ভদ্রলোকের দিকে এক নজর তাকিয়েই বুঝতে পেরেছিলাম,
ভদ্রলোক মেনোনাইট সম্প্রদায়ের। আজ আমার কাজের স্কেজিউল ছিল বিকেল পাঁচটা থেকে রাত
দশটা পর্যন্ত, শর্ট শিফট। ওয়ালমার্টের অয়্যারলেস ডিপার্টমেন্ট রাত নয়টায় ক্লোজড
হয়, এই ধরণের শর্ট শিফটে আমরা বাকী এক ঘন্টা ইলেকট্রনিকস ডিপার্টমেন্টে বন্ধুদের
সাথে কাটিয়ে বাড়ী চলে আসি।
আজ বিকেল ছয়টার দিকে সেই ভদ্রলোকটি হাতে একখানা পুরনো
ইঙ্ক কার্ট্রিজ নিয়ে আমাদের ডিপার্টমেন্টে এসেছে, সামনে পেয়েছে আমাকে, তাই আমাকেই
জিজ্ঞেস করেছে, ঠিক এই মডেলের ইঙ্ক কার্ট্রিজ আমাদের কাছে আছে কিনা। ইঙ্ক
কার্ট্রিজ হচ্ছে ইলেকট্রনিক্স ডিপার্টমেন্টের জিনিস, আমি ভদ্রলোককে কম্পিউটার
আইলের কাছে নিয়ে কার্ট্রিজ এর শেলফ দেখিয়ে ফিরে এসেছি। মিনিট পনের পর ভদ্রলোক আবার
ঘুরে ফিরে আমার কাছেই এসেছে, হাতে ধরা সেই পুরনো কার্ট্রিজ। ফটো ভর্তি দুটো ভারী
খাম আমার দিকে এগিয়ে দিলো, আর বলল, “নাহ! এই
নাম্বারের ইঙ্ক কার্ট্রিজ পেলামনা, ছবিগুলোর দাম দিয়ে চলে যাই”।
ওয়ালমার্টে প্রতিদিন অ্যামিশ, মেনোনাইট, মর্মন ্সম্প্রদায়ের
লোকজন দেখতে পাওয়া যায়। আগে এদের সাথে কত যে গল্প করতাম। একটু সুযোগ পেলেই ওদের
সাথে দাঁড়িয়ে গল্প জুড়ে দিতাম। কত রকমের মানুষ আমাদের চারপাশে, আমার খুব ভাল লাগে
মানুষের জীবনের গল্প শুনতে। যে সম্প্রদায়গুলোর নাম বললাম, এরা হচ্ছে আমাদের দেশের
গোঁড়া ধর্মীয় সম্প্রদায়ের মত। ওরা আধুনিকতাকে অস্বীকার করে, যান্ত্রিক সভ্যতাকে
পছন্দ করেনা, ওরা নিজেদের তৈরী স্কুলে অষ্টম শ্রেণী পর্যন্ত লেখাপড়া করে, সেই
লেখাপড়াও ধর্মীয় বইয়ের মধ্যে সীমাবদ্ধ, কারো যদি নার্সিং পড়ার ইচ্ছে থাকে, তবে সে
নার্সিং পড়তে যায়। লেখাপড়া এই পর্যন্তই। ওরা অন্য সম্প্রদায়ে বিয়ে করেনা, ওরা জন্ম
নিয়ন্ত্রণে বিশ্বাস করেনা, কৃষিকাজ, পশুপালন, তাঁতী, জেলে, কাঠমিস্ত্রীগিরি করে
ওরা আয় উপার্জন করে। এই সম্প্রদায়ের নারীরা ভীষন পর্দানশীল হয়ে থাকে। তাদের পোশাক
হয় গলা থেকে পায়ের গোঁড়ালী পর্যন্ত ঢাকা দেয়া, মাথার চুল সব সময় খোঁপা করে টুপী
দিয়ে আটকানো, শীত গ্রীষ্ম বারোমাস একই ডিজাইনের পোশাক, আমেরিকান স্টাইলের গেঞ্জী
প্যান্ট ওরা পড়েনা, আমেরিকান মেয়েদের মত ‘সানবাথ’ করেনা, লীভ টুগেদার করেনা, ডিভোর্সও করেনা। টাকা পয়সা বুকে নিয়ে বসে
থাকেনা, টাকা পয়সা যা কিছু আছে, সব নাকি চার্চে দান করে দেয়।
অ্যামিশ
অথবা মেনোনাইটস সম্প্রদায়ের মানুষগুলো আমেরিকান ইন্ডিয়ানদের থেকে সম্পূর্ণ আলাদা।
ওরা সকলেই ইমিগ্র্যান্ট। সুইৎজারল্যান্ড, জার্মানীতে ‘মেনোনাইট’ নামের বেশ বড়
গোষ্ঠীর সম্প্রদায় ছিল, যারা চার্চের কঠিন নিয়মে পরিশীলিত, সুশৃংখল, কঠোর
নিয়ন্ত্রিত জীবন যাপনে অভ্যস্ত ছিল। ষোড়শ শতাব্দীতে মেনোনাইট
সম্প্রদায়ের সদস্যগণ ঈশ্বরের বাণী প্রচারে আমেরিকায় আসে। আমেরিকার বিভিন্ন স্টেটে
অ্যামিশ, মেনোনাইটরা দলবদ্ধ বা গোষ্ঠীবদ্ধ হয়ে থাকে।
ওরা আধুনিক জগতের কোন সংবাদ রাখে না। ঝলমলে আমেরিকায় বাস করে ওরা ইলেকট্রিসিটি
ব্যবহার করেনা,
টিভি দেখেনা, রেডিও শোনেনা, টেলিফোনও
ব্যবহার করেনা। মুভী দেখার প্রশ্নই উঠে
না। কারণ, ওদের বিশ্বাস, টিভি দেখলে বা রেডিও শুনলে
বাচ্চারা শুধু নোংরামী শিখবে। কারো
বাড়ীতেই বৈদ্যুতিক আলো জ্বলেনা, ফ্যান, এসি, ফ্রীজ
কিছুই চলেনা। ওদের বিশ্বাস ইলেকট্রিসিটির
ব্যবহারে প্রকৃতির আলো বাতাসে ভারসাম্য নষ্ট হয়ে
যাচ্ছে। বাড়ীতে
ওয়াটার
সাপ্লাইয়ের পানির বদলে ওরা ডিপ টিউব ওয়েলের
পানি ব্যবহার করে। এখনও সারা বিশ্বে মিলিয়নের
উপর মেনোনাইট সম্প্রদায়ের লোকজন আছে।
ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, “তুমি কি মর্মন?”
-না, আমি মেনোনাইট।
-আচ্ছা, আমি তো জানতাম অ্যামিশ, মেনোনাইটরা ফটো
তুলেনা, কিন্তু তুমি তো দেখছি দুই প্যাকেট ছবি নিয়ে এসেছো চেক আউট করতে।
আমার প্রশ্নে ভদ্রলোক একটু অস্বস্তিতে পড়ে যায়, বলে,
তুমি ঠিকই বলেছো, তবে আমরা মানুষের ছবি তুলিনা, প্রকৃতির ছবি তুলি।
জানা উত্তর জেনেও আবার জিজ্ঞেস করি, “আচ্ছা, তোমরা যে মানুষের ছবি তোলনা, তোমাদের নানা-দাদা, নানী –দাদীরা দেখতে কে কেমন ছিল কি করে জানবে?
-ঈশ্বরের সৃষ্টি মানুষ তো সবাই একরকম হয় দেখতে।
-তাতো বুঝলাম, কিন্তু সবাই এক বললেই কি সবাই এক?
-না বাইবেলে আছে, মানুষের ছবি রাখা ঠিক না।
-তাহলে তো তোমার ভবিষ্যত বংশধরেরা জানবেই না তুমি
দেখতে কেমন ছিলে!
-তা জানবেনা, আমাদের বংশে কেউ ফটো তুলেনা, পুরো
বাড়ীতে আমার মায়ের একটি ছবি ছিল, আমার বাবা তুলেছে, সেই ছবিটা বোধ হয় হারিয়ে
গিয়েছে, নাহয় আমার বউ কোথাও রেখে দিয়েছে।
-তোমার মায়ের ছবি তুলেছিল তোমার বাবা? বিশ্বাস করতে
পারছিনা।
-আমার বাবা তো আগে মেনোনাইট ছিলেননা। উনি
মেনোনাইটদের চার্চে যেতেননা।
-বাবারে! তাহলে তোমার বাবা তোমার মা’কে কিভাবে বিয়ে করলো? তোমরা তো নিজের সম্প্রদায়ের পাত্র পাত্রী না পেলে
ছেলেমেয়ের বিয়ে দাওনা, তাহলে তোমার মা কি করে তোমার বাবাকে বিয়ে করলো?
-শোন, আমার দাদা-দাদী মেনোনাইট ছিলেননা, কিন্তু
আর্লি থার্টিজের দিকে আমেরিকায় অর্থনৈতিক মন্দাভাব দেখা দেয়, তুমি নিশ্চয়ই সেটা
জানো, তখন আমার দাদা-দাদীর জীবনেও খুব অর্থকষ্ট দেখা দেয়, চারদিকে শুধু গরীব মানুষ।
দাদা তখন মেনোনাইট চার্চে যাওয়া শুরু করে, মেনোনাইট চার্চে সব সময় বলা হতো বাইবেলের
পথে নিজেকে চালাতে, যীশুর পায়ে নিজেকে সমর্পণ করে দিতে, তাহলেই শান্তি। এরপর আমার
দাদা-দাদী চার্চের কাজ নিয়ে ক্যালিফোর্ণিয়াতে চলে যায়, ওখানে গিয়ে আমার বাবাকেও
মেনোনাইট চার্চে নিয়ে যাওয়া হয়, চার্চের হয়ে কাজ করবে। বাবার বয়স ছিল ষোল বা সতের
বছর, বাবা মায়ের কথামত বেশ কিছুদিন চার্চে কাজ করে, কিন্তু একসময় কাজ ছেড়ে ওখান
থেকে চলে আসে। তার কাছে চার্চের নিয়ম ভালো লাগতোনা।
আমার মায়ের বাবা মাও গরীব ছিল, তারা ছিল মেনোনাইট,
পুরো পরিবার মেনোনাইট চার্চ-এর হয়ে কাজ করতো, সকলকে বুঝাতো, ‘সকলে বাইবেলে বর্ণিত পথে এসো, সব বালা মুসিবত দূর হয়ে যাবে”। তখন অনেক গরীব মানুষ মেনোনাইট ধর্মে দীক্ষা নেয়। আমার নানা নানীও এভাবেই
মেনোনাইট হয়েছিলেন। আমার বাবার বয়স যখন বাইশ, আমার মায়ের সাথে দেখা হয়। দুজনে মন
দেয়া নেয়া হয়, এরপর তারা বিয়ে করেন।
-কিন্তু তোমরা তো নিজ সম্প্রদায়ের বাইরে বিয়ে করোনা,
তোমার বাবা তো মেনোনাইট ছিলেননা, তাহলে তোমার মায়ের সাথে বিয়ে হলো কি করে?
-না না, বাবা পরে মেনোনাইট হয়েছিল।
-তোমার মা’কে বিয়ে করার
জন্য মেনোনাইট হয়েছিল?
-হ্যাঁ, মা’কে বিয়ে করার
জন্য। এরপর বাবা আর্মীতে চলে যায়, চার বছর কাজ করে আবার ক্যালিফোর্ণিয়া চলে আসে।
এমন সময় তার পকেটে থাকা ফোন বেজে উঠে। সে হ্যালো
হ্যালো করে, এবং কারো সাথে কথা বলে।
-আমি বলি, আচ্ছা, তোমাদের তো ফোন ব্যবহার করাও
নিষিদ্ধ, টিভি দেখা নিষিদ্ধ এবং কম্পিউটার চালানো নিষিদ্ধ, অথচ তুমি তো দেখি সব
কটা নিষিদ্ধ কাজই করে যাচ্ছো, হা হা হা!
-হ্যাঁ, তুমি ঠিকই বলেছো, তবে প্রয়োজনের সময় তো ফোন
লাগে। আমার স্ত্রী ফোন করেছে।
-তাহলে তুমি মেনে নিচ্ছ, প্রয়োজন যখন বড় হয়, তখন
ধর্মের বাণী অকেজো হয়ে যায়?
আবার ভদ্রলোক থতমত খেলেন, বললেন, “আমরা ফোন খুব জরুরী প্রয়োজনে ব্যবহার করি, আর কম্পিউটারও ব্যবহার করি
প্রয়োজনে, সব কিছুতেই ‘ফিল্টার’এর
ব্যবস্থা রাখি। ইন্টারনেটের ব্যবহার খুব সীমিত। যদিও টিভি দেখার নিয়ম নেই, তারপরেও
কম্পিউটার চালানো মানেই টিভি দেখার মত ব্যাপার। অবশ্য প্রয়োজন ছাড়া তো কিছু করিনা।
-টিভি নিউজ দেখা কি প্রয়োজনের মধ্যে পড়েনা?
ভদ্রলোক হেসে ফেললেন। বললেন, ‘বাইবেলে আছে, খুব সাধারণ জীবন যাপন করার কথা। টিভি না দেখেও তো জীবন চলে
যাচ্ছে।
-আচ্ছা, তোমরা ছেলেমেয়েকে পাবলিক স্কুলে পাঠাওনা
কেন?
-আমাদের নিজেদের স্কুল আছে তো।
-সেখানে ওরা কি শেখে? এ বি সি ডি শিখে তারপর কি
বাইবেল শিখে?
-বাইবেলের বাণী তো অবশ্যই শেখে, নানা বিষয়েই শিক্ষা
দেয়া হয়, তবে তার সবই বাইবেল আর যীশু সম্পর্কিত।
-কলেজে পাঠাওনা কেন?
-ক্লাস এইটের বেশী পড়ার দরকার নেই তো।
-আচ্ছা, তোমরা তো কেউই ক্লাস এইটের বেশী পড়াশুনা
করোনা, কাজেই বাইরে ঘরে তো চাকুরী পাওয়ার প্রশ্নই আসেনা। তোমাদের সোর্স অফ ইনকাম
কি?
-কৃষি কাজ করি, এই যেমন আমি নৌকা বানাই, এখানে
অনেকেই বোটিং করে, সেইসব বোট বানাই।
-তোমাদের মধ্যে অনেক ধনী আছেন, নৌকা বানিয়ে, কৃষিকাজ
করে তারা কীভাবে ধনী হয়? এই যেমন ধরো, প্রেসিডেন্ট ইলেকশানে দাঁড়িয়েছিলেন, মিট
রমনি, মর্মন সম্প্রদায়ের লোক, বিশাল ধনীলোক উনি, উনি তো লেখাপড়া শিখেছিলেন, কীভাবে
শিখলেন লেখা পড়া?
-আমরা ধনী নই, তবে কিছু কিছু ধনী মানুষ তো অবশ্যই আছে।
-তোমার কয় ছেলেমেয়ে?
-দুই মেয়ে দুই ছেলে।
-তারা সবাই ক্লাস এইট পাস?
-হ্যাঁ, ক্লাস এইট পাস, না, না, ক্লাস টেন পর্যন্ত
পড়েছে, আমার ছোট মেয়ে এখন স্বামী, সন্তান নিয়ে রাশিয়াতে আছে।
-রাশিয়াতে কি মেনোনাইট চার্চে কাজ করে?
-হ্যাঁ, চার্চে কাজ করে। বাকী ছেলেমেয়েরা সকলেই
হাতের কাজ করে।
ভদ্রলোককে জিজ্ঞেস করলাম, “আচ্ছা, তোমরা তো আধুনিক সভ্যতাকে পছন্দ করোনা, তোমরা যান্ত্রিক, বৈদ্যুতিক
যে কোন উন্নতিকে বাইবেলে বর্ণিত ধর্মকথার পরিপন্থী মনে করো। তা ঠিক আছে, কিন্তু
তোমরা যখন বাইরের জগতে আসো, এই যেমন ধরো তুমি আজ এখানে এসেছো, আমাকে দেখছো, আমার
মত আরও প্রচুর মানুষকে দেখছো, আমরা কেউই মেনোনাইট নই, আমরা সকলেই টিভি দেখি,
সিনেমায় যাই, হোটেল রেস্টুরেন্টে খাই, কলেজ ইউনিভার্সিটিতে পড়ি, চাকরী বাকরী করি,
সবকিছুই তোমাদের বিশ্বাসের পরিপন্থী, আমাদের দেখে তোমাদের প্রথম অনুভূতিটা কি হয়? আমাদেরকে
কি শত্রু মনে হয়, ডেভিল মনে হয়?
-উফ! তুমি পারো বটে, একদিন আসো আমাদের চার্চে, আরো
অনেকের সাথে আলাপ হবে, এমনিতে আমি তোমার
এই প্রশ্নের উত্তর দিতে পারবোনা, কারণ আমি কাউকে জাজ করতে পারবোনা।
-কাউকে জাজ করতে বলিনি, আচ্ছা, সবার কথা বলতে হবেনা,
আমাকেই জাজ করো, আমি সত্যি কথাটুকু জানতে চাইছি। আমার খুব ইচ্ছে করে প্রতিটি
মানুষের চিন্তা-চেতনা সম্পর্কে কিছু জানি, সবার অনুভূতিটুকু জানি, তেমনই করেই আমার
এখন জানতে ইচ্ছে করছে, আমি তো সম্পূর্ণ অন্য জগতের মানুষ, আমার সাথে এতক্ষন কথা
বলে তোমার কি মনে হচ্ছে?
-ধরো, তোমার মত মানুষদেরকে প্রথম দেখায় সাধারণ ভালো
মানুষ মনে হয়, আমার বিশ্বাসের সাথে তোমার বিশ্বাসে মিল নেই, তারপরেও তুমি ভালো,
তোমার পোশাক পরিচ্ছদ, কথাবার্তা বলার ভঙ্গী অনেক ভাল, কিন্তু সত্যি কথা বলি, বাইরে
বেরিয়ে কিছু কিছু ছেলেমেয়ে দেখি, ভালো লাগেনা।
-তাহলে এটা তো মানবে, একেবারে ধর্মীয় কঠিন অনুশাসনে
না থেকেও আধুনিক ধ্যানধারণায় মেনে চলাফেরা করেও ইচ্ছে করলে ভালো মানুষ হওয়া যায়।
-কে জানে, আমরা বাইবেলে বর্ণিত জীবন মেনে চলতে
ভালোবাসি।
-তোমার নামটিই জানা হলোনা।
-আমার নাম ডোয়াইট পিস্টার, বয়স ৬৩। পিস্টার কথাটি
মনে থাকবে? ইস্টার তো জানো, ইস্টার না বলে বলবে পিস্টার।
-আচ্ছা মিঃ পিস্টার, এত ধর্ম মেনে চলো, তোমাদের
মধ্যে হিংসা-দ্বেষ, ঝগড়া বিবাদ হয়? তোমরা ঝগড়া করো? মানে, তোমাদের মধ্যে কি কখনও
ক্ষমতার দ্বন্দ্ব হয়?
-আমরা স্বামী-স্ত্রীতে ঝগড়া করিনা, বলেই আবার একটু
থামলো, বলল, ঝগড়া করিনা বলা পুরোপুরি ঠিক হলোনা, মাঝে মাঝে ছোটখাটো বিষয়ে হয়তো
মতবিরোধ হয়, কিন্তু সারাদিনে যাই হোক না কেন, রাতে বিছানায় ঘুমুতে যাওয়ার আগে আমরা
প্রার্থণায় বসি, প্রার্থণা শেষে দুজনেই দিনের ঝগড়া মিটমাট করে ফেলি। দুজনেই
নিজেদের আচরণের জন্য পরস্পর দুঃখপ্রকাশ করি। হাসিমুখে বিছানায় যাই।
-বাহ! ঝগড়া করে আবার ঘুমুতে যাওয়ার আগে মিটমাট করে
ফেলো, কীভাবে পারো শত্রুতা ভুলে যেতে? আমি তো ঝগড়াটে স্বামীর সাথে সাত দিন কথাই
বলবোনা।
-এটা করি কারণ আমি তো জানিনা, আমার জীবনে আগামী সকাল
আসবে কিনা। আমরা কেউই জানিনা আজ রাত পেরিয়ে কালকের ভোর দেখবো কিনা, তাই আজকের
দিনের খারাপ স্মৃতি মনে নিয়ে ঘুমাতে যাওয়া ঠিক নয়। এইজন্যই বিছানায় যাওয়ার আগে মন
পরিষ্কার করে নিতে হয়।
-সত্যি করে বলি, এতক্ষণে একটা ভীষন দামী কথা শুনলাম,
পুরো দার্শনিকের কথা, মনে থাকলে আমি আজ থেকেই তা নিজের জীবনে চালু করবো, শুধু
স্বামী কেন, পুত্র-কন্যা, বন্ধু বান্ধবের কাছেও ক্ষমা চেয়ে বিছানায় যাওয়া উচিত, কে
জানে, আমার জীবনে কালকের ভোর নাও আসতে পারে!