্রুত সংক্রমিত হয়ে পড়ে। হাউ-কাউ যদি লাগামছাড়া না হয়ে উঠে,এইজন্যই নাটকের মাঝখানে, ক্লাইমেক্স যখন চরমে, বিবেক সাহেবকে মঞ্চে পাঠানো হয়, বিবেক সাহেব এসে বাণী চিরন্তনী শুনিয়ে আবার পর্দার অন্তরালে চলে যান।

      বাংলাদেশের রাজনৈতিক মঞ্চ তথা সারা দেশের জ্ঞাতি গুষ্ঠিতে ‘নোবেল লরিয়েট’ বলতে শুধুমাত্র একজনকেই বুঝায়, তিনি হচ্ছেন ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। ২০০৬ সালে শান্তিতে নোবেল পেয়েছিলেন, ডঃ ইউনুস নোবেল পেয়েছেন আর গোটা বাংলাদেশ পেয়েছে ডঃ ইউনুসকে। অর্থাৎ সমগ্র বাংলাদেশই নোবেল প্রাইজ পেয়েছে। আমরা সকল বাংলাদেশী বাঙালী অত্যন্ত আনন্দিত হয়েছি, গর্বিত হয়েছি। তৃতীয় বাঙালী হিসেবে ইউনুস সাহেব নোবেল পুরস্কার পেলেন, এ যে বাঙালীর কাছে কত গর্বের, কত আনন্দের, তা বাঙালী মাত্রেই জানে। এর আগে নোবেল জয় করেছেন রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অমর্ত্য সেন। অবশ্য যারা রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর এবং অমর্ত্য সেনকে ‘ইন্ডিয়ার মানুষ’ মনে করে, যারা কবি নজরুলের জন্ম ভারতে হওয়া সত্বেও শুধুমাত্র নাম দেখে ‘বাংলাদেশী কবি’ মনে করে, সেই সব (বাঙালী)বাংলাদেশীদের কথা আলাদা।
      অবশ্য নিন্দুকেরা বলে, ডঃ ইউনুসকে নোবেল প্রাইজ দেয়ার মধ্যে অনেক কারসাজি আছে, ইউনুস সাহেব নাকি কোথায় কোথায় লবিং করেছেন, এমনই নানা কথা, নানা বার্তা। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে মনে করি, লবিং করতেও যোগ্যতা লাগে। ইউনুস সাহেবের সেই যোগ্যতা ছিল বা আছে, তা দিয়ে উনি নোবেল জিতে এনেছেন। নোবেল জেতাটাই আসল কথা।

      রবীন্দ্রনাথ ঠাকুর ১৯১৩ সালে নোবেল প্রাইজ পেয়েছেন, প্রাইজমানি উনি পুরোটাই দান করে দিয়েছেন শান্তিনিকেতনে উনার স্থাপিত ব্রহ্মচর্য স্কুলের সম্প্রসারণের কাজে। উনার এই মহতী উদ্যোগ, মহৎ ইচ্ছের উপর ভিত্তি করে ১৯২১ সালে বিশ্ববিখ্যাত বিশ্ববিদ্যালয় ‘বিশ্বভারতী’ স্থাপিত হয়েছে। বিশ্বভারতীর দুই একজন শিক্ষার্থীর নাম বলি, শ্রীমতি ইন্দিরা গান্ধী, সত্যজিৎ রায়, অমর্ত্য সেন, কবি আবদুল গনি খান,(পশতু ভাষার কবি), পঞ্চাশের দশকের বিশ্বের প্রথম দশ সেরা সুন্দরীর একজন ‘গায়ত্রী দেবী’ প্রমুখ।

      রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরের প্রসঙ্গটুকু উল্লেখ করলাম, কারণ, আমার লেখার শুরুতেই নাট্যমঞ্চের ‘বিবেক’ বলে যাঁকে সম্বোধন করেছি, সেই লিয়াকত আলী ভাই ডঃ ইউনুসের নোবেল জয় নিয়ে অনেক বিশাল প্রশস্তি গাঁথা গেয়েছেন। প্রশস্তি গাইবার সময় উনি বোকা সোকা দর্শকের বিবেক জাগ্রত করার জন্য, নানা অবান্তর প্রশ্ন ছুঁড়ে দিয়েছেন। প্রশ্নে ইউনুস সাহেবকে মহান বানাতে গিয়ে উনি বর্তমান প্রধানমন্ত্রীকে অনেক নীচুতে নামিয়ে এনেছেন। উনি ইউনুস সাহেবের নোবেল বিজয়গাঁথা গাইতে গিয়ে এক জায়গায় বলেওছেন, শেখ হাসিনার পক্ষে কি আন্তর্জাতিক পুরস্কার অর্জন সম্ভব কিনা! উনি বোধ হয় ভুলে গেছেন, শেখ হাসিনা 'ইউনেস্কো' পুরস্কার পেয়েছিলেন। অবশ্য নিন্দুকেরা বলে, টাকা দিয়ে কেনা হয়েছে হাসিনার পুরস্কার, শুধু ইউনুস সাহেবের 'নোবেল' একেবারে কাঁচ কাটা হীরের মত খাঁটি।

      নীচে জাতীয় পার্টির সাবেক সংসদ সদস্য লিয়াকত আলীর বিশাল বিস্তৃত প্রশ্নমালা থেকে চৌম্বক অংশ তুলে দিলামঃ

      [ ড: ইউনুসের সাথে শেখ হাসিনার বিরোধ কোথায়?
      ----------------------- লিয়াকত আলী, সাবেক সংসদ সদস্য।

      ড: ইউনুসের সাথে শেখ হাসিনার বিরোধ কোথায়? ড: ইউনুসকে প্রতিপক্ষ বিএনপি শিবিরে টেলে দিয়ে আওয়ামী লীগের কি লাভ হচ্ছে? নাকি ব্যক্তিগত হিংসা, আক্রোশ, বিদ্বেষ প্রাধান্য পাচ্ছে? আওয়ামী লীগের প্রবীন অভিজ্ঞ নেতারা একটু ভেবে দেখবেন কি?
      ড: ইউনূস তার যোগ্যতা দক্ষতা মেধা সৃজনশীলতা নতুন নতুন কনসেপ্ট উদ্ভাবনের জন্য নোবেল প্রাইজের মত একটি অসাধারণ সন্মানজনক প্রাইজ পাওয়া গৌরব অর্জন করেছেন। তার বিরুদ্ধ অবস্থান নেওয়া, তা'কে অপমান অপদস্থ অসন্মানের চেষ্টা করা কি কোন বিবেকবান মানুষ, কোন দেশপ্রেমিকের হতে পারে? তাহাকে কেন আপনাদের অসহনীয় মনে হচ্ছে একটু বুঝিয়ে বলবেন কি আওয়ামী লীগের বড় ভাই দাদারা?
      গ্রামীন ব্যাঙ্কের মাধ্যমে প্রায় ৮৪ লক্ষ দুস্থ মহিলাকে জামানতে ছাড়া টাকা ধার দিয়ে, ক্ষুদ্র ক্ষ্রদ্র ব্যবসার ট্রেনিং দিয়ে, ব্যবসা করার সুযোগ সৃষ্টি করে, অন্ন বস্ত্রের ব্যবস্থা করে দিয়েছেন। একটু স্বাচ্ছন্দ জীবন ধারন করার সুযোগ সৃষ্টি করে দিয়েছেন ড: ইউনুস। এইটি কি ড: ইউনুসের বড় অপরাধ?
      নোবেল কমিটি পার্বত্য চট্রগ্রামের জন্য শেখ হানিসাকে নোবেল প্রাইজ না দিয়ে গ্রামীন ব্যাঙ্কের জন্য ড: ইউনুসকে নোবেল প্রাইজ দিয়েছে, এইটি কি ড: ইউনুসের অপরাধ? ড: ইউনুস যে বছর নোবেল পেয়েছেন, তার প্রায় ৫ বছর আগে থেকে উনার নাম আলোচনায় ছিল, পাঁছ বছর দেবে দেবে করেও তাহাকে দেওয়া হয়নি, অন্যদের দেওয়া হয়। ড: ইউনুস গৌরবের নোবেল প্রাইজ পাওয়ার পর, উনার সাথে বিরোধে জড়িয়ে লাভটা হল কি? ঝগড়া ফ্যাসাদ, বিবাদ হুমকি ধমকি দিয়ে কি নোবেল প্রাইজ অথবা আন্তর্জাতিক কোন পুরুস্কার আনা যায়? দয়া করে উত্তর দেবেন, আওয়ামী লীগের বিজ্ঞ বন্ধুরা, আপনাদের উত্তরের অপেক্ষায় থাকব।
      ড: ইউনুসের নাম শুনলে আওয়ামী লীগের সমর্থকদের গায়ে ফোসকা পড়ে যাচ্ছে কেন? ড: ইউনুসের কি রাজনীতি করার অধিকার নাই? উনি কি কোন দলকে ভোট দিতে পারে না? উনি কি রাষ্ট্রপতি হওয়ার স্বপ্ন দেখতে পারেন না? কিসের এত ভয় কেন? এত উৎকন্ঠা কেন? মিথু এবং মিথুর নতুন প্রজন্মের মনে এত কষ্ট বেড়ে যাচ্ছে কেন। এত অস্থিরতা কেন”?]

      মাননীয় সংসদ সদস্য আমাকে এবং আমার প্রিয় তরুণ প্রজন্মকে ঊদ্দেশ্য করে প্রশ্ন করেছেন,আমার ফেসবুক ওয়ালে। ফেসবুক ওয়ালেই কে যেন একটি অনলাইন সংবাদপত্রের লিঙ্ক পোস্ট করেছে যেখানে বলা হয়েছে ‘শেষ পর্যন্ত ডঃ ইউনুস বিএনপি’তে যোগ দিয়েছেন। আলোচ্য সংবাদ পড়ে আমি স্ট্যাটাসে লিখেছিলাম,

      "ডঃ ইউনূস বিএনপি তে যোগ দিয়েছেন, এটা তো নতুন কোন সংবাদ নয়, বিএনপিতে উনি অলিখিতভাবে অনেক আগেই ছিলেন, এখন অফিসিয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, এখন অনেকেই যোগ দিবেন, যেমন যোদ দিয়েছে 'ময়ূরী'! যোগ দিয়েছে 'কনকচাঁপা'। আরও অনেকেই যোগ দিবে, যার স্বার্থ যেখানে, সে সেখানেই যাবে। ডঃ ইউনুস প্রেসিডেন্ট হবেন, আশফিয়া পাপিয়া, নীলুফার মনি, রেহনুমা রানু, শাম্মী আখতার, জয়নুল আবেদীন ফারুক মন্ত্রী হবেন।
      ময়ুরী হবে মাননীয় সংসদ সদস্য!! [ লে হালুয়া]

      **এই স্ট্যাটাসের পরিপ্রেক্ষিতেই প্রাক্তন সংসদ সদস্য উপরের প্রশ্ন করেছেন**

      আমাকে ফেবু’কে সকলেই বঙ্গবন্ধুর আদর্শের অনুসারী হিসেবে জানে, আমি বঙ্গবন্ধুকে শ্রদ্ধা করি, অন্তরে লালন করি, তাই উনার এতিম কন্যা শেখ হাসিনার প্রতি মমতা অনুভব করি। আমার ফেবু বন্ধুদের প্রায় সকলেই তরুণ, আমি প্রায়ই তরুণ প্রজন্মকে নিয়ে লিখি, ওদের ভোটেই গতবার বঙ্গবন্ধুর দল নিরঙ্কুশ সংখ্যাগরিষ্ঠতা নিয়ে ক্ষমতায় এসেছে। ওরা মুক্তিযুদ্ধ এবং মুক্তিযোদ্ধাদেরকে ‘লাইমলাইটে’ নিয়ে এসেছে, ওরা বঙ্গবন্ধুকে অনলাইনে প্রতিষ্ঠা করেছে, ওরা নিজেদের মেধা ও বুদ্ধি দিয়ে অনলাইনেই মুক্তিযুদ্ধের ইতিহাসকে সমৃদ্ধশালী করেছে। যারা এতদিন বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে কুৎসা রটাতো, নানা তথ্য উপাত্ত সংগ্রহ করে অনলাইন পাঠকের কাছে পৌঁছে দিয়ে সকল কুৎসারটনাকারীদের মুখ বন্ধ করে দিয়েছে। এইজন্যই আমি তরুণ প্রজন্মকে সম্মান করি, খুব পছন্দ করি, ওরাও আমাকে অনেক সম্মান করে, ভালোবাসে। আমি যাদেরকে পছন্দ করি, তারা অনেক বেশী সাহসী, অনেক বেশী জ্ঞাণী, অনেক বেশী আধুনিক, শিক্ষিত, বুদ্ধিমান, মুক্তিযুদ্ধ না দেখেও অনেক বেশী মুক্তিযুদ্ধের পক্ষের, তারা অনেক বেশী দেশ সচেতন নাগরিক।
      এমনকি যারা বঙ্গবন্ধুকে জানেনা, শেখ হাসিনাকে মানেনা, সেই সকল তরুণরা মুক্তিযুদ্ধ না মানলেও অনেক স্মার্ট, বুদ্ধিমান। তারা ‘বাঁশের কেল্লা’ চালায়, আর এটা তো সত্যি, ‘বাঁশের কেল্লা’ চালানো লিয়াকত ভাইদের মত প্রবীন প্রজন্মের কম্ম নয়।

      নাট্যমঞ্চের বিবেক লিয়াকত আলী ভাই জানতে চেয়েছেন, ডঃ ইউনুস সাহেবের রাজনীতিতে আগমন দেখে ‘মিঠু এবং তার প্রিয় তরুণ প্রজন্মের মনে এত ভয়, উৎকন্ঠা, অস্থিরতা শুরু হয়েছে কেন?” ইউনুস সাহেবের নোবেল পুরস্কার নিয়ে শেখ হাসিনার এত রাগ কেন? এত আক্রোশ কেন? এত গোঁয়ার্তুমি কেন? এত হিংসা, বিদ্বেষ কেন? এমন কয়েকশটি কেন’র উত্তর উনি জানতে চেয়েছেন আওয়ামীলীগের প্রবীন অভিজ্ঞ নেতাদের কাছ থেকে।

      লিয়াকত ভাই জানেন কিনা জানিনা, আমার ওয়ালে আওয়ামীলীগের প্রবীন অভিজ্ঞ নেতাদের উপস্থিতি নেই। প্রশ্নটি যদি উনি ’৭১ টিভির জার্ণালে করতেন, তাহলে প্রবীন অভিজ্ঞ নেতা তোফায়েল আহমেদ নিশ্চয়ই জবাব দিতেন, যেমন দিয়েছিলেন বিএনপি’র সরদার শাখাওয়াত হোসেন বকুলকে। পরবর্তী সময়ে এই প্রশ্নগুলো ’৭১ জার্ণালে করবেন। এখন আসি আমার কথায়।
      আর দশজন বাঙালী এবং বাংলাদেশীদের মত আমিও ডঃ ইউনুস সাহেবের নোবেল বিজয়ে খুশী হয়েছি, তবে ততদিনে আমেরিকায় অনেক পুরনো হয়ে গেছি। আমেরিকা্ন লুকোচুরী, কারসাজি, লবিং, ডাবিং সম্পর্কে অনেক কিছুই বুঝে গেছি। মাদার তেরেসাও শান্তিতে নোবেল পেয়েছেন, মুহাম্মদ ইউনুসও শান্তিতেই নোবেল পেয়েছেন, শান্তিরও কি ক্যাটাগরী আছে? কিন্তু আমি বিশ্বাস করি, লবিং করতেও যোগ্যতা লাগে! সেই যোগ্যতা আমার দেশের একজনের আছে, আমি গর্বিত না হয়ে পারি? তবে আনন্দে ডিগবাজী খাওয়ার মত অবস্থা আমার হয়নি। ডিগবাজী খেতাম, যদি ইউনুস সাহেব পুরস্কারের অর্থ পুরোটাই বাংলাদেশের জনগণের কল্যানে দান করে দিতেন, তা উনি করেননি, তাই আমি ডিগবাজীও খাইনি।
      এইজন্যই আমি উপরে বলেছি, নোবেল প্রাইজ মানি রবীন্দ্রনাথ কোন কাজে উৎসর্গ করেছেন, আমি কেঁদে ফেলেছি যখন পড়েছি, রবীন্দ্রনাথ শেষের দিকে চরম অর্থকষ্টে থেকেও ‘নোবেল’ প্রাইজের পুরো টাকা জনগণের কল্যাণে দান করেছেন, ব্রিটিশ রাজত্বেই সম্পূর্ণ প্রাচীন আশ্রম স্টাইলের শিক্ষা ব্যবস্থায় বিশ্বভারতী বিশ্ববিদ্যালয়’ স্থাপন করেছেন, এঁকে বলে মহাপুরুষ, এঁনার নামে আনন্দে ডিগবাজী খাওয়া যায়, ডঃ ইউনুসকে নিয়ে গর্ব করা যায়, বিগলিত হওয়া যায়না।

      ইউনুস সাহেব যদি অর্থনীতিতে নোবেল প্রাইজ পেতেন, আমি অবাক হতামনা, শান্তিতে পাওয়ায় অবাক হয়েছি। আমি তো রাজনীতি বুঝিনা, তাই রাজনীতি করিওনা, আমার কাছে রাজনীতি মানে রাজার নীতি। তাই আমি প্রজা কোন নীতিরই গভীরে প্রবেশ করিনা, বাইরে থেকে যা সুন্দর, তাতেই মুগ্ধ হয়ে যাই। ১৯৯৬ সালে, অস্ট্রেলিয়ার মেলবোর্ণে থাকাকালীন সময়ে ইউনুস সাহেবের বক্তৃতা শুনে মুগ্ধ হয়ে গেছিলাম। তখনও ইউনুস সাহেবের নাম অত বেশী শোনা যেতোনা, জাহাঙ্গীর নগর বিশ্ববিদ্যালয়ে অনার্স পড়ার সময় ফিজিক্স ছিল সাবসিডিয়ারী, আফরোজী ইউনুস আমাদের ফিজিক্স পড়াতেন। তখন শুনেছিলাম, আফরোজী ইউনুস ম্যাডামের স্বামীর নাম ডঃ মুহাম্মদ ইউনুস। এটুকুই জানতাম ডঃ ইউনুস সম্পর্কে, কোনদিন ভেরিফাই করেও দেখিনি, উনারা একই ব্যক্তি কিনা। যাই হোক, মেলবোর্ণের অনুষ্ঠানটি ছিল অভিজাত বাংলাদেশীদের নিয়ে। আমরা অভিজাত বাঙ্গালী ছিলামনা, সাধারণ খেটে খাওয়া বাংলাদেশীদের সাথে আমাদের উঠাবসা ছিল। কিন্তু সেই অনুষ্ঠানের আয়োজক, ফরহাদুর রেজা প্রবাল ( ফরিদুর রেজা সাগরের ছোট ভাই)কোন এক সূত্র থেকে জানতে পেরেছে, আমার মেয়ে ‘মৌটুসী’ খুব ভাল নাচ করে। প্রবাল ভাই আমাকে ফোন করে অনুরোধ করে মৌটুসীকে যেন উনার পছন্দ করা একটি গানের সাথে নাচ তুলিয়ে দেই। গানটি পেলাম, কি যেন বিপ্লবী গান, ‘চারিদিকে নাগীনিরা ফেলিছে নিঃশ্বাস টাইপের’ গান। মৌটুসীর বয়স তখন নয়, গানের মানেও বুঝেনা, আমি মানে বুঝিয়ে দেই, ও মুদ্রা তোলে, এভাবেই অনুষ্ঠানে উপস্থিত হয়েছি, মৌটুসী নাচ করেছে, আমি গর্বিত হয়েছি এমন একটি অনুষ্ঠানে অংশ নিতে পেরে, চারদিকে সবাই অভিজাত চেহারার মানুষ। ইউনুস সাহেবের বক্তৃতা মন্ত্রমুগ্ধের মত শুনেছি।

      দেশে ফিরেছি, যেখানেই বেড়াতে যাই, গ্রামীন ব্যাঙ্কের অফিস দেখি, মুগ্ধ হয়ে যাই। মনে মনে ইউনুস সাহেবকে সালাম করি। প্রথম ধাক্কা খাই সুনামগঞ্জ বেড়াতে গিয়ে। আমার মেসোর বাড়ী, পেশায় উনি আইনজীবী, উনার কাছে কত কিসিমের মক্কেল আসে। সেখানেই গল্প শুনে আসি, গ্রামীন ব্যাংকের ক্ষুদ্র ঋণের মহিমা জেনে আসি, সুদ আদায় করতে এসে ঋণ গ্রহীতার হালের বলদ নিয়ে চলে গেছে, নাহলে মুরগীর খামার থেকে মুরগী, কারো বাড়ীর ধান, কারো বাড়ীর চালা উঠিয়ে নিয়ে গেছে। আমার বিশ্বাস হচ্ছিলনা দেখে মেসো বলেছিলেন, “ এটা তো হবেই, ঋণ তো ঋণ, এটা তো সুদছাড়া ঋণ না, ১০ টাকা যদি ঋণ, তার সুদ ২০ টাকা। যার কাছে ১ টাকাও নাই, সে তো আগে ১০ টাকাই নিবে, ২০ টাকার কথা তো ভাববেনা, ২০ টাকা আর ১০ টাকায় মিলে হয় ৩০ টাকা, দিবে কোত্থেকে? যারা ঋণ দিয়েছিল, তারাই বা ছাড়বে কেন? ছাড়লে তাদের ব্যবসা তো চলবেনা”। বললাম, ‘ তাহলে এর সমাধান কি”? মেসোর উত্তর, “ সমাধানের গল্প তো শুনলেই”।

      মনটা খারাপ হয়েছিল। দেড় বছর বাদে আমার শ্বশুর বাড়ী কিশোরগঞ্জের এক ভদ্রলোক, একই গল্প শুনিয়েছেন, এরপর থেকে আমার ধারণা বদলে যেতে শুরু করে। শ্রদ্ধা বা অশ্রদ্ধা, কোনটাই আমার মধ্যে কাজ করতোনা। উনাকে আর মহাপুরুষ মনে হতোনা, স্রেফ একজন সুদের ব্যবসায়ী মনে হয়েছিল। বাংলাদেশে অনেক বড় বড় ব্যবসায়ী আছেন, উনিও একজন বড় ব্যবসায়ী হয়ে উঠেছিলেন। সত্যি কথা শুনতে খারাপ লাগে, সত্যবাদীরা ‘অপ্রিয়’ হয়, আর সত্যবাদী যদি ‘নারী’ হন, তাহলে তো কথাই নেই। সত্যি কথা বলতেন বলে ‘খনা’র জিভ কেটে ফেলা হয়েছিল, চাঁছাছোলা ভাষায় সত্যি কথা বলেন বলে শেখ হাসিনাকে অনেকবার পৃথিবী থেকেই সরিয়ে দেয়ার চেষ্টা হয়েছিল। সেই চাঁছাছোলা সত্যবাদী নারী ইউনুস সাহেবকে ‘সুদখোর’ বলেছেন, তাতেই যত গোলমাল সৃষ্টি হয়েছে। এমনকি আমাদের লিয়াকত আলী ভাইয়ের মাথাও এলোমেলো হয়ে গেছে। উনি মাত্র সাত বছর আগে পাওয়া ‘নোবেল’ পুরস্কারের গুণাগুণ সম্পর্কে এত সুদীর্ঘ বর্ণনা করেছেন, এত সুন্দর করে ইউনুসনামা প্রকাশ করেছেন, মনে হয়েছে আওয়ামীপন্থী বোকা পাঠকরা বুঝি এই প্রথম জানলো, ‘নোবেল’ কারা পায়, কেন পায়, কীভাবে পায়! ‘দাদারে আদা পড়া শিখাইছেন উনি।

      লিয়াকত ভাই বলেছেন, শেখ হাসিনা কেন পার্বত্য শান্তি চুক্তির জন্য শান্তিতে নোবেল পেলেননা, সেই হিংসেয় জ্বলছেন। সত্যি কথা বলতে কি, নোবেল পুরস্কার প্রদানে যদি পরিচ্ছন্নতা থাকতো, তাহলে ঋণ প্রকল্পে শান্তি পুরস্কার না দিয়ে ‘পার্বত্য শান্তি চুক্তি’ করার জন্য শান্তি পুরস্কার আসতো। বাট নাথিং ওয়াজ ফেয়ার।

      লিয়াকত ভাই, আপনি এবং আপনার নতুন গুরু ইউনুস সাহেব বলেছেন, আগামী নির্বাচনে ৮৪ লাখ নারী ভোটার শেখ হাসিনাকে ভোট দিবেনা। আপনি বলেছেন, ৮৪ লাখ নারীর ঘুরন্ত ভাগ্যের দুরন্ত চাকা নাকি শেখ হাসিনা থামিয়ে দিয়েছেন। এই খবর কোথা থেকে সংগ্রহ করলেন লিয়াকত ভাই যে শেখ হাসিনা নারীদের চাকরী থেকে বরখাস্ত করেছেন? আর এটাই বা কেন বলছেন যে ইউনুস সাহেবকে শেখ হাসিনা বের করে দিয়েছেন। কথায় কথায় আইনের শাসন চান, আইনের ভেতর দিয়েই তো সব হয়েছে। কোর্ট উনাকে বরখাস্ত করেছে। আইনের শাসন চান আর আইন যদি আপনার বিপক্ষে যায়, তাহলেই শেখ হাসিনার দোষ হয়ে যায়।
      আইন সংস্কার করতেই হবে, এমনি এমনি দেশ উন্নতি করেনা, কেউ একজনকে এগিয়ে আসতে হয়, শেখ হাসিনা এগিয়ে এসেছেন, বড় বড় রাঘব বোয়ালদের ধরতে না পারলে চুনোপুঁটি মেরে কোন লাভ হবেনা। উনার নিজের দলেও বহু খারাপ লোক আছে, উনি তাদের ব্যবস্থাও করছেন অথবা করবেন। সমস্যা হচ্ছে, আপনারা মানুষটাকে সাহায্য করছেননা, শুধু ক্ষমতার চিন্তায় মশগুল,
      পুরুষতান্ত্রিক সমাজে প্রায় সকল পুরুষই নারীকে অবগুন্ঠিত দেখতে ভালোবাসে, মুখে কথা সরেনা টাইপ নারী দেখতে ভালোবাসে, ওভাবেই অভ্যস্ত হয়ে যায়, তারমধ্যে কোন নারী যদি চাঁছাছোলা ভাষায় ক্যাটক্যাট করে সত্যি কথা বলে দেয়, তাহলে তো তার জনপ্রিয়তায় ধ্বস নামবেই। শেখ হাসিনার জনপ্রিয়তাও নাহয় কমে গেছে, তাতে কি সত্যিটা মিথ্যে হয়ে যাবে? তাই যদি হতো, তাহলে কোর্টের রায়ের পর কেন ৮৪ লাখ নারী কোর্টের রায়ের বিরুদ্ধে মিছিল করলোনা? ৮৪ লাখ নারী নির্বাচনের আশায় পেটে ত্যানা বেঁধে বসে আছে কেন? এখনই তো পারে মিছিল করে শেখ হাসিনার বাড়ীর দিকে যেতে? অত সহজ নয় লিয়াকত ভাই, আপনাদের মত প্রবীনেরা যেমন শেখ হাসিনার নামে কুৎসা ছড়াচ্ছেন রুটি হালুয়া খোরমা খেজুরের লোভে, তেমনি আমার প্রিয় তরুণদের অনেকেই বিনালোভে, শুধুমাত্র দেশপ্রেমের নেশায়, বঙ্গবন্ধুর প্রতি কৃতজ্ঞতাস্বরূপ বঙ্গবন্ধুর মেয়েকে ছায়া দিয়ে রাখছে।

      লিয়াকত আলী ভাইয়ের নেতা হো মো এরশাদ সাহেব এখনও মহাজোটে আছেন, বাঁধন ছিঁড়ে ফেলবো অবস্থায় হুমকী ধমকী দিয়ে যাচ্ছেন। এখনও যাননি। উনার নেতার মত এমন মুখমোছা, অকৃতজ্ঞ আমার এই জীবনে আমি দেখিনি। উনি এখনও মহাজোটের ভাত খেয়ে যা শুরু করেছেন, তারই রেশ ধরে লিয়াকত ভাই হাসিনা বিরোধী প্রোপাগান্ডায় নেমেছেন।
      এরশাদ সাহেবকে নিয়ে কারো কোন মাথাব্যথা নেই, উনার চরিত্রই এমন, একটি প্রবাদ আছে, “যেই পাতে খায়, সেই পাতেই ত্যাগ করে যায়”। উনাকে সারাজীবন এভাবেই ফ্যা ফ্যা করে যেতে হবে। উনি কবিতা লিখেও কবি হতে পারেননি, ঘরে স্ত্রী রেখেও পরকীয়া ছাড়তে পারেননি, দেশের প্রেসিডেন্ট হয়েও ছাত্রদের উপর ট্রাক তুলে দেয়ার নির্দেশ দিতে পিছপা হননি। বয়সের সাথে সাথে মানুষের ্মনে পরিবর্তণ আসে, কিন্তু উনার আসেনি, উনি মহাজোটে থেকেই শাপলা চত্বরে পানি-খাবার সাপ্লাই দিয়েছেন, তেঁতুল হুজুরের সকল কর্মকান্ডকে বৈধতা দিয়েছেন, বঙ্গবন্ধুর এতিম মেয়ে বাপের মতই সিংহ হৃদয় পেয়েছে, তাই বোধ হয় এই ‘মুখমোছা’ ভদ্রলোককে মহাজোটে নিয়েছে।

      কিন্তু লিয়াকত ভাই, আপনাকে নিয়ে আমার দুঃশ্চিন্তা। আপনি তো হেফাজতীদের সহ্য করতে পারেননা, আদরের দুই নাতনীকে আধুনিক মন মানসিকতা দিয়ে বড় করবেন বলেছেন ( মত পাল্টেছেন কিনা জানা নেই), তা আপনিও যদি শেখ হাসিনার বিরোধীতা করেন, এরশাদ বন্দনা, ইউনুস বন্দনায় নেমে উনাদের সাথেই বেগম খালেদা জিয়ার সাথে যোগ দেন, তখন নাতনীদের নিয়ে কি করবেন? মাথায় কাপড় পেঁচিয়ে ঘরে রেখে দিবেন, নাকি রাঙা নেত্রীর মত অন্যের নাতনীকে কাপড়ে পেঁচিয়ে রাখতে বলে নিজের নাতনীকে জিন্স টিশার্ট পড়াবেন। বেগম জিয়া তো তাই করেন, উনার দলের নারী কর্মীদের সবাইকে পর্দা করতে বলে সূক্ষ্ম সূতোয় বোনা ফরাসী শিফনে নিজেকে আবৃত করেন।
      আপনার বন্দেগী জাঁহাপনা ইউনুস সাহেবের কন্যা আমেরিকার ফাস্ট লাইফ লীড করেন, ইউনুস সাহেব নিজে আমেরিকান সমকামীদের বিবাহ সমর্থণ করেন, নিজে আমেরিকান নারীদের হাগ করে ছবি তুলেন, অথচ দেশে গিয়ে বিএনপি জামাত হেফাজতকে সমর্থণ করেন। এটা দেখে আমি অস্থিরতায় ভুগি, কেন এই ভন্ডামী, কাঁর সাথে ভন্ডামী? নিজের সাথেই কি ভন্ডামী করা হচ্ছেনা?

      উপরে বর্ণিত ভন্ডদের চেয়ে শফী হুজুরকে আমি অনেক বেশী সম্মান করি। উনি উনার আদর্শে ঠিক আছেন। উনাকে চেনা সহজ, উনি নারীকে তেঁতুল ভাবেন, সেটা বলেও ফেলেছেন। নারীরা উনার সামনে দিয়ে হাঁটাচলা না করলেই হলো। উনি শফিক রেহমানের মত ভন্ড নন, উনি শফিক রেহমানের মত কোট প্যান্টালুন পরে খালেদা জিয়ার নাকের কাছে লাল গোলাপ ধরতে যাননা, শফিক রেহমানের মত কোন ভন্ডামী উনার মধ্যে নেই। উনি উনার বিশ্বাসে অটল আছেন। উনি এরশাদের মত ভন্ড নন, এক বিকেলে বলেন আমি মহাজোটে আছি, পরের বিকেলে বলেন মহাজোট ছাড়তে পারলে বাঁচি। শফি হুজুর ডঃ ইউনুসের মত ভন্ড নন, ইউনুস সাহেবের মত আমেরিকায় গিয়ে লারেলাপ্পা করে দেশে ফিরে হুজুরের পানিপড়া খায়না, শফি হুজুর আগাগোরাই হুজুরই আছেন, থাকবেন।

      ** লিয়াকত ভাই, মূল উত্তর হচ্ছে, ডঃ ইউনুসের সাথে শেখ হাসিনার বিরোধ ‘বিশেষ্য ‘নোবেল’ নিয়ে নয়, বিরোধ হচ্ছে ‘সুদখোর’ বিশেষণ নিয়ে।
      13Like · · Promote ·
       
       
       
      'আলুভর্তা'র মহিমা!!

      দুই দিন আগেই একজন বন্ধুর ওয়ালে 'আলুভর্তা'র ছবি দেখে এমন লোভ হচ্ছিল খেতে কি আর বলবো! 'ঠাকুরবাড়ীর আঁতুরঘরে' নিয়ে খুব বেশী ব্যস্ত ছিলাম বলে 'আলুভর্তা'র কথা সাথে সাথে ভুলে গেছিলাম। গতরাতে স্ক্রিপ্ট জমা দিলাম, মনে হলো অনার্স ফাইনাল শেষ হলো। আজ দুপুরে কাজে বের হওয়ার আগে ফ্রীজ চেক করে দেখি তিনদিন আগের রান্না করা চিংড়ি মাছের মালাইকারী আর একটু চিকেন কারী, একটু ডাল, একটু টমেটোর চাটনি পড়ে আছে। বিকেলে ওয়ালমার্ট থেকেই মিথীলাকে ফোনে বললাম, তিনটে আলু মাইক্রোওয়েভ ওভেনে যেন সেদ্ধ করে রাখে। ব্রেকটাইমে বাড়ী ফিরে 'আলুভর্তা' বানাবো।

      ব্রেকটাইমে বাড়ী ফিরেই পেঁইয়াজ কুচি, কাঁচামরিচ কুচি, ঝাঁজওয়ালা সরষের তেল ( খাঁটি কিনা জানিনা), আর লবন মিশিয়ে দিলাম ডলা, সরষের তেল আর পেঁইয়াজ, লঙ্কায় গন্ধ যা বের হলো, মনে হলো কাউকে না দিয়ে আমিই সবটুকু খেয়ে ফেলি।
      রাত ৯টায় বাড়ী ফিরে দেখি, উত্তম খাচ্ছে, ভেবেছি 'আলুভর্তা' খেয়ে বোধ হয় খুব উচ্ছ্বাস দেখাবে।
      "ও হরি, ভাবি কি, হয় কি। "এমনভাবে উত্তর দিল যেন রোজদিন 'আলুভর্তা দিয়ে ভাত খায়।

      মিথীলাকে ডাকলাম, খাওয়া হয়েছে কিনা জিজ্ঞেস করতেই বলে, " আমি এখন লক্ষ্মীপূজা করছি, পরে খাব।"

      দিলাম এক ধ্যাতানী, " এই মেয়ে রাত ৯টার সময় পূজো করছি মানেটা কি? সন্ধ্যায় কি ঘুমিয়ে পড়েছিলে"?

      " না, ঘুমাইনি, তখন ভুলে গেছিলাম, আজ বৃহস্পতিবার, তাই লক্ষ্মীর পাঁচালী পড়া হয়নি। এখন আবার নতুন করে পড়ছি"।

      মিথীলাকে বলতে পারতাম, এটাকে বলে ' আক্কেল সেলামী', কিন্তু ও বুঝবেনা। যাক, মিথীলার জন্য অপেক্ষা করছিলাম, নিউইয়র্ক থেকে 'টুম্পা' ফোন করেছে, কি ব্যাপার? ও মামীকে নিয়ে ক্রিসমাস ব্রেকে আসবে, শর্ত হচ্ছে আমাকে সীক কল দিয়ে বাসায় বসে থাকতে হবে। যদি শর্ত না মেনে কাজে যাই, তাহলে ও আসবেনা।

      বললাম, ' গেট লস্ট, না আসলে নাই, মামীকে পাঠায়ে দিবি।"

      টুম্পা বলে, " ইস! তুমি চাকরী করবা আর তোমার মামী গিয়ে কি ভাগ্নীর খালি বাড়ীতে ভাত রানবে"?

      বললাম, " শোন, আমার মামী যদি তাঁর মেয়েকে বছর ভরে ভাত রেঁধে খাওয়াতে পারে, তাহলে মামী তাঁর ভাগ্নীকে সাতদিন ভাত রেঁধে খাওয়াবে। তোর আসার দরকার নাই। আমি ফোন রাখলাম।"[ মামী তার মেয়ের কাছে বেড়াতে এসেছে, এই ফাঁকে টুম্পা তার পড়াশুনা শেষ করার চেষ্টা করছে। খুব ভাল রেজাল্টও করছে]

      মিথীলার তখনও পূজা শেষ হয়নি,এই ফাঁকে দেশে ফোন করলাম, আমার অতি প্যায়ারের ছোট মাসীকে। ছোট মাসীর সাথে ঠিক করলাম, জানুয়ারীতে মাসীকে নিয়ে ইন্ডিয়া বেড়াতে যাব। মাসীকে স্কুল থেকে এক মাসের ছুটি নিতে বললাম। মাসীর কাছে টুম্পার নামে বিচার দিলাম, মাসী-বোনঝি খুব হাসলাম। খেয়াল করছিলাম, মাসী ফাঁকে ফাঁকে বলে, সারা দেশ বেড়াবি, আমার কিন্তু টাকা পয়সা নাই। আমি না শোনার ভান করে অন্য কথা বলি। মাসীও অন্য কথার উত্তর দিয়ে ফাঁকে বলে চলেছে, "আমার কিন্তু হাতে এক পয়সাও নাই।" আমি তবুও বলিনা, মাসী তোমার যাতায়াতের সব খরচ আমার।

      এইবার মাসী বলে, " মিঠু, উইদাউট পে'তে ছুটি নেবার চেষ্টা করবো"। বলি করো, আমি আর তুমি একমাস পুরা ঘুরবো, দেখি, নেপাল যাওয়ার চেষ্টা করবো। মাসী আবার বলে, " আমার হাতে কিন্তু টাকা পয়সা নাই"। মাসীর কথার জবাব না দিয়ে বললাম, " মাসী, ঐ কথাই রইলো, জামুয়ারী আমরা ঘুরবো, রেডী থেকো। আজকে রাখি, কেমন? মাসী জানে, আমি মাসীর যাতায়াত খরচ দেবো, আর আমি জানি, মাসী যাতায়াত খরচের তিনগুণ আমাকে দিবে। তারপরেও আমরা এমনভাবে কথা বলি, যেন আমার দাবীর শক্তি বেশী, আমিই রাণী, মাসী আমার প্রজা।

      মিথীলা পূজা শেষ করে নেমে এসেছে। আমার আর তর সইছিলোনা, কতক্ষণে 'আলুভর্তা' খাব। উম! প্লেটে এতগুলো 'আলুভর্তা নিলাম, কাঁচামরিচগুলো যা ঝাল, বাসমতী চালের চিকন ভাত, ধোঁয়া উঠছে, সাথে চিংড়ি মালাইকারী নিতেই হলো, নাহলে মিথীলা ছাড়বেনা, আমাকে চিকেনকারী সাধছিল, এক ধমক দিয়ে বসিয়ে দিলাম। চিংড়ির মালাইকারীটা কোনমতে মুখে ফেলেই গিলে ফেলছিলাম। যাক! এবার আলুভর্তা! কি ভাল হয়েছে খেতে! কোথায় লাগে মালাকারী, কোথায় লাগে চিকেন কারী! ভেজালই হোক, খাঁটিই হোক, সরষের তেলের ঝাঁঝে মাথা পরিষ্কার হয়ে গেলো।

      ** এবার বসবো ইউনুস সাহেবকে নিয়ে। লিয়াকত আলী ভাই প্রশ্ন করেছিলেন, যে জবাব দিয়েছি, উনার পছন্দ হয়নি। আরও পরিষ্কার জবাব চেয়েছেন। তখনতো মাথা জ্যাম হয়েছিল, সরষের তেলে মাখা আলুভর্তা খেয়ে মাথার জ্যাম কেটে গেছে।
      1Like · · Promote ·
       
      চাঁদের যেমন কলঙ্ক আছে, ক্ষুদ্র ঋণেরও ওজন আছে!!
      ছোট ছোট মানুষের ছোট ছোট চাওয়া
      সেই চাওয়াকে পুঁজি করে চেক ফতুয়ার
      অদৃশ্য পকেটে বড় মুনাফা পাওয়া!!!!
      (যাহা রটে, তার কিছুটা তো বটে!!)
      1Like · · Promote ·
       
      ডঃ ইউনূস বিএনপি তে যোগ দিয়েছেন, এটা তো নতুন কোন সংবাদ নয়, বিএনপিতে উনি অলিখিতভাবে অনেক আগেই ছিলেন, এখন অফিসিয়াল ঘোষণা দিয়েছেন, এখন অনেকেই যোগ দিবেন, যেমন যোদ দিয়েছে 'ময়ূরী'! যোগ দিয়েছে 'কনকচাঁপা'। আরও অনেকেই যোগ দিবে, যার স্বার্থ যেখানে, সে সেখানেই যাবে। ডঃ ইউনুস প্রেসিডেন্ট হবেন, আশফিয়া পাপিয়া, নীলুফার মনি, রেহনুমা রানু, শাম্মী আখতার, জয়নুল আবেদীন ফারুক মন্ত্রী হবেন।
      ময়ুরী হবে মাননীয় সংসদ সদস্য!! [ লে হালুয়া]
      19Like · · Promote ·
       
       

      আমার 'বায়াসড' স্ট্যাটাস পড়ে, আমারই প্রিয় ফেবু ভাইদের মধ্যে, যারই মেজাজ গরম হয়ে যাবে, ছবির 'মালপোয়া' তার এবং তাদের জন্য!
      ** আমার উত্তম মালোপোয়া খেয়ে বলে, "সাইড গুলো শক্ত, কুড়মুড় করে", তাকে বলেছি," মালপোয়া এমনই হয়" সে বলে, " কিনারগুলো শক্ত হবে কেন?" বলেছি, " মোটে মায় রান্দেনা, তপ্ত আর পান্তা" কতজনের বউ মালপোয়া নামই জানেনা, আর আমি 'উঠ ছেঁড়ি তোর বিয়া লাইগাছে' তাড়াতাড়িতে মালপোয়া ভেজে দিয়েছি, আর তুমি বল এই কথা! যেমন ভেজে দিয়েছি, তেমনই খেতে হবে, অন্য কোন স্টাইলে মালপোয়া ভাজা হবেনা।**
      Like · · Promote ·
      জন্মাষ্টমীতে 'মালপোয়া', 'তালের বড়া', 'রসবড়া' খাওয়া হয়। দিনে দিনে সব ভুলে যাচ্ছি, এটিও ভুলে গেছিলাম। বাংলা সংস্কৃতি নিয়ে খুব বেশী আদিখ্যেতা করি বলেই বোধ হয় মনের অবচেতনে থাকা বোধটুকু জেগে উঠেই খোঁচাতে শুরু করেছে, " যা না, দুটো মালপোয়া ভাজতে কত আর সময় লাগে, মালপোয়া ভেজে তোর উত্তমকে খেতে দে, মনে করে দ্যাখ, 'সাড়ে চুয়াত্তর' সিনেমায় ভানু বন্দোপাধ্যায় সুচিত্রা সেনের মায়ের কাছে গিয়ে বলেছিল, মাসীমা, মালপুয়া খামু'"
      যাই, আমার উত্তমের জন্য দুটো 'মালপুয়া' ভেজে ফেলি।
      সবাইকে শুভ জন্মাষ্টমীর 'মালপোয়া' শুভেচ্ছা!!!!!!!!!!!!
      Like · · Promote ·
      ita Roy Mithu
      এরশাদ সাহেব বলেছেন, " ঐশী নয়, রাজনীতিবিদরাই খুনী"-----
      আমার প্রশ্ন, উনার জাতীয় পার্টি কি রাজনৈতিক দল নয়? উনি কি রাজনীতিবিদ নন?
      তাহলে 'ঐশীর বাবা -মা' খুনের দায় কি ঐশীর বদলে উনি নিতে চাইছেন?
      *** এই ভদ্রলোকের কথা বলার ভঙ্গী অসাধারণ, এবং অসাধারণ ভঙ্গীতে উনি কথাগুলোও বলেন অসাধারণ! সেদিন বললেন, " মহাজোট ছাড়ার প্রশ্নই আসেনা, মহাজোট ছেড়ে যাবই বা কোথায়"? আবার দুইদিন আগেই বললেন, " মহাজোট ছাড়ার জন্য প্রস্তুত"।
      আফসোস! এনারাই আমাদের দেশের রাজনীতি নিয়ন্ত্রণ করেন, হাহ!!!! আমাদের যাওয়ার জায়গা নাই।
       
       
       
      'অভিজ্ঞতা'

      জীবনে প্রথম হাতে 'পিস্তল' নিলাম!
      পিলে চমকে যাওয়ার মত খবর, তাইনা?

      হা হা হা!! পিলে চমকানোর কিছু নেই, সভ্য দেশের সভ্য মানুষ, নিজের নিরাপত্তার দোহাই দিয়ে সাথে পিস্তল বহন করে। তেমনই একজন সভ্য মানুষ এসেছিল আমার ডিপার্টমেন্টে, চেক আউট করতে। তার হাতে ধরে রাখা বক্সটি সিকিউরিটি লক দিয়ে আটকানো। আমাদের ডিপার্টমেন্টের প্রিপেইড ফোনগুলো যে লক দিয়ে আটকানো থাকে, সেরকম লক। কাজেই লক খুলবার ম্যাগনেট আমার কাছে ছিল। ফোন ছাড়াও অনেক দামী আইটেম সিকিউরিটি লকে আটকানো থাকে, কারণ অবাক হলেও সত্যি, সভ্য দেশের সভ্য মানুষের মধ্যেও প্রচুর 'চোর' থাকে, এবং তারা সকলেই সিঁদেল চোরের জ্যেঠামশাই।

      সেই সভ্য মানুষটি তার হাতের বাক্সটি দেখিয়ে আমাকে জিজ্ঞেস করলো, আমার রেজিস্টারে চেক আউট করতে পারবে কিনা। হাসিমুখে বললাম, " হ্যাঁ, পারবে।"
      সে বাক্সটি আমার হাতে দিতেই এর ওজন দেখে অবাক হয়ে গেলাম। বাক্সের বাইরে ছবি দেখে 'টাসকি' লেগে গেলাম। হায়, হায়, আমার হাতে এটা কি? এ যে দেখছি 'পিস্তল'!!!
      স্ক্যান করলাম, দাম ৯৯ ডলার ৯৮ সেন্টস। কোন রাখঢাক নেই, শুধু ক্রেতাকে ১৮ বছর বয়সী হতে হয়!

      আমি ক্রেতার কাছে 'পিস্তল' বিক্রী করলাম, ক্রেতার দিকে ভালো করে তাকালাম, সাদা চামড়ার যুবক, বয়স আনুমানিক ২৮, সারা গায়ে ইকরি মিকরি ট্যাটু আঁকা! পিস্তলটি ক্রেতার হাতে তুলে দেয়ার সময় কেমন এক ধরণের শিরশিরে অনুভূতি হলো! কার প্রাণ সংহার করা হবে কে জানে! যার প্রাণই সংহার করা হোক, আমার কিছু দায় তো থেকেই যায়।

      ** এখানে যখন তখন ঠুশ করে মেরে ফেলার গল্প আমি জানি, অন্য সময় এই গল্প শোনাব।

      ** ওয়ালমার্টে চাকরী না করলে আমেরিকার সাধারণ জনগণ সম্পর্কে কোন ধারণাই থাকতোনা! ৮ বছর ওয়ালমার্টে চাকরী করে দুটি জিনিস পরিষ্কারভাবে বলতে পারি,
      এ দেশের **'সাধারণ যুবসমাজের'** অধিকাংশের কোমড়ে পিস্তল থাকে, আরেকটি হচ্ছে, এদেশের **'সাধারণ যুবসমাজের'** অধিকাংশের কপালে 'জেলের ভাত' লেখা থাকে।

      হা হা হা!! এই সভ্য দেশের সভাসদরা আবার অন্যদেশে গিয়ে মানবতা শেখায়!!
     
     

    'যক্ষের ধন"!

    আজ আমার ভীষণ মন খারাপ, অথচ মন খারাপ হওয়ার মত তেমন কিছু ঘটেনি। হতে পারে, আমার মিশা আজ আবার তার স্কুলে ফিরে গেল, এটিও একটি কারণ হতে পারে। আবার এমনও হতে পারে, মিশা তার স্যুটকেস থেকে আমার জন্য বাংলাদেশ থেকে নিয়ে আসা ওর দিদার একজোড়া চটি, গতকাল রাতেই আমার হাতে তুলে দিয়ে বলেছে,
    "মা, এই যে দিদার চটিগুলো নিয়ে এলাম, দিদার চশমাটাও এনেছি, মনে হয় তোমাকে আগেই দিয়েছি, কারণ এখন আমার কাছে চশমাটা আর নেই।"
    মিশার হাত থেকে মায়ের চটিজোড়া হাতে নিয়ে কতক্ষণ বিবশ হয়ে ছিলাম, মনে নেই। হয়তো কয়েক সেকেন্ড, কিন্তু মনে হচ্ছে কয়েক ঘন্টা। চটিজোড়া প্লাস্টিকের বাইরে বের করিনি, পাছে ভয় হয়েছে, বেশী নাড়াচাড়ায় চটিতে লেগে থাকা মায়ের পায়ের ধূলো হয়তো ঝরে পড়ে যাবে। তার চেয়ে এই ভাল, প্যাকেটের ভেতর থাক, প্লাস্টিকের প্যাকেট, বাইরে থেকে সব দেখা যায়, এমনকি কল্পনায় আমি মায়ের পায়ের ধূলিটুকূও দেখছিলাম।

    বইয়ের জন্য লেখা শেষ করতে হচ্ছে, রাত জাগতে হয়, শেষ রাতে চেয়ারে বসেই ঘুমাচ্ছিলাম, এই কাজটি ইদানিং খুব বেশী ঘটছে, চেয়ারে বসেই ঘুম, আমাকে ফেবু'কে অন দেখে অনেকেই হয়তো মেসেজ পাঠায়, ঘুমন্ত আমি তা খেয়াল করতে পারিনা, যে মেসেজ পাঠায়, উত্তর না পেয়ে সে হয়তো দুঃখ পায়, আর আমি কত মেসেজ এভাবে মিস করে যাই।
    খুব আনমনা মনেই কাল ভোর রাতে বিছানায় শুয়েছি, কিছুক্ষণের মধ্যেই মা'কে স্বপ্নে দেখলাম, কি দেখলাম, মনে নেই, তারও পরে পরীক্ষার হলে নিজেকে অসহায় অবস্থায় আবিষ্কার করে খুব কষ্ট পেলাম। সকালে খেয়াল হলো, এমন স্বপ্ন দেখেছি দুটি কারণে, একটি হচ্ছে, বুঝে হোক, না বুঝেই হোক, বাংলাদেশের চলমান রাজনীতি নিয়ে খুব বেশী ভাবছি, শিক্ষিত মানুষের হঠকারী কমেন্ট আমাকে আশাহত করছে, তাই স্বপ্নে নিজেকে অসহায় দেখেছি। দ্বিতীয় কারণ, আমি 'ঠাকুরবাড়ীর আঁতুরঘরে' নামের যে বইটি লিখার সিদ্ধান্ত নিয়েছি, বুঝতে পারছিনা, কাজটি সঠিক হলো নাকি বেঠিক হলো। আমার লেখালেখির উপর কোন পূর্ব অভিজ্ঞতা ছিলনা, সাহিত্য আমার বিষয় নয়, ভাষা অত্যন্ত দূর্বল, এমতাবস্থায় 'কবিগুরু'র বাড়ীতে কিছুক্ষণের স্মৃতি নিয়ে এতবড় একটি কাজে হাত দিয়েছি, জীবনের প্রথম বই, কেমন হবে কে জানে, পাঠক গ্রহণ করবে নাকি পরিহাস করবে, প্রকাশক নিজের খরচে আমার বই প্রকাশ করার যে উদারতা এবং মহত্ব দেখাচ্ছেন, আমি কি তাঁর এই পৃষ্ঠপোষকতার প্রতি সুবিচার করতে পারবো? এই দুঃশ্চিন্তাই হয়তো আমাকে ভেতরে ভেতরে অসহায় করে তুলেছে।

    আমি খুব জেদী, একবার যখন নিয়ত করেছি, বইটি আমি লিখব, সেই জেদই আমাকে রাতের পর রাত চেয়ার টেবিলে আটকে রাখছে, পাশে রাখি আমার পুরনো মোবাইল ফোন। এই ফোনটির বয়স প্রায় পাঁচ বছর। যে দেশে বাস করছি, এদেশের মানুষ একটি ফোন পাঁচ মাসও ব্যবহার করেনা, আর আমি পাঁচ বছর ধরে ব্যবহার করছি। দ্বিতীয় আরেকটি ফোন কেনার সামর্থ আমার আছে, পরবর্তী দুই বছরের জন্য চুক্তি নবায়ন করলেই মাত্র এক ডলারে স্যামসাং গ্যালাক্সী এস ৩ পাওয়া যাবে।

    কিন্তু আমি তা করছিনা। কারণ এই ফোনের 'পিকচার মেমরী'তে চারটি মূল্যবান ছবি আছে। চারটি ছবিই আমার মা'কে ঘিরে তোলা। দু'টি ছবিতে মা আইসিইউ'র বেডে করুণ চোখে শূণ্য দৃষ্টিতে তাকিয়ে আছে, একটি ছবি শূণ্য বেডের, জীবনে শেষবার অপারেশান থিয়েটারে প্রবেশের আগে যেখানে মা শুয়ে শুয়ে হাসপাতালের টিভি স্ক্রীণে ইটিভি বাংলা'তে কোন একটি সিরিয়াল দেখেছিলেন, কোন বৌকে যেন পাজী বলেছেন, জীবনের শেষ ডায়ালগ যে বেডে শুয়ে দিয়েছিলেন, সেই বেডের ছবি, আর শেষ ছবিটি রজনীগন্ধার মালা গলায়, কপালে সিঁদুরের টিপ, দুই চোখ বন্ধ, চিরনিদ্রাবস্থায় তোলা।

    আরও বেশ কিছু কারণে ফোনটি পাল্টাতে পারছিনা, এই ফোনের মেসেজ বক্স ভর্তি হয়ে আছে, খুব প্রিয় কিছু মানুষের পাঠানো টেক্সটে। এই মানুষদের অনেকেই হয়তো প্রচন্ড ব্যস্ত, বন্ধুকে ভুলে গেছে, অথবা ভুলে থাকতে হচ্ছে, কিন্তু আমার তো ব্যস্ততা নেই, তাই আমি সব সময় সেই প্রিয় মানুষগুলোকে মিস করি, অনেক মিস করি, যখনই কারো কথা মনে পড়ে যায়, ফোনের মেসেজ বক্স থেকে ওদের পাঠানো টেক্সটগুলো বের করে পড়ি, তারপর আবার টেক্সটগুলোকে যথাস্থানে রেখে বক্সের ডালা বন্ধ করে দেই।

    দুইদিন আগে ওয়ালমার্টের টি-রুমে বসে মায়ের কথা মনে হলো, পিকচার অপশনে গিয়ে স্ক্রল ডাউন করে মায়ের করুণ চোখে তাকিয়ে থাকা ছবি দুটো দেখলাম, দু চোখ বেয়ে জল পড়লেও মনে হলো, এই তো আমার জীবিত মা, যিনি আমার সাথেই থাকে, যখন ইচ্ছে হয়, ফোনের ঢাকা খুলে দেখে নেই।
    গত বছর আগস্টের ৮ তারিখে মায়ের প্রথম অপারেশান হবে শুনে আমার ফেবু বন্ধুদের অনেকেই ্মা ভাল হয়ে যাবে বলে আমাকে সেদিন সান্ত্বণা দিয়েছিল, মনে শক্তি জুগিয়েছিল, তাদের একজন বন্ধু রাজু আহমেদ। রাজু আহমেদকে আমি ৯ই আগস্ট তারিখে পালটা মেসেজে জানিয়েছিলাম, মায়ের অপারেশান হয়েছে, মা ভাল আছেন, বাকী খবর জেনে আপনাকে জানাবো। এরপর প্রতিটি ঘটনা খুব দ্রুত ঘটে গেছে, মা পারেননি ক্যানসারের সাথে লড়াই করে টিকে থাকতে। মা হেরে যাবার পর থেকে আমি ফেবু'তে চ্যাট লাইন প্রায়ই অফ রাখি, খুব প্রয়োজন হলে কিছুক্ষনের জন্য ওপেন করে ভাইদের সাথে কথা বলি, দুই একজন বন্ধুর সাথেও কথা বলি। বাকী সময় আমি কাটাই 'সর্বনাশা রাজনৈতিক ক্যাঁচালের' মধ্যে। এই ক্যাঁচালে থেকে আমি মায়ের অপারেশানের তারিখটি ভুলে গেছিলাম। ঠিক ভুলিনি, আমার মনে হচ্ছিল ৮ তারিখ, প্রতি মাসের ৮ তারিখে মা'কে চিঠি লিখি, এবছর ৮ তারিখে লিখিনি , ছোট মাসী বলেছে ১০ তারিখে অপারেশান হয়েছে, তাই এই দিনে মা'কে চিঠি না লিখে ঈদের নিমন্ত্রণ খেতে গেছিলাম। পরে ১০ তারিখে মা'কে চিঠি লিখেছিলাম।

    গতকাল সেই বন্ধু রাজু আহমেদ আমার একটি রাজনৈতিক স্ট্যাটাসের উপর মন্তব্য করেছে, সেখানে আমাকে 'এভারেজ ইন্টেলিজেন্স' এর লেখিকা আখ্যা দিয়ে বলেছে, বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি কিন্তু শেখ হাসিনাকে ভালোবাসিনা' বলার মত সাহস বা জ্ঞান আমার নেই। আমি বন্ধুকে ইনবক্সে মেসেজ পাঠিয়ে আমাকে 'এভারেজ ইন্টেলিজেন্স'এর লেখক বলায় ধন্যবাদ দিয়েছি ( কারণ একেবারে নতুন লেখক হিসেবে এটা আমার জন্য একটি কমপ্লিমেন্ট) কিন্তু শেখ হাসিনাকে নিয়ে তীর্যক মন্তব্য করার সমালোচনা করেছি। এই মেসেজ পাঠাতে গিয়ে দেখলাম, গত বছর ৯ই আগস্ট তারিখে তাকে একটি মেসেজ পাঠিয়েছিলাম, সেখানে বলা আছে মায়ের অপারেশান হয়েছে। এটা দেখার সাথে সাথে মনে হলো, আমি তো ঠিকই বুঝেছিলাম, ৮ তারিখটিই আমার জন্য ব্র্যাকেট বন্দী হয়ে গেছে, ৮ই জুন মেয়ে শ্বশুর বাড়ী চলে গেছে, ৮ই আগস্ট মা অপারেশান টেবিলে গিয়ে মৃত্যুকে ডেকে এনেছে এবং ৮ই অক্টোবার মা মৃত্যুর কাছে হেরে গেছে। আর এই বছরের ৮ই আগস্ট আমিও নিজের স্মৃতির কাছে হেরে গেছি, ৮ তারিখের চিঠি ১০ তারিখে পাঠিয়েছি, এরপর হয়তো মাকেও ভুলে যাব।

    ** মা, আজ ইউটিউবে গিয়ে " এই সেই ঘর, এই সেই খাট---চশমাটা আছে, শুধু মা নেই" গানটি চালিয়েছিলাম, প্রথম অন্তরা পর্যন্ত যাওয়ার আগেই বাধ্য হলাম অফ করে দিতে। হাতের মোবাইলটা হাতে ছিলনা , পাশের ঘরে ছিল, মোবাইলটা আমার যক্ষের ধন, এই মোবাইলে তুমি বেঁচে আছ, মোবাইলে তুমি পরম নিশ্চিন্তে চিরনিদ্রায় আছ। মোবাইলটাকে পাশে রেখেই আমি কী-বোর্ডে খটাখট টাইপ করে যাচ্ছি, " ঠাকুরবাড়ীর আঁতুরঘরে"। কত জায়গায় আটকে যাই, মোবাইলে হাত স্পর্শ করি, মনে হয় তুমি পাশে আছো, সাথে সাথে কথা ফিরে পাই। আবার টাইপ করে যাই! মা, আশীর্বাদ করো, যে কঠিন কাজ হাতে নিয়েছি, শেষ পর্যন্ত যেন সফল হই। একটি ছেলে, আমার ছোট ভাই সে, আমার পাশে তার সাহায্যের হাত বাড়িয়ে দিয়েছে, বইটি সে তার প্রকাশনী থেকে বের করছে, তার জন্যও তুমি আশীর্বাদ করো, তুমি একজন পূণ্যাত্মা, তোমার আশীর্বাদে আমি সফল হবো। আমি অনেক পরিশ্রম করছি, আমাকে সফল হতে হবে, আমি হারতে চাইনা, হেরে যাব বলে আমি জন্মাইনি।**
    1Like · · Promote ·
     
     
    মোদের ***** হোটেলের খানা খাওয়ার পয়সা নাই
    তাই ঘরে বসেই ***** হোটেলের খানা খেতে চাই
    ঘরে বসেই যদি***** হোটেলের খানা পেয়ে যাই
    তবে তো ***** হোটেলে যাওয়ার প্রয়োজনই নাই!!
    [ এক অসামান্য, অসাধারণ, অপূর্ব সান্ধ্য ডিনারের 'কখনও ভুলিবনা' স্মৃতি]-- মূল আয়োজনেঃ মিশা, সহযোগেঃ মিথীলা, অনুপস্থিতঃ মৌটুসী-মনীশ
    (14 photos)
    1Like · · Promote ·
     
     
    ita Roy Mithu
    "যত দোষ নন্দ ঘোষ"!!

    যাঁরা বলেন,
    "বঙ্গবন্ধুর সাথে তাঁর কন্যার তুলনা? কখনওই হতে পারেনা। বঙ্গবন্ধু সকলকে কাছে টেনে নিতেন, বঙ্গবন্ধু এই করতেন, সেই করতেন, বঙ্গবন্ধু সহনশীল ছিলেন, বঙ্গবন্ধু পাহাড়ের সমান বিশাল ছিলেন, বঙ্গবন্ধু যাকে তাকেই কন্যা বলে গ্রহণ করতেন, কতজনকেই পুত্র বলে হৃদয়ে ঠাঁই দিয়েছেন, অমুককে ভাই বলেছেন, তমুককে বন্ধু বলেছেন, বংগবন্ধু ্মহান! এইজন্যই বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, বঙ্গবন্ধুর বিশাল হৃদয়ের অধিকারী, উনার হৃদয় এতটাই বড় ছিল যে উনাকে সপরিবারে হত্যা করার পরও উনি কিছুই মনে করেননি!

    বঙ্গবন্ধু মহান, বঙ্গবন্ধু নিজেকে 'বাঙ্গালী' বলে গর্ব করতেন, 'জয় বাংলা' বলে শ্লোগান দিতেন, উনাকে হত্যা করার পর বাঙ্গালী পাল্টে 'বাংলাদেশী' হয়েছে, 'জয় বাংলা' পালটে 'বাংলাদেশ জিন্দাবাদ' হয়েছে, মহান নেতা কিছুই মনে করেননি, উনার নাম-নিশানা মুছে দেয়ার চেষ্টা করা হয়েছে, উনি এতই মহান যে কবরে শায়িত থেকে সব দেখেও আমাদের কিছুই বলেননি, উনি এমনই মহান যে উনার কন্যাটিকে এতবার হত্যা করার চেষ্টা দেখেও কিছুই বলছেননা, তেমন এক উদার মহামানবের কন্যা কিনা এত নিষ্ঠুর?? এত বেপোরোয়া? এত জেদী? এত অহংকারী? এমন কইমাছের প্রাণ তো সারাজীবনে আর একটাও দেখিনি!

    বঙ্গবন্ধুর মত মহামানবের কন্যা হয়ে এই মহিলা যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করতে চায়? যে যুদ্ধাপরাধীদের গাড়ীতে বাংলাদেশী জনগণ জাতীয় পতাকা তুলে দিয়েছিল, সেই যুদ্ধাপরাধীদেরকে এই মহিলা ক্ষমতায় এসেই জেলে ঢুকিয়ে দিয়েছে? এটা সহ্য করা যায়? যে কাজ আমরা গত ৪২ বছরেও করতে পারিনি, এই নিষ্ঠুর, নির্দয় মহিলা এসে সেই কাজই করে ফেলতে যাচ্ছে? এগুলো একটা কাজ হলো?
    যে দেশ সারাজীবন খাদ্য আমদানী করে অভ্যস্ত ছিল, সেই দেশকে খাদ্যে স্বয়ংসম্পূর্ণ করে ফেলেছে? এগুলোকে কি সাফল্য হলো? এইসব 'আলতু ফালতু' সাফল্যকে নিয়ে গর্ব করা যায়? কখনওইনা, এই মহিলা বঙ্গবন্ধুর সন্তান হতে পারে, বঙ্গবন্ধুকে 'পিতা' ডাকি বলে তাঁর কন্যাকে পছন্দ করতে হবে? বঙ্গবন্ধু একটি দেশ উপহার দিয়েছেন বলেই কি উনার আওয়ামীলীগকে সমর্থণ করতে হবে? উনার আওয়ামীলীগ কি আর উনার আওয়ামীলীগ আছে? বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি বলে কি আওয়ামীলীগকে ভোট দিতে হবে? বঙ্গবন্ধু তো আরও অনেকেরই পিতা ছিলেন, তাই বলে কি উনাকে হত্যা করতে কারও হাত কেঁপেছে? তাই বলে কি উনার মৃত্যু দিবসে কারও জন্ম থেমে থাকবে, নাকি কারও 'জন্মদিবস' উদযাপন থেমে আছে?
    সবই তো হচ্ছে, শুধু আমরা বললেই দোষ! কথায় বলে ' যত দোষ নন্দ ঘোষ!' আমাদের হয়েছে সেই অবস্থা! "

    ***হা হা হা হা হা হা হা হা !!!!!!!! বলেন, আরও বলেন, শুনতে খারাপ লাগেনা। ***[ তোমাদেরকে বধিবে যে বা যারা, গোকূলে বাড়িছে সে বা তারা]

    ***মনে মনে হাসি, ভাবি, শেখ হাসিনার তো তবু গৌরব করার মত একটি অধ্যায় আছে, যে অধ্যায়ের নামই হচ্ছে 'বঙ্গবন্ধু'---আপনাদের কি আছে? ***
     
     
    অনেকেই ইদানিং বলতে ভালোবাসেন, " আমি বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি, বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগকে ভালোবাসি, কিন্তু বঙ্গবন্ধুর কন্যাটিকে পছন্দ করিনা, বর্তমান আওয়ামীলীগকে পছন্দ করিনা"।
    আমি হাসি, আপনারা বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসলেই কি আর না বাসলেই কি, আপনার বা আমার, কারো কোন উপকারেই আসবেনা। বঙ্গবন্ধুর মেয়ের পোস্টমর্টেম করতে চান, করেন, এর সাথে 'বঙ্গবন্ধুকে ভালোবাসি' বলার দরকার কি? ছুরীর গায়ে মধুর প্রলেপ দেয়ার অপচেষ্টা বই তো আর কিছু নয়! আপনাদের মত ডাবল স্ট্যান্ডার্ড মানুষ সর্বকালেই ছিল, আপনাদের এই দ্বিমুখী নীতি নিজের বিপদ ডেকে আনে, সাথে আশেপাশের সকলের বিপদ ডেকে আনে!
    8Like · · Promote ·
     
     
    ডঃ কামাল হোসেন, ডঃ মুহম্মদ ইউনূস, খন্ডকালীন 'টাইগার' কাদের সিদ্দিকী---সবাই নাকি হাত ধরাধরি করে গুলশান এবং 'বাতাস বাড়ী'র পথে হাঁটা দিয়েছেন!
    হু কেয়ারস!!! লেট দেম গো!!!!!!
    বন্যরা তো বনেই সুন্দর, যাক বনের বাঘ বনেই ফিরে যাক।
    সাধারণ মানুষ যাবে ৩২ নাম্বারের দিকে!!!
    আশার কথা, বাংলাদেশে সাধারণ মানুষের সংখ্যাই বেশী।
    সমুদ্রে পেতেছি শয্যা, হাঙ্গরে কি ভয়????????
    13Like · · Promote ·
     
     
    " আমি নয়নজলে ভাসি"

    মুক্তিযুদ্ধের পুরোটা সময় স্বাধীন বাংলা বেতার কেন্দ্র থেকে অথবা আকাশবাণী কলকাতা কেন্দ্র থেকে " আমার সোনার বাংলা " গানটির সম্পূর্ণ অংশ প্রচারিত হতো। রেডিও শুনে শুনে এতবড় গানটি আমি মুখস্থ করে ফেলেছিলাম। আরও অনেক গানের সাথে এই গানটিও গাইতাম, এমনি নিজের মনেই গাইতাম। সবচেয়ে ভাল লাগতো " তোমার এই খেলাঘরে, শিশুকাল কাটিলরে" প্যারাটি।

    গানটি কবি গুরু ১৯০৫ সালে রচনা করেছিলেন, [ ইংরেজ শাসক কর্তৃক বঙ্গভঙ্গের প্রতিবাদে]। বাংলার এই অপরূপ শোভা উনি দেখেছিলেন কুষ্টিয়ার শিলাইদহে থাকাকালীন সময়টিতে। শিলাইদহে কবি 'গগন হরকরার' দেখা পান, গগন হরকরার কন্ঠে গীত," আমি কোথায় পাব তারে'র বাউল সুরের অনুকরণে এই গানটিতে সুরারোপ করেন। ১৯৭২ সালে বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবর রহমান এই গানের প্রথম দশ লাইনকে বাংলাদেশের জাতীয় সঙ্গীত হিসেবে মনোনয়ন করেছিলেন। জাতীয় সঙ্গীত কমপোজ করেছিলেন সুরকার সমর দাস !!

    ২০০১ সালে আমার মেয়ে মৌটুসী আন্তঃস্কুল ডিবেট কম্পিটিশনের পুরস্কার বিতরণী অনুষ্ঠানে গিয়েছিল। গর্বিত পিতামাতাদেরকেও ঐ অনুষ্ঠানে আমন্ত্রণ জানানো হয়েছিল। বিশাল বড় কোন এক অডিটোরিয়ামে অনুষ্ঠান আয়োজন করা হয়েছিল। অনুষ্ঠানের শুরুতে জাতীয় সঙ্গীত গেয়েছিল এক ঝাঁক কিশোর-কিশোরী। সৌভাগ্যক্রমে আমাদের মৌটুসীও ঐ দলে ছিল। জাতীয় সঙ্গীত যখন শুরু হয়, গ্যালারীর সকলেই দাঁড়িয়ে পড়ে, [কিছু মানুষ বসে ছিল], কিশোর-কিশোরীদের সাথে অনেকেই কন্ঠ মিলিয়েছিল, আমিও তাদের একজন। বলতে বাধা নেই, গানটি করার সময় আমি অঝোর ধারায় কাঁদছিলাম। ততদিনে আমাদের আমেরিকা চলে আসার সকল প্রস্তুতি শেষ, ১লা অক্টোবারের নির্বাচনে বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগ চূড়ান্তভাবে পরাজিত, পূর্ণিমা শীলেরা ধর্ষিত, ঠিক এমনই এক সময় আমি আকুল হয়ে কাঁদছিলাম।
    **কি জানি কেনো, এত বছর পরেও, যে কোন সময়, জাতীয় সঙ্গীতের সুর যখন বেজে উঠে, তখনই আমি নয়ন জলে ভাসি**

    আমার সোনার বাংলা, আমি তোমায় ভালোবাসি।
    চিরদিন তোমার আকাশ, তোমার বাতাস
    আমার প্রাণে, ওগো আমার প্রাণে বাজায় বাঁশী।
    ওমা ফাগুণে তোর আমের বনে, ঘ্রাণে পাগল করে,
    ওমা অঘ্রানে তোর ভরা ক্ষেতে কি দেখেছি মধুর হাসি।

    কি শোভা, কি ছায়াগো, কি স্নেহ কি মায়াগো
    কি আঁচল বিছায়েছো বটের মূলে, নদীর কূলে কূলে
    মা তোর মুখের বাণী আমার কানে লাগে সুধার মত
    মা তোর বদনখানি মলিন হলে আমি নয়নজলে ভাসি।

    তোমার এই খেলাঘরে, শিশুকাল কাটিলরে
    তোমার এই ধূলামাটি অঙ্গে মাখি ধন্য জীবন মানিক।
    তুই দিন ফুরালে সন্ধ্যাকালে কি দীপ জ্বালিস ঘরে
    তখন খেলাধূলা সকল ফেলে
    তোমার কোলে ছুটে আসি।

    ধেনু চরা তোমার মাঠে, পারে যাবার খেয়াঘাটে
    সারাদিন পাখীডাকা ছায়ায় ঢাকা তোমার পল্লীবাটে।
    তোমার ধানে ভরা আঙ্গিণাতে জীবনের দিন কাটে
    ওমা, আমার যে ভাই তারা সবাই, তোমার রাখাল তোমার চাষী।

    ওমা তোর চরণেতে, দিলেম এই মাথা পেতে
    দে গো তোর পায়ের ধূলা, সে যে আমার মাথার মানিক হবে।
    ওমা গরীবের ধন যা আছে তাই দেবো চরণতলে
    আমি পরের ঘরে কিনবো না তোর ভূষণ বলে গলার ফাঁসী।।

    [তথ্যে কোথাও কোন ভুল থাকলে ক্ষমাপ্রার্থী]
    6Like · · Promote ·
    Manirul Islam, Khaza Nizam Uddin, Mustafizur Rahman and 109 others like th
     
     
    দেশ যে কি জিনিস রে!

    আট দিন আগে যখন আমার মেজো মেয়ে দেশ থেকে ফিরে এসেছে, আমি সে সংবাদ ঘটা করে সবাইকে বলেছিলাম। মিশা বাড়ীতে এসে পৌঁছার ঘন্টা দুইয়ের মধ্যেই কচু-ঘেচু, নাড়ু, পটলের ছবিসহ পোস্ট দিয়েছিলাম। দেশে ফোন করে প্রত্যেককে কনফার্ম করতে হয়েছে, কচু-ঘেচু ঠিকমত এসে পৌঁছেছে।

    দেশ থেকে রান্না করা খাবার এসেছে, ব্যাপারটি উত্তম কুমারের মনে বিরাট এক বিস্ময়ের সৃষ্টি করেছিল। কম কথার মানুষ হয়েও কমপক্ষে চারবার সে বলে ফেলেছে, " ভাবা যায়!! দেশে রান্না হয়েছে খাবার, বিদেশে বসে খাচ্ছি!! চিন্তার বাইরে!" উত্তম যখন অবাক হয়ে কোন কথা বলে, তার চেহারার মধ্যে শিশুতোষ আনন্দ খেলা করে যায়। বিস্ময়ের ঘোরে সে রাত সাড়ে তিনটার সময় নাড়ু-মুড়ি খেতে বসেছিল। দৃশ্যটি ছিল আমার দেখা সুন্দর দৃশ্যগুলোর মধ্যে একটি।

    এরপর একটানা তিনদিন উত্তম এবং আমি, ভাই বৌয়ের হাতে রান্না করা ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে কচুর শাক, পরম তৃপ্তি সহকারে খেয়েছি। প্রথমদিকে আমি আবেগাক্রান্ত হইনি, কারণ আমি আমেরিকাতে থেকেও দিন রাতের অধিকাংশ সময় বাংলাদেশে থাকি ( বেঁচে থাক ফেবু)। আমার উত্তমের তো ফেবু অ্যাকাউন্ট নেই, তাই সে নাড়ু আর কচুর শাকে বাংলাদেশের গন্ধ পাচ্ছিল।

    দুইদিন পর আমার ছোট ভাইকে ফোনে বললাম, " কচুর শাকটা কি অসাধারণ হয়েছে খেতে, অনীতার হাতের রান্না মায়ের রান্নার মত লাগে"। ভাই বলে, " দূর, কি যে আফসোস লাগছে কয়েকটা দিন, ইশ! মাথায় আসেনি, ইলিশ মাছ রান্না করে দিয়ে দেয়া যেত, তোমরা তো ইলিশ মাছ পাওনা, আহারে! কেন যে কথাটা মনে এলোনা"। বলি, " যা পেয়েছি, তাতেই ধন্য, তবে একটা আফসোস আমারও হচ্ছে, কচুর সাথে যদি ডাঁটা পাঠানোর কথা বলতাম", ভাই সাথে সাথে ফোনের ঐ প্রান্তে থেকেই মাথায় হাত দিয়ে ( আমি সব দেখতে পাই) বলে উঠেছে, " হায় হায়! আগে বললেনা কেন? ইশ! কি আফসোস লাগতেছে এখন শোনার পরে, কি ভাল ডাঁটা আমি বাজার থেকে নিয়ে আসি, রান্নার পরে মুখে দিলে একেবারে মাখনের মত গলে যায়"। আমি বলি, " ভাইরে! আর বর্ণনা দিসনা, নিজের মাথায় নিজেই একখান বাড়ি দিতে ইচ্ছে করতেছে, কচু কইলাম, পটল কইলাম, ডাঁটা কিভাবে ভুলে গেলাম"।

    এরপর আমাদের সংসার স্বাভাবিক নিয়মে চলছে। আমি কাঁঠাল বীচি ( দেশ থেকে এসেছে) দিয়ে চ্যাপা শুঁটকী রান্না করেছিলাম, চিংড়ি দিয়ে আলু পটলের ডালনা রেঁধেছিলাম, সাথে আরও টুকিটাকী খাবার ছিল, তাই দিয়ে আমরা এ কয়দিন রাতের ডিনার পর্ব সারছি। আজ রাতের খাবার নিতে গিয়ে দেখি ছোট একটি বাটিতে ইলিশের মাথা দিয়ে রান্না করা কচুর শাক, আমি পড়ে গেলাম অস্বস্তিতে। এই শাক এখন কাকে খেতে দেবো? আমার উত্তমের খাওয়া পর্ব শেষ হয়েছে, সে বাটির ঢাকা তুলে দেখেনি, তার মানে এই শাক তো আমার ভাগ্যে আছে। আমারই খাওয়া উচিত। দোনামোনা করে প্লেটে নিয়েই নিলাম, বাটি মুছে নিলাম যেন কচুর গন্ধটুকুও বাটির সাথে চলে না যেতে পারে!

    ভাত মাখি, একটু করে খাই, কচুর শাক মুখে দেই, উত্তমের শিশুতোষ হাসির কথা মনে পড়ে, খাওয়া থেমে যায়, মায়ায় ভরা মন আমার, কি যে করি! মনকে বুঝ দিলাম, এই শাক ফ্রীজে থাকলেও সাত দিনের পুরণো হয়ে গেছে, বাসি খাবার স্বামীকে খেতে দিতে নেই, সতী সাধ্বী স্ত্রীকেই পচা-বাসি খেতে হয়। যেই না ভাবা, মন থেকে অস্বস্তি চলে গেলো। প্লেটের ভাত খাওয়া হয়ে গেছে, প্লেটে কচুর শাক রয়ে গেছে। হাত দিয়ে নেড়ে চেড়ে দেখি, চার পাঁচটা কাঁচামরিচ আছে ওর মধ্যে, দেশের মরিচ, আমি স্পষ্ট দেখতে পাচ্ছিলাম, অনীতা মরিচগুলো কচু রান্নায় দিল, অনীতা জানে, ওর শ্বশুরবাড়ীর লোকেরা কাঁচামরিচের ঝাল ছাড়া খেতে পারেনা, ফুলদিও তো ওর শ্বশুরবাড়ীর সদস্য, তাই একমুঠো মরিচ দিয়েছে রান্নায়। মরিচগুলো তো ফেলা যাবেনা, কিছুই ফেলা যাবেনা, মাছের কাঁটাও ফেলা যাবেনা, এটা দেশ থেকে এসেছে, মিশা আসার দশদিন পর আমি আবেগতাড়িত হলাম, কচুর শাকের প্রতি পরতে পরতে আমি আমার ভাই, ভাইয়ের বৌ, বাবা, আমাদের বিপদের সাথী শিপনের ভালোবাসা, মমতা টের পাচ্ছিলাম। কাঁচামরিচগুলো এমনি এমনিই খেয়ে ফেললাম, ঝালে জিভ জ্বলতে লাগলো, কচুর শাক এমনি এমনি খেয়ে ফেললাম, মাছের কাঁটা যতদূর সম্ভব চিবিয়ে ছিবড়ে করে ফেললাম। কিচ্ছু ফেলিনি, কিছুই ফেলিনি, রান্না ঘরের সিঁড়িতে বসে বসে মনে হচ্ছিল নারায়ণগঞ্জের বারান্দায় পেতে রাখা ৭৩ বছরের পুরাণো কাঠের চেয়ারে হাতে প্লেট নিয়ে বসে আছি। গলার কাছটাতে ব্যথা বোধ করলাম, কান্না আটকে ফেলা ব্যথা।

    দেশ যে কি জিনিস রে বাবা! দেশ দেশ করে গলা শুকাই, একটি সুন্দর দেশের প্রত্যাশা নিয়ে কতজনের সাথে ফেবু'কে তর্ক করি, একটি শান্তিময় দেশের স্বপ্ন দেখে রাজনীতি না বুঝেও রাজনৈতিক কথাবার্তা বলে যাই, একটি অসাম্প্রদায়িক দেশের কথা ভেবে ভেবে মন উচাটন হয়ে থাকি, দেশ কি সোজা কথা! প্রবাসে থাকা যে কত যন্ত্রণার, তা বুঝে প্রবাসীরা এবং দেশে থাকা মা, বাবা, ভাই বোনেরা। আর কেউ বুঝেনা, তারা বলে, " বিদেশে বসে থেকে এত বড় বড় কথা না বলে দেশে এসে কথা বলেন।" তারা কেউ জানেনা, দেশ কি জিনিস, তারা কেউ জানেনা দেশ দেশ করে সুখে থাকতে কেন ভুতের কিল খাই। দেশ সোজা জিনিস না, দেশ হলো দেশ, দেশ নিয়ে কেউ কোন বিরূপ মন্তব্য করলে আমার মত গন্ডারের চামড়াতেও ফোস্কা পড়ে, মাঝে মাঝেই রেগে উঠি, রাগের কারণে বাচ্চাদের মত ' যাও তোমার সাথে আড়ি' বলে ফেবু ফ্রেন্ড লিস্ট থেকে ডিলিট করে দেই। পরে খারাপ লাগে, মনে হয়, এই ছোট কারণে কেন বন্ধুটিকে ডিলিট করে দিলাম! আসলে কারণটি একেবারে ছোটও না, মা'কে নিয়ে যেমন কারো কাছে খোঁটা শুনতে ভাল লাগেনা, দেশকে নিয়েও কারো কাছ থেকে কোন খোঁটা শুনতে ভাল লাগেনা। দেশ তো সোজা জিনিস না, দেশ আমার মা, অথবা মা আমার দেশ!
    ** কি লিখতে কি লিখে ফেলেছি, দেশের কথা মনে হলেই মা'কে মনে পড়ে যায়, আমার সবকিছু উলট পালট হয়ে যায়। **
    Like · · Promote ·
     
     
    ta Roy Mithu
    রাজনীতিতে অভিজ্ঞ দাদা'র আশংকা!

    দীর্ঘ ৪৮ বছরের রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা সম্পন্ন, প্রাক্তন সংসদ সদস্য এক বড় ভাই ( দাদা বন্ধু) আমাকে দুই দিন আগেই 'বায়াসড' বলেছেন, উনি জাতীয় পার্টির রাজনীতি করেন, দুই নেত্রীর ব্যাপারে চরম এবং কঠিন মনোভাব পোষণ করেন, উনার রাজনৈতিক অভিজ্ঞতা থেকে উনি বলেছেন, দেশে নাকি তৃতীয় শক্তির আগমন ঘটতে যাচ্ছে, ৯৫% মানুষ নাকি মনে করছে, " নো মোর দুই মহিলা নেত্রী"।
    আমার এই দাদাটিকে আমি খুবই সম্মান করি এবং উনার কমেন্ট পড়ে মজা পাই। দুই দিন আগে আমাকে উনি 'বায়াসড' বলেছেন, দুই মাস আগে বলেছিলেন 'হেফাজতী'। উনি এখনও জাতীয় পার্টির রাজনীতিতে ভীষণভাবে সক্রিয়, উনি খুবই উদার, আধুনিক মনস্ক একজন মানুষ। এই দাদাটিই শুধু নয়, শেখ হাসিনার প্রতি আমার 'বায়াসড' মনোভাব দেখে আরও অনেকেই আমাকে চ্যালেঞ্জ দিতে শুরু করেছেন এই বলে যে আগামীতে শেখ হাসিনার নাকি ক্ষমতায় আসার কোন সম্ভাবণাই নেই। তাদের সকলেই তৃতীয় শক্তির আগমনের আশায় বসে আছেন।

    আমার এই কিছু সংখ্যক বন্ধুকে আমি 'বিভ্রান্ত' বলি, তারা নিজেরাও জানেনা, তারা ঠিক কি চায়, কাকে চায়? মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির পক্ষে কথা বললেই তারা আমাকে 'বায়াসড' বলে, যদি জিজ্ঞেস করি, তোমরা কোন পন্থী? বলে, আমরা মধ্যপন্থী। ডানেও আছি, বামেও আছি। তাদেরকে আমি বুঝাই কি করে যে মধ্যপন্থী বলে কিছু নেই। দুই নৌকায় পা রাখা মানেই অথৈ নদীতে পড়ে যাওয়া। আওয়ামী রাজনীতি পছন্দ নাহয় বিএনপি করো, বিএনপি পছন্দ নাহয় আওয়ামী রাজনীতি করো। মাঝামাঝি থেকে বলবে, "দুই নেত্রীই খারাপ, দুই মহিলা খারাপ, এরা শুধুই চুলোচুলি করে, দুই দলই খারাপ, নতুন কিছু চাই,"

    ভালো তো, নতুন চাও, ৯৫% জনগণ সাথে আছে, এতই যদি ক্ষমতা থাকে নতুন কোন 'মহারাজ'কে এনে হাজির করো। আমার তো কোন সমস্যা নেই, 'বায়াসড'দের সমস্যা থাকেওনা, তৃতীয় শক্তি আসলে বায়াসড'রা আড়ালে চলে যাবে, আড়ালে বসে বসেই কেউ শেখ হসিনা, কেউ খালেদা জিয়া করবে, বায়াসড তো, তাই। গত দুইদিন ধরে প্রতিটি স্ট্যাটাসের উপর পাঠকের মন্তব্যগুলো অনেক মনোযোগ দিয়ে পড়লাম। কিছু কিছু মন্তব্য পড়ে হতাশ হলাম, তারা যেন শেখ হাসিনাকে গদিচ্যুত করার পণ করে বসে আছে! সমস্যা হলো, তারা মুখ ফুটে বলছেওনা তারা কি চায়? শেখ হাসিনার পরিবর্তে খালেদা জিয়াকে চাও? না, তারা সরাসরি বলছেনা যে খালেদা জিয়াকে চাই, বার বার বলছে, নতুন কাউকে চাই। কাকে চাও? নতুন কাউকে চাই। আরে নতুন কাউকে চাও ভালো কথা, নতুন কেউ টি কোন আদর্শের হলে ভাল হয়? জবাব নেই।
    মনে হলো সবাইকে বলি, ' দেশের জন্য মধ্যপন্থী সুবিধাভোগীদের চেয়ে বিএনপি, জামাত, হেফাজত বা আমার মত আওয়ামী অন্ধরা অনেক বেশী নিরাপদ। প্রতিটি দলেরই নির্দিষ্ট কিছু এজেন্ডা আছে, দলীয় আদর্শ আছে, সেই আদর্শকে গ্রহণ করে 'বায়াসড' আইডেনটিটি নিয়েই আমরা সকলের মাঝে পরিচিত। মধ্যপন্থীদের নিজস্ব কোন আইডেনটিটি নেই।

    ৪৮ বছরের দীর্ঘ রাজনৈতিক অভিজ্ঞতাসম্পন্ন দাদাটি'র তৃতীয় শক্তি আসার 'আশংকা' মূলক মন্তব্যের উত্তরে, উনাকে বলেছিঃ

    " ভালো তো, তৃতীয় শক্তি আসবে, এটাকে আশংকা বলছেন কেন লিয়াকত ভাই? এটাই তো আপনারা মনে-প্রাণে চাইছেন, কি চাইছেন না? আর আমি? আমি রাজনীতি বুঝিনা, রাজনীতি নিয়ে কচকচানি করতে ভালোও লাগেনা, আমি একজন সচেতন বাঙ্গালী হিসেবে বঙ্গবন্ধু'র আদর্শকে সমর্থণ করি, এর বেশী কিছু ভাববার মত ঘিলু আমার মাথায় নেই, স্বয়ং ঈশ্বরই আমাকে এই দিক থেকে বঞ্চিত রেখেছেন, তাই আগামীতে সংসদ সদস্য হওয়ার বাসনায় আমি বঙ্গবন্ধুর কন্যার পক্ষে কলম ধরিনি। আমার একটাই চাওয়া, বঙ্গবন্ধু তাঁর এতিম কন্যাটিকে আমাদের সকলের জিম্মায় রেখে গেছেন, এই এতিম কন্যাটি সব হারিয়ে সর্বনাশের আগুনে পুড়ে ভাজা ভাজা হচ্ছে, মঙ্গলময় ঈশ্বর উনাকে রক্ষা করুন, প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় কোন শক্তিই আমার জন্য কোন মিঠাই-মন্ডা নিয়ে আসবেনা, আমি যে তিমিরে আছি, সেই তিমিরেই থাকবো, আপনারা যারা অক্লান্ত পরিশ্রম করে চলেছেন তৃতীয় শক্তির আশায়, মিঠাই মন্ডাটুকু আপনাদের জন্যই বরাদ্দ থাকুক, জয় বাংলা, জয় বঙ্গবন্ধু!"
     
     

    বঙ্গবন্ধুর কন্যা, ঈশ্বর আপনার সহায় থাকুন!

    ২০১৩ সালের ২১শে আগস্টে শেখ হাসিনার শতায়ু কামনা করে লিখছি, কি সৌভাগ্য আমার! ৯ বছর আগের এই দিনের বিকেলে যদি আওয়ামীলীগ অন্ধ, শেখ হাসিনার প্রতি অন্ধ, বঙ্গবন্ধুর প্রতি অন্ধ কিছু মানুষ শেখ হাসিনাকে ঘিরে মানববন্ধন রচনা না করতে পারতো, কোথায় থাকতেন আজ শেখ হাসিনা! মেয়র হানিফ, মোফাজ্জল হোসেন চৌধুরী মায়া, নিজেদের দেহে ধারণ করেছিলেন আর্জেস গ্রেণেডের স্প্লিন্টার, শেখ হাসিনার দেহ রক্ষী মেজর মাহবুব নিজ দেহে গ্রহণ করেছিলেন নেত্রীর দিকে ছুটে আসা বুলেট, নেত্রীকে গাড়ীর ভেতরে নিরাপদে ঢুকিয়ে দেয়া পর্যন্ত কোনমতে দুই পায়ের উপর ভর করে দাঁড়িয়েছিলেন, এরপরেই তরুণ এই মেজরের দেহ লুটিয়ে পড়ে, প্রাণবায়ু বের হয়ে যায়। লিখে যাচ্ছি খুব দ্রুত, খুব সহজেই লিখে ফেলছি সব, যেন ছোট বাবুকে রূপকথার গল্প শোনাচ্ছি। রূপকথার গল্পই বটে, নাহলে বর্তমান সভ্য সমাজে ২১শে আগস্টের সৃষ্টি হবে কেন?

    সেদিন আমি ছিলাম মিসিসিপিতে একেবারেই নবাগত, নতুন অ্যাপার্টমেন্টে কম্পিউটার সেট আপ করা হয়নি, ১৬ বছরের কন্যা মৌটুসীকে কোলছাড়া করে রেখে এসেছি সেই কতদূরের ভার্জিনিয়াতে। ঐ মুহূর্তে আমার স্বামী ছিলেন ইউনিভার্সিটিতে, পুরো পরিবারের জন্য একটি মাত্র মোবাইল ফোন, দুনিয়াদারীতে মনে হচ্ছিল আমার আশে পাশে আপনার জন বলতে কেউ নেই! কি চরম একা, কি নিঃসঙ্গ সময় ছিল সেটা, তখনই আমার কাজিনের কাছ থেকে ফোন কলটা এলো, " মিঠু'দি, তুমি কই? বিরাট ঘটনা ঘটে গেছে বাংলাদেশে"। সুমনের গলার স্বরে কি ছিল? আমি চিৎকার করে উঠেছিলাম, " কি হইছে দেশে, কি হইছে?"
    জবাব পেলাম, " শেখ হাসিনারে মনে হয় মেরে ফেলছে"
    আমার দম আটকে আসছিল, শুধু বলতে পারলাম, " কি কইতেছিস তুই? শেখ হাসিনারে মাইরা ফেলছে? শেখ হাসিনারে মাইরা ফেলছে?"
    -" এখনও কনফার্মড হতে পারিনি, আমি চেষ্টা করছি সঠিক নিউজ বের করতে, শেখ হাসিনার মিটিং ছিল, সেই মিটিংযে গ্রেনেড হামলা হয়েছে, কত মানুষ মারা গেছে জানিনা, শেখ হাসিনার কি খবর জানিনা, তুমি অপেক্ষা করো, সঠিক খবর যোগাড় করে তোমাকে জানাচ্ছি"।

    ২০০৪ সালে অনলাইনে বাংলাদেশের সংবাদ খুব কমই পাওয়া যেত, অনলাইন পত্র পত্রিকাগুলোর মধ্যে হাতে গোনা এক দুটি পত্রিকা পাওয়া যেত। আমার স্বামী ঘরে ফেরার সাথে সাথে হাউ মাউ করে শুধু বলতে পারলাম, এখনি কম্পিউটার সেট আপ করে দাও, শেখ হাসিনাকে বোধ হয় মেরে ফেলছে, আমি কম্পিউটার অন চাই, এক্ষণি চাই।"

    আমার স্বামী কোথা থেকে একজন টেকনিশিয়ান ধরে এনে কম্পিউটার সেট করিয়ে দিতেই আমি অনলাইনে ঢুকে গেলাম, অবশ্য এর মধ্যেই কাজিন সুমন আমাকে জানালো, শেখ হাসিনা আহত হয়েছেন, কিন্তু আইভী রহমানের দুই পা উড়ে গেছে। আমি অনলাইনে ঢুকে চোখ স্থির করে বসে ছিলাম কতক্ষণ, কত ঘন্টা, জানিনা। আইভী রহমানের 'নিথর' চাউনি, একটি মহিলার বুকে কালো ব্যাগ, দুই চোখ বিস্ফারিত, মুখ হাঁ করা, একজন বুড়ো লোক রক্তাক্ত দেহ নিয়ে রিকসার পাশে নিথর হয়ে বসা, চারদিকে ছড়ানো অসংখ্য রক্তাক্ত দেহ, জুতা, স্যান্ডেল, রক্ত , রক্ত, রক্ত~~~~~~~~~~~~

    আমি মানসিকভাবে বিপর্যস্ত হয়ে পড়লাম, শেখ হাসিনা প্রাণে বেঁচেছেন, এই খুশীতে হাসবো না কাঁদবো, বুঝিনি, শেখ হাসিনাকে বাঁচাতে গিয়ে মেজর মাহবুব গুলী খেয়ে মারা গেছেন, এই ঘটনায় কাঁদবো নাকি 'বীরের' প্রতি মাথা নত করে সম্মান জানাবো, বুঝিনি, মেয়র হানিফ, মোফাজ্জল মায়াকে নিয়ে কত জনে কত সমালোচনা করতো, এই হানিফ-মায়া নেত্রীকে নিজেদের দেহ দিয়ে ঢেকে রেখেছিলেন, নিজেদের দেহে শত শত স্প্লিন্টার ঢুকেছিল, তারপরেও নেত্রীর অবশ্যম্ভাবী মৃত্যুকে ঠেকিয়ে দিয়েছিলেন, নেত্রীর প্রতি এই অন্ধ আবেগকে কি দিয়ে মূল্যায়ণ করবো, বুঝিনি।

    *** গত কিছুদিন ধরেই 'অধিকার' নামক ( মানবতাবাদী) প্রতিষ্ঠানের কর্ণধার আদিলুর রহমান শুভ্রকে গ্রেফতারের ঘটনায় চারদিক থেকে 'মরাকান্না' শুরু হয়েছে। আদিলুর শুভ্র শাপলা চত্বরে পুলিশী অভিযানে ৬১ জন মুসুল্লী প্রাণ হারিয়েছেন বলে একখানা মিথ্যে রিপোর্ট তৈরী করেছেন, যে রিপোর্টে মৃতদের নাম-ধাম, সাকিন কিছুই নেই, অথবা সরকারকে দেয়া হয়নি, কোন সংবাদ পত্রেও ছাপা হয়নি। মানুষের জীবন-মৃত্যু নিয়ে বিভ্রান্তি ছড়িয়ে সমাজের ভারসাম্য নষ্ট করে দেয়ার মত অপরাধ তিনি করেছেন, যারা শুভ্র সাহেবের জন্য কেঁদে আকুল হচ্ছে, তারা একটিবারের জন্যও এই বিভ্রান্তিমূলক রিপোর্টের জন্য শুভ্র সাহেবকে দোষারোপ করছেনা। শুভ্র সাহেবের জন্য যারা কাঁদছে, বিএনপি আমলে সিনেমাহলে বোমা হামলার অভিযোগে হাস্যকরভাবে অধ্যাপক 'মুনতাসীর মামুনকে' গ্রেফতার করা নিয়ে টুঁ শব্দটিও করেনি।
    আদিলুর শুভ্র সাহেবের নামটি 'শুভ্র' হলেও মনটি শুভ্র নয়, নামের মত উনার মনটাও যদি শুভ্র হতো, তাহলে তিনি ৯ বছর আগে কোন একটি ভবনের কর্তা ব্যক্তির পরিকল্পনা অনুসারে, স্মরণকালের ভয়াবহ গ্রেনেড হামলায় দেশের প্রধান বিরোধী দলের প্রধান নেত্রীকে হত্যা করার যে চক্রান্ত বাস্তবায়ন করা হয়েছিল, যে হামলায় মহিলা লীগের প্রধান আইভী রহমান সহ ২৪টি তাজা প্রাণ ঝরে গিয়েছিল, নেত্রীকে বাঁচাতে গিয়ে যে তরুণ মেজরের মৃত্যু হয়েছিল, শত শত কর্মী আহত হয়েছিল, সেদিন মানবাধিকারের যে চরম অবমাননা হয়েছিল, --সেই সম্পর্কে বিশাল রিপোর্ট তৈরী করতেন! উনার মন শুভ্র নয় বলেই ২১শে আগস্টের পূর্বপরিকল্পিত, নৃশংসতম মানবতার চরম অবমাননা নিয়ে সোচ্চার হননি। আজ যারা আদিলুর শুভ্র সাহেবের গ্রেফতারে গণতন্ত্র হুমকীর মুখে বলে 'মরাকান্না' জুড়ে দিয়েছেন, তাদেরকে অনুরোধ করি, চোখের জল অনেক দামী, এই দামী জলটুকু আদিলুর রহমানের জন্য নাইবা ফেললেন, আদিলুর রহমানতো গ্রেফতার হয়েছেন, নিরাপদেই আছেন, বরং কিছু জল ২১শে আগস্টে দিনে দুপুরে সংঘটিত সত্যিকারের গণহত্যায় নিহত অভাগাদের জন্যই নাহয় ফেললেন।

    *** ফেসবুকে আমার এক ভাই আছে, ভাইটি সব সময় আমার খোঁজ খবর নেয়, আমি খুশী হই, আমি শুধু ভাইকেই চিনি, ভাই প্রায়ই আমাকে ভরসা দিয়ে মেসেজ পাঠায়, যে কোন সমস্যা বা বিপদ হলে যেন ভাইকে জানাই, শুনে আমি নিশ্চিন্ত হই, তবুও ভাইয়ের পেশা নিয়ে কৌতুহল দেখাইনি। সেদিন কথায় কথায় তাকে তার পেশা জিজ্ঞেস করতেই সে বলল, " তুমি কেমন দিদি, এতদিন পর আমার পেশা কি জিজ্ঞেস করছো"। ভাইয়ের কথায় খুব লজ্জা পেয়েছি, এরপর ভাই বলল, " আমার পেশা শুনলে তো আবার মুখ কালো করে ফেলবে, আর্মিদের প্রতি তো তোমার অনেক রাগ। বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে তুমি যখন লিখো, সে লেখা পড়েই আমি ভয়ে আমার পেশা বলিনি। আমি একজন আর্মি অফিসার। বঙ্গবন্ধুর শিষ্য তুমি, সেই বঙ্গবন্ধুকেই কিনা আর্মির হাতে গোনা কিছু কুলাঙ্গার মেরে ফেলেছে, আর সেই কয়েকজন কুলাঙ্গারের কারণে আমরা লজ্জা পাই।"
    আমার ভাইয়ের কথা শুনে আমি দ্বিতীয়বার লজ্জা পেয়েছি। লজ্জা পেলে আমার মুখে আর কথা জোগায়না। আমি ভাইকে কিছু না বলে নিজের মনে মনে তখন ভাবছি, হায় হায়! আমাদের সম্পর্কে আমাদের ভাইগুলো কি ধারণা করে। কয়েকজন কুলাঙ্গারের জন্য আমরা কেন সকল আর্মিকে দোষারোপ করবো? আর্মীতে চাকুরী করে আমাদেরই সন্তান, আমাদেরই ভাই বোন।
    একজন রশীদ, নূর চৌধুরী, ফারুক, ডালিম যেমন বঙ্গবন্ধুকে হত্যা করতে গিয়েছিল, একজন কর্ণেল জামিল বঙ্গবন্ধুকে রক্ষা করার জন্য ছুটে এসেছিল, আফসোস, বঙ্গবন্ধুর বাড়িতে পৌঁছার আগেই সতীর্থের গুলীতে নিজের জীবনটাও দিয়েছিল। ঠিক ২৯ বছর পর, কর্ণেল জামিলের মতই আরেকজন মেজর ্মাহবুব বঙ্গবন্ধুর মেয়ের প্রাণ বাঁচাতে বঙ্গবন্ধুর মেয়েকে লক্ষ্য করে ছোঁড়া গুলী একের পর এক নিজের দেহ দিয়ে আটকেছিল, নিজের জীবনের বিনিময়ে নেত্রীর জীবন বাঁচিয়েছিল। ভাই, আমরা তোমাদের মত আর্মি অফিসারদের নিয়ে গর্বিত, তোমরা বেঁচে থাকো অনন্তকাল।

    ***মাননীয়া প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা, আপনার বেঁচে থাকাটা অত্যন্ত জরুরী, আমাদের জন্যই আপনাকে বেঁচে থাকতে হবে, তাই বোধ হয় ঈশ্বর তাঁর করুণাময় হাত আপনার আয়ুর উপর মেলে রেখেছেন, কত কাপুরুষ কতবার আপনার জীবনপ্রদীপ নিভিয়ে দিতে চেয়েছিল, হয়তো এখনও চেষ্টা চালিয়ে যাচ্ছে, কিন্তু প্রবাদ আছে, " রাখে আল্লা মারে কে" আপনি দৃঢ়তার সাথে দেশকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে যান, ঈশ্বর আপনার সহায় থাকুন!
    — with Shahidul Alam Swpan.
    13Like · · Promote ·
     
     
    একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ তত্বঃ

    অনেকে বলে থাকেন, আওয়ামীলীগ এবং বিএনপি, শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া, সজীব ওয়াজেদ জয় এবং তারেক জিয়া---একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠ।
    এই উক্তিটির যথার্থতা নিয়ে অনেক ভেবেছি, আমিও সিদ্ধান্তে এসেছি, হ্যাঁ, একই মুদ্রা্র এ-পিঠ ও-পিঠ থিওরী শতভাগ সত্যি। বুঝিয়ে বলিঃ
    মুদ্রাটি যদি পৃথিবী হয়, তাহলে তার একপিঠে দিন, আরেক পিঠে রাত্রি।
    মুদ্রাটি যদি পৃথিবী হয়, তাহলে তার এক পিঠে আমেরিকা, আরেক পিঠে বাংলাদেশ।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে বঙ্গবন্ধু, আরেকপিঠে জিয়া, এরশাদ।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে আওয়ামীলীগ, আরেকপিঠে বিএনপি, জামাত।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে শেখ হাসিনা, আরেক পিঠে খালেদা জিয়া।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার এক পিঠে জয় আর পুতুল, আরেক পিঠে তারেক আর কোকো।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে ডিজিটাল বাংলাদেশ গড়ার প্রত্যয়, আরেক পিঠে ১৫ই আগস্ট, ২১শে আগস্ট সৃষ্টির প্রত্যয়।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে কৃষিতে সাফল্য, আরেক পিঠে ১৭ কৃষককে গুলী করে হত্যা।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে জয় বাংলা, আরেকপিঠে বাংলাদেশ জিন্দাবাদ।
    মুদ্রাটি যদি বাংলাদেশ হয়, তার একপিঠে ধর্মীয় নিরপেক্ষতার চেষ্টা, আরেকপিঠে সাম্প্রদায়িক চেতনার ছবি।
    ঠিকই আছে, শেখ হাসিনা এবং খালেদা জিয়া অবশ্যই একই মুদ্রার এ-পিঠ ও-পিঠই বটে। মুদ্রা একই, কিন্তু দুই পিঠে সম্পূর্ণ বিপরীত ছবি।
    25Like · · Promote ·
     

    ভয়াল একুশে আগস্ট স্মরণে!
    যাদের বিবেক জাগ্রত আছে, নীচের ছবিটি তাঁদের জন্য নয়, যারা জেগেও ঘুমিয়ে থাকতে ভালোবাসে, যারা আঁতেল নিরপেক্ষ সাজার ভান করে, যারা আমাদেরকে বঙ্গবন্ধু ও তাঁর রেখে যাওয়া 'এতিম কন্যা'টির প্রতি বায়াসড হতে বাধ্য করে, যারা খুব সহজেই ১৫ই আগস্ট এবং ২১শে আগস্টকে ভুলে যায়, যারা ১৫ই আগস্ট এবং ২১শে আগস্টের বেদনা উপলব্ধি করতে পারেনা, এই ছবিটি শুধুই তাদের জন্য! আপনাদের বিবেক জাগ্রত হোক!
    সন্ত্রাস করে প্রাথমিক জয় হয়, কিন্তু এর পরিণাম হয় ভয়াবহ! বাংলাদেশের বর্তমান অবস্থা তার জলজ্যান্ত প্রমান। একজন 'নাফিস' বা একজন 'ঐশী' এমনি এমনি তৈরী হয়না। অন্যায়কে 'অন্যায়' বলে স্বীকার করুন, ভুলকে ভুল বলে মেনে নিন, সন্তানদেরকেও পাপ, সন্ত্রাস, অন্যায় থেকে শত হাত দূরে রাখুন, এখন আমাদের শুদ্ধ হওয়ার সময়, কখনওই যেনো ভুলে না যাই,
    ** পাপ তার বাপকে ক্ষমা করেনা, অথবা "তোমারে বধিবে যে, গোকূলে বাড়িছে সে**
     
     
    'বায়াসড' হতেই ভালোবাসি!

    আমাকে আমার মেয়েরা বলে, আমি নাকি সব সময় বায়াসড হয়ে কথা বলি, আমি বুঝিনা ওরা কেন আমাকে এভাবে অভিযুক্ত করে, আমি কালোকে ( আফ্রিকান আমেরিকান) কালো বললেই ওরা আমাকে 'বর্ণবাদী' বলে, কালোদেরকে 'অলস, নির্বোধ' বললেই আমার মেয়েরা ঝেঁঝেঁ উঠে বলে, ওরা জীবনে প্রতারিত, ওদেরকে এভাবে নির্বোধ বলা ঠিক নয়।
    আমি বলি, এই এক কথা শুনে আর কতদিন? যখন প্রতারিত হয়েছে, তখন হয়েছে, এখনতো আর ওরা প্রতারিত নয়। আর তাছাড়া প্রতারিত বলেই তো নিজের পায়ে দাঁড়াতে হবে, লেখাপড়া করতে হবে, সরকার থেকে যে ভাতা দেয়া হয়, তা দিয়ে ভাল খাবার কিনতে হবে, বিনে পয়সায় লেখাপড়া করার যে সুযোগ ওদেরকে দেয়া হয়েছে, তা কাজে লাগাতে হবে। তা না করে পায়ে 'নাইকি'র জুতা, দাঁতের পাটিতে সোনা বাঁধানো দাঁত, গলায় এক গোছা সোনার চেন, মাথায় নকল চুলের বাহার, আঙ্গুলে নকল নখ, অপ্রয়োজনে হাতে দামী স্মার্ট ফোন, নিত্য নতুন গাড়ীর মডেল পাল্টালে এই জীবনেও ওরা মাথা তুলে দাঁড়াতে পারবেনা। টাকার বিছানায় শুইয়ে রাখলেও ওরা মেরুদন্ড সোজা করে দাঁড়াতে পারবেনা।

    মেয়েদের কথা শুনতে শুনতে আমিও মাঝে মাঝে চিন্তা করে দেখি, আমি কি আসলেই 'বায়াসড' হয়ে কথা বলি? এই যে আমি সব সময় বলি, বাংলাদেশের মেয়ে বা মহিলাদের ৯০% রাজনীতি নিয়ে মাথাও ঘামায়না ( রাজনীতি বুঝেনা কথাটি বলে নিজেকে ছোট করতে চাইছিনা), কিন্তু বেগম খালেদা জিয়ার সাজগোজ খুব পছন্দ করে, নিজেরা মাথার চুল ঢেকে চলাফেরা করলেও বেগম জিয়ার পার্ম করা চুলের খোঁপা দেখতে পছন্দ করে, নিজেরা দেশী কাপড়ে নিজেকে আবৃত করে রাখলেও বেগম জিয়ার ফরাসী জর্জেটের উচ্চ প্রশংসা করে, নেত্রীর দেখাদেখি তাদের অধিকাংশই হাত মুখ নাচিয়ে কথা বলতে পছন্দ করে, তাদের সকলেই শাড়ীর পরিবর্তে সালোয়ার কামিজ পড়তে পছন্দ করে, তারা মুখে ভারতকে গালি দিয়েও শপিং করতে হলেই ভারতে যায় অথবা দেশে বসেই ভারতীয় পণ্য কিনতে পছন্দ করে, নেত্রীকে ভালোবেসে তারাও ঘরে বসে হিন্দী সিরিয়াল দেখতে পছন্দ করে, মুখে নারী স্বাধীনতার কথা বলে তাদের প্রায় সকলেই শেখ হাসিনা সম্পর্কে অশালীন মন্তব্য করে।

    আমাকে সেদিন আমার মেজো মেয়ে বলছিল, " মা, তোমার ফ্রেন্ড লিস্টে মেয়ে বন্ধু এত কম কেন"? উত্তরে বলেছি, বাংলাদেশের মেয়ে বা মহিলারা বেগম খালেদা জিয়াকে পছন্দ করে বলে আমার সাথে বন্ধুত্ব করতে আগ্রহ দেখায়না, কারণ আমি তো বঙ্গবন্ধুকে স্মরণ করি, তাঁর মেয়েকে পছন্দ করি, তাই ওরা আমার সাথে বন্ধু হতে চায়না। যে অল্প কয়েকটি মেয়ে বন্ধু দেখতে পাচ্ছো, তারা সকলেই বঙ্গবন্ধুর শিষ্য, বঙ্গবন্ধুর মেয়েকে ভালোবাসে, এরা বাকী ১০% মেয়েদের প্রতিনিধিত্ব করে।"।

    উত্তর শুনে ফট করে মেয়ে বলে উঠলো, " মা, তুমি সব সময় বায়াসড হয়ে কথা বলো কেন? কে বলেছে যে বাংলাদেশের মেয়েরা বিএনপি করে?"

    বললাম, বাবারে! বয়স তো আর এমনি এমনি বাড়েনি, অনেক দেখে দেখে শিখেছি, মিসিসিপির কালু ( আফ্রিকান আমেরিকান) আর বাংলাদেশের নীলু ( বিএনপি নেত্রী নীলুফার নীলু) , এক পাল্লার মানুষরে বাপ! আমার কথা শুনতে খারাপ লাগে ঠিকই, কিন্তু কথা সত্য, বায়াসড হয়ে বলি আর বায়াসড না হয়েই বলি, কিছু যায় আসেনা, " আইজ বুঝবিনা বুঝবি কাইল, কপাল থাপড়াইয়া পারবি গাইল"।
    মানুষ চিন রে মনা মানুষ চিন, দিনকাল খারাপ আসতেছে, শেখ হাসিনার " এক চুলও নড়বোনা'র জবাবে খালেদা জিয়া আজকের বক্তৃতায় বলেছে, উনার জনগণ ক্ষেপলে শেখ হাসিনার মাথার একটা চুলও থাকবেনা। এখন বুঝে দেখো, কোন ভরসায় উনি এমন কথা বলেছেন! উনার জনগণ কারা? চুলোচুলি করে কারা? মহিলারা চুলোচুলি করে, এই জন্যই বলি, বাংলাদেশের ৯০% মহিলা রাজনীতি বুঝেনা, শুধু বুঝে 'চুলোচুলি'। একমাত্র এদের পক্ষেই সম্ভব একজন প্রধানমন্ত্রীকে এই ধরণের সন্ত্রাসী ভাষায় হুমকী দেয়া, এবং তা পার্মড চুলের নেত্রীর পক্ষেই সম্ভব। আমাকে বায়াসড বলো আর যাই বলো, পার্মড চুলের নেত্রী ক্ষমতায় এলে আগামী পাঁচ বছর দেশে যাওয়ার নাম করোনা, কারণ হয় মাথার চুল কালো কাপড়ে ঢেকে রাখতে হবে নাহয় তো পাপিয়া বাহিনীর হাতে এত সুন্দর চুলগুলোকে তুলে দিতে হবে।

    মেয়ে বলে, " উফ! মা, তুমি কি যে বলো!"
    যা বলি, ঠিক বলি, বায়াসড হয়েই বলি, বায়াসড নাহয়ে আর গত্যন্তর নেইরে মা! কালোকে কালো বলবো, পাপিয়াকে জাঁহাবাজ বলবো, চুল ছিঁড়ে ফেলার হুমকী দেয়ার পর বেগম জিয়া ম্যাডামকে কি বলবো, ভেবে দেখি।

    -ভাবো, তবে আবারও বলি, বায়াসড হয়ে কিছু বলোনা।
    আমিও বলি, বায়াসড হয়েই বলবো, কারণ বায়াসড হতে ভালো লাগে বলে!
    1Like · · Promote ·
     
     

    আমার শাশুড়ী

    সেদিন আমার এক বন্ধুকে আমার শাশুড়ী মায়ের কথা বলতে যেতেই বন্ধু অবাক হয়ে বলে উঠলো, “ তোমার শাশুড়ী? তোমারও শাশুড়ী আছে? সারাক্ষণ তো তোমার মুখে মা, মা শুনি, তাই তোমার মুখে শাশুড়ী শব্দটা শুনে কেমন যেন একটা ধাঁধাঁয় পড়ে গেছি।“ বললাম, হ্যাঁ রে বাবা, আমারও একটা শাশুড়ি ছিল, তাঁর নাম ছিল ‘চপলা সুন্দরী রায়।
    বন্ধু বলে, ‘ তাই নাকি? তা উনি কোথায় থাকেন?’

    বলি, আমার সাথেই থাকে, বলেই হেসে ফেলি। আচ্ছা ঠিক আছে, আজকে নাহয় আমার মুখে আমার শাশুড়ীর গল্পই শোন। ভাল কথা, আমি তো কখনও কারো কাছেই আমার শাশুড়ীর গল্প করিনা, তাই আজকে গল্প করার সময় আদিখ্যেতা করে বার বার ‘আমার শাশুড়ী, আমার শাশুড়ী’ বলে ফেলতে পারি, গল্পের এই দোষটুকু নিজ গুণে মেনে নিতে হবে। আমার বন্ধু আমাকে খুব ভালো করেই চেনে, আমি যে সব কিছুতেই মাঝে মাঝে অতিরিক্ত আদিখ্যেতা দেখাই, সে তা জানে। আমার প্রস্তাব মেনে নিয়ে বলেছে, “ঠিক আছে, তবুও তো শুনি যে তোমারও একটা শাশুড়ী ছিল”।

    বন্ধুর কথায় গা জ্বলে উঠলো, কেনরে বাপু, তোমাদের সকলের শাশুড়ী থাকতে পারলে আমার কেন শাশুড়ী থাকতে পারবেনা? আমি কি এতই ঝগড়াটে বউ নাকি যে আমার যন্ত্রণায় অস্থির হয়ে শাশুড়ী বনবাসী হয়ে যাবেন? বন্ধুকে বললাম, আমি বউ কালো হলেও মানুষ ভালো। নাহলে শাশুড়ীর ‘উত্তম কুমার’ ছেলে আমাকে নিয়ে ২৮ বছর একেবারে নির্ঝঞ্ঝাট সংসার করতে পারতো? আমার চোপার কাছে বন্ধুকে হার মানতেই হলো। বলল, “ঠিক আছে, ঠিক আছে, আর নিজের গুণের কথা বলতে হবেনা, শাশুড়ী নিয়ে তোমার অভিজ্ঞতার কথা বলো, তবে খুব সংক্ষেপে, কারণ তোমার স্বভাব হচ্ছে, ধান ভানতে শীবের গীত গাওয়া”।

    বললাম,” তাঁর শ্বশুরবাড়ী কিশোরগঞ্জ হলেও, নরসিংদীর বেলাবো’তে ছিল উনার বাপের বাড়ী। বাপের বারী ছিল জানি, বাপের বাড়ীতে কে কে ছিল, আমি জানিনা। আমার শাশুড়ীর ছিল পাঁচ ছেলে, দুই মেয়ে। সপ্তম সন্তানটিই হচ্ছে আমার উত্তম কুমার। মায়ের কোলপোছা ছেলে, তাই নাম রেখেছে ‘দুলাল’। দুলালের জন্ম এত পরে হয়েছে যে দুলালের জন্মের আগেই উনার বড় মেয়ের বিয়ে হয়ে গেছে, স্বামীর সাথে মেয়ে তখন জলপাইগুড়ি চাবাগানে থাকে, বড় ছেলে কলকাতায় চাকরী করে। দুলালের জন্মের পর আমার শাশুড়ীর মেজ ছেলে, সেজ ছেলে ও ছোট মেয়েও জলপাইগুড়ি তাদের বড়দি’র কাছে চলে যায়। সেই থেকে কিশোরগঞ্জে আমার শ্বশুরমশায়, শাশুড়ী মা আর ছোট দুই ছেলে থাকত। দুলাল তো লেখাপড়ায় ছিল একেবারে দূর্দান্ত রকমের মেধাবী। গ্রামের বাড়ীতে থেকেই দুলাল আকাশে প্লেন দেখতো আর ভাবতো এই প্লেনে চড়ে একদিন সে আমেরিকা যাবে।

    আমার শাশুড়ী দুলাল বলতে অজ্ঞান ছিল, তবে ক্লাস এইটে গ্রামের স্কুল থেকে টেলেন্টপুলে বৃত্তি পেয়ে নাইনে উঠার পর শ্বশুর মশায় ছেলেকে কিশোরগঞ্জ জিলা স্কুলে ভর্তি করে দিলেন, সেই থেকে দুলাল মায়ের ‘কোলছাড়া হয়ে গেল, আর কোলে ফিরে আসতে পারেনি। কিশোরগঞ্জ স্কুল থেকেই ম্যাট্রিকে ঢাকা বোর্ডে চতুর্থ স্থান পেল, সেখান থেকেই ঢাকা নটরডেম কলেজে ভর্তি হলো, আত্মীয় বাড়ীতে থাকতো, পরে ব্যাপ্টিস্ট হোস্টেলে সীট পেল, গ্রামে আর ফিরতে পারলোনা। দুলালের উজ্জ্বল ভবিষ্যতের কথা ভেবে আমার শাশুড়ি এসবই মেনে নিয়েছিলেন। দুলাল তো ইন্টারমিডিয়েট পরীক্ষায় স্টার মার্কস পেয়ে পাশ করলো, ঢাকা শহরের চাকচিক্যে সে মোহিত হয়ে পড়েছিল, ‘মধুমিতা’ সিনেমা হলের একটা সিনেমাও বাদ পড়তোনা, স্কলারশীপের টাকা এবং টিউশনির পয়সায় দুলাল বেশ আনন্দেই ছিল। তবে সে বাড়ী থেকে কোন পয়সা আনতোনা, মাসে মাসে সুযোগ পেলেই সে গ্রামে চলে যেত, সাথে করে নিয়ে যেত, বাবার জন্য নানা রকম বিস্কুট, আপেল, আনার, আঙ্গুর, ইত্যাদি ইত্যাদি। আমার শাশুড়ী তো দুলালকে পেলে মহাখুশী হয়ে উঠতেন। মেথি ফোড়ণ দিয়ে পাতলা মুসুরের ডাল রানতেন, ‘আঠাইল্যা কলা’ সিদ্ধ করে কেমন করে নাকি পায়েস রানতেন, যে পায়েসের স্বাদ এখনও উত্তমের জিভে লেগে আছে। এরপর তো আমার শ্বশুরমশায় মারা গেলেন, আহারে! উনি এত আদরের ছেলের সাফল্য সংবাদ শুনে যেতে পারেননি।

    বাবার মৃত্যুর সময় দুলাল একেবারে শিয়রের পাশে বসে ছিল। অনেক পরে উত্তম আমাকে কথায় কথায় বলেছে, তার নাকি কোন আফসোস নেই, বাবাকে যে কয়টা বছর পেয়েছে, বাবার সুখী তৃপ্ত মুখখানিই মনে গেঁথে আছে। তার তো ডাক্তারী পড়ার ইচ্ছে ছিল, কিন্তু তার বাবা নাকি কোথায় শুনে এসেছিলেন, কেমিস্ট্রি খুব ভাল সাবজেক্ট, তাই সে কেমিস্ট্রি অনার্সেই ভর্তি হয়েছিল। এর কিছুদিন পরেই মুক্তিযুদ্ধ শুরু হয়ে যায়, এবং আমার শাশুড়ী দালাল ধরে দুলালকে সবার আগে জলপাইগুড়ি মেয়ের কাছে পাঠিয়ে দেন, এর কিছুদিন পর আরেক ছেলেকে নিয়ে নিজেও চলে যান। সেই যে মুক্তিযুদ্ধের সময় আমার শাশুড়ী জলপাইগুড়ি মেজ ছেলের কাছে চলে গেলেন, আর স্বাধীন বাংলাদেশে ফিরে আসেননি। তবে দুলাল চলে এসেছিল, দুলাল তো ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে অনার্স ভর্তি হয়েছিল, কাজেই তাকে আসতেই হবে। দুলাল লেখাপড়া করে, টিউশনি করে, প্রত্যেক বছর ভিসা নিয়ে ইন্ডিয়া যায়, মায়ের সাথে কিছুদিন থেকে আবার দেশে ফিরে আসে। এভাবেই এক সময় দুলাল মাস্টার্স পাশ করে ঢাকা ইউনিভার্সিটিতে লেকচারার পদে জয়েন করে। ছেলে চাকরী পেয়েছে, কিন্তু ছেলে তো ছোটবেলা থেকেই আকাশে প্লেন যেতে দেখলেই আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখতো, কাজেই দুলাল আমেরিকা যাওয়ার জন্য প্রস্তুতি নিতে শুরু করলো। মাস্টার্স পড়ার সময় এই ছেলে ‘জৈব রসায়ন’ বই লিখে ফেললো, ইংলিশে নয়, পুরো বাংলায়, বি এস সি ক্লাসের জন্য পাঠ্যবই হিসেবে, প্রকাশক তাকে এক থোকে টাকা দিয়ে দিল, সেই টাকায় তার প্লেনের টিকিট হয়ে গেল, দুলাল চলে গেল পিএইচডি করতে, আমেরিকাতে না, কানাডাতে।

    কানাডা যাওয়ার আগে দুলাল মায়ের সাথে দেখা করতে গেছে, মা বলেছে, “বিদেশে যাইতাছো যাও, একটাই কথা, মেম বিয়া কইরোনা”। দুলাল মায়ের কথা মেনে চলার চেষ্টা করেছে, মেম বিয়ে করবে কি, মেমের সাথে প্রেমও হয়নি, বরং টাকা কিছু জমলেই প্লেনে চড়ে সে মায়ের কাছে চলে এসেছে। একসময় দুলালের পিএইচডি ডিগ্রী কমপ্লীট হয়, পোস্ট ডক্টরেটের চাকরী নিয়ে সে হাওয়াই চলে যায়, তার স্বপ্নের আমেরিকা, স্বপ্নের আমেরিকার অনেক জায়গা সে ঘুরে দেখে ফেলে, তবুও আমেরিকা দেখা শেষ হয়না। এদিকে মা’কে দেখতে যেতে মন চায়, সুপারভাইজার তাকে ছুটি দিতে চায়না, অন্য সবার ছুটি মঞ্জুর করলেও দুলালের ছুটি মঞ্জুর করেনি। ঈশ্বরচন্দ্র বিদ্যাসাগর মায়ের ডাকে ঝড় বাদলের রাতে সাঁতরে দামোদর নদ পাড়ি দিয়েছিল, আর দুলাল সেই চাকরীতে ইস্তফা দিয়ে প্লেনে চড়ে বসেছিল, সরাসরি মায়ের দুলাল মায়ের কোলে ফিরে এসেছে।

    ’৮৫ সালে আমার উত্তমের সাথে যখন আমার পরিচয় হয়, তাকে দেখামাত্র আমি দিওয়ানা হয়ে গেছি, আমার মনে হয়েছে, একে হারিয়ে যেতে দেয়া যাবেনা, যে কোন শর্তে তার সাথে ঘর বাঁধতে রাজী আছি। চাল চূলো নেই, দেশে বাবা-মা ভাই বোন নেই, শুধু একা একজন মানুষ, এমন পাত্রের সাথে কোন বাবা-মা তাঁদের একমাত্র মেয়েকে বিয়ে দিতে রাজী হতে চায়না। আমার বেলায় রাজী হয়েছে, কারণ আমি একেবারে বেঁকে বসেছি, এই ভদ্রলোককে বিয়ে করবো বলে। কথায় কথায় উত্তম আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল, “ আচ্ছা তোমরা কি কায়স্থ?”
    আমি তো এক মুহূর্ত দেরী না করেই বলে ফেলেছি, “ হ্যাঁ হ্যাঁ, আমরা কায়স্থ, আমরা কায়স্থ”।
    আমাদের বিয়ে হয়ে গেল। সে যে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে আমি কায়স্থ কিনা, ব্যাপারটা আমাকে ভীষণভাবে চিন্তিত করে তুলেছিল। এমন একজন রূপবান, গুণবান পুরুষ কেন গোত্র-বংশ জিজ্ঞেস করলো? ভাগ্যিস, আমরা কায়স্থ ছিলাম, নাহলে তো পাখী হাত ফসকে উড়েই যেত। বিয়ের পর তো উড়ে যাওয়ার ভয় নেই, তাই জিজ্ঞেস করলাম, “ তোমার মত মানুষ জাত-পাত নিয়ে ভাবো, ব্যাপারটা আমাকে অবাক করেছে”। উত্তরে বলেছে, “ আমি তো জাত-পাত নিয়ে ভাবিনা, মায়ের শখ ছিল ছেলে বউ যেন সুন্দরী হয় এবং হিন্দু কায়স্থ হয়। আসলে আমি বাইরে বাইরে থাকি বলে মায়ের ভয় ছিল, না জানি কখন কোন সাদামেম নিয়ে হাজির হই, আগেতো কায়স্থ, সুন্দরী মেয়ে চেয়েছে, পরে তো বলেছে, বাঙ্গালী হিন্দু মেয়ে হলেই হবে, কালো ফর্সা নিয়ে কোন আপত্তি থাকবেনা। ঐজন্য জিজ্ঞেস করেছি তোমরা কায়স্থ কিনা, মা’কে চিঠিতে জানিয়েছি, মা অনেক খুশী হয়েছে”।

    সেই থেকে আমার শাশুড়ি আর আমার মাঝে একটি ভালোবাসা ও কৃতজ্ঞতার সম্পর্ক রচিত হয়ে গেলো। মনে মনে বার বার বললাম, ‘ ভাগ্যিস শাশুড়ি মা ছেলেকে বলে দিয়েছিলেন কায়স্থ মেয়ে চান, তাই তো সে এতকাল অবিবাহিত ছিল, মায়ের দিক থেকে কোন আপত্তি না থাকলে এই ছেলেকে কে কখন কথা দিয়ে নিয়ে চলে যেত ঠিক আছে? আমাকে তখন সারা জীবন উত্তম ছাড়া থাকতে হয়তো”।

    *** আমার স্বামী অনেক ছোটকাল থেকেই মা-বাবার কোল ছাড়া, জীবনের অনেকটা বছর সে একা একা থেকেছে। বাইরে বাইরে খেয়েছে, তাকে যখনই তার মায়ের হাতের রান্নার কথা জিজ্ঞেস করেছি, সে খুব বেশী কিছু খাবারের কথা আমাকে বলতে পারেনি। পাছে বউ মন খারাপ করে, এই ভেবেও হয়তো সে মায়ের রান্নার কথা বলতোনা। কিন্তু আমি জানতে চাইতাম, খুঁচিয়ে খুঁচিয়ে জানতে চাইতাম, তার মা’কে নিয়ে স্মৃতি, বাবাকে নিয়ে স্মৃতি, একটু একটু করে সে প্রকাশ করতো। ওভাবেই জেনেছি, মেথি ফোড়ণ দিয়ে ডাল রান্নার কথা, বীচি কলা দিয়ে পায়েস রান্নার কথা। আমি ডাল রান্না করার চেষ্টা করেছি, সে অনেক আমতা আমতা করে বলেছে, ডাল ভাল হয়েছে তবে তার মায়ের রান্নার মত হয়নি। একথা শুনে আমি খুশী হয়েছিলাম, তাকে বলেছি, “শোন, এত ইতস্তত করে বলছিলে কেন, তোমার কথা তো সত্যি, মায়ের রান্নার মত আর কেউ রানতে পারেনা। যত ভাল রাঁধুণীই হোক, মায়ের রান্নার মত কারো রান্না হয়না। আমি আর কোনদিন এই ডাল রান্না করার চেষ্টা করবোনা, কারণ আমি রান্না করলে অন্য স্বাদ পাবে, সেই স্বাদে অভ্যস্ত হয়ে গেলে মায়ের রান্নার স্মৃতি ভুলে যাবে, কাজেই এখন থেকে আমি আমার মত করে রাঁধবো, তবে তুমি তোমার মায়ের রান্নার গল্পগুলো করবে, শুনতে ভালো লাগে”। আমার কথায় ভরসা পেয়ে সে মাঝে মাঝে মা-বাবাকে নিয়ে বিভিন্ন গল্প করতো, সেখান থেকেই আমি উদ্ধার করি, এই মানুষটা ভালোবাসার কাঙাল, লেখাপড়া করতে গিয়ে সে মা-বাবার সান্নিধ্য পায়নি, আত্মীয় স্বজনের আদর ভালোবাসা পায়নি, অথচ এমন একটি লক্ষ্মী ছেলেকে সকলেরই ভালোবাসার কথা। আমি মনে মনে ঠিক করে ফেললাম, এই ভালোবাসার কাঙ্গালকে জীবনের শেষ দিন পর্যন্ত ভালোবেসে যাব।

    বিয়ের দেড় বছর পর আমাকে নিয়ে উত্তম কুমার জলপাইগুড়ি গেল, মা’কে বউ দেখাবে বলে। আমি দেখলাম আমার শাশুড়ী মা’কে। সাদাসিধে বুড়ীমা। আমার তো তখন বয়স কম, বেশীর ভাগ সময় শুধুই ফিচলেমী করি, আনন্দ ফূর্তিতে থাকতে ভালোবাসি, শাশুড়ীকে বললাম, “ তোমাকে তো দেখতে আমার ঠাকুরমা’র মত লাগে, তোমাকে মা ডাকবো কিভাবে? ঠাকুমা ডাকতে ইচ্ছে করছে”। দুলালের বউ এমন ফাজিল হবে, দুলালের মা তা কল্পনাও করেনি। কিন্তু কি আর করা, মা দেখেন, তাঁর দুলাল এই ফাজিল মেয়েকে নিয়েই বেশ খুশীতে ডগমগ, কাজেই বাধ্য হয়ে আমার ফিচলেমী উনি মেনে নিলেন।

    উনি বলেছেন, “ শোন, তোমার ভাসুরকে যখন প্রণাম করবা, পায়ে হাত ছোঁয়াইও না, মাটিতে হাত ঠেকাইয়া প্রনাম কইরো, ছোট ভাইয়ের বৌকে ভাসুরের পা স্পর্শ করতে হয়না”
    আমি বললাম, “ দাদা তো আমার ভাসুরই না শুধু, দাদাও তো, তাহলে দাদার পায়ে হাত না ছুঁলে পায়ের ধূলো নেবো কেমন করে?” দাদা বললেন, “ থাক, ওকে এত নিয়মের কথা বলোনা, তোমাকে প্রনাম করতে হবেনা, আমি এমনিতেই আশীর্বাদ করি”। দাদার কথা দাদা বলেছে, আমি উনাকে পায়ে হাত ছুঁইয়েই প্রনাম করেছি।

    পরের দিন উনি বললেন, “ অ মিঠু, শোন, ঘরে মাথায় কাপড় দাওনা ঠিক আছে, কিন্তু চা-বাগানের রাস্তা দিয়া যখন হাঁইটা কোথাও যাইবা, মাথায় একটু কাপড় দিও, তোমার ভাসুরের একটা সম্মান আছেনা?” আমি পড়ে গেছি মহাফাঁপরে, মাথায় ঘোমটা দিতে কেমন লজ্জা লজ্জা লাগে, তার উপর আমার উত্তম কুমার হচ্ছে আমেরিকা ফেরত সাহেব, সাহেবের বউ হয়ে লজ্জাবতী লতা হয়ে থাকবো? আমার মনের দ্বিধা বুঝে ফেলেছে উত্তম কুমার, সে ইশারায় বলেছে, “ বাড়ীর সামনের রাস্তাটুকু মাথায় ঘোমটা টেনো, পরে ফেলে দিলেই হবে”। আমি তো মনে মনে খুশী, যখন বেড়াতে বের হয়েছি, মাথায় ঘোমটা দিয়ে বের হয়েছি, বেশ খানিকটা পথ চলে গিয়েও ঘোমটা ফেলছিনা দেখে উত্তম কুমার বলল, “ এবার ঘোমটা ফেলে দিতে পারো, এখানে কেউ কিছু মনে করেনা”। আমি ঘোমটা ফেলিনি, মনে মনে ভেবেছি, একজন মানুষ, তাঁর কত ছোট একটুখানি চাওয়া, দুলালের বউকে বাগানের সবাই দেখবে, এত শিক্ষিত মেয়ে হয়েও মাথায় কাপড় দিয়ে হাঁটে, এতেই উনার অনেক গর্ব হবে, কি দরকার বুড়ো মানুষটির সাথে ছলনা করার?

    আমার শাশুড়ীর আমার কাছে আর কিছু চাওয়ার ছিলনা, উনার মেজ ছেলে, বড় মেয়ের কাছে বলেছেন, “ দুলালের ছিল একটা ছন্নছাড়া জীবন, বয়স হয়ে যাচ্ছিল , বিয়ে’থা না কইরা ভবঘুরের মত ঘুরছে, কে রাইন্দা খাওয়ায়, কেই বা তার একটু যত্ন করে, এইটা ভাইবা মনে অশান্তি হইত, এখন দেখতাছি বউ তো ভালই পাইছে, গায়ের রঙটা একটু চাপা, তবে আমার দুলালতো একেবারে ফটফইট্টা ফর্সা, বউয়ের মুখশ্রী সুন্দর, মাইয়া ভাল, জাতের মাইয়া, একটুও অহংকার নাই”।

    আমার শাশুড়ীর সাথে আরেকবার দেখা হয়েছে। আমাদের প্রথম সন্তান মৌটুসীর যখন দুই বছর বয়স, ওকে সাথে করে আমরা জলপাইগুড়ি গেছিলাম। সেবার একটা অদ্ভুত অভিজ্ঞতা হয়েছিল। আমরা আগে থেকে জানাইনি আমাদের যাওয়ার সংবাদ। তখন ফোন ছিলনা, তাছাড়া চা-বাগানে টেলিগ্রাম করলেও সময়মত পৌঁছতোনা। আমার শাশুড়ী তখন শয্যা নিয়েছেন, বার্ধক্যজনিত কারণেই মানুষটার দেহ পড়ে গেছে। একটানা আটমাস বিছানায় পড়েছিলেন, আমরা যে সন্ধ্যায় বাগানে গিয়ে হাজির, বাসার ভেতর থেকে দাদা, বৌদি, ছেলেমেয়েরা সবাই তো হই হই করে বেরিয়ে এসেছে, আমাদের দেখে সবাই কি খুশী, কিন্তু খুশীর ভেতর দিয়ে সকলেই এক কথা বলছিল, “গতকাল সারা দিন রাত মা শুধু দুলালের কথা বলছিল, কেবলই বলছিল, দুলাল আইছে, তোমরা দরজা খুইলা দাও, দেশের অবস্থা ভালোনা, দুলাল আইসা পড়ছে দরজা খোল”। ওদের সবার নাকি আমাদের জন্য দুঃশ্চিন্তা হচ্ছিল এই ভেবে যে মায়ের মন, এমন করে ছেলেকে ডাকছে, কিন্তু পরের দিনই যে আমরা বাংলাদেশ থেকে সোজা বাগানে হাজির হবো, তা কেউ ভাবতেই পারেনি।

    বাগানে কিছুদিন থেকে আমরা দেশে ফিরে এলাম। যে ক’দিন ছিলাম, সারাটাক্ষণ উনি শুধু ‘দুলাল দুলাল করতেন। ছোট্ট মৌটুসী একদিন ঠাকুমার শিয়রের পাশে বসে আয়নাতে দেখে দেখে নিজের গালে স্নো মাখছিল, ঠাকুমার মুখ থেকে একটানা ক’দিন ধরে ‘দুলাল দুলাল’ শুনতে শুনতে সেদিন ঠাকুমাকে এক ধমক দিল, “ এত দুলাল দুলা্ল করবেনা, তুমি ঘুমাও”। মৌটুসীর কথায় সবাই খুব মজা পেয়েছিল, কিন্তু আমার মনের মধ্যে খচ খচ করছিল, আহারে! সন্তান এক সময় শুধুই আমার, কত কাছের কত আপনার, আরেক সময় কত দূরের, আরও কতজনের হয়ে যায়! আমার খুব কান্না পেয়েছিল সেবার, কোলপোছা ছেলে, লেখাপড়া করাতে গিয়ে ছেলের সান্নিধ্যটুকুই পেলোনা।

    তারওপর আরও কয়েকমাস উনি বিছানায় ছিলেন, এরপর যা হয়, উনি শেষ নিঃশ্বাস ত্যাগ করলেন। দিনটি ছিল ’৮৯ এর ১৮ই আগস্ট। ’৯০ এর ১৪ই আগস্টে আমাদের মেজো মেয়ে মিশার জন্ম হয়। মিশার জন্মের সাথে সাথে আমার মা বলেছিলেন, “তোর শাশুড়ীর মৃত্যুর পাক্কা এক বছর পর তোর এই মেয়ে জন্মালো, মনে হয় তোর শাশুড়ীই তার ছেলের কাছে ফিরে এসেছে। জীবনের শেষ সময়ে শুধু দুলাল দুলাল করছে, দুলালের ঘরেই চলে আসছে”। মায়ের কথাকে হেয়ালী হিসেবেই নিয়েছি, মা এই রকম অনেক কথাই বলতেন, কিন্তু মিশা একটু একটু করে বড় হচ্ছিল, আর ওর মধ্যে বাবার জন্য দূর্ণিবার আকর্ষণ তৈরী হচ্ছিল, শাশুড়ীর কিছু অভ্যাস ওর মধ্যেও ছিল, আমার শাশুড়ী পান খেতেন, মিশাকে নিয়ে যখন নারায়ণগঞ্জে যেতাম, দেড় বছরের বাচ্চা তার সুন্দর দিদার ( আমার মামী) পানের ডাবর থেকে তৈরী করা পান মুখে দিয়ে দিব্বি চিবাতো। ওর জন্মের সাথে সাথে খেয়াল করিনি, কিন্তু বেশ কয়েকমাস পর খেয়াল করে দেখি, ওর মাথার তালুতে পাকা চুল। অবাক হয়ে গেছি এই ছোট বাচ্চার মাথায় পাকা চুল দেখে। এইসব কিছুই ক্ষণিকের জন্য বিশ্বাস করেছি, পরে ভুলে গেছি।
    কিন্তু মিশা যত বড় হতে থাকে, তার বাবার প্রতি টান বাড়তে বাড়তে এক্সট্রিমে চলে যেতে থাকে, আকাশে মেঘ করলে আর কারো জন্য চিন্তা নেই, বাবা কিভাবে আসবে, বাবার কি হবে, অফিস থেকে ফিরতে দেরী হলে অফিসে ফোন করে করে সবার মাথার পোকা খেয়ে ফেলতো, আমার বাবাকে খুঁজে দাও বলে। সেই ছোটবেলা থেকেই মিশা রান্না করতে ভালোবাসে, ওর যা কিছু রান্না, তা বাবাকে টেস্ট করতেই হয়, এবং তার বাবারও দেখি তিন মেয়ের মধ্যে এই মেয়ের প্রতি দূর্বলতা একটু বেশী। আমার শাশুড়ির সাথে স্বভাবের আরেকটি মিল ছিল, শাশুড়ী বিড়াল ভালোবাসতেন, কোলে নিয়ে বসে থাকতেন, আমি বিড়াল দুই চক্ষে দেখতে পারিনা, কিন্তু মিশা সেই ছোট্টবেলা থেকেই অন্যবাড়ীর বিড়াল দেখে আমাদের মাথার পোকা খুলে ফেলতো, বিড়াল পালবে বলে, মানুষের বিড়াল কোলে নিয়ে বসে থাকতো।

    ১৪ই আগস্ট মিশার জন্মদিন গেলো, দুই দিন পর আমার সাথে মিশার একটি ছবি প্রোফাইল পিকচার করেছি, একজন জানতে চেয়েছে, মেয়েটি কে? আমি খুবই অসাবধানে বলে ফেলেছি, “ আমার শাশুড়ী”। আজ ১৮ই আগস্ট, তাই খেয়াল হয়েছে, আরে! আমার মুখ দিয়ে আমারই অজান্তে কীভাবে বেরিয়ে গেল, মিশা আমার শাশুড়ী! তাহলে তো আমার শাশুড়ী এক জীবন শেষ করে আরেক জীবন শুরু করেছেন, দুলালের শৈশবে দুলালকে কাছে পাননি, পর্যাপ্ত স্নেহ-মমতা দিতে পারেননি, মৃত্যুকালেও শুধু ‘দুলাল দুলাল’ করেছেন, নিজের মনেই প্রলাপ বকেছেন, “ দুলালের কি হইছে, দেশের অবস্থা ভালোনা, দুলালের কি হইছে”! পরবর্তী জন্মে মিশা হয়ে দুলালকে কাছে পেয়েছেন, মনের সুখে ছেলেকে যত্ন করছেন, আদরে সোহাগে ভরিয়ে দিচ্ছেন। আত্মার ক্ষয় নেই, আত্মার লয় নেই। আমার শাশুড়ী আমার মিশা হয়ে দিব্যি আমাদের মাঝে মিশে আছে।

    *** শুরুতেই আমার যে বন্ধুর কথা বলেছি, তার পরিচয় আর দিলামনা***
    2Like · · Promote ·
     
     
    'বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু' করে যাঁরা কুম্ভীরাশ্রু বিসর্জন করে চলেছেন!

    যাঁদেরকে আমরা ছোটবেলা থেকেই আওয়ামীলীগের অনুসারী, আওয়ামীলীগের পরম বন্ধু, হিতৈষী হিসেবে দেখে এসেছি, আজ তাঁদের অনেককেই যাত্রার 'বিবেক' এর ভূমিকায় অবতীর্ণ হয়েছেন। সময়ে-অসময়ে, প্রয়োজন বা অপ্রয়োজনে তাঁরা বলেন, " বর্তমান আওয়ামীলীগ আর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগে আকাশ-পাতাল তফাৎ, কেউ কেউ বলেন, বঙ্গবন্ধুর সেই আওয়ামীলীগ আর নাই, অথবা বলেন, বঙ্গবন্ধুর কন্যা তাঁর বাপের মত হয়নি।"

    যাঁরা এগুলো বলেন, তাঁরা সমাজে মানী-গুণী জন হিসেবে বিবেচিত, তাঁরা যা বলেন, সমাজ তা ঋষিবাক্য হিসেবে জ্ঞান করে থাকে। আমিও উনাদের কথাগুলো ঋষি বাক্য হিসেবেই জ্ঞান করতে চাই, কিন্তু বেয়ারা মন ভাবেঃ

    আচ্ছা, বর্তমান আওয়ামী লীগ আর বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগে আকাশ -পাতাল পার্থক্য থাকবেনা কেন? দুই আওয়ামীলীগে সময়ের ব্যবধান ৩৮ বছর, ৩৮ বছর আগে আমার যে চেহারা ছিল, ৩৮ বছর পর তো সেই একই চেহারা থাকার কথা নয়। ৩৮ বছর আগে যে শিশু জন্মেছিল, ৩৮ বছর পর সেই শিশুর তো আর শিশু থাকার কথা নয়, ৩৮ বছর আগে যিনি বঙ্গবন্ধুর আস্থাভাজন ছিলেন, আওয়ামীলীগ বলতে অজ্ঞান ছিলেন, ৩৮ বছর পর তো তিনি আর তা নেই, টকশো, গোলটেবিল, পত্রপত্রিকার পাতায় বঙ্গবন্ধুর মেয়ের সমালোচনায় মুখর হয়ে উঠেছেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর ৩৮ বছর আগের আওয়ামীলীগ আর বর্তমান আওয়ামীলীগে পার্থক্য থাকবেনা কেন? বঙ্গবন্ধুর আমল আর বর্তমান আমল কি এক হলো? বঙ্গবন্ধুর আমলে জনসংখ্যা আর বর্তমান আমলের জনসংখ্যা কি এক? বঙ্গবন্ধুর আমলে কি এত বেশী মৌলবাদী সংগঠণ ছিল? বংবন্ধুর আমলে কি চাঁদে মানুষের মুখ দেখা যেত? বঙ্গবন্ধুর আমলে কি বাংলাদেশ ক্রিকেট টিম বিশ্ব ক্রিকেট খেলেছিল? বঙ্গবন্ধুর আমলে কি ইন্টারনেট চালু হয়েছিল? মোবাইল ফোন চালু হয়েছিল? সময়ের ব্যবধান হচ্ছে অনেক বড় ব্যবধান, সমালোচকেরা সবই বুঝেন, তবুও না বোঝার ভান করেন, সকলেই 'বঙ্গবীর', 'এ বি এম মুসা' নাহলে নিদেনপক্ষে একজন 'কনকচাঁপা' হতে চাইছেন।

    বঙ্গবন্ধুর কন্যা নাকি বাপের মত হয়নি!!! আচ্ছা, যাঁরা আজ এইসকল কথা বলছেন, তাঁদের নিজেদের পুত্র বা কন্যা কি তাদের মত হয়েছে? তাই কি হয়? বঙ্গবীরের ছেলেমেয়েরা কি তাদের বাপের মত 'বীর' হয়েছে? বিখ্যাত কলামিস্টদের ছেলেমেয়েরা কি কলামিস্ট হয়েছে? হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের ছেলে কি তার বাবার মত গায়ক হয়েছে? সাবিনা ইয়াসমিনের মেয়ে কেন তার মায়ের মত গায়িকা হলোনা? রুনা লায়লার মেয়ে কেন গায়িকা না হয়ে লন্ডনে বাচ্চাকাচ্চা নিয়ে সুখে সংসার করছে? সুচিত্রা সেনের মেয়ে কি সুচিত্রা সেনের মত হয়ছে? কেউই কারো মত হয়না, বাবা বা মায়ের কাছ থেকে কিছু কিছু বৈশিষ্ট্য পাওয়া যায়, চেহারাতে কিছু মিল থাকে, কিন্তু সার্বিক দিক থেকে কারো সাথেই কারো হুবহু মিল হয়না।

    প্রতিটি মানুষের নিজস্ব বৈশিষ্ট্য থাকে, সেই বৈশিষ্ট্য নিয়েই সে তার মত করে বেঁচে থাকে। বাপের মত হয়নি বলেই কি বঙ্গবন্ধুর কন্যা 'অযোগ্য' হয়ে গেল? ভাল কথা, উনাকে না চাইলে উনার পরিবর্তে তো তাহলে বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে হয়। কেউ কি পারবে বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে? তা তো পারবেনা, যাঁকে আর কোনদিন ফিরে পাওয়া যাবেনা, তাঁর কথা ভেবে যিনি আমাদের মাঝে বর্তমান আছেন, তাঁকে এভাবে হেলা ভরে দূরে ঠেলে দিতে হবে? এই কাজে কারা লাভবান হচ্ছে?
    বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গবন্ধুর মেয়েকে তুলনা করার আগে, আমাদের কি ভেবে দেখা উচিত নয় যে বঙ্গবন্ধুর ভাগ্য আর তাঁর মেয়েদের ভাগ্য এক নয়। বঙ্গবন্ধুকে 'এতিম' হতে হয়নি, এক রাতে তাঁর বাপ-মা, ভাই, আত্মীয়-স্বজনকে হারাতে হয়নি। যে কালরাত শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার জীবনে নেমে এসেছিল, সেই রাত বঙ্গবন্ধুর জীবনে আসেনি, বঙ্গবন্ধুকে শোকে পাথর হতে হয়নি, বঙ্গবন্ধু জানতেই পারেননি বাপ-মা, ভাই, স্বজনকে এক রাতে হারাণোর বেদনা কেমন? বঙ্গবন্ধু নিজে 'এতিম' হননি, মেয়ে দুটিকে 'এতিম' করে গেছেন, সবাইকে হারিয়ে 'এতিম' হয়ে যে বেঁচে থাকা, সেই বেঁচে থাকায় সার্থকতা কতটুকু?

    শেখ হাসিনাকে যাঁরা সমর্থণ করতে না চান ভালো কথা, কিন্তু মানুষটিকে তাঁর বাপের সাথে তুলনা করে কেন তাঁর শোকের পাহাড় আরও উঁচু করে দিচ্ছেন? শেখ হাসিনার তো আজ এখানে থাকারই কথা ছিলনা, উনি তো স্বামী সন্তান নিয়ে সংসার পেতেছিলেন। বঙ্গবন্ধুকে নির্বংশ করে দিয়েই তো 'ওরা' শেখ হাসিনার সুন্দর জীবনকে তছনছ করে দিয়েছে। আপনারাই তখন মানুষটিকে তাঁর সুখী গৃহকোন থেকে টেনে নিয়ে এলেন, তাঁর কাঁধে বিধ্বস্ত আওয়ামীলীগের জোয়াল তুলে দিলেন, উনিও স্বামী-সংসার, ছেলেমেয়ে দুটি থেকে বিচ্ছিন্ন হয়ে আপনাদের মাঝে থেকে দলকে দাঁড় করালেন, হারিয়ে যাওয়া 'বঙ্গবন্ধু' নামটিকে পুনরায় জাগিয়ে তুললেন।

    আপনারা পারেননি, কলামের পর কলাম লিখেও পারেননি, টকশোতেও যেতে পারেননি, কোথাও মুখ ফুটে গিয়েও বলতে পারেননি, " বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার চাই"। বংবন্ধুর মেয়েই তো আপনাদের হয়ে বঙ্গবন্ধু হত্যার বিচার সম্পন্ন করে দেশকে পাপমুক্ত করেছেন। এত তাড়াতাড়ি ভুলে যান কি করে সবকিছু?

    আসলে মানুষটির শরীরে তাঁর বাপের সাহসী রক্তের স্রোত বয়ে চলেছে বলেই এখন পর্যন্ত অকৃতজ্ঞ, স্বার্থপরদের মাঝে ঠায় দাঁড়িয়ে আছেন। মোকাবেলা করে চলেছেন একটির পর একটি বিষাক্ত তীরের আঘাত, মৃত্যুও তাঁর কাছে ঘেঁষতে ভয় পায় ( উনি শতায়ু হোন)। আপনারা কি বঙ্গবন্ধুকে শেখ হাসিনার চাইতেও বেশী ভালোবাসেন? আপনারা কি ভালোবাসার জোরে বঙ্গবন্ধুকে টুঙ্গীপাড়ার 'কবর' থেকে তুলে নিয়ে আসতে পারবেন? যদি পারেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুকে জীবন্ত এনে হাজির করুন, দেখবেন ঐ মুহূর্তেই আপনাদের এই সুখের রাজ্যপাট ছেড়ে দিয়ে দুঃখীনি কন্যা তাঁর ছেলে-মেয়ের হাত ধরে ছেলেমেয়ের সংসারে ফিরে যাবে।

    আর যদি বঙ্গবন্ধুকে ফিরিয়ে আনতে নাই পারেন, তাহলে বঙ্গবন্ধুর সাথে , বঙ্গবন্ধুর আওয়ামীলীগের সাথে শেখ হাসিনাকে তুলনা করে মেয়েকে তার বাপের প্রতিদ্বন্দ্বী করে তুলবেনাওনা, বরং বঙ্গবন্ধুর হয়ে বঙ্গবন্ধুর কন্যাটিকেই ভালোবাসুন, বাপ-মা, ভাই হারাণো দুঃখী মানুষটির প্রতি আপনাদের সহযোগীতার হাত বাড়িয়ে দিন, আপনারা যাঁরাই বঙ্গবন্ধুর সাথে বঙ্গবন্ধুর কন্যার তুলনা করে চলেছেন, ভাল করে জানেন, আপনারা ভুল করছেন, আপনারা এটাও জানেন, কোন অগ্নীকুন্ডের মধ্যে উনি বাস করছেন, সবই যদি জানেন আর বুঝেন, যদি মানেন যে বঙ্গবন্ধু আর ফিরে আসবেননা, তাহলে কেন আওয়ামীলীগের বিরুদ্ধে, শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে বিষোদগার করে চলেছেন?
    বঙ্গবন্ধুর নাতি দেশে ফিরেছে, তাকে নিয়েও আপনাদের টিকা টিপ্পণীর শেষ নেই, 'পরিবারতন্ত্র চাইনা' বলে এই সরল-সহজ, স্নিগ্ধ সুন্দর, উচ্চশিক্ষিত, স্মার্ট তরুণকে প্রবাসী জীবনের দিকে ঠেলে দিতে চাইছেন। আপনারা বোধ হয় ভুলেই গেছেন, বঙ্গবন্ধুর নাতির দেহে বঙ্গবন্ধুর রক্ত প্রবাহিত হচ্ছে, বঙ্গবন্ধুর কন্যাকে সহ্য করতে না পারলে বঙ্গবন্ধুর নাতিকে গ্রহণ করুন, অযথা গা মোচড়ামুচড়ি করে, অযথাই শেখ হাসিনার সমালোচনা করে শত্রুর হাতকে শক্তিশালী করবেননা, আর তাই যদি করবেন ঠিক করেছেন তাহলে অযথা 'বঙ্গবন্ধু, বঙ্গবন্ধু' বলে 'কুম্ভীরাশ্রু' বিসর্জন করবেননা।
    9Like · · Promote ·
     
     

    “সেই তো নথ খসালে, তবে কেন লোক হাসালে”!

    বেগম জিয়া এবছর উনার নকল জন্মদিন পালন করবেন না তথ্যটি জানতে পারি গতকাল রাতে। কাজ থেকে ফিরেছিলাম রাত সাড়ে নয়টায়, দোতলার সিঁড়িতে পা দেয়ার আগে রান্নাঘরে একটু উঁকী মেরে দেখি রান্নাঘর যেমন রেখে গিয়েছিলাম, ঠিক তেমনই পড়ে আছে। কথা ছিল, মিথীলা তার ‘মিআ’র(মিশা)জন্য কেক বেক করবে আর পোলাও রান্না করবে। কারণ গতকাল ছিল মিশার জন্মদিন। মেয়েটার জন্য কিছুই করা হয়নি দেখে মনটা একটু খারাপ হয়েছে, ভাগ্যিস ভাল আসার সময় ওর জন্য বার্থডে কার্ড আর গিফট কার্ড এনেছিলাম।

    দোতলার সিঁড়িতে পা দেয়া হলোনা, ভাত রান্না করবো বলে কিচেনেই ঢুকে পড়লাম, পাশের লিভিং রুম থেকে টিভির সাউন্ড মোটামুটি স্পষ্টই শোনা যাচ্ছিল, ‘একাত্তর জার্ণাল’ চলছিল। রাইস কুকার অন করে দিয়ে পায়ে পায়ে লিভিং রুমের দিকে এগিয়ে গেলাম, দেখি স্ক্রীণে তিনজনকে দেখাচ্ছে। তিনজনের কাউকেই চিনিনা, সঞ্চালক সামিয়া চৌধুরী (?)কে চিনেছি। একাত্তর টিভি আমাকে টানে, তাই গিয়ে সোফাতে বসে পড়ি। মাথায় ঘুরতে থাকে ‘ ঠাকুরবাড়ীর আঁতুরঘরে’র অসমাপ্ত স্ক্রীপ্টের কথা। তরুণ প্রকাশককে বলেছিলাম, ১৫ই আগস্টের মধ্যে পুরো স্ক্রিপ্ট কমপ্লীট করে জমা দেবোই দেব।

    আমার স্বামী সাধারণতঃ সিএনএন, বিবিসি চ্যানেল দেখতে পছন্দ করেন। কাল সন্ধ্যায় তাকে একাত্তর টিভি অন রাখতে দেখে অবাকই হয়েছি। জিজ্ঞেস করে জানলাম, একজন শাহদিন মালিক, একজন পুলিশ কর্মকর্তা বেনজীর আহমেদ এবং অপরজন প্রফেসার ডঃ দিলারা চৌধুরী। ডঃ চৌধুরীর কথাবার্তা শুনেই বুঝে গেছি, এই ভদ্রমহিলা আশফিয়া পাপিয়াদের সমগোত্রীয়। নারীকে তখনই সবচেয়ে কুৎসিত দেখায়, যখন নারী কুতর্ক করতে থাকে, যখন নারী হিংস্র হয়ে উঠে। ডঃ দিলারা চৌধুরীকে কাল তেমনই কুৎসিত দেখাচ্ছিল,(প্রফেসার সাহেবা, কথাটি বলে ফেললাম, ক্ষমা করবেন এবং ভবিষ্যতে মিডিয়াতে এসে গায়ের জোরে কোন কথা বলতে যাবেননা, প্লিজ)। পুরুষদের বেলায় এই সমস্যা নেই, কারণ পুরুষের রূপ নিয়ে কেউ মাথা ঘামায়না বলেই হয়তো শাহদিন মালিক একজন আইনজ্ঞ হয়েও অধিকারের আদিলুর সাহেবের পক্ষ হয়ে, জামায়াতে ইসলামীর জ্বালাও পোড়াও জাতীয় তান্ডবের পক্ষে হাসি মুখে কথা বলে যাচ্ছিলেন। সামিয়া চৌধুরী যখন তাঁকে স্মরণ করিয়ে দিচ্ছিলেন কিছুদিন আগে জামায়াত নিষিদ্ধের পক্ষে তাঁর বক্তব্য দেয়ার কথা, তখনও উনি হাসতে হাসতেই বললেন, যতক্ষণ জামায়াতকে নিষিদ্ধ না করা হচ্ছে, ততক্ষণ জামায়াতের কর্মকান্ড ( তান্ডব) চলতে দেয়া উচিত। ডঃ দিলারাকে নিয়ে আর কিছুই বলতে চাইনা, উনার ঊদ্দশ্যে শুধু এটুকুই বলতে চাই, অবসরে বসে যেন একাত্তর জার্ণালের ভিডিও ক্লিপটি উনি দেখেন, যদি লজ্জা পাওয়ার মত গুণটুকু উনার মধ্যে থেকে থাকে, উনি লজ্জা পাবেন।

    একাত্তর জার্ণাল শেষ হতেই শুরু হলো একাত্তর দেশ সংযোগ। কাল আমাদের ১৪ তারিখের সন্ধ্যায় দেশের সময় ছিল ১৫ই আগস্টের সকাল। দেশ সংযোগের পুরোটা জুড়েই ছিল বঙ্গবন্ধুর শাহাদাতবার্ষিকী উপলক্ষে সারা দেশের টুকরো টুকরো সংবাদ। এক ফাঁকে আমার স্বামীকে জিজ্ঞেস করলাম, “ ম্যাডামের কেক কাটা হয়ে গেছে? কেক কাটা দেখাবেনা?” আমার স্বামী তার স্বভাবসুলভ ভঙ্গীতে মুচকী হেসে বলল, “ এ বছর খালেদা জিয়া কেক কাটবেনা”। অবাক হয়ে জানতে চাইলাম, “ কি বলো? ম্যাডাম কেক কাটবেনা কেন? উনি কি অসুস্থ?” জবাব পেলাম, “ না, এবার থেকে নাকি খালেদা জিয়া নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করবেন, তাই কেক কাটবেন না বলেছেন”। আমার স্বামীর মুখ থেকে এ তথ্যটি পাওয়ার সাথে সাথে মনে মনে বেগম সাহেবাকে বিশাল ধন্যবাদ জানালাম।

    আমি ফেসবুকে প্রতিদিন কিছু না কিছু লিখি, বেশীর ভাগ লেখা ব্যক্তিগত অভিজ্ঞতা থেকে লিখি, কারো কাছে ভালো লাগে, কারো কাছে খারাপ লাগে। যাদের কাছে লেখা ভালো লাগে, তারা তাঁদের সুন্দর সুন্দর মন্তব্য দিয়ে আমাকে নিরন্তর উৎসাহ দিয়ে যান। যাদের কাছে লেখা ভাল লাগেনা, তাদের বেশীর ভাগই আমার লেখা পড়েননা, কেউ যদি কৌতুহলবশতঃ পড়েই ফেলেন, তাঁদের ভাল না লাগার কথাটি অকপটে জানিয়ে দেন। তাঁদের মন্তব্য পড়ে আমি আরও বেশী উৎসাহ পাই, ভবিষ্যতে ভাল কিছু লেখার চেষ্টায় ব্রতী হই। আমার লেখা সম্পর্কে বিরূপ মন্তব্যকারীদের একটাই অভিযোগ, আমি একপেশে লেখা লিখি, আমি আওয়ামী অন্ধ, আমি ‘মুজিব অন্ধ’ (তাঁদের জিভের কোন একটি অংশে সমস্যা থাকায় বঙ্গবন্ধু উচ্চারণ করতে পারেননা, তাই মুজিব বলেন),আমি নাকি আওয়ামীলীগের খারাপটাকেও ভাল দেখি, আর বিএনপি’র ভালটাকেও খারাপ দেখি। তাঁদের এই মন্তব্যে আমি মন খারাপ করিনা, নিজেকে যাচাই করে দেখার চেষ্টা করি, বুঝতেই পারিনা ভুল কোথায় করছি। বিএনপি’র ভাল মানে তো খালেদা জিয়ার প্রশংসা করা, আর আওয়ামীলীগের খারাপ মানে তো বঙ্গবন্ধু আর শেখ হাসিনার সমালোচনা করা।

    আমি তো খালেদা জিয়ার নামে কখনওই খারাপ কিছু বলিওনা, লিখিওনা, এটাই কি বিএনপির পক্ষে বলা হলোনা? খালেদা জিয়ার পক্ষে আলাদা কিছু বলার মত বিষয় তো খুঁজেও পাইনা। কি বলবো? বলবো যে, স্কুলের গন্ডি না পেরিয়েও উনি দেশের ডক্টরেট, আর্মি জেনারেল, প্রাক্তন প্রেসিডেন্ট, মাওলানা, অধ্যাপক, সাহিত্যিক, কবি, লেখক থেকে শুরু করে সকল বিখ্যাত ব্যক্তিদেরকে উনার পায়ের কাছে বসিয়ে রাখার ক্ষমতা রাখেন? বলবো যে, ্সাহিত্যের পাতা না উল্টিয়েও উনি বক্তৃতা বিবৃতিতে দেশের হিন্দু সম্প্রদায়ের ধর্মীয় রীতি নীতি নিয়ে উপহাস করার মত ভাষা জানেন? বলবো যে, উনি দেশের ‘সবচেয়ে কালো দিনটি’কে বছর বছর একটি করে বেশী মোমবাতি জ্বালিয়ে, এক পাউন্ড বেশী ওজনের কেক কেটে আনন্দময় করে তোলার ক্ষমতা রাখেন?

    আমি যখন ব্লগে লিখতাম, নিউইয়র্কবাসী একজন বিএনপি পন্থী পাঠক প্রশ্ন করেছিল, আমি খালেদা জিয়ার মধ্যে ভাল কিছু দেখতে পাই কিনা, আর শেখ হাসিনার মধ্যে খারাপ কিছু দেখতে পাই কিনা। তার প্রশ্নের জবাব আমি দিয়েছিলাম, বলেছি, খালেদা জিয়াকে ঈশ্বর রূপ দিয়ে পাঠিয়েছেন, ঈশ্বরের এই দানকে উনি অবহেলা করেননি, ৬৮ বছর বয়সে এসেও উনি যথেষ্ট রূপ সচেতন, এবং এটিকে আমি গুণ হিসেবেই দেখি, কারণ উনার এই রূপ সচেতনতাই বিশাল সমর্থক গোষ্ঠী তৈরী করেছে, আমিও উনার রূপমুগ্ধ ভক্ত। বেগম জিয়ার আরেকটি বিষয় আমার ভাল লাগে, উনিই বলেছেন, “একমাত্র শিশু আর পাগল ছাড়া আর কেউ নিরপেক্ষ হতে পারেনা”। উনার মুখ থেকে এই কথাটি শোনার পর আমি অ-নিরপেক্ষ হওয়ার মত সাহস অর্জন করতে পেরেছি। এখন আমি স্পষ্ট করেই বলতে পারি, আমি নিরপেক্ষ নই, আমি বঙ্গবন্ধুর পক্ষে। বঙ্গবন্ধুর পক্ষে বলেই বঙ্গবন্ধুর ‘এতিম’ মেয়ের পক্ষে কথা বলি। আমি ‘শিশু বা পাগল’ নই বলেই বুঝতে পারি, কি গভীর ক্ষত বুকে নিয়ে শেখ হাসিনা এবং শেখ রেহানা নামের দুই ‘এতিম’ এই পৃথিবীর মাটি কামড়ে পড়ে আছে।

    গত দশ ঘন্টায় আমি কোন স্ট্যাটাস লিখিনি, আমি দুই চোখ বন্ধ করে রাসেলের কান্না শুনতে চেষ্টা করেছি, আমি দুই চোখ বন্ধ করে ভাবতে চেষ্টা করেছি, নিজেকে ’৭৫ এর ১৫ই আগস্টের অন্ধকার রাতে ৩২ নাম্বারের বাড়ীতে দাঁড় করিয়েছি, মিলিটারীর বুটের আওয়াজ শুনেছি, নীচ তলা থেকে ছোট ভাই কামালের মৃত্যর আগে শেষ চীৎকার শুনেছি, দ্বাররক্ষীদের মৃত্যুর আগের আর্তণাদ শুনেছি, সিঁড়ি দিয়ে দ্রুত উঠে আসা বুটের আওয়াজ, কামানের গোলার আওয়াজ, বন্দুকের গুলী, স্টেনগানের ছড়া গুলীর আওয়াজ শুনেছি, আমি ভাইয়ের বউ সুলতানা এবং রোজীর ভয়ার্ত মুখ দেখেছি, তাদের স্বামী হারাণোর কষ্ট ছাপিয়ে নিজের মৃত্যু নিয়ে ভীত হতে দেখেছি, ছোট রাসেলকে প্রাণভয়ে ছুটোছুটি করতে দেখেছি, রাসেলের ‘মা মা, মায়ের কাছে যাব, মায়ের কাছে যাব’ কান্না শুনেছি। আমি বঙ্গবন্ধুর জলদ গম্ভীর কন্ঠে ‘ এই তোরা কি চাস” বলতে শুনেছি, বঙ্গবন্ধুর দেহ ঝাঁঝরা হতে দেখেছি, বঙ্গবন্ধুর হাতে ধরা পাইপটি ছিটকে পড়ে যেতে দেখেছি, আরও দেখেছি, চোখ থেকে চশমাটাও ছিটকে পড়ে গেল, ঠিক ঐ মুহূর্তে মাতা ফজিলাতুন্নেসার বিস্ফারিত দুই চোখের অবাক চাউনী দেখেছি, চোখের সামনে প্রাণপ্রিয় স্বামীর বিশাল দেহটি সিঁড়ির উপর পড়ে যেতে দেখে, “ আমাকেও মেরে ফেল’ আর্তণাদ শুনতে পেয়েছি। একফাঁকে দেখেছি, ছোট রাসেলকে কাজের লোকের আড়াল থেকে টেনে নিয়ে আসতে, রাসেল যখন বলছিল, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও, তখন খুনীর মুখ থেকে উচ্চারিত “ তোমাকে মায়ের কাছেই নিয়ে যাচ্ছি” বাক্যটিও শুনতে পেয়েছি। খুনীদের সাথে আসা কোন এক আহাম্মক বলে ফেলেছিল, “ ওরে নাহয় ছাইড়া দেন, ও তো শিশু”, আর তা বলার সাথে সাথে সেই আহাম্মককে বন্দুকের গুলীতে স্তব্ধ হয়ে যেতে দেখেছি। শুনেছি খুনীর মুখে উচ্চারিত “শেখের বংশধর রাখা যাবেনা,” শুনতে পেয়েছি, তারপরেই দেখলাম রাসেলের একটি হাত গুলী করে উড়িয়ে দেয়া হলো, তখন দুই দিক থেকে দুই রকম দৃশ্য, রাসেলের মৃত্যু যন্ত্রণা কাতর মুখ, আর খুনীর রক্ত দেখে উল্লসিত মুখ, এরপর আর বেশীকিছু দেখিনি, শুধু দেখলাম গুলী করে রাসেলের আর্তণাদ থামিয়ে দেয়া হলো।

    উপরে যা কিছু বললাম, এর একটিও কল্পণাপ্রসূত কথা নয়, এটা ঘটেছিল, এর চেয়েও ভয়ংকরভাবে ঘটনা ঘটেছিল, সত্যিই এগুলো ঘটেছিল, শুধু ৩২ নাম্বার বাড়ীতে নয়, সেই ভোর রাতে আরও অনেক বাড়ীতে একই দৃশ্যের অবতারণা হয়েছিল, রাস্তার উপরেই স্তব্ধ করে দেয়া হয়েছিল কর্ণেল জামিলের দেহ। সেরনিয়াবাতের বাড়ী, শেখ মনির বাড়ীতেও একই দৃশ্যের সৃষ্টি হয়েছিল, দিন দিন আমার কল্পনাশক্তি খুব দূর্বল হয়ে পড়ছে, একসাথে এতগুলো বাড়ীতে আমি আর যেতে পারিনা বলে আর কারোর কথা বলা হলোনা। নিজেকে অপরাধী মনে হয়, দিব্যি খেয়ে দেয়ে ফূর্তি করে কাটিয়ে দিলাম গত ৩৮টি বছর। নিজের উপর দিয়ে যায়নি বলেই দুই ‘এতিম বোন’ অথবা শেখ মনির ‘এতিম সন্তান’দের কষ্ট আমাকে ভাবায়না। কর্তব্যপরায়ণ কর্ণেল জামিলের বিধবা স্ত্রী এবং পিতৃহারা সন্তানের মুখ মনে পড়েনা। মনে পড়বে কিভাবে, সেই কালো রাতের পর তো মিলিটারী সরকার বন্দুক দেখিয়ে দেশের মানুষকে বোবা করে রেখেছিল, আমি বা আমরা ছিলাম অনেক ছোট, যখন বড় হয়ে বুঝবার মত বুদ্ধি হয়েছে, তখন থেকে তো বেগম জিয়া ১৫ই আগস্ট তারিখে চতুর্থবার জন্ম নিলেন। সেই জন্মদিনের ওজনই তো অনেক ছিল। যত বয়স, তত পাউন্ড ওজনের কেক। আমরা কেকের টুকরো খেতে পাইনি, কিন্তু এত বড় কেকের সুবাস তো পেতাম। সারা দেশজুড়ে ঘটা করে জন্মদিন পালিত হয়তো, আর এটা তো যার তার জন্মদিন ছিলনা, ‘রত্নগর্ভা তৈয়বা মজুমদারের’ রত্ন কন্যাটির জন্মদিন। বেগম তৈয়বা মজুমদারকে যেদিন আজাদ প্রোডাক্টস থেকে ‘রত্নগর্ভা’ উপাধী দেয়া হয়েছিল, আমার হিংসুটে মন ঈর্ষান্বিত হয়েছিল। মনে হয়েছিল, সুন্দর সুন্দর মেয়ে জন্ম দিলেই যদি রত্নগর্ভা হওয়া যায়, তাহলে আমার দিদিমা কেন ‘রত্নগর্ভা’ উপাধী পাবেননা? পরে বুঝেছি, বেগম তৈয়বা মজুমদার সত্যিই ‘রত্ন’ জন্ম দিয়েছিলেন, তবে রত্নটি ‘নীলা’। নীলা সবার সহ্য হয়না, আমাদেরও সহ্য হয়নি। সন্তানের বয়সী ছোট্ট রাসেলের মৃত্যুদিনের বিষাদকে চ্যালেঞ্জ করে মায়ের বয়সী যে নারী বয়সের সমান ওজনের কেক কেটে জন্মদিন পালন করতে পারেন, সে নারী তো আমাদের জন্য রত্ন ‘নীলা’র সমতুল্যই হবেন, যাদের সয়েছে তারা কেক কেটে উৎসব করে চলেছে, যাদের সয়নি, তারা পত্রিকা, ব্লগ, ফেবুকে কটুকাটব্য করে চলেছে।

    কিন্তু আমি আজ পর্যন্ত বেগম জিয়া সম্পর্কে কোনরকম কটু কাটব্য করিনি, এমনকি কেউ যদি আমার ওয়ালে বেগম জিয়াকে নিয়ে বাজে মন্তব্য করেছে, সেই মন্তব্য ডিলিট করে দিতে দ্বিধা করিনি। যারা আমার নিরপেক্ষতা নিয়ে অহরহ প্রশ্ন তোলেন, তাদের প্রশ্নের প্রতি সম্মান রেখেই আমি অনেকভাবে চেষ্টা করে যাচ্ছিলাম, বেগম জিয়া সম্পর্কে, উনার বিএনপি দল সম্পর্কে যদি দুই একটি ভাল কথা লিখতে পারি। গতকাল স্বামীর মুখে যখন শুনলাম, বেগম জিয়া এবার জন্মদিন পালন করবেননা, কেক কাটবেননা, আমি ‘দেশ সংযোগ’ না দেখেই এক দৌড়ে কম্পিউটার টেবিলে এসে বসেছিলাম, ভেবেছিলাম, মানুষটির শুভবুদ্ধির উদয় হয়েছে, হয়তো এই বৃদ্ধ বয়সে এসে ’৭২ সালের কোন একদিনের কথা মনে পড়েছে, যেদিন বঙ্গবন্ধু উনাকে নিজের কন্যা বলে স্বীকৃতি দিয়েছিলেন, স্যুটকেস সাজিয়ে কন্যাকে তাঁর মুক্তিযোদ্ধা স্বামীর ঘরে পাঠিয়েছিলেন। মানুষ মাত্রেই স্মৃতিকাতর, হয়তো বেগম জিয়াও স্মৃতিকাতর হয়ে এই সিদ্ধান্ত নিয়েছেন। কম্পিউটার অন করে অনলাইনে ঢুকতেই সংবাদ পড়লাম, বেগম জিয়া নিজে কেক কাটবেননা, তবে উনার হয়ে উনার সভাসদবর্গ, পারিষদবর্গ ৬৯ পাউন্ড ওজনের কেক কাটবেন। আমি উনার পক্ষে লিখতে গিয়েও আর লিখতে পারলামনা। একজন বোকাও বুঝতে পারবে, উনার ইচ্ছেতেই এই আয়োজন সম্পন্ন হয়েছে, উনি মহৎ বা উদার হতে পারেননি, উনি উনার পারিষদবর্গকে “কেক কাটবেননা” নির্দেশ দিতে পারেননি, বয়সের সমান ওজনের কেক কাটার লোভ সামলাতে পারেননি, ঘরে বসে নকল জন্মদিনের কেকের পিস খাওয়ার ইচ্ছেকে দমন করতে পারেননি, এতদিনের ভুলকে ভুল হিসেবে স্বীকার করতে পারেননি, শুধু রাজনৈতিক স্টান্টবাজী দেখাতে গিয়ে বলেছেন, উনি কেক কাটবেননা। এরপরে আর কি লিখবো? বেগম জিয়ার পক্ষে কি লিখার থাকতে পারে? আমি তো এ বি এম মুসা বা কাদের সিদ্দিকী সাহেবদের মত কলামিস্ট নই, শেখ হাসিনা অথবা খালেদা জিয়ার কাছে নেতা হওয়ার, টিভি চ্যানেল বা সাধারণ একখানি শাড়ীরও প্রত্যাশা করিনা, তাই ‘নিরপেক্ষ’ সাজার অপচেষ্টা করিনা।

    আমি অতি সাধারণ একজন মানুষ, তিন মেয়ে নিয়ে খুব সাধারণ জীবন যাপন করি। ১৪ই আগস্ট আমার মেজো মেয়ের জন্মদিন,‘কালো দিবসের’ একদিন আগে বলেই ওর জন্মদিন সেলিব্রেট করিনা, বিবেকে বাধে, যদিও আমার মত অতি নগন্য মানুষের এই ত্যাগে কারো কিছুই যায় আসেনা। কিন্তু একজন শেখ হাসিনা বা একজন খালেদা জিয়া হাঁচি দিলেও তাঁদের সমর্থকদের আসে যায়। নেত্রী বলে কথা, উনারা দেশের মাথা। উনাদের জন্মদিন তো যেনতেন ব্যাপার নয়, উনারা এতটাই জনপ্রিয় যে উনারা না চাইলেও উনাদের সমর্থকেরা জন্মদিন পালন করবে। কাজেই খালেদা জিয়া যদি উনার সত্যিকারের জন্ম তারিখটিতেই কেক কাটতেন, কারো কিছু বলার থাকতোনা। আর যদি ১৫ই আগস্ট তারিখেই উনার জন্মদিন হয়ে থাকে, উনি যা চালু করেছিলেন, সেটাতেই লেগে থাকতে পারতেন, আর যদি বোধোদয় থেকে ‘কেক না কাটার সিদ্ধান্ত’ নিয়ে থাকতেন, সেটাতেই লেগে থাকা উচিত ছিল। সাঙ্গপাঙ্গদের বুঝিয়ে বলা উচিত ছিল যে নতুন ধারার রাজনীতি শুরু করতে যাচ্ছেন, তাই ১৫ই আগস্টের সম্মানে উনি নিজের জন্মদিন পালন করা থেকে বিরত থাকবেন। সেটা হয়নি, মহা ধুমধামের সাথেই উনার জন্মদিন পালিত হয়েছে, এবং ‘কেক কাটবোনা’ বলেও শেষ পর্যন্ত গোলাপী জর্জেট শাড়ী পড়ে, উনি নেতাদের মাঝে দাঁড়িয়ে ‘কেক কেটেছেন’।

    ভাল কথা, প্রতিজ্ঞা করেছিলাম, ১৫ ই আগস্ট তারিখে ‘ ঠাকুরবাড়ীর আঁতুরঘরে”র সম্পূর্ণ স্ক্রিপ্ট প্রকাশকের কাছে জমা দেবো। আমি নিজ থেকেই তারিখটি বলেছিলাম, কিন্তু শেষ পর্যন্ত আর পারলামনা। প্রকাশকের কাছে মেসেজ পাঠালাম, “বঙ্গবন্ধুর শাহাদাৎবার্ষিকীতে লেখাটি পাঠাবো বলেছিলাম, বঙ্গবন্ধুকে অতিক্রম করা গেলোনা, বঙ্গবন্ধু ছাড়া এই দিনে আমার মাথায় আর কিছুই কাজ করছিলনা”। মেসেজ পাঠিয়েই মনে হলো, আমি কেন আগ বাড়িয়ে কথা দিতে গেলাম, আর কথা যদি দিলামই তবে কেন কথা রাখতে পারলামনা। বেগম জিয়ার ‘কেক কাটবোনা’ বলে নেতাদের আবদার রক্ষায় কেক কাটার সাথে আমার “লেখা পাঠাবো’ বলে লেখা না পাঠানোর মধ্যে ভীষণ মিল খুঁজে পেলাম।

    আমাদের কান্ড দেখে জনগণ এবং প্রকাশক নিশ্চয়ই হেসে খুন! মনে মনে হয়তো বলছে, “সেই তো নথ খসালে, তবে কেন লোক হাসালে”!
    — with Shahidul Alam Swpan. (6 photos)
    19Like · · Promote ·
     
     

    ভোর রাতের অভিশাপে!

    আজ আমার সারাটি দিন শুধু শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার কথা মনে পড়ছে। প্রধানমন্ত্রী শেখ হাসিনা নয়, একজন পিতৃভক্ত কন্যা হাসিনা, বাপের নয়নের মনি হাসু, ভাইদের প্রিয় হাসু আপা, মায়ের প্রথম সন্তান হাসু---সেই হাসু আপার কথাই বিশেষ করে মনে পড়ছে। কল্পনায় দেখছি '৭৫ এর ১৫ই আগস্ট , জার্মানীর এক ছোট বাড়ীর লিভিং রুমে ভোর রাতে ঝন ঝন শব্দে ফোন বেজে চলেছে, রাতের ফোন কখনওই শুভ বার্তা নিয়ে আসেনা, হয় বাবার মৃত্যু সংবাদ, নয়তো মায়ের মৃত্যু সংবাদ। সে রাতে বাবা বা মা, কারো মৃত্যু সংবাদ আসার কথা ছিলনা, কারণ হাসু আপা তার বাবা-মাকে সুস্থ দেখে এসেছে, আগের রাতে ছোট ভাই কামালের বউয়ের কাছ থেকেও খুঁটিয়ে খুঁটিয়ে আব্বার পরদিন সকালে ঢাকা বিশ্ববিদ্যালয়ের অনুষ্ঠানে যাওয়া নিয়ে নানা পরিকল্পনা সম্পর্কে জেনেছে। তাহলে কাঁর দুঃসংবাদ নিয়ে ফোনটা বেজে চলেছে।

    ভীষণ ভয়ে ভয়ে রিসিভার কানে লাগিয়ে হেলো বলতেই অপরিচিত কন্ঠস্বরে কেউ বলছে, সর্বনাশ হয়ে গেছে। ৩২ নাম্বারের সবাইকে গুলী করে মেরে ফেলা হয়েছে"। ভুতুড়ে কল মনে করে রিসিভার নামিয়ে রাখলো হাসু আপা। ছোট জয় আর পুতুলও ঘুম ভেঙ্গে জেগে উঠেছে। বুকটার মধ্যে ঢিপ ঢিপ করেই চলেছে। হাসু আপা আবার বিছানার কাছেই ফিরে যাচ্ছিল, ফোনটা ঝন ঝন শব্দে বেজেউঠেছে। এমন কর্কশ শব্দে এর আগে কখনওই ফোন বাজেনি। আজ কেন এমন বিশ্রীভাবে বাজছে ফোনটা? হাসু আপা আবার ফিরে গিয়ে ফোন তুলে হেলো বলতেই এবার অন্য একজন, খুবই অদ্ভুত রকমের কাঁপা কন্ঠে বলে চলেছে, সব শেষ হয়ে গেছে, ৩২ নাম্বারের সবাইকে মেরে ফেলেছে।" হাসু আপা যন্ত্রের মত বলে চলে, " কে বলছেন? এইসব কি বলছেন? ৩২ নাম্বারের সবাইকে মেরে ফেলেছে মানে? কাকে মেরে ফেলেছে, কে মেরে ফেলেছে? ৩২ নাম্বারে তো বঙ্গবন্ধু থাকেন, মা থাকেন, কামাল, জামাল, রাসেল থাকে, কামালের বউ, জামালের বউ থাকে। ওদেরকে মারবে কেন?"
    সেই অদ্ভুত কন্ঠ আবার বলে উঠে, " সব শেষ হয়ে গেছে, সবাইকে মেরে ফেলেছে"।

    কল্পনায় আমি হাসু আপাকে এই পর্যন্তই দেখতে পাই, এই পর্যন্তই ভাবতে পারি, এর বেশী আর কিছু ভাবতে পারিনা। কারণ এরপরের অংশ ভাবতে গেলেই আমার হাত-পা হিম হয়ে আসে, হৃৎস্পন্দন এলোমেলো হয়ে যায়, রাসেলের কথা ভাবলে ৩৮ বছর পরেও আমার বুক কেঁপে উঠে, গলা ফাটিয়ে কাঁদতে ইচ্ছে করে, চীৎকার করে বলতে ইচ্ছে করে, " তোরা এই কাজটা কীভাবে করলি, কেন করলি? কি লাভ হলো তোদের এই কাজ করে? রাষ্ট্রদূতের চাকরী চেয়েছিলি? বঙ্গবন্ধুকে বলতে পারতিস, বংগবন্ধুকে বললেই তো তোদের চৌদ্দ গুষ্ঠীকে রাষ্ট্রদূতের চাকরী দিয়ে বিদেশে পাঠিয়ে দিত। ছোট ছেলেটা যখন ভয়ে কুঁকড়ে গিয়ে কাঁদতে কাঁদতে বলেছিল,
    " আমাকে তোমরা মেরোনা, আমাকে মায়ের কাছে নিয়ে যাও, আমাকে মেরোনা, আমাকে ছেড়ে দাও, আমি কোনদিন এখানে আসবোনা, আমি রাস্তায় ঘুরে ভিক্ষে করে খাব" --তোদের হাত কাঁপলোনা, তোদের নিজেদের ছেলে মেয়ের মুখ চোখের সামনে ভেসে উঠলোনা, কেমন 'বাবা' তোরা? বঙ্গবন্ধুর শরীর ঝাঁঝরা করার সময় নিজের মৃত বা জীবিত বাপের কথা মনে এলোনা, বেগম মুজিব যখন তোদেরকে বলেছিল, " আমাকেও মেরে ফেল" তোরা সত্যিই মেরে ফেললি? একবারও কি তোদের মায়ের মুখ মনে পড়লোনা? অনেক সন্তানই তার বাপের পরিচয় জানেনা, কিন্তু মাকে তো চিনে সব সন্তান। তোরা যদি পিতৃ পরিচয়হীন হয়েও থাকিস, তবুও তো কোন এক নারী তোদেরকে গর্ভে ধরেছিল, সেই নারীর মুখটাও মনে পড়েনি? কামাল, জামালকে নাহয় মারলি, সুলতানা কামাল বা রোজী জামালকে মারতে গিয়ে তোদের বোনের কথা মনে এলোনা? অন্তঃসত্বা আরজুমনিকে যখন মারলি, তোদের নিজেদের পরিবারে দেখা কোন অন্তঃসত্বা নারীর পবিত্র মুখটাও মনে পড়লোনা? তোরা তো হারমাদের জাত রে! বাংলাদেশের বুকে তোরা 'অভিশাপ' হয়ে এসেছিলি। জ্বালিয়ে দিয়ে গেলি বঙ্গবন্ধুর স্বপ্নের বাংলাকে। এখন তোদের উত্তরসূরীরা চেষ্টা করে চলেছে কিভাবে বঙ্গবন্ধুর দুই কন্যাকেও সরিয়ে দেয়া যায়। কতবার চেষ্টা করলি তোরা 'এতিম' মানুষটিকে মেরে ফেলতে! অভিশাপ লেগেছে, ছোট্ট রাসেলের অভিশাপ লেগেছে, ওকে তোরা সুন্দর পৃথিবীটা দেখতেই দিলিনা! কি লাভ হলো তোদের? সেই তো দেশান্তরী হয়েই কাটিয়ে দিতে হলো জীবনের পুরোটা সময়, নিজের দেশ থাকতেও তোরা দেশ ছাড়া, সমাজ ছাড়া , এ সবই সেই ভোর রাতের অভিশাপ।

    কল্পনা থেকে বাস্তবে ফিরে আসি, বর্তমান বাংলাদেশের ছবি দেখি আর ভাবি, এ আর কিছুইনা, '১৫ই আগস্টের ভোর রাতে এই দেশের কপালে 'অভিশাপ' লেগেছে। সেই অভিশাপের বোঝা মাথায় নিয়েই বাঙ্গালীকে চলতে হবে। কাঁধে অভিশাপের ভারী বোঝা থাকলে, কতদূর আর হাঁটা যায়? এইজন্যই বাংলাদেশ নামের সুন্দর দেশটি বার বার পিছিয়ে যাচ্ছে, সবই সেই ভোররাতের অভিশাপ!
    15Like · · Promote ·
     
     
     
     

    আমি রাজনীতি বুঝিনা, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে বুঝি, আমি রাজনীতি জানিনা, কিন্তু বঙ্গবন্ধুকে জানি, বঙ্গবন্ধুকে জানি বলেই সব কথার শেষে " তালগাছ আমার বলেই মানি",বঙ্গবন্ধুকে নিয়ে 'তালগাছ আমার' ভাবনায় ক্ষুব্ধ হয়ে অনেকেই আমাকে গালি দেয়! যে গালি শুনে আমার খারাপ তো লাগেইনা, গালিবাজকারীকে স্যালুট দিতে মন চায়, সেই গালিটির নামঃ
    'শেখ মুজিবের চামচা', " এক চোখ কানা', 'শেখ মুজিবের দালাল', 'জয় বাংলার লোক'
    হে গালিবাজ, মোরে শেখ মুজিবের দালাল বলো? আমি বঙ্গবন্ধুর দালাল, তবে তাই হোক!
     
     
     

    স্বদেশমুখী মিশার শুভ জন্মদিনে!

    আমার মেজো মেয়ে মিশা জন্মেছে আগস্টের ১৪ তারিখে। কি উত্তাল সময় তখন, ৯০ এর গণ আন্দোলন চলছে, ছোট মৌটুসীকে নিয়ে আমরা সাভারের গনণস্বাস্থ্য কেন্দ্রে থাকি। লাগাতার হরতাল, মিছিল, মিছিলে যখন তখন গুলী, লাশ পড়ে, এরশাদ সরকারের বিরুদ্ধে জনরোষ বাড়তেই থাকে, রাস্তাঘাট যে কোন সময় বন্ধ হয়ে যায়, ঠিক এমনই এক সময়ে গণস্বাস্থ্যের স্পেশ্যাল অ্যাম্বুলেন্স পাঠিয়ে ঢাকা থেকে ডাঃ রওশন আরা আপাকে গণস্বাস্থ্য কেন্দ্র হাসপাতালে নিয়ে আসা হয়। রওশন আপাকে আবার ঢাকা ফিরে যেতে হবে, সেই তাড়াহুড়োতেই রওশন আপা এতটুকু সময় অবহেলা না করে গণস্বাস্থ্য হাসপাতালের ওটিতে সিজারিয়ান অপারেশানের মাধ্যমে মিশাকে পৃথিবীতে নিয়ে আসেন। মিশা হয়ে গেল ১৪ই আগস্ট বেবী। আমার মা হাসতে হাসতে বলেছিলেন, “ হায় হায়! তোর মেয়ে পাকিস্তানের ‘ইনডিপেনডেন্ট ডে’তে জন্ম নিল, এই মেয়ের না জানি পাকিস্তানীদের মতই উগ্র মেজাজ হয়!”
    আমি বলেছিলাম, “তবুও ভাল, ১৫ই আগস্ট জন্মায়নি, ১৫ই আগস্টে জন্মালে তো ওর জন্মদিন পালন করতেই পারতামনা। পাকিস্তানীদের মত মেজাজ দেখাবে আমার সাথে? মেজাজ ছুটিয়ে ফেলবো”।

    এরপর দিন পার হয়েছে, মাস পার হয়েছে, বছর গড়িয়ে ২৩ বছর পার হয়ে গেছে। কখনওই ঘটা করে মিশার জন্মদিন পালন করা হয়নি, ১৫ই আগস্টের শোক অনেক বড় বাধা হয়ে দাঁড়িয়েছে, শেখ রাসেলের মুখ বিবেককে নাড়া দিয়েছে, বেগম মুজিবের মমতাময়ী মুখখানি আমায় ভাবিয়েছে, শেখ কামাল, শেখ জামালের মুখ মনে পড়লেই আমার বড়দা, মেজদার কথা মনে হয়েছে, এই সবকিছু মিলিয়ে মিশিয়ে আমার মনটি বঙ্গবন্ধু দম্পতীর রেখে যাওয়া চিহ্ন দুই মেয়ে শেখ হাসিনা আর শেখ রেহানার প্রতি সহমর্মী হয়ে উঠেছে। তাই ঘটা করে মিশার জন্মদিন সেলিব্রেট করা হয়নি। তবে আমার সৌভাগ্য, মায়ের আশংকা আংশিক সত্যি হয়েছে, মিশা খুব মেজাজী হলেও পাকিস্তানীদের মত হয়নি, আমার মেয়ে আমার মতই মেজাজী হয়েছে। এই মেজাজ তাকে তার জন্মভূমির প্রতি, তার মাতৃভাষার প্রতি, তার দেশের মানুষদের প্রতি অনুভূতিপ্রবণ হয়ে উঠতে সহায়তা করেছে।

    মিশার বয়স যখন মাত্র সাড়ে চার বছর, ওকে নিয়ে আমরা অস্ট্রেলিয়া চলে যাই। তখন মিশার বর্ণ পরিচয় হয়নি, মিশা বাংলা বা ইংলিশ কিছুই শিখেনি। জন্মের পর থেকে মিশা খুব অসুস্থ থাকতো, খুব কঠিন কঠিন রোগে ভুগে ভুগে আমাদের ছোট্ট মেয়েটা খিটখিটে মেজাজী হয়ে গেছিল, অ, আ, ক খ শেখানোর প্রশ্নই ছিলনা, সেদিনগুলোতে আমাদের শুধু মনে হতো, লেখাপড়া চাইনা, মিশা বেঁচে থাক। মেয়েটা্র শারীরিক কষ্টে একটু আরাম দেয়ার জন্য, একটু আনন্দ দেয়ার জন্য ওকে সব কিছুতেই প্রশ্রয় দিতাম। আমাদের প্রশ্রয়ে থেকে মিশা কিছুটা স্বাধীনচেতা, আনন্দময়ী স্বভাবের হয়ে উঠছিল, এই স্বাধীনচেতা মনোভাবই ওকে সামনের দিকে এগিয়ে নিয়ে গেছে।

    অস্ট্রেলিয়া গিয়েই ওকে স্কুলে ভর্তি করিয়ে দিয়েছি, মেয়ে তখন কোন কথায় ‘ইয়েস’, কোন কথায় ‘নো’ বলতে হয়, সেটাও জানতোনা। অথচ স্কুলে দিব্যি পাঁচ ঘন্টা হাসিখুশীভাবে কাটিয়ে বাড়ী ফিরতো। বাড়ি ফিরে টিচারদের নাম, বন্ধুদের নাম ধরে ধরে গল্প করতো। যদি জিজ্ঞেস করতাম, “স্কুলে আজ কি করেছো?” ও বলতো, “লেখাপড়া করেছি, বন্ধুদের সাথে খেলা করেছি, টিচারের কথা শুনেছি”। জিজ্ঞেস করেছিলাম, “মিশা, তুমি টিচারদের কথা কিভাবে বুঝো? তুমি তো ইংলিশ বলতে পারোনা, ওদের সাথে কিভাবে কথা বলো?”
    মিশা বলেছিল, “বাংলাতে কথা বলি”। উত্তর শুনে আমি তো অবাক, বলে কি? আবার এটাও জানি, মিশা বাংলা ছাড়া আর তো কিছু জানেওনা। একদিন আমি আর ওর বাবা, দুজনেই স্কুলে গিয়ে টিচারকে জিজ্ঞেস করলাম, “আমাদের মেয়েকে নিয়ে তাদের কোন সমস্যা হচ্ছে কিনা!” দুই টিচারই হেসে বললো, “না, ওর ভাষা বুঝতে আমাদের কোন সমস্যা হয়না। ও খুবই স্মার্ট একটি বাচ্চা, ইংলিশ জানেনা বলে বোবা হয়ে থাকেনা, নিজের ভাষাতে কথা বলেই আমাদের সবাইকে বাধ্য করে ওর কথা বুঝার জন্য। তবে ওকে নিয়ে চিন্তা করোনা, ও খুব তাড়াতাড়ি সব শিখে যাবে”।

    মিশা খুব তাড়াতাড়ি ইংলিশ শিখে গেল, অথচ বাংলা পড়তে শিখেনি, এদিকে আমি কঠিন বাঙ্গাল, আমার মেয়ে বাংলা শিখবেনা, তা তো হতে পারেনা। যেহেতু মিশা খুব মেজাজী ছিল, তাই তার মুড বুঝে আমাদের সবাইকে চলতে হতো। আমি নানা কায়দায় ওকে বাংলা শেখাতে চেষ্টা করতাম। বাংলা পড়তে শিখেছে মুখে মুখে, বাংলা লিখতে শিখেছে বর্ণমালা না শিখে। দিদা, দাদুকে সে খুব ভালোবাসতো, তাই বললাম, “মিশা, আসো, দিদাকে চিঠি লিখি। বাংলায় চিঠি, তুমি বলবে কি লিখতে চাও, আমি দেখিয়ে দেবো, কিভাবে লিখতে হয়”। এই খেলাতে মিশা খুবই উৎসাহিত হয়ে উঠলো, আমাকে জিজ্ঞেস করে, আমি আঁক কষে দেখিয়ে দেই ‘দ’ কি করে লিখতে হয়, ‘দ’ এর সামনে ‘ই’-কার দিলে দি হয়, ‘আ’কার দিলে দা হয়, দুটো মিলে দিদা’ হয়। এভাবে ওকে আমি শিখিয়েছিলাম। মিশা খুবই বুদ্ধিমতী বাচ্চা ছিল, ওর টিচাররা ঠিকই বুঝেছিল, এই বাচ্চা খুব স্মার্ট, নাহলে এভাবেই দিদাকে চিঠি লিখে অথবা খেলাচ্ছলে ‘চেয়ার’ বা ‘টেবিল’ সম্পর্কে পাঁচ লাই্ন লিখতে লিখতে মিশা বাংলা লিখতে শিখে গেল।

    তিন বছর পর বাংলাদেশে ফিরে এলাম, কোন বাংলা মিডিয়াম স্কুলে মিশাকে ভর্তি নিলো না, বাধ্য হয়েই ইংলিশ মিডিয়াম স্কুলে ভর্তি করতে নিয়ে গেলাম। মিশা বাংলা, অংক, নাকি ভাল পারবেনা, এই কথা বলে ওখানেও তাঁরা মিশাকে ক্লাস টু’তে ভর্তি নিতে চাইলোনা। আমিও তো জেদী কম না, আমার বাচ্চা ইংলিশ না জেনেই অস্ট্রেলিয়ান টিচারদের সাথে কমিউনিকেট করতে পারতো, আর নিজের দেশের বাংলা বলা শিক্ষকদের সাথে থেকে আমার মেয়ে বাংলা পারবেনা, তা কি করে হয়! প্রিন্সিপ্যালকে বললাম, আমার মেয়েকে আমি আগামী তিন মাসের মধ্যে বাংলা ভাল করে শিখিয়ে দেবো, তবুও মিশাকে ক্লাস টু’তেই ভর্তি করতে চাই। আমার কথায় ভরসা করেই মিশাকে ওরা ক্লাস টু’তে ভর্তি নিয়ে নিল। তিন বছর মিশা ঐ স্কুলে পড়েছিল, ওর রেজাল্ট দেখে প্রিন্সিপ্যাল থেকে শুরু করে সকলেই স্বীকার করে নিয়েছিল, মিশা অনেক স্মার্ট, অনেক বুদ্ধিমতী।

    ২০০১ সালে চলে এলাম আমেরিকা, মিশার তখন এগারো বছর বয়স, বাংলা বর্ণমালা জানেনা, কিন্তু যুক্তাক্ষরসহ বাংলা গড়গড়িয়ে পড়তে পারে। আমেরিকার অনেক স্টেটে বাঙ্গালীদের দ্বারা পরিচালিত বাংলা স্কুল আছে, আমরা যে শহরে থেকেছি, সেখানে দ্বিতীয় কোন বাঙালীই ছিলনা, বাংলা স্কুল থাকবে কোত্থেকে। মিশার বাংলা শেখা ওখানেই থেমে গেল। বাংলা শব্দভান্ডারও আর সমৃদ্ধ হলোনা, তার উপর যত উঁচু ক্লাসে উঠতে লাগলো, লেখাপড়ার মোড় বদলে গেলো, আমেরিকান স্টাইলে লেখাপড়া শুরু হয়ে গেলো, যেখানে বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে থাকতে হয়না, পারিপার্শ্বিক পরিমন্ডল থেকেই অনেক বেশী জ্ঞান আহরণ করা যায়। আমেরিকায় কথা বলতে জানা হচ্ছে বিরাট প্লাস পয়েন্ট, যে যত বেশী কথা বলতে পারবে, তার গ্রহণযোগ্যতা তত বেশী। মিশার এই গুণটি আছে, তার বাবার মত সেও কথা বলতে পারে, অপরিচিতের সাথে পরিচিত হতে পারে, মানুষের সাহায্যে এগিয়ে যেতে পারে, অপরকে সহযোগীতা করার দূর্লভ গুণটিও এই মেয়ের মধ্যে আছে। বইয়ের মধ্যে মুখ গুঁজে না থেকেও যে ভাল রেজাল্ট করা যায়, তার জলজ্যান্ত উদাহরণ হচ্ছে মিশা।

    কিন্তু শুধু আমেরিকান স্টাইলে শিক্ষিত হলে আমার তো মন ভরবে না, বাংলা ভুলে গেলে আমি কোনভাবেই তা মেনে নিতে পারবোনা, এই ব্যাপারটি মিশা তার অনুভূতিশক্তি দিয়েই বুঝেছে। মিশা নাচ করতে খুব ভালোবাসে এবং নাচের উপর কোন একাডেমিক ট্রেনিং না নিয়েই ও খুব ভাল নাচ করতে পারে। এখানে মিসিসিপি স্টেট ইউনিভার্সিটির বিভিন্ন কালচারাল শো’তে মিশা একটানা সাত বছর নাচ করেছে, হিন্দী গানের সাথে নাচ করতে ও খুব ভালোবাসে, কিন্তু বাংলা গানের সাথে নাচ বাদ দিয়ে সে কিছুই করেনা। এখানে বাঙ্গালী তেমন একটা বেশী ছিলনা, এখন যারা আছে, তারাও লেখাপড়া নিয়ে ব্যস্ত থাকে বলে বাংলা কালচারাল অনুষ্ঠান হয়ও না। তাই অন্যদের অনুষ্ঠানেই মিশা বাংলা নাচ নিয়ে উপস্থিত হয়েছে। এমনকি ওর নিজের কলেজ প্রোগ্রামে যখন ও কালচারাল সেক্রেটারী ছিল, তখন আমেরিকান মেয়েদেরকে দিয়েই বাংলা নাচ করিয়েছে। বাংলা নাচ কোরীয়গ্রাফ করার আগে কোন একটি বাংলা গান সে পছন্দ করে আমাকে জিজ্ঞেস করেছে, গানের মানে কি? আমি মানে বুঝিয়ে দিলে সেই মানের উপর ভরসা করে নাচের কোরীয়োগ্রাফী করেছে। মেয়ে তার মায়ের অনুভূতিকে শ্রদ্ধা করে, এটা জেনে সব মা খুশী হবে, তাই আমিও খুশী হয়েছি।

    এরপর নদীতে অনেক জল গড়িয়েছে। মিশা এখন আমেরিকার নামকরা বিশ্ববিদ্যালয়ে পাবলিক হেলথের উপর মাস্টার্স করছে। যে মিশা অস্ট্রেলিয়ান টিচারের সাথে বাংলাতেই কথা বলতো, যে মিশাকে বাংলাদেশের কোন বাংলা মিডিয়াম স্কুলেই ভর্তি নেয়নি, সেই মিশা গত তিন বছর ধরে ফেসবুকে বাংলাদেশের জাতীয় দিবসগুলোতে বাংলাদেশকে নিয়ে স্ট্যাটাস দিতে শুরু করেছে, সেই মিশাকে কলেজের স্কলারশীপ ইন্টারভিউতে জিজ্ঞেস করেছিল, “শেখ মুজিব’ সম্পর্কে কি জানে, জিজ্ঞেস করেছিল, ্ডঃ ইউনূসের গ্রামীন ব্যাংক সম্পর্কে কি জানে, বাংলাদেশের নারী শিক্ষা সম্পর্কে কি জানে। আগেই বলেছি, মিশার কিন্ডারগার্টেন স্কুলের অস্ট্রেলিয়ান টিচার বলেছিল, মিশাকে নিয়ে যেন চিন্তা না করি। চিন্তা করতে হয়নি, সব প্রশ্নের উত্তর মিশা তার মত করেই দিয়েছে, ওর উত্তর শুনে আমরা হেসেছি, তবে খুশী হয়েছি শেখ মুজিবকে মিশা ‘ফাদার অফ আওয়ার নেশান’ বলতে ভুলে যায়নি দেখে, প্রফেসর যা বুঝবার বুঝে নিয়েছেন হয়তো, স্কলারশীপ মিশা পেয়েছে।

    যে মিশা সেই ছোটবেলাতেই কঠিন রোগে ভুগতে ভুগতে মৃত্যুর কাছাকাছি চলে গিয়েছিল, যার বেঁচে থাকাটুকুই আমাদের কাছে অনেক বেশী পাওয়া মনে হয়তো, সেই মিশা এই সামারে ইন্টার্নশীপ করার জন্য বাংলাদেশকে বেছে নিয়েছিল। তখন বাংলাদেশে প্রজন্ম চত্বরের কি তুমুল জনপ্রিয়তা, এখানে বসে বসে মিশার মা যেমন ব্লগ লিখে, মিশাও তেমনি তার ফেসবুক ওয়ালে প্রজন্ম মঞ্চের পক্ষে, গণজাগরণের পক্ষে নানা পোস্ট দিয়ে যায়, আমি মনে মনে গর্ব বোধ করি, থাক, মিশা নাহয় বাংলা বর্ণমালা চিনেনা, নাহয় মিশা একটামাত্র বাংলা বই “ কুটুমিয়া” পড়েছে, তবুও তো মিশা বাংলাদেশকে নিয়ে উচ্ছ্বসিত। আমেরিকান বন্ধুদেরকে দিয়ে বাংলা গানের সাথে নাচ করায়। মিশার কাছ থেকে এর চেয়ে বেশী কি আশা করা যায়!

    যে মুহূর্তে ওর বাংলাদেশে যাওয়ার সবকিছু পাকাপাকি হয়ে গেছে, সেই মুহূর্ত থেকেই শুরু হয়ে গেলো বাংলাদেশের প্রজন্ম মঞ্চের উপর আক্রমণ, সেই মুহূর্তেই ফটিকছড়িতে ছাত্রলীগের মিছিল থেকে টেনে নিয়ে চারজনকে কুপিয়ে কুপিয়ে হত্যা করা হলো, সেই মুহূর্তে হেফাজতীদের বিপদজনক উত্থান হলো, সেই মুহূর্তে খালেদা জিয়ার বিএনপির পক্ষ হয়ে এককালের ‘বঙ্গবীর’, আরও নানা সুশীল মানুষেরা টিভি টকশোতে গিয়ে শেখ হাসিনার বিরুদ্ধে, ব্লগারদের বিরুদ্ধে, প্রজন্ম মঞ্চের বিরুদ্ধে আগুন ছড়াতে শুরু করলো। ততদিনে মিশার প্লেনের টিকেট কাটা হয়ে গেছে, ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’ এর হেড অফিসের সাথে সব পাকাপাকি হয়ে গেছে, মেহেরপুরে ওর থাকবার ব্যবস্থা হয়ে গেছে, আমি হঠাৎ করে বেঁকে বসলাম। বললাম, যাওয়ার দরকার নেই, এই বাংলাদেশে আমি আমার আদরের মেয়েকে পাঠাবোনা, এই বাংলাদেশ আমি চিনিনা, এই বাংলাদেশ আমরা কেউ চাইনি, এই বাংলাদেশে ফিরে যাওয়ার পরিবর্তে আমেরিকার মাটিতেই মরে যাব, তবুও বলতে পারবো, নিজের দেশে স্বজাতির হাতে তো মরতে হয়নি।

    মিশার বাবা তার সিদ্ধান্তে অটল ছিলেন, দেশ থেকে শুভার্থীরা মিশাকে পাঠাতে মানা করেছিল, মিশার বাবা মিশাকে বলেছেন, “তুমি যাবে’। আমি মিশাকে ব্যক্তিগতভাবে নিরুৎসাহিত করেছিলাম, মিশা বলে, “ মা, স্বার্থপরের মত কথা বলো কেন? এখানে নিরাপদে বসে ব্লগে লিখবে, ফেবু ওয়ালে লিখবে, যখন মেয়ের যাওয়ার সময় হলো, তখন না করবে, সেটা তো ঠিক না। আর সবাই যেভাবে আছে, আমিও সেভাবেই থাকবো। আমি যাব”। জাহানারা ইমাম যেমন রুমীকে বলেছিলেন, ঠিক আছে, যা তোকে আল্লাহর হাতে সঁপে দিলাম, আমিও মিশাকে বলেছিলাম, যাও, তোমাকে ঈশ্বরের ভরসায় পাঠাচ্ছি, মঙ্গলময় ঈশ্বর তোমাকে রক্ষা করবেন।

    মিশা বাংলাদেশে গিয়ে একটানা তিনমাস ‘সেভ দ্য চিলড্রেন’এর পক্ষে দুটি প্রোজেক্ট নিয়ে কাজ করেছে। মেহেরপুর গিয়ে ওকে একা একা সেভ দ্য চিলড্রেনের ছয় তলা গেস্ট হাউজ বিল্ডিং এ থাকতে হয়েছে দিনের পর দিন, মিশার মামারা, মামীরা প্রতি মুহূর্তে মিশার সাথে ফোনে যোগাযোগ রেখেছে, মিশার ছোটদিদা প্রতিদিন ফোনে যোগাযোগ রেখেছে, মিশা তাদের সাথে খুব অমায়িক থাকলেও আমার সাথে মেজাজ দেখিয়েছে। বলেছে, ও ছোট্ট খুকী নয়, নিজের দেশে, চারপাশে নিজেদের লোক, তারপরেও যদি এত ভয়ে থাকতে হয়, তাহলে আর কথায় কথায় এত ‘দেশ দেশ’ করি কেন? এমন কথা শুনে লজ্জাও পেয়েছি, ভালও লেগেছে। প্রবাসে বড় হওয়া একটি মেয়ের মনে প্রবল জাতীয়তাবোধ আছে দেখে প্রীত হয়েছি। তিন মাস কাজ শেষে মিশা কাল ফিরে এসেছে, নিয়ে এসেছে বিশাল অভিজ্ঞতা। ওর সাথে বেশ কিছুক্ষণ কথা বলার পর ওর বাবা বলেছে,
    “কুটু, এবারের বাংলাদেশ ট্রিপে তোমার মধ্যে বিরাট এক পরিবর্তণ এসেছে, তুমি অনেক সুন্দর বাংলায় কথা বলতে শিখেছো, এত গুছিয়ে, এত শুদ্ধ উচ্চারণে কথা বলছো, আমি তো অবাক হয়ে যাচ্ছি”।

    মিশা হেসে দিয়েছে, বলে, “ ড্যাডি, এবার তিনমাস তো সাধারণ মানুষের সাথে থেকেছি, বাচ্চাদের পড়িয়েছি, তাই নিজে শুদ্ধ বাংলা শিখেছি, তবেই তো বাচ্চাদের পড়িয়েছি। জানো, আমি জানতামই না, ‘বাবা-মা’য়ের পরিবর্তে ‘অভিভাবক’ শব্দ ব্যবহার করা হয়, অভিভাবক, বুদ্ধি বিকাশ, পরিপূর্ণ, স্বাস্থ্য সেবা----কত নতুন নতুন শব্দ শিখেছি।

    শেখ হাসিনার ছেলে সজীব ওয়াজেদ জয় দেশে এসেছেন, তাঁর বাপ-দাদার দেশ, তাঁর জন্মভূমি, জন্মভূমিতে এসে জয় বাংলায় কথা বলছে, বাংলাদেশের মানুষের সাথে আপনভাবে মিশতে চাইছে, প্রবাসে থাকার কারণে বাংলা শব্দভান্ডার তেমন সমৃদ্ধ হতে পারেনি বলেই খুব সাদামাটা ভাষায়, মাঝে মাঝে একটু অগোছালো ভাষায় বক্তব্য রেখেছে। আর তাতেই বাংলার সুশীল সমাজের মুখে হায় হায় রব শুরু হয়ে গেছে, জয়ের মেধা নিয়ে, জয়ের আপাত দূর্বল বাংলা ভাষা নিয়ে উপহাস করার প্রতিযোগীতা শুরু হয়েছে। সুশীলদের এহেন আচরণে আমি তাদের প্রতি করুণা বোধ করেছি। এই সুশীলদের দিয়ে দেশ চলবে? তারা নিজেদের সন্তানদেরকে দেশমুখী করতে পারেনি বলেই জয়ের প্রতি তাঁদের এই দীনতা, এই নীচতা!! আমি জানি, প্রবাসী সন্তানকে ‘দেশমুখী’ করে তুলতে বাবা-মা কে কতটা ত্যাগ স্বীকার করতে হয়।

    আমরা ত্যাগ স্বীকার করেছি, আমাদের মিশা অথবা প্রধানমন্ত্রীর ছেলে জয়, আমাদের এই ত্যাগের মর্য্যাদা রক্ষা করার চেষ্টা করে যাচ্ছে, এখন প্রয়োজন দেশবাসীর সহযোগীতা।

    শুভ জন্মদিন মিশা।
    — with Wrijoya Roy. (5 photos)
ita Roy Mithu

মায়ের সুইট হোম থেকে মিশা নিজের সুইট হোমে!

মিশাকে নিয়ে বাড়ি ফিরলাম রাত ৩টার সময়। ৩ ঘন্টা ড্রাইভ করে আমরা জ্যাকসান গিয়েছিলাম, রাত সাড়ে ১১টায় মিশার প্লেন ল্যান্ড করেছে, মিশাকে দেখার সাথে সাথে প্রথম যে কাজটি করেছি, দেশে বাবাকে কল দিয়েছি, বাবার প্রথম কথা ছিল, " মিশার লাগেজ পাইছে তো? খাবারগুলি ঠিকমত পৌঁছাইছে তো। বাসায় গিয়া প্রথমেই খাবারের প্যাকেট খুলিস। যাক, শান্তি পাইলাম, মাইয়াটা ঠিকমত পৌঁছাইছে"। মেজদাকে কল দিলাম, মেজদা বলল, " খুব খুশী হইলাম, মিশা ঠিকভাবে পৌঁছে গেছে। খাবারগুলি পৌঁছাইছে?" ছোটমাসীকে কল দিলাম, ছোট মাসী বলে, " বাব্বা! শান্তি পাইলাম, তিন মাস পর বাবা মায়ের মেয়ে বাবা মায়ের কাছে ঠিকমত পৌঁছেছে, কি তুমুল অবস্থার মধ্যে মেয়েটা আসছিল, সেই থেকে তো চলছেই, যাক, খুশী হইলাম। পটল, কচু এগুলি ঠিকমত পৌঁছাইছে?" পিসীকা ফোন করলাম, পিসী বলে, " মিঠু, এই একটু আগেও তোর কথাই কইতেছিলাম, তুই পাগল হইলেও তোর স্বামী আর মাইয়াগুলি পাইছস খুব ভাল। মিশারে একটু যত্ন কইরা খাওয়াইস। কিছু রানছস?" বললাম, " মিশার বাবা তার আদরের কন্যার জন্য রান্না করেছে, চিকেন কিমাকারী, আলু আর ডিমের স্পেশ্যাল কারী, চিকেন গ্রীল"। আমার আত্মার একটা টুকরা হচ্ছে অদিতি পাল টুম্পা, তাকে ফোন করতেই গলা ভারী করে বলে, " কে বলছেন?" বললাম, " তোর মামী, আমার গলার আওয়াজ শুনেও বুঝিস না।" সে বলে, " মামী, আমি তো অফিসে, আচ্ছা মিশার লাগেজ ঠিকমত পৌঁছাইছে ত? কচু ঘেচু পাইছ?" দাদাকে ফোন করে মিশার পৌঁছ সংবাদ দিয়েছি, দাদাও একই প্রশ্ন, " মেয়েটা ঠিকঠাকমত পৌঁছেছে, জিনিসপত্র ঠিকমত পেয়েছে তো?"

মিশাকে নিয়ে গাড়ী গ্যারাজে ঢুকতেই মিশা বলল, " ইয়ে!!! সুইট হোম! মা, আমি যে তিনমাস পর এসেছি, অনেক খুশী হয়েছোনা?" বললাম, " মিশা, একটা সত্যি কথা বলি, তুমি ফিরেছো এটাতে আমার যত খুশী হওয়ার কথা ছিল, তার চেয়ে বেশী মন খারাপ লাগছে আমার বাবার জন্য, তোমার মামা/মামীদের জন্য। তুমি ছিলে, ওদের ঘরে আনন্দ ছিল।" আমার কথা শুনে মিশার বাবা হেসে দিয়েছে, বলেছে, " আগে-পিছে মিলিয়ে কুটু তো অনেকদিন থেকেছে দাদুর কাছে"। আমি বুঝলাম, আমার বাবার জন্য আমার মন পোড়ে, মিশার জন্য মিশার বাবার মন পুড়ছিল। গতকাল থেকে সে তার মেয়ের জন্য রান্না করে চলেছে। এ এক নতুন অভিজ্ঞতা আমার। গাড়ীতে তিন ঘন্টা আমি ঝিমিয়েছি, বাপ-মেয়ে পটর পটর করতে করতে এসেছে। ঝিমুনী কেটে গেলেই এক আধ টুকরো কথা কানে এসেছে, আবার ঝিমিয়েছি। মনের ভেতর একটাই কষ্ট হচ্ছিল, জীবন আবার বাঁধাধরা নিয়মে চলবে। এতদিন 'স্কাইপ'এ বাবা, ভাই, ভাই বৌ, ভাতিজাদের দেখে মনে হতো আমি নারায়ণগঞ্জেই আছি। এখন থেকে আবার মনে হবে মিসিসিপিতে আছি।

মিশা ঘরে ঢুকে পড়ার সাথে সাথে স্যুটকেস খুললাম, কারণ দুই দিন ধরে কচু, এঁচোড়, মোচা, পটল, নারকেলের নাড়ু, আমসত্ব, কাঁঠাল বীচি স্যুটকেসের মধ্যে ছিল। টেক্সাসে নেমেই মিশা ডিক্লেয়ার করেছিল, সাথে কুকড ফুড আছে। কাস্টমস অফিসার জানতে চেয়েছে, কি ধরণের খাবার? মিশা বলেছে, 'ফ্রোজেন কুকড ভেজিটেবল,' আছে, বরফ গলে আমার স্যুটকেস ভিজে গেছে।" কাস্টমস অফিসার হেসে দিয়েছে, স্যুটকেস খোলেনি। এয়ারপোর্ট থেকেই মিশা সকালে ফোন দিয়ে জানিয়েছে, " মা, জানিনা, কচু ঘেচুর কি অবস্থা, তোমার ভাই আর তার বৌ মিলে ড্যাডির জন্য বস্তা বস্তা কচু কিনে রান্না করে দিয়েছে, সব গলে আমার স্যুটকেস ভিজে গেছে"।

স্যুটকেস খুলে এই বিশাল এক বস্তা বের করেছি। আমার মেয়ে আমার মতই হয়েছে, চার পাঁচ পরত কাপড়ে পেঁচিয়েছে সব খাবারের প্যাকেট। বস্তা খুলে দেখি, আমার ছোটভাই বৌ কচু কেটে ভেজে দিয়েছে, কচুর শাক ইলিশ মাছের মাথা দিয়ে রান্না, কচুর ভর্তা, পটল সাঁতলে দিয়েছে, মোচা কেটে ভাপ দিয়ে দিয়েছে, কাঁচা কাঁঠাল জোগাড় হয়নি বলে বাজারে চার ভাগের এক ভাগ কাঁঠাল পেয়ে সেটাকেই ভাপ দিয়ে পাঠিয়েছে, আমার মেজ ভাই বৌ নারকেলের নাড়ু বানিয়ে দিয়েছে তার জীবেন'দার জন্য। আমার পিসী আমসত্ব দিয়েছে জীবেনের জন্য।

সবই জামাইয়ের জন্য, আমার জন্য কি? আমার জন্য ফক্কা, আমার জন্য কাজ বাড়িয়ে দিয়েছে, সবকিছু গুছিয়ে তুলতে হয়েছে, কাল নাকি আমার উত্তম কুমারের জন্য বিরাট ভোজের ব্যবস্থা হয়েছে। সেই খুশীতে রাত তিনটার সময় বাটি ভরে মুড়ি আর শালাবৌয়ের পাঠানো নারকেলের নাড়ু নিয়ে যেই না উত্তম বসেছে, অমনি তার মেয়ে ক্যামেরায় ক্লিক ক্লিক ক্লিক!!!
ভালো কথা, মিশা আমাদের জন্য দোহা এয়ারপোর্টের ডিউটি ফ্রী শপ থেকে 'ক্যাডবেরী চকোলেট' নিয়ে এসেছে।

***আমার সুইট হোমের সুইট মানুষগুলোকে অনেক অনেক আদর ভালোবাসা!!!****
— with Wrijoya Roy. (4 photos)
 
 
 
দূর্লভ ছবিঃ
বঙ্গবন্ধুর সাথে দুই যুবক নেতার ছবি। প্রথম ছবির নেতা পরম ভালোবেসেছিল তাঁর বঙ্গবন্ধুকে, তাই প্রাণখোলা হাসিতে নেতাকে জড়িয়ে ধরতে পেরেছে। দ্বিতীয় ছবির নেতার মনে তার বঙ্গবন্ধুর প্রতি ভালোবাসার ছিঁটে ফোঁটাও ছিল বলে মনে হয়না। তাই নেতার পাশে মুখ আমসী করে দাঁড়িয়ে আছে।
যে ভালোবাসতে জানে, সে চিরদিন ভালোবেসে যায়, প্রথম ছবিতে তোফায়েল আহমেদ।
যে ভালোবাসতে জানেনা, সে ভালোবাসার মর্মই বুঝেনা, দ্বিতীয় ছবিতে মওদুদ আহমেদ।
— with Shahidul Alam Swpan.
31Like · · Promote ·
 
 

“নারী সুন্দর শাড়ীতে”

অনলাইনে ঢুকেই প্রথম নজরে এলো, মিতা হক ’৭১ টিভিতে বলেছেন, মাথায় ঘোমটা যারা দেয়, তারা বাঙালী নয়। এবং এই কমেন্টের জের ধরে চলছে বাদ-প্রতিবাদের ঝড়, এবং বলাই বাহুল্য, প্রতিবাদের ভাষা খুবই কুৎসিত এবং অশ্লীল। মানুষটি যখন মিতা হক, এবং গালাগালি যখন উনার বিরুদ্ধে, স্বাভাবিকভাবেই কৌতুহল জেগেছে মনে, মিতা হকের মত এমন একজন ব্যক্তিত্ব ঠিক এমন অস্থির সময়ে, কি করে এমন বিভ্রান্তিমূলক মন্তব্য করে বসলেন!

ভিডিও ক্লিপ অন করে মিতা হকের বক্তব্য শুনলাম। গালিগালাজকারীদের পক্ষ না নিয়েই বলতে পারি, উনার কথাগুলো শুনতে ভালো লাগেনি, কারণ এই ব্যক্তিত্বময়ী শিল্পী যা বলতে চেয়েছিলেন বা বুঝাতে চেয়েছিলেন, টকশো’র সীমিত সময়ের কারণেই হয়তোবা সেটা শুনতে অগোছালো, এলোমেলো মনে হয়েছে।

টকশো’তে মিতা হক কি বলেছেন? উনি যা কিছু বলেছেন, আসলেই কি উনি কথাগুলো সেভাবে বলতে চেয়েছিলেন? তিন মিনিটের ভিডিও ক্লিপে উনার মত একজন ব্যক্তিত্ব এমন অগোছালোভাবে, হড়বড় করে, এক কথার সাথে আরেক কথার সামঞ্জস্য না রেখে কি করে এতগুলো কথাকে বলে গেলেন, ভেবে অবাক হয়ে যাই। উনি বলেছেন, বর্তমান সরকারকে উনি সমর্থণ করেন একটিমাত্র কারণে যে এই সরকারের দৃষ্টিভঙ্গী অসাম্প্রদায়িক, এই সরকার যুদ্ধাপরাধীদের বিচার করছে। এই পর্যন্ত ঠিক আছে, কারণ শুভবুদ্ধি সম্পন্ন প্রতিটি মানুষই স্বীকার করবে যে আওয়ামীলীগ এবং বিএনপির রাজনৈতিক দর্শনে মূল পার্থক্যটুকুই এখানে। বিএনপি সরকারের আমলে সংখ্যালঘু সম্প্রদায়সহ মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসীদের যেভাবে নাজেহাল হতে হয় অথবা মনোবল হারিয়ে মাথা নীচু করে চলতে হয়, আওয়ামীলীগ সরকারের আমলে সংখ্যালঘু এবং মুক্তিযুদ্ধের পক্ষশক্তির সেই হারিয়ে যাওয়া মনোবল কিছুটা হলেও ফিরে আসে, মত প্রকাশের স্বাধীনতা ফিরে পায়। এই কথাগুলোই অতি আবেগ এবং উচ্ছ্বাসের সাথে বলতে গিয়ে মনে হয় উনি গড়বড় করে ফেলেছেন এবং সত্যি কথা বলতে কি হিতে বিপরীত করেছেন।

খুবই অগোছালোভাবে উনি বলেছেন, বাংলাদেশের মানুষ এখন আইডেনটিটি ক্রাইসিসে ভুগছে। আইডেনটিটি ক্রাইসিসের সমস্যা বলতে গিয়ে উনি নিজেই আইডেনটিটি হারিয়ে ফেলেছেন। উনার কথা শুনে আমার খুবই হতাশ লাগছিল, মনে হচ্ছিল, প্রস্তুতি না থাকলে কারোরই মিডিয়ার সামনে মুখ খোলা উচিত নয়, অথবা প্রস্তুতি থাকলেও এমন গা জ্বালানো ইস্যু নিয়ে কথা বলাও উচিত নয়। আমরা সকলেই জানি এবং বুঝি, বাংলাদেশে এখন ‘শনির দশা’ চলছে। এই সময়ে সকলেরই উচিত মেপে কথা বলা, মাপা পথে চলা। সরকারে যাঁরা থাকেন, তাঁদেরতো ক্ষমতার সময়সীমা শেষ হয়ে এলে উলটো পালটা কথার মাত্রা এমনিতেই বেড়ে যায়, তার সাথে যদি মিতা হকের মত ব্যক্তিত্বময়ী নারীর মুখ থেকে এমন অগোছালো, আপত্তিকর কথা বেরিয়ে যায়, তখন ‘শনির দশা’র সাথে যোগ হয় ‘রাহুর দশা’। ফেসবুক, ব্লগ, অনলাইন পাঠকের কমেন্ট পড়ে তাই মনে হচ্ছে।

‘শাড়ীতে নারী সুন্দর’ কথাটিই হয়তো মিতা হক বলতে চেয়েছিলেন, কিন্তু তা বলতে পারেননি। উনি বলেছেন অন্যভাবে, বিশেষ বড় কোন জমায়েতে উপস্থিত হলে উনার নিজেকেই শুধু বাঙ্গালী নারী মনে হয়, কারণ সর্বত্রই উনি একা শাড়ী পরিহিত থাকেন এবং উনার মাথায় ঘোমটা থাকেনা। উনি একথা কীভাবে বললেন বুঝা গেলোনা। উনি কি ‘হিজাব’ কে ঘোমটার সাথে মিলিয়ে ফেলেছেন? নাহলে ঘোমটা তো বাঙ্গালী নারীর বিনম্র, লজ্জা প্রকাশের একটি সুন্দর অনুষংগ মাত্র। আর বাংলাদেশের মত একটি দেশে, বর্তমান সময়ের মত অস্থির সময়ে, আশাহীন, ভরসাহীন আগামীর কথা মাথায় রেখেই ‘হিজাব’ নিয়ে উনার কিছু বলা উচিত হয়নি। যেমনটি উচিত নয় সিঁদুরের টিপ বা সিঁথিতে টানা সিঁদুরের নিয়ে কটাক্ষ করা। টিভি মাধ্যমে শাড়ী, ঘোমটা, বাঙ্গালীয়ানা বিষয়ে এমন একটি সেনসিটিভ কথা বলে ফেলা, কতখানি যুক্তিযুক্ত হয়েছে, তা আমার ধারণাতে নেই।

শিল্পীর নিজের কাছে ‘শাড়ী’ এখনও বাঙ্গালী নারীর অহংকার মনে হতে পারে, বাস্তবতা হলো এই যে, বাংলাদেশের মেয়ে থেকে শুরু করে বুড়ীরাও এখন সালোয়ার কামিজ পড়েন, দেখতে ভালো লাগছে নাকি খারাপ লাগছে, মোটা লাগছে নাকি স্লীম লাগছে সেদিক বিচার না করেই পরেন। সারাদেশের মানুষ তা দেখে অভ্যস্ত হয়ে গেছে, ঘরে-বাইরে, হাটে-বাজারে, শহরে –বন্দরে সর্বত্রই সালোয়ার কামিজেই নারীকে দেখা যায়। বাঙ্গালী নারীর শাড়ীর বদলে সালোয়ার কামিজ পড়াকে একেকজন একেকভাবে দেখেন। কেউ বলে, সালোয়ার কামিজ পড়লে নারীর আব্রু রক্ষা হয়, (তারা অবশ্য বলেনা শাড়ীতে কোথা দিয়ে আব্রু বেরিয়ে যায়,) কেউ কেউ মনে করে, সালোয়ার কামিজ পড়লে নিজের তরুণী বয়সকে ফিরে পাওয়া যায়, কেউ কেউ মনে করে,সালোয়ার কামিজ পড়ে রাস্তায় চলতে, বাসে ট্রামে চড়তে অনেক সুবিধে, তরুণীরা মনে করে, শাড়ী হচ্ছে ভীষণ ঝামেলার পোষাক, তার চেয়ে সালোয়ার কামিজ অনেক সুবিধার, পাকিস্তানপন্থী নারীরা মনে করে সালোয়ার কামিজ হচ্ছে তাদের মূল দেশে (পাকিস্তান)র ঐতিহ্যবাহী পোষাক।

মিতা হক রবীন্দ্র সঙ্গীত শিল্পী এবং অত্যন্ত গুণী শিল্পী। উনার কন্ঠে গীত রবীন্দ্র সঙ্গীত শুনলে বিশেষ এক স্বর্গীয় অনুভূতিতে মনপ্রাণ ভরে যায়। একজন রবীন্দ্রপ্রাণ মানুষের অন্তরে বাংলা এবং বাঙ্গালী যে কতখানি, তা শুধুমাত্র রবীন্দ্র অনুরাগীরাই বলতে পারবেন। এই মানুষটির মুখের দিকে তাকালেই মনে শ্রদ্ধা জাগে, সম্ভ্রম জাগে। টিভিতে সকলেই উনাকে রবীন্দ্র সঙ্গীত পরিবেশন করতে দেখে, উনার মুখে কোন রাজনৈতিক বা সামাজিক বক্তব্য কেউ শুনেছে বলে মনে হয়না, এবং উনিও কখনও রাজনীতি বিষয়ে কিছু বলেছেন বলেও মনে হয়না। তাই বোধ হয় মন-প্রাণ ঢেলে গান গাইলেও, কথা বলার বেলায় অপ্রিয় সত্যি কথাগুলো গুছিয়ে বলতে পারেননি।

এটা তো মানতেই হবে, বাংলাদেশের কালচারে শাড়ির যে উপজীব্যতা ছিল, শাড়ির যে গ্রহণযোগ্যতা ছিল, বাংগালী নারী বললেই চোখের সামনে শাড়ী পরিহিত লাজনম্র নারীর যে মুখচ্ছবি ভেসে উঠতো, তা আজ হারিয়ে যাচ্ছে। কেন হারিয়ে যাচ্ছে, কীভাবে হারিয়ে যাচ্ছে, সেটি বলতে হলে কথায় কথা বেড়ে যাবে। যদিও মিতা হক ঘোমটা পরেননা বলেছেন, তবে্ বাঙালী নারীর পরণে যদি শাড়ীই থাকে, শাড়ীর সাথে ঘোমটা আসবেই। ঘোমটা শুধু হিন্দু ,মুসলিম নারীরাই দেয়না, বাঙালী মাত্রেই দেয়। ঘোমটা দেয়া না দেয়া ব্যক্তির রুচীর উপর নির্ভর করে। শাড়ী বা ঘোমটা দিয়ে কারো জাত বিচার করা যাবেনা। আসল কথা হচ্ছে, বিবেক বোধ। প্রতিটি বাঙালী নারীরই বুঝা উচিত, ‘নারী সুন্দর শাড়ীতে’। যেদিন নারী নিজে বুঝবে, ‘নারী সুন্দর শাড়ী’তে, সেদিন মিতা হক দেশের সর্বত্রই শাড়ী পরিহিত নারীকে দেখতে পাবেন। অবশ্য শাড়ী পড়লেই যে সব নারী বাঙ্গালী হয়ে উঠবেন, তা কিন্তু বলা কঠিন। আমাদের দেশের দুই দলের দুই নেত্রীই কিন্তু শাড়ী পড়েন। তারপরেও জর্জেট নেত্রীকে খাঁটি বাঙালীর মত লাগেনা, কিন্তু জামদানী নেত্রীকে খাঁটি বাঙালীর মত লাগে। পার্থক্যটা কোথায়? পার্থক্য উনাদের চলনে-বলনে, আচার-আচরণে। বাঙালীত্ব এভাবে বিচার করা যায়না। ছেলেরা দাড়ি টুপী রাখলেই কি আর বাঙালীত্ব হারিয়ে অবাঙালী হয়ে যায় নাকি জামাতী হলেই ক্লিন শেভড হওয়া যায়না? তাহলে তো রবীন্দ্রনাথ ঠাকুরকে কি বলা যাবে? মাওলানা ভাসানীর মত খাঁটি বাঙালীই বা কয়জন আছে?

দুঃখের বিষয় হচ্ছে, অনলাইনে শুধুমাত্র মিতা হকের তিন মিনিটের বক্তব্যের ভিডিও ক্লিপ এসেছে, যা দেখে পুরো অনুষ্ঠানের পূর্বাপর আলোচনা সম্পর্কে স্বচ্ছ ধারণা করা যায়নি। ঠিক কোন প্রসঙ্গের পরিপ্রেক্ষিতে একজন রবীন্দ্র অনুরাগীকে এতটা বেখেয়ালী হয়ে কথা বলতে হয়েছে, তা জানার উপায় ছিলনা। পাঠক শুধু মিতা হকের কয়েকটি কথাকেই লুফে নিয়েছে এবং মিতা হকের সমালোচনা করতে গিয়ে রবীন্দ্রনাথের শ্রাদ্ধটুকু করতে ভুলেনি। সাথে হিন্দুদেরকে গালি দিতেও ভুলেনি, অবশ্য বাংলাদেশের হিন্দুরা তো ‘ফুটবল’ এর মত, পায়ের কাছে পেলেই হলো, এক লাথিতে ইন্ডিয়ার গোলপোস্টে পাঠাও,কাজেই রবি গুরুর সাথে সাথে হিন্দুরাও গালি খেয়েছে। যে সকল পাঠক মিতা হককে বকতে গিয়ে কবিগুরুকে গালি দিয়েছে, তাদেরই পূর্বপুরুষদের একজন, খুব সম্ভবত মোনায়েম খাঁ, তার চাটুকারদের ঊদ্দেশ্যে বলেছিল “আপনাদের মধ্যে কেউ কি দুই চারটা রবীন্দর সঙ্গীত লিখতে পারেননা?”

পরিশেষে একজন গুণী শিল্পীর পক্ষ নিয়ে দুটো কথা বলিঃ
মিতা হককে আমি অনেক আগে খুব কাছে থেকে দেখেছিলাম, শান্ত-শিষ্ট এক মা, ছোট একটি বাচ্চা মেয়ের হাত ধরে ওয়াই ডাব্লিউ সি এ স্কুলে আসতেন, একই স্কুলে, আমার হাত ধরে আমার মৌটুসীও যেত। উনি তখন টিভিতে রবীন্দ্রসঙ্গীত গাইতেন, শুনে প্রাণ জুড়িয়ে যেত। কারো সাথে গায়ে পড়ে কথা বলার অভ্যাস আমার নেই বলেই এই গুণী মানুষটির সাথে কখনও আলাপ পরিচয় হয়নি। অনেক পরে জেনেছি, ছায়ানটের শিক্ষক, রবীন্দ্রসঙ্গীত বিশেষজ্ঞ, কলামিস্ট ওয়াহিদুল হক সাহেবের ভাইয়ের মেয়ে হচ্ছে মিতা হক। বিশাল সংস্কৃতিমনা পরিবারের মেয়ে, বাংলাদেশের গৌরব, বাঙ্গালীর গৌরব। গৌরব ধূলায় লুটিয়ে দিতে নেই, যত সামান্যই হোক, তাকে এভাবে হেলা অশ্রদ্ধা করতে নেই, এতে করে আমরাই ছোট হই। একটি মাত্র টকশো’তে অনেক কথার ফাঁকে একটি আংশিক অংশকে ঊদ্দেশ্যমূলকভাবে যারা অনলাইনে প্রচার করে এই স্নিগ্ধরূপা মানুষটিকে অশালীণ ভাষার মহাসমুদ্রে ছুঁড়ে দিয়ে মহানন্দে ডিগবাজী খাচ্ছে, তারা আজ বুঝতে পারছেনা কি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এই সমাজের, কি ক্ষতি হয়ে যাচ্ছে এই দেশের, কি ক্ষতিটাই না হয়ে যাচ্ছে বাংলা ভাষার এবং বাংলাভাষীদের।
15Like · · Promote ·
 
 
 

মায়ের কাছে ৮ম চিঠিঃ

মা, গত পরশু ছিল আগস্টের ৮ তারিখ, তোমাকে চিঠি লেখার কথা ছিল, তুমিও নিশ্চয়ই আমার লেখা ৮ম চিঠির অপেক্ষায় ছিলে। চিঠি লিখতে শুরু করেছি, হঠাৎ খেয়াল হয়েছে, পরদিন ঈদ। ঈদের দিনে কোন কষ্ট নিতেও চাইনি, কাউকে কষ্ট দিতেও চাইনি। তাই তোমাকে চিঠি না লিখে ঈদ উপলক্ষে দুই একটা স্ট্যাটাস লিখেছি। কৌতুকপূর্ণ স্ট্যাটাস। একটি স্ট্যাটাসে 'রশিদ মামা'র কথা লিখেছি। মা, রশিদ মামার কথা মনে আছে? কি বিনয়ী, কি ভদ্র, কি সুন্দর একজন মানুষ আসতো আমাদের দাদুর ঘরে। রঙধনু রঙের লাচ্ছা সেমাই, অদ্ভুত স্বাদের জর্দা সেমাই, ভাতের জর্দাসহ আরও দুই একটা খাবার ছিল। দিদিমাকে 'মা' ডাকতো, দাদুকে ডাকতো 'বাবা'। তোমাকে 'দিদি' ডাকতো। বছরে একদিন আসতো, ধবধবে সাদা পাজামা-পাঞ্জাবী পড়ে আসতো। উনার মুখটা মনে আছে, লাজুক লাজুক হাসি থাকতো সারামুখে। বেলা এগারোটার দিকে আসতো, ঢাকা থেকে আসতো বলে বেলা হয়ে যেত, চোখে থাকতো কালো সানগ্লাস। মা, কোথায় হারিয়ে গেছে সেইসব দিন।

ঈদের স্ট্যাটাস ছাড়াও আরও দুইটি স্ট্যাটাস লিখেছি, একটি বঙ্গবন্ধুর স্ত্রী বেগম ফজিলাতুন্নেসা মুজিবের জন্মদিন উপলক্ষে, আরেকটি লিখেছি বিশ্বাসঘাতক খন্দকার মোশতাককে নিয়ে।

মা, তোমার কি মনে পড়ে, '৭৫ এর আগে তুমি স্কুল থেকে ফিরে বাবার সাথে গল্প করতে স্কুলে কি কি শুনে এলে, সেসব বিষয়ে। আমি তো ঘরেই থাকতাম, সব কথাই কান পেতে শুনতাম। তখন তুমি খন্দকার আপার রেফারেন্স টেনে বলতে, " খন্দকার আপা আজকে অনেক দুঃখ করলেন, উনার স্বামীর সম্পত্তি সবই উনার দেওর মেরে দিয়েছে। আপা বলছিলেন, ভুলেও যেন কুমিল্লা জেলার সাথে কেউ বৈবাহিক সম্পর্ক না করে"। তখন জানতাম, তোমার স্কুলের অ্যাসিস্ট্যান্ট হেডমিসট্রেসের দেওর খন্দকার মোশতাক আহমেদ একজন মন্ত্রী। তখন তো অতশত বুঝতামনা। হেডমিস্ট্রেস মিসেস হেনা দাস, যাঁকে আমরা বড় আপা ডাকতাম, উনি তো ছিলেন কমিউনিস্ট পার্টির নেত্রী, শিক্ষক সমতির সাধারণ সম্পাদিকা। প্রায়ই ঢাকা শিক্ষক সমিতির মিটিং এ যেতেন, '৭৫ এর ঠিক আগে দিয়ে কি যেন কানাঘুষা শোনা যেত। আমার এখনও মনে পড়ে, শিক্ষক সমিতির মিটিং থেকে ফিরে এসে 'বড় আপা' তোমাদের কাছে কি যেন বলেছিলেন। তখনও খন্দকার আপা উনার দেওরকে শয়তান বলেছিল। সেসব গল্প তুমি ঘরে বাবাকে শুনিয়েছিলে।

'৭৫ এর পর খন্দকার আপা কেমন যেন চুপ হয়ে গেছিলেন, সব সময় নাকি মাথা নীচু করে থাকতেন। এক সময় চাকুরী থেকে রিটায়ার করে চলেই গেলেন। যাওয়ার আগে কিন্তু বলে গেছিলেন, মোশতাক খন্দকারের সাথে উনারা সকল সম্পর্ক ছিন্ন করেছেন। এখনও মনে পড়লে হাসি পায়, মেজদা একটু বেশী শয়তানী করলেই তুমি মেজদাকে 'মোশতাক খন্দকার' নাহলে " চোরা খন্দকার' বলে গালি দিতে। সেই মোশতাক খন্দকার আর মীরজাফরকে নিয়ে অল্প কথা লিখেছিলাম।

মা, বেগম মুজিবের জন্মদিনে লিখতে গিয়ে খেয়াল করলাম, তোমার মত এই মানুষটিরও জন্ম এবং মৃত্যু একই মাসে। উনার জন্ম ৮ই আগস্ট, মৃত্যু ঠিক সাতদিন পর, ১৫ই আগস্ট। তোমার বেলাতেও তাই, জন্ম ৫ই অক্টোবার, মৃত্যু ৮ই অক্টোবার।
আগামী ৮ই অক্টোবারের পরেই তুমি আবার জন্ম নিতে পারবে। এমনটিই তো বলতে, মৃত্যুর এক বছর পর পুণর্জন্ম হয়, বলতেনা? আমার মনে হয় বলতে। তবে তুমি আমাকে বলেছিলে, তুমি আর জন্ম নিবেনা। পূর্ব জন্মের পাপ বা পূণ্য কর্মের জন্য যত শাস্তি বা পুরষ্কার পাওনা ছিল, তার সবটুকুই নাকি তুমি এই জন্মে শোধ করে দিয়ে গেছো। তুমি আর আসবেনা, তাইনা মা? মৌটুসী বা মিশার সন্তান হয়েও আসবেনা? মৌটুসী বা মিশাকে ভুলে থাকতে পারবে? ওরা দুই জন তোমার কত আপনার ছিল, ওরাও তোমাকে কি পছন্দটাই না করতো। মিশা তো প্রায় তিনমাস বাংলাদেশে কাটিয়ে ফেললো, এখন মনে হয়, তুমি থাকলে কি খুশী হতে।

সেদিন কি হয়েছে জান? খেয়াল করে শুনবেঃ

আগস্টের ৫ তারিখে আমি সারাদিন বেশ হাসিখুশীই ছিলাম, দুপুরে ওয়ালমার্টে গেছি, কাজের মধ্যে তো মোবাইল ব্যবহার করা যায়না, তাই আমার মোবাইল ভাইব্রেটে দিয়ে প্যান্টের পকেটে রেখে দেই। সেদিন বিকেল থেকে হঠাৎ করে আমার মনটা খুব খারাপ লাগছিল, কি যে খারাপ, বুঝাতে পারবোনা। কোন কারণ ছাড়াই খারাপ লাগছিল, ভীষন অস্বস্তিও হচ্ছিল। তখন কাস্টমারের সাথে ফোনের কন্ট্র্যাক্ট নিয়ে কাজ করছিলাম, টের পেয়েছি, প্যান্টের পকেটে কম্পন হচ্ছে। বুঝেছি, কেউ মেসেজ পাঠিয়েছে। আমাকে এখন আর কেউ মেসেজ পাঠায়না মা, আগে অনেকেই পাঠাতো, তুমি চলে যাওয়ার পর আমি সবার সাথে যোগাযোগ বন্ধ করে দিয়েছি। ভাল লাগেনা কারো সাথে কথা বলতে। কথা বলতে গেলেই আমি কেঁদে ফেলি, তাই কারো সাথেই কথা বলিনা।

আমি ভুলেই গেছিলাম মেসেজের কথা। একেবারে শেষ টি ব্রেকে টি রুমে গেছি, কফি তো খাইনা, ক্ষিদেও ছিলনা, কিছু করার নেই,তাই প্যান্টের পকেট থেকে ফোন বের করেছি যদি কাউকে ফোন করা যায়। ফোন লাইট অন করতেই দেখি দুটো মেসেজ আছে, ক্লিক করে দেখি, মিশা পাঠিয়েছে। মেসেজের যে টাইম দেখাচ্ছে, তখনই আমার মনটাতে খুব অস্বস্তি হচ্ছিল। যাই হোক, মেসেজ পড়লাম, প্রথমটা পড়লাম, দ্বিতীয়টাও পড়লাম। তোমাকে পড়ে শোনাচ্ছিঃ

"কালকে আমি সবার জন্য চিলি চিকেন রাঁধবো। দিদা থাকলে টেস্ট করতে পারতো---সবাইকে আমি সানত্বণা দেই বলে একা একা একটু কাঁদলাম--তুমি আবার কাঁদবেনা---আগস্ট ৫, রাত ১টা বেজে ২৩"

" মা হঠাৎ এখন মনটা খুব খারাপ হয়ে গেছে---দিদার সাথে প্রতিবার এই বিছানাটাতে শুতাম---বার বার টয়লেটে যেতো---এখন আমি একা শুয়ে আছি " আগস্ট রাত ১টা বেজে ১২মিঃ"

মা, আমি টি টেবিলে বসে আছি, আমার উলটো দিকে আরেকজন, আশেপাশে আরও কিছু সদস্য, আমি কি করলাম বলোতো? চশমা চোখেই মাথা নীচু করে ফেললাম, পাঁচ মিনিট এক নাগাড়ে কাঁদলাম, কেন বলো তো? আমার মেয়েটার এত বুদ্ধি আর আবেগ দেখে। মিশা তোমাকে কত ভালোবাসতো, ঠিক কিভাবে ভালোবাসতো, ্তোমার সাথে কোন কোন মুহূর্ত ওর ভালো লাগতো, তার সবটুকুই এ দুটো মেসেজে ফুটে উঠেছে। যাদের পৃথিবীর বুকে রেখে গেছো, তাদের কথাও ও চিন্তা করেছে। তারা যেনো একটু হাসিমুখে থাকতে পারে, তার জন্য নিজের আবেগকে ও চেপে রাখতে পেরেছে, আমার তো কান্না আসবেই, তাইনা মা? মেয়েগুলো এখনও তোমাদের কথা ভাবে, তোমাদেরকে ভালোবাসে, এটাই আমার সার্থকতা।

মজার কথা শোন, তোমার ছেলে রত্নদের গল্প বলি। যে দুই রত্ন বাংলাদেশে আছে, সেই দুই রত্নের গল্পই বলি, স্বর্গে বসে তুমিও হাসবে। মিশা যে কয়দিন নারায়ণগঞ্জে ছিল, প্রায় সব দিন স্কাইপে কথা বলেছে আমার সাথে, দাদু, মামা, মামী, অতনু, যীশু এবং শিপনকে সাথে নিয়ে কথা বলেছে। গতকালকে তো ঈদ ছিল। তার আগের দিনও স্কাইপে কথা বলেছি। আগের দিন বলেছিলাম, " মিশা, কালকে তোমার বাবাকে বলেছি,
" জানো, আমার মনে হয় বাবার একটু কাউন্সিলিং দরকার, একা মনমরা হয়ে থাকে, কেমন যেন হয়ে যাচ্ছে। আজকে স্কাইপেই আমার কাছে মিশার নামে বিচার দিচ্ছিল, মিশা নাকি দাদুর কোন খোঁজ নেয়না। আমি মিশাকে বললাম, দাদুর খোঁজ নাওনা কেন? মিশা তো বলে, হায় হায়, দাদুর মাথা আজকে গরম কোন কারণে, নাহলে এসব উলটা পালটা বলছে কেন?" সাথে সাথে তোমার বাবা বলেছে, "উনার কাউন্সিলিং লাগবে কে বলেছে? উনি তো ভুল কিছু বলেননি, কুটুর তো উচিৎ দাদুর পাশে পাশে থাকা।"
আমি বলেছি, " হ্যাঁ, আমিও রিয়েলাইজ করতে পারি, বাবার এখন একটু সঙ্গ পাওয়া দরকার, এখনতো আর সম্ভব না, যদি আমেরিকা নিয়ে আসতে পারতাম, চিকিৎসাও খুব ভালো হতো, বুড়ো বয়সে একা থাকার কত কষ্ট, মৃত্যুর প্রহর গোনা। ইস! এখন আমি রিয়েলাইজ করি"।

মিশা, তোমার বাবা সাথে সাথে বলে, " এখন রিয়েলাইজ করে কি হবে? সময় হারিয়ে, মানুষ হারিয়ে রিয়েলাইজ করছো। আমি তো কিছুই বলিনা, বললে তো কত কথাই বলা যায়"।

আমি ধীরে ধীরে বললাম, " বলো, বলবেনা কেন?"

-" বললে পরে তো আবার রাগ করবে, তাই বলিনা।"

-" না, রাগ করবোনা, তুমি বলো, কি বলতে চেয়েছিলে, অথচ বলোনি"।

-আচ্ছা, তুমি কি কাজটা করেছো বলোতো? আমি তো ভাবতেই পারিনা। তুমি প্রতিবার এতদূর থেকে দেশে গেছো বাবা মা'কে দেখবে বলে, অথচ তুমি বাবা মায়ের সাথে কয়দিন কাটিয়েছো? আমি অবাক হয়ে গেছি তোমার কান্ড দেখে। আরে! আমি যখনই আমার মায়ের কাছে যেতাম, আমি তো আর সব আনন্দ বন্ধ করে রেখে মায়ের কাছাকাছি থাকতাম, আর তুমি কি করেছো, দেশে গিয়েই চারদিকে ছুটে বেড়িয়েছো। তোমার কান্ড দেখে তো আমি অবাক হয়ে গেছি।"

মা জানো, আমি সেদিন মিশাকে এত কথাও বলিনি, শুধু বলেছিলাম, "তোমার বাবা আমাকে বকা দিয়েছে, বলেছে বাবা-মায়ের সাথে কয় দিন কাটিয়েছি? সারাক্ষন নাকি এদিক সেদিক ঘুরে বেড়িয়েছি। মিশাকে যখন কথাগুলো বলি, পাশে থেকে তোমার ছোট ছেলে 'হা হা হা' করে হেসে উঠেছে, বলে এতদিনে জীবেন'দা মুখ খুলেছে। আগে তো তোমার মা'কে কিছুই বলেনি, এখন বুড়া হচ্ছে তো, এখন ড্যাম কেয়ার ভাব চলে আসছে। ঠিক কথাটা বলে দিছে।"

এরপর তো আমাদের সেদিনের স্কাইপ সংলাপ শেষ হয়ে গেছিল, গতকাল আবার স্কাইপে কথা বলেছি। মিশা স্কাইপ অন করেই আমাকে বলে,
" মা, দেখো, ঘরে এখন বুরহানি উৎসব চলছে। তোমাকে যে ড্যাডি বকেছে, তোমার দুই ভাই বুরহানি দিয়ে সেটা নাকি সেলিব্রেট করছে। শ্যাম্পেনের বদলে বুরহানি।"

মা, জানো, মেজদা বুরহানির বোতল আমাকে দেখিয়ে বলে, " মিঠু, জীবেনবাবুকে লাল সেলাম। এতদিনে মুখ খুললো। "
তোমার ছোট ছেলে বলে, " আরে, এখন বুড়া হইতেছে তো, মনের মধ্যে থেকে ডর ভয় চলে যাইতেছে। এতদিন তো বৌয়ের ডরে মুখে তালা দিয়ে ছিল। সত্যি কথা তো, ফুলদি বাবা মা-রে দেখতে যাই বলে আসতো, দেশে পা দিয়েই ছুটতো সুনামগঞ্জ, কলকাতা, জাহাঙ্গীরনগর, দুনিয়ার যত বন্ধু আছে, সবার সাথে দেখা করতে যাইত, এদিকে মা-বাবার সাথে থাকার বেলায় ঠনঠনা। বুরহানিটা খুব ভাল লাগতেছে খেতে, অন্যরকম মজা"।

মেজদা আবার সাথে যোগ করেছে, " মিঠু, তোরে যে আমরা বকতেছি, তোর মাইয়ার মুখ কালো হয়ে গেছে। এমন চাঁদের মত টলটলে সুন্দর মুখ অমাবস্যা করে ফেলছে, মা তো, মায়ের জন্য ভালোবাসা । তবে জীবেন বাবুকে বলিস, আমি হ্যান্ড শেক করলাম, স্কাইপের মধ্যেই হ্যান্ড শেক। উনার পক্ষে আছি।"

এই দুই মামার কান্ড কীর্তি দেখে মিশা তো খুশী। ওতো এটাই চেয়েছিল, মামাদেরকে একটু খুশী করতে। আমাকে মেসেজ পাঠালো, " মা, দেখো মেজম আর ছোটমের প্রোফাইল পিকচার চেঞ্জ করে দিয়েছি। টাটকা ছবি তুললাম, সেগুলোই প্রোফাইল পিকচার বানালাম। আজকে মামী আর আমি বিকেলে সুন্দর শাড়ী পড়ে সাজবো, তারপর সবাইকে নিয়ে ছবি তুলবো।"

মা, তোমার দুই ছেলের প্রাণবন্ত হাসি দিয়ে তোলা ছবি দেখে আমার চোখে জল এসে গেছে। দুই জনকেই কি যে সুন্দর লাগছে ছবিতে। আমার ভাই দুইটা প্রায় দশ মাস পর মনে হয় একটু আনন্দ করলো। মিশাকে কি বলে ধন্যবাদ দেবো, ভাষা খুঁজে পাইনা। তোমার এই নাতনীটা পুরা আমার স্বভাব পেয়েছে। সারাক্ষণ আনন্দে থাকতে চায়, কিন্তু ওর ভেতরে অনেক কষ্ট লুকিয়ে থাকে। আমিও মা অনেক আনন্দে থাকতে চাই, নিজেও আনন্দ করতে চাই, অন্যকেও আনন্দে রাখতে চাই। কিন্তু পারিনা, দুঃখগুলো কোথা থেকে উড়ে আসে, বুঝতেও পারিনা। মিশার বাবা আমাকে যে কথাগুলো বলেছে, তার উত্তর আমি সাথে সাথে দেইনি। আগে মনোযোগ দিয়ে শুনেছি, স্বীকার করে নিয়েছি আমাকে করা তার তিরস্কারটুকু। এরপর খুব ধীরে ধীরে বলেছি,

" দেখো, বাংলাদেশে যেতাম বা যাব তো শুধু বাবা-মা'কে দেখার জন্য না। ওখানে যাদের সাথেই দেখা করি, তাদের সবাই আমাকে ভালোবাসে। তাদের ভালোবাসাটুকু তো মিথ্যে নয়। ইন্ডিয়াতে যাই কাকা কাকীমা, মাসী মামাদের সাথে দেখা করতে। তারাও আমাকে সন্তানের মত ভালোবাসে, চোখের একটু দেখা দেখতে যাই, এক জীবনে এর বেশী কিছু তো করতেও পারিনা। এটা তো আমার অপরাধ হতে পারেনা যে ভগবান আমাকে এমন শাস্তি দিল। বাকী জীবন আমি নিজেকে ক্ষমা করতে পারবোনা। শেষবার আমি মাত্র দুই রাত থেকেছি মা বাবার সাথে। অন্যবার তো মা আমাদের বাসায় চলে আসতো, আমাদের সবার সাথে থাকতো, তাই খারাপ চিন্তা মনে আসেনি। মা-বাবাকে তো কখনও অবহেলা করিনি, সব সময় তাঁদের সংস্পর্শে থেকেছি। আসলে, আমি ধরেই নিয়েছিলাম, আমার মা-বাবা 'অমর' হয়ে এসেছেন। সেই ধরে নেয়াটাই ভুল হয়েছে"--বলেই আমি কান্নায় ভেঙ্গে পড়েছি। সব ভুল স্বীকার করে নিয়ে এভাবে আমাকে ভেঙ্গে পড়তে দেখে মিশার বাবা নিজের ভুল বুঝতে পেরেছে, সাথে সাথে বলেছে, মৃত্যু তো হয়, সবারই হয়, উনারও হয়েছে। উনার তো যথেষ্ট বয়সও হয়েছিল। এরপর কি কি বলেছে খেয়াল করিনি। কারণ ঐ যে বলেছে, উনার তো বয়সও হয়েছিল, ওটা শুনেই আমি চুপ হয়ে গেছি।

তোমার বা বাবার বয়স হয়ে গেছে, এই কথাটি আর সবার কাছে সত্য মনে হলেও আমাদের কাছে কখনও মনে হয়নি, তাই তুমি আমাদের কাছে জীবন্ত হয়েই আছো।

** আরেকটি ভালো খবর দেই, সেপ্টেম্বারের শেষ সপ্তাহে কানাডা যাচ্ছি, শেষ পর্যন্ত ছুটি মিলেছে, দুই ভাই বোন একসাথে মন্দিরে তোমার ঊদ্দেশ্যে পূজো দিব। হা হা হা!! ২০০১ সালে আমেরিকা এসেছিলাম, ১২ বছর পর, ২০১৩ সালে ভাইয়ের কাছে যাচ্ছি, অবশ্যই যদি ততদিন বেঁচে থাকি। আমাদের প্রতিটি মুহূর্তই তো অনিশ্চিত, তাইনা মা?***

*** আরেকটি কথা না বললেই নয়, গত বছর ১০ই আগস্ট এই দিনে , এই সময়ে, তোমার প্রথম অপারেশান হয়েছে। অপারেশান শেষে বেডে শুয়েই তুমি খুব খুশীমনে কলবল করে কথা বলছিলে, আমাকে অপু ফোনে জানিয়েছে। তুমি খুশী হয়েছো শুনে আমিও কি খুশী। ভেবেছিলাম, যাক, আমাদের মা বেঁচে গেল! [দেখলে তো, কিভাবে আনন্দের কথা, খুশীর কথার ভীড় ঠেলে কষ্টগুলো ঢুকে গেলো আমার অন্তরের ভেতরে, এমনই হয়, আমার বেলায় এমনটিই ঘটে।]
 
নাফিসের ৩০ বছর জেল, খেতে হবে জেলের বার্গার!

নাফিসের কথা মনে পড়ে? গত বছর আমেরিকার নিউইয়র্কে এফ বি আই এর হাতে ধরা পড়েছিল। ২১ বছর বয়সী অনিন্দ্যসুন্দর যুবক। তার সৌন্দর্য্যের আড়ালে লুকিয়ে ছিল চরম হিংস্রতা! যে ঊদ্দেশ্যে সে ম্যানহাটনে গিয়েছিল, ঊদ্দেশ্য সফল হলে কি যে হতো!!!

৯/১১ এর টুইন টাওয়ার হামলাকে আমার দেশের অনেকেই সমর্থণ করেছিল এবং এখনও তা করে। এর সূত্র ধরেই একজন নাফিসের সৃষ্টি হয়। সেই নাফিস গত বছর অক্টোবার মাসে নিউইয়র্কের লোয়ার ম্যানহাটনে অবস্থিত 'ফেডারেল রিজার্ভ ব্যাংক' ভবন উড়িয়ে দেবার চেষ্টার প্রাক্কালে এফ বি আই-এর হাতে ধরা পড়ে।
নাফিস ধরা পড়ার পর থেকে স্বাভাবিক কারণেই আমেরিকায় অবস্থানরত বাংলাদেশীদের মনের মধ্যে শংকা ও অস্বস্তি সৃষ্টি হয়েছিল।
কিন্তু নাফিসের বেলাতেও আমার দেশের কিছু মানুষ নাফিসের পক্ষ নিয়ে পত্রিকা, ফেসবুক, ব্লগ গরম করে ফেলেছিল। তারা নাফিসকে সমর্থণ করেছিল।
আমি তখন ব্লগে নাফিসের বাবা মায়ের মানসিক কষ্টের কথা মাথায় রেখে ্নাফিসদের যারা তৈরী করেছে, তাদেরকে নিয়ে একটি লেখা লিখেছিলাম, সেই লেখার উপর এমন বিরূপ মন্তব্য এসেছিল যে আমি থমকে গিয়েছিলাম। টুইন টাওতারের শৈল্পিক সৌন্দর্য্য নিয়ে একটি ফীচার লিখেছিলাম বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকায়। সেটি হুবহু পোস্ট করেছিলাম ব্লগে। সেখানেও একই অবস্থা, কি কটু মন্তব্য। তখনই আমি জেনেছিলাম, বাংলাদেশে এখনও অনেক মানুষ আছে যারা ৯/১১ সমর্থণ করে, আবার আমেরিকাতে যেতেও চায়, আমেরিকান কাস্টমস যদি নাম দেখে ডাবল চেক করে, সেটাতেও তুমুল আপত্তি তোলে।
নাফিস প্রথমে অস্বীকার করে, এরপর নাফিসের পক্ষ থেকে বলা হয়, এফ বি আই ফাঁদ পেতে ওকে ধরেছে, আমাদের প্রশ্ন ছিল, নাফিসের বয়সী হাজার হাজার বাংলাদেশী ছেলেমেয়ে আমেরিকায় লেখাপড়া করছে, কাজকর্ম করছে, এফ বি আই তো তাদের জন্য ফাঁদ পাতেনি!

গত বছর নাফিস ধরা পড়ার পর আমরা খুবই লজ্জিত, মর্মাহত হয়েছিলাম। শুভবুদ্ধিসম্পন্ন সকলেই চেয়েছিলাম, ওর শাস্তি হোক। শাস্তি হয়েছে।

গেট লস্ট নাফিস, খা এখন ৩০ বছর আমেরিকান জেলের বার্গার খা! আমরা কলঙ্কমুক্ত হলাম!
5Like · · Promote ·
 
 
Rita Roy Mithu

বেহেশতী সেমাই আর আসেনা!

আজ ঈদ! মুসলমানদের পবিত্র ধর্মীয় উৎসব, ত্রিশ দিন রোজা শেষে আজ শুধুই আনন্দ। ঈদ মুসলমানদের ধর্মীয় উৎসব হলেও উৎসবের আনন্দটুকু সকলের। ছোটবেলা থেকেই বন্ধুদের সাথে ঈদের আনন্দ উপভোগ করে এসেছি। বন্ধুদের মধ্যে যারা অন্য ধর্মাবলম্বী ছিলাম, সেই আমাদের কাছে ঈদের এই দিনটি ছিল অতি সুস্বাদু সেমাই খাওয়ার উৎসব।
ছোটবেলায় রোজার মাস যত এগিয়ে আসতো, আমাদের সকলের মনে আলগা ফূর্তি এসে ভর করতো। কারণ রোজার মাসে আমাদেরকে তো আর না খেয়ে রোজা রাখতে হতোনা, অথচ সন্ধ্যে হতে না হতেই ইফতারীর বাটি নিয়ে খেতে বসতাম। সন্ধ্যা হতেই রাস্তার পারে বসা তেলেভাজার দোকান থেকে ছোলা, পেঁয়াজু, বেগুনী, আলুর চপ কিনে আনা হতো। তখন তো আর ভেজালের কথা জানতামনা, মোবিলে বেগুণী ভাজা হয়, সেটাও জানতামনা, পরম তৃপ্তি নিয়ে খাওয়াতেই মহানন্দ ছিল।

আমাদের নারায়ণগঞ্জের এত বড় বাসাতে ভাড়াটের সংখ্যা ছিল ২০, বাড়ীওয়ালা এবং একটি ভাড়াটে বাদে বাকী ১৯টি ভাড়াটে ছিল হিন্দু সম্প্রদায়ের, একমাত্র মুসলিম ভাড়াটে ছিলেন আমার প্রাণের বন্ধু দিনা'র আব্বা। দিনা ছিল আমার সহপাঠী এবং প্রাণের বন্ধু। রোজার মাসে ইচ্ছে করলেই দিনাদের বাড়ীতে গিয়ে ইফতারী খেতে পারতাম, কিন্তু এই কাজটি কখনও করতামনা। কারো বাড়ীতে যখন তখন গিয়ে খেতে বসা, আমার মা পছন্দ করতেননা বলেই আমরা সেটা করতামনা। তাছাড়া আমাদের জন্য রাস্তার পারের ইফতারী তো ছিলই। দিনাদের বাসায় না গেলেও অপেক্ষায় থাকতাম, কবে দিনাদের বাসা থেকে থালা ভর্তি ইফতার আসবে। এটাই ছিল আমাদের ঐ বাড়ীর রীতি। দুর্গাপূজা, লক্ষ্মীপূজার সময় থালা ভর্তি মিষ্টি, মোয়া, নাড়ু পাঠানো হতো বাড়ীওয়ালা এবং দিনাদের বাড়ীতে, ১৯ বাড়ী থেকেই থালা যেতো, আর শবেবরাত, রোজা এবং সেমাইয়ের ঈদে বাড়ীওয়ালা এবং দিনাদের বাড়ী থেকে রকমারী হালুয়া, ইফতারী এবং সেমাই ভর্তি থালা যেতো ১৯টি ঘরে। কি মজার ছিল সেসব দিন।

রোজার ঈদের সময় আমি ধোয়া জামাকাপড় পড়ে মাথার চুল আঁচড়ে ফিটফাট হয়ে থাকতাম, কখন দিনা ডাকতে আসবে। ডাক পাওয়ার সাথে সাথে আমি আর ছোট ভাই ওদের বাসায় যেতাম। দিনার মা'কে ডাকতাম 'মাসীমা'। মাসীমা খুব সমাদর করে সেমাই খেতে দিত, সেমাই খাওয়া শেষে খিচুড়ী, মুরগীর মাংস খেতে বলতো। ভদ্রতা করে মুখে না না বলতাম, আর মনে মনে বলতাম, খেতে চাই। সব মায়েরাই বাচ্চাদের মন পড়তে পারে। মাসীমাও আমার মন পড়তে পারতেন, " আরে একটু খা" বলে আমার জন্য খাওয়াটুকু সহজ করে দিতেন। কোরবাণী ঈদে অবশ্য আমাদের মন খারাপ থাকতো। চোখের সামনে এত বড় গরুটাকে কেটে ফেলতো, আমরা ছোট ছিলাম, ধর্মের ভাবের চেয়েও মনে ছিল অবোলা প্রাণীর জন্য মায়া, তার উপর গরু হচ্ছে শিব ঠাকুরের বাহন। কোরবাণীর ঈদে ঘরের মধ্যে বসে থাকতাম। তবে দিনাদের বাড়ীতে খাসী কোরবাণী দেয়া হতো। তাই কোরবাণীর ঈদের সকালেও ওদের বাসায় আমাদের দুই ভাই বোনের ডাক পড়তো, আমরা যেতাম, সেমাই খেয়ে চলে আসতাম। দুই একবার দিনাদের বাসা থেকে খাসীর মাংস পাঠিয়েছিল, আমার মা মাংস খেতেননা, কিন্তু খাসীর মাংস অতি চমৎকার রান্না করতেন। আমি খাসীর মাংস সব বাড়ীতে গিয়ে খাইনা, শুধু আমার মা, মেজো মামী আর এক পিসীর রান্না হলেই খাই। যাই হোক, দিনাদের বাসা থেকে পাঠানো মাংস মা রান্না করে দিতেন। কিন্তু মাংস খেতে গিয়ে আমার কেন জানি খাসীটার কথা মনে পড়ে গেছিল, তাই আর খেতে পারিনি। এরপর থেকে দীনাকে বলেছিলাম, মাংস না পাঠাতে। মাংস পাঠাতে না করেছি বলে আমার মেজ ভাই আমার উপর মনঃক্ষুন্ন হয়ে বলেছিল, " খাসীর জন্য মায়া লাগে, আর দিনাদের বাসায় যখন মুরগী খেয়ে আসো, সেই মুরগীর জন্য মায়া লাগেনা"? হা হা হা!! অতি মোক্ষম যুক্তি, কিন্তু দান দিয়ে ফেলেছি, দান তো আর উলটানো যাবেনা, কোরবাণীর ঈদের খাসীর মাংসও আর এলোনা।

ছোটবেলায় রোজার ঈদের সময় আরেকজন মানুষের অপেক্ষায় থাকতাম। উনাকে বছরে একদিন দেখতাম, রোজার ঈদে। আমার ছোট মামার বন্ধু ছিলেন। আমার ছোট মামা ছিলেন সত্যিকারের 'বাদাইম্যা'। তাকে দেখতে ছিল 'তালপাতার সেপাই'য়ের মত, ইয়া ঢ্যাঙা লম্বা, গায়ে শুধু চামড়া ছিল, মাংস ছিলনা, কি বদমেজাজী ছিল, বাপরে বাপ! লেখাপড়াও সমাপ্ত করেনি, তার আগেই বাউন্ডুলে জীবন বেছে নিয়েছিল। ভীষন গুণের ছিল, হাতের কাজ যা জানতো, '৭০ এর নির্বাচনের সময় জোহা সাহেবের জন্য কত নৌকা ছোটমামা একা একা বানিয়েছে। যাই হোক, ছোট মামার বন্ধুরা ছিল সাত আসমানের উপরে বসবাস করা বড়লোক। সেই সাত আসমানের বড়লোকদের একজন ছিলেন 'রশীদ মামা'। আর কেউ না চিনলেও রশীদ মামা বুঝতে পেরেছিল, আমার ছোটমামা টি বাদাইম্যা হলেও বড় বংশের ছেলে, রশীদ মামা এক রোজার ঈদে টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি করে বেহেশতী সেমাই নিয়ে এসে আমার দিদিমাকে সালাম করে দিদিমা'কে 'মা' সম্বোধন করেছিল। সেই থেকে প্রতি বছর রোজার ঈদে এবং কোরবাণীর ঈদে রশীদ মামা বেলা এগারোটার দিকে টিফিন ক্যারিয়ার ভর্তি 'বেহেশতী সেমাই' নিয়ে আসতেন। আমরা সবাই ভাগাভাগি করে খেতাম, আহ! কি স্বাদ, কি গন্ধ, কি সুন্দর রঙের সেমাই ছিল। সারা জীবনেও সেই সেমাই আর কোথাও খাইনি। বেহেশতী সেমাই শুধু বেহেশত থেকেই আসে। রশীদ মামা এখন কোথায় আছেন জানিনা, যার মাধ্যমে রশীদ মামাকে চিনেছিলাম, সেই ছোট মামা অনেক কম বয়সে মারা গেছেন, কিন্তু রশীদ মামা রয়ে গেছেন আমার স্মৃতিতে।

No comments:

Post a Comment