Tuesday, June 25, 2013

" কাঁদে, অভিমানী মন চাঁদের আলোয় কাঁদে!!!"

কাঁদে, অভিমানী মন চাঁদের আলোয় কাঁদে!!
পূর্ণিমা, অমাবস্যা, জোয়ার, ভাটা জাতীয় শব্দগুলো শুনেছি খুব ছোটবেলাতেই,  তখনও ভূগোল বই পড়ার বয়স হয়নি। শব্দগুলো ছিল পরিবারের গুরুস্থানীয়দের নিত্যদিনের প্রয়োজনীয় ব্যবহারিক ভাষার অন্তর্গত।  ছোটরা জানতাম, পূর্ণিমা বা অমাবস্যা মানেই বড়দের কোমড়ে ব্যথা নাহলে হাঁটুতে ব্যথা। কারণ যখনই শুনতাম, দিদিমা, ঠাকুমা  সম্পর্কীয় কারো  কোমড় ব্যথা বেড়েছে, অথবা হাঁটুর যন্ত্রণায় সোজা হয়ে হাঁটতে পারছেনা, তখনই  ডাক্তারের কাছে যাওয়ার আগে  দাদুর কাছে আসতো, আমার দাদু 'লোকনাথ পঞ্জিকা' খুলে দেখে নিত তিথি নক্ষত্রের হিসেব।  কাছাকাছি সময়ে পূর্ণিমা বা অমাবস্যা তিথি থাকলে দাদু বাতের ব্যথায় কাতর মানুষটিকে সেটা জানিয়ে দিতেন। পূর্ণিমা বা অমাবস্যা তিথিতে শরীর ব্যথা করবে, এটা তো জানা বিষয়, তাই কেউই আর ডাক্তারের কাছে যাওয়ার তাগিদ অনুভব করতোনা, ব্যথা সয়ে নিত।

আরও বড় হয়ে  বুঝেছি পূর্ণিমা মানে আলোকিত রাত, কোথাও অন্ধকার থাকেনা, পূর্ণিমা রাতে ভূত-পেত্নী, চোর  আসতে পারেনা। ওরা আসে অমাবস্যা রাতে, তখন চারদিক ঘুটঘুট্টি অন্ধকার থাকে, ওদের আসতে সুবিধা হয়। পূর্ণিমা রাতে চাঁদের আলোর যে কী অপার মহিমা, সেটা বুঝতে বুঝতে রীতিমত সাবালিকা হয়ে উঠেছি। জোৎস্না নিয়ে কবিতা লেখা যায়, জোৎস্না নিয়ে গান লেখা যায়, সাবালিকা না হলে তো তা জানতেই পারতাম না। তখনই জেনেছি পূর্ণিমাতে বুড়োদের কোমড় ব্যথা, হাঁটুর ব্যথা হয়, আর তরুণ-তরুণীদের হয় হৃদয়ে ব্যথা।

চাঁদের আলোকেই জ্যোৎস্না বলে, একথা আমাদের ছোট্ট মিনিও জানে, কিন্তু মিনি জানেনা জ্যোৎস্না খাওয়া যায়, জ্যোৎস্না গেয়ে মাথা যায়, জ্যোৎস্নায় স্নান করা যায়। মিনি কেন, আমরা কেউই জানতামনা, জ্যোৎস্নার এত গুণের কথা জানতে পেরেছি তো এই সেদিন, হুমায়ুন আহমেদের কাছ থেকে। চাঁদ, পূর্ণিমা, জোছনা নিয়ে কতই কবিতা, গান রচিত হয়েছে, কিন্তু জোছনা খাওয়া যায়, জোছনায় নাওয়া যায়, এমন কথা হুমায়ুন আহমেদ ছাড়া আর কেউ তেমনভাবে উল্লেখ করেনি।

হুমায়ুন আহমেদের সাথে আমার উত্তম কুমারের সূত্র ধরে আমারও একটু আধটু পরিচয় হয়েছিল। আমি এমনিতেই কথা বেশী বলি, আর সামনে যদি হুমায়ুন আহমেদকে দেখি, কথা তো আরেকটু বেশী বলবোই। নানা কথার ফাঁকে এটাও জিজ্ঞেস করেছিলাম, জোছনা কী আসলেই খাওয়া যায় নাকি! তিনি বলেছিলেন, অবশ্যই খাওয়া যায়। জোছনার সাদা আলো গায়ে মাখলে কী একটু ফরসা হওয়া যায়---প্রশ্নটা করতে গিয়েও আর করিনি। কারণ তেমনটি হলে হুমায়ুন আহমেদ নিশ্চয়ই ততদিনে দুধবরণ হয়ে যেতেন।

আমার খুব সাধ হতো, কোন একটি পূর্ণিমা রাতে নদী বা সমুদ্রের তীরে বসে থাকতে, একা নয়, দোকা। ব্যাপারটি নিয়ে অনেক ভেবেছি, কিন্তু দোকা'র অভাবে কোনদিন পূর্ণিমা রাতে ফুলডোরে বাঁধা ঝুলনাতে দুলিনি, নদীর বুকে ময়ুরপংক্ষী নাও অথবা কোন বজরাতেও চড়িনি, সমুদ্রের তীরে যাওয়ার সুযোগ ঘটেনি। অথচ নদীর তীরে বসে পূর্ণিমার অপরূপ দৃশ্য দেখার খুব সাধ ছিল।

নদীর বুকে ভরা পূর্ণিমা দেখার সাধ পূরণ হয়েছিল ২০০১ সালের মার্চ মাসে। আমি, ছোটমাসী, বোন টুম্পা, মেজ মামা (টুম্পার বাবা), মাসীর মেয়ে মিত্রা, ছেলে অনিন্দ্য, আর আমার মেয়ে মিশা ও এই ছোট্ট মিথীলা---এই ক'জন মিলে যাচ্ছিলাম ইন্ডিয়া ট্যুরে। নাইট কোচে উঠেছি, জানতাম না সেদিন কোন তিথি ছিল, দাদু পঞ্জিকা দেখে যাত্রার জন্য শুভ দিন ঠিক করে দিয়েছে, আমরা নিশ্চিন্তমনে  যাত্রা করেছি। আমাদের নাইট কোচ একসময় আরিচা ফেরীঘাটে পৌঁছায় এবং চারদিকের হল্লা-গোল্লার ভেতর দিয়েই কোন ফাঁকে যেন ফেরীতে উঠে যায়। মিথীলাকে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, মাত্র দেড় বছর বয়স ও্‌র, তার উপর গায়ে প্রচন্ড জ্বর,  কাজেই ওকে সামলাতে গিয়ে খেয়াল করিনি কখন ফেরী ঘাট ছেড়ে নদীতে চলে এসেছে। বাসের ভেতরেই বসেছিলাম, আমার মামা বাবু শুধু নিয়ম মেনে বাস থেকে নেমে গিয়েছিল। মিথীলা ঘুমিয়ে পড়তেই আমি মাথাটা বাসের জানালায় ঠেকিয়ে বাইরে তাকিয়েছি। পদ্মার বিশাল চওড়া বিস্তৃতি, চারদিকে কূল-কিনারা দেখা যায়না, শরীরে একটা ঝাঁকুনী লাগলো, চারদিক এত ফর্সা কেন? তবে কী আজ পূর্ণিমা? মাসীকে জিজ্ঞেস করলাম, " মাসী, আজ কী পূর্ণিমা?" মাসীও আমার মতই বেখেয়ালী মানুষ, আমার চেয়েও বড় বাদাইম্যা, সংসারের বন্ধনে বেশীক্ষণ আটকে থাকতে চায় না, বেড়াতে খুব পছন্দ করে। মাসী বলল, " মনে হয় পূর্ণিমা।" বললাম, " তোমাদের সুনামগঞ্জে নাকি পূর্ণিমার রাতে মিউনিসিপ্যালিটি থেকে ইলেকট্রিসিটি অফ করে দেয়া হয়?" মাসি বলে, " হ্যাঁ, পৌরপিতার শখ। হাছন রাজার পুতি তো, তাই তার মধ্যেও কবিভাব আছে। সুনামগঞ্জ শহরের সবাইকে জোছনা খাওয়ায়"। আমি তো অভিভূত হয়ে গেলাম, মনে হচ্ছিল, ঢাকা শহর ছেড়ে সুনামগঞ্জেই চলে যাই। ইদানিং কলামিস্ট পীর হাবীবুর রহমান সুযোগ পেলেই তাঁর সকল লেখাতেই সুনামগঞ্জকে " প্রেমের শহর, জল-জোছনার শহর' সহ আরও কত বিশেষণে বিশেষায়িত করেন, তার কোন মাপ-জোখ নেই।

বাসের ভেতর সবাই চুপ, মাঝরাত বলেই বোধ হয় ফেরীতেও তেমন কোন সাড়া শব্দ নেই, শুধু ফেরীর ভটভটানি আছে, নদীর বুকে জ্যোৎস্না দেখতে চেয়েছিলাম, বিশাল পদ্মার বুকে বসে জোছনা দেখছি, প্রথমে মাথার ভেতর কেমন এক ধরনের শূণ্যতা টের পেতে শুরু করেছি, তারপর হৃদয়ে, সেই শূণ্যতা সারা দেহে ছড়িয়ে গেল, আমার মনে হলো, আমি জীবনে যত পেয়েছি, আমার অতি আপন জনেরা তার কিছুই পায়নি, দুই চোখ ছাপিয়ে জল এলো, আমার মা, বাবা, ভাই, পাশে বসা মাসী, মামা, বোন টুম্পা, মিত্রা, সবার জন্য ব্যথায় বুক মুচড়ে উঠলো। কী যে এক অব্যক্ত  হাহাকারে সমস্ত চেতনা লোপ পাওয়ার উপক্রম হলো, তা এখন আর লিখে প্রকাশ করতে পারছিনা। মাথা জানালার কাঁচে ঠেকিয়ে নীরবে কেঁদে যাচ্ছিলাম। বার বার মনে হচ্ছিল, ভরা পূর্ণিমায় আর বাইরে বের হবো না, প্রকৃতির এমন রূপ সহ্য করার ক্ষমতা আমার নেই।


তিন বছর আগে ফ্লোরিডা গেছিলাম, আমার দোকা'কে সাথে নিয়ে ভরা পূর্ণিমার রাতে সমুদ্রতীরে বালির উঁচু ঢিবির উপর বসেছি, ইচ্ছে ছিল দু'জনে মিলে সমুদ্রের বুকে পূর্ণিমা দেখার। আমার মধ্যে 'চন্দ্রগ্রস্ত হওয়ার পূর্ণ লক্ষ্মণ থাকলেও আমার দোকা'র মধ্যে তার ছিঁটে ফোঁটাও নেই। তাই বেঁচে গেছি সে যাত্রা, নাহলে এমনও হতে পারতো, দোকার হাত ধরে নেমে গেছি অথৈ সমুদ্রে। পরদিন বাংলাদেশের পত্রিকায় ছবিসহ খবর বের হতো, 'চন্দ্রগ্রস্ত যুগলের সমুদ্র সমাধি'। তবে এটুকু বলতে পারি, বালির ঢিবির উপর বসে সেদিনও মনটা কেমন খারাপ হয়ে গেছিল, কী যেন এক ধরণের সবা হারাণোর বেদনায় মনটা ছেয়ে গেছিল। এরপর আর কখনও পূর্ণিমা দেখার সাধ হয়নি।

গতকাল ছিল শবেবরাত, কিন্তু আমার মনেই ছিল না, রাতটি ছিল ভরা পূর্ণিমার রাত। এক দাদার বাসায় বেড়াতে গেছিলাম, ফিরতে ফিরতে রাত হয়ে গেছিল, ঐ বাসাতেই হাসি ঠাট্টার এক পর্যায়ে আমার উত্তম আমাকে বলেছিল, আমার লেখার মান অনেক উন্নত করতে হবে, কিছু কিছু লেখা ভালই হয়, বেশীর ভাগ লেখাই বেশ কাঁচা মনে হয় তার কাছে। আমি এমন সমালোচনাই শুনতে চাই, যাতে করে আমি আরও ভাল লিখতে পারি। কিন্তু স্বামীর মুখে সমালোচনা শুনতে কোন স্ত্রীরই ভাল লাগার কথা নয়। হাসি-খুশী মনটা হঠাৎ করে ঠান্ডা হয়ে গেল। রাত একটার দিকে বাড়ী রওণা হয়েছি।  আমি খুব কথা বলে অভ্যস্ত হলেও মন খারাপ থাকলে চুপ করে থাকি। মন খারাপ হলে চুপ থাকি, কারো উপর রেগে গেলে চুপ থাকি, দেশের কথা মনে হলে চুপ থাকি, অর্থাৎ আমিও মাঝে মাঝে চুপ থাকতে জানি। গাড়ীতে উঠে আমি চোখ বুজে ছিলাম, ভাবছিলাম যদি একটুক্ষণের জন্য 'ন্যাপ' নিতে পারি। তন্দ্রা এসেছে কী আসেনি জানিনা, চোখ মেলে জানালা দিয়ে তাকাতেই বুকটার মধ্যে ছ্যাঁত করে উঠলো। বাইরে নিঃশব্দ চরাচর, বড় বড় গাছের সারি, উপরে ঝকঝকে আকাশ, তার মধ্যে গোল চাঁদ, বুঝলাম ভরা পূর্ণিমা। ভেতরটা হু হু করে কেঁদে উঠলো, এই প্রথম কান্নাকে সামলে নিলাম। মা'কে মনে পড়ে গেলো, আমার মা। গত বছর এই দিনে পৃথিবীর বুকে ছিলেন, আমার কাছাকাছি ছিলেন, আমাদের সকলের আয়ত্বের ভেতর ছিলেন, আজ মা কোথায়? কেউ কী জানে মরণের পরে মানুষ কোথায় যায়? আমার তো চোখ খুলে তাকানোর কথা ছিলনা, গাড়ীতে উঠলে ইদানিং আমি ঘুমিয়ে পড়ি, কাল কেন ঘুম আসেনি? পূর্ণিমার আকর্ষণে আমার চোখের পাতা খুলে গেছে, বাকী পথ আমি চোখ বুজে চলে এসেছি। ওভাবে তাকিয়ে থাকলে আমি পাগল হয়ে যেতাম।


আজ অনেক বেলায় ঘুম ভেঙ্গেছে, মাথা ভারী, মন ভারী, কম্পিউটারে বসেছি একটি গল্প শেষ করবো বলে, একটা শব্দও টাইপ করা হলোনা, একটা স্ট্যাটাস দিলাম,

"আমি প্রতিটি কষ্ট, প্রতিটি দুঃখ, প্রতিটি যন্ত্রণা, প্রতিটি কান্না, প্রতিটি ব্যর্থতা, প্রতিটি হাসি, প্রতিটি আনন্দ, প্রতিটি সাফল্য, প্রতিটি সুখময় মুহূর্তে একজনকে খুঁজে ফিরি, নিরন্তর এই খুঁজে ফেরা। এই দেশে কত কত ধার্মিক, কত শত 'অলৌকিক ক্ষমতার অধিকারী' বলে দাবীদার মানুষ আছেন, কেউ কী পারেন তাঁর সঠিক খোঁজ এনে দিতে! কেউ কী পারেন তাঁর সাথে আমার যোগাযোগ ঘটিয়ে দিতে! নাহলে কী লাভ এইসব তাত্বিক কথা শুনে!"

খুব কাঁদলাম, যে কান্না আমি কাল রাতে কাঁদতে পারিনি, সেই কান্নাই দ্বিগুণ হয়ে আমার কাছে ফিরে এসেছিল। মায়ের মন বলে কথা, আটলান্টায় ছেলের বাড়ীতে থেকেই আমার পিসীর বোধ হয় আমার কথা মনে পড়ে গেছিল। ফোন করেছে, বলেছি, কাজে যাব। পিসী বলে, এখনও তো সময় হয়নি, তোর গলার আওয়াজ এমন শুনাচ্ছে কেন? বললাম, ঘুম থেকে উঠলে গলা ভারী হয়ে থাকে, তাছাড়া আমার এখানে আর ভাল লাগেনা, খুব কষ্ট, আমি একা থাকতেই পারিনা। পিসীর মন খারাপ হয়ে গেল, পিসী তো আর জানতোনা, কাল যে এমন পাগলা পূর্ণিমা গেছে, জানলে আমার আগে আমার পিসীই কেঁদে আকুল হয়ে যেত তাঁর তরুণী মেয়েটির কথা ভেবে। পাঁচ বছর আগেই তাঁর একমাত্র কন্যাটি অনার্স পরীক্ষা কমপ্লীট করার আগেই মাত্র ২৩ বছর বয়সে হার্ট ফেল করে দুম করে মরে গেল! এমনও হয়? এমন হওয়া উচিত? এই কী ঈশ্বরের উদারতা? তাহলে দরকার নেই আমার এই উদারতায়! আবার কাঁদলাম, পিসীকে বুঝতে দিলামনা। 

কাজে গেছি, লাঞ্চ ব্রেকে বাড়ী এসেছি, একটু রান্না করে আবার ফিরে গেছি। টি-ব্রেক রুমে ঢুকেছি হাতের ব্যাগ রাখতে, ওপাশে কয়েকজন বসে গল্প করছিল। যারা গল্প করছিল, তাদের মধ্যে জুয়েলারী ডিপার্টমেন্টের ক্যাথী আমার খুব প্রিয় এক নারী, আরও তিন নারীও আমাকে পছন্দ করে, একমাত্র পুরুষ এসোসিয়েট টাকওয়ালা জিমিকে দেখলাম। কানে এলো, ওরা বলাবলি করছে চাঁদের সাইজ নিয়ে। একজন বলছে, সে বাড়ী ফেরার পথে দেখেছে, হলদে রঙের বিশাল বড় চাঁদ, বাড়ী পৌঁছাতে পৌঁছাতে সেই হলদে রঙ বদলে সাদা হয়ে গেছে, সাইজও একটু ছোট হয়ে গেছে। বুঝলাম, পূর্ণিমার চাঁদকে নিয়ে কথা বলছে। আমার হাতে সময় ছিলনা, তারপরেও ওদের সবাইকে ঊদ্দেশ্য করেই জিজ্ঞেস করলাম, 
" আচ্ছা, ফুলমুন নিয়ে কী তোমাদের মধ্যে , মানে, আমেরিকানদের মধ্যে কোন ধারণা প্রচলিত আছে?"
"কী রকম?
'এই ধরো, ফুলমুনের রাতে কী করো? আমাদের দেশে ফুলমুনের রাতে আমরা খোলা মাঠে বসে জোছনায় স্নান করি, জোছন আগায়ে মাখি, বনের ভেতর জোছনার আলোয় হাঁটি, নদীর তীরে, সমুদ্রের তীরে দাঁড়িয়ে জোছনা দেখি"
" আমরা এত কিছু করিনা, তবে ফুলমুনের রাতে আমরা বাইরে বারবিকিউ করি, চেয়ার পেতে বসে থাকি"।
" তোমরা কী কখনও কেঁদেছো? মানে, কান্না পায়?"
" নাহ, কাঁদিনি, তবে অনেকেই ক্রেজী আচরণ করে"
জিমি বললো, ফুলমুনের রাতে অনেকেই উল্টাপাল্ট আকাজ করে। চাঁদের সাথে পৃথিবীর সম্পর্ক আছে, ফুলমুনের প্রভাবে মানুষের ভেতরে এক ধরনের পরিবর্তণ আসে, কাঁদে, অনেকেই কাঁদে, পুলিশের কাছে 'ফুলমুন ক্রিমিনাল'দের নামে  আলাদা খাতা আছে। পুলিশদের জিজ্ঞেস করলে এমন সব কাহিনী বলবে, হাঁ হয়ে যেতে হয়।

বললাম, তার মানে তোমরাও মানো, ফুলমুনের প্রভাব?
" ওহ! ইয়েস, বিশেষ করে অ্যাস্ট্রোলোজাররা চাঁদ সূর্য্যের হিসেব রাখে, তাছাড়া এখনও আমাদের মধ্যে অনেক গুরুস্থানীয় যারা আছেন, তারা তো কত রকমের বিধি নিষেধ মেনে চলে, ফুলমুনের সময় ঘর থেকে বের হয়না, কেউ কেউ বিছানা থেকেই নামে না, এমন অনেক কুসংস্কার চালু আছে। অবশ্য কুসংস্কারই বা বলি কী করে? এভাবেই তো যুগ যুগ ধরে একটি বিশ্বাস চলে এসেছে, নিশ্চয়ই এর মধ্যে অনেক সত্যতা আছে।

আমার কাজে ফেরার সময় হয়ে গেছে, আমার সহকর্মী টেরী এসেছে, টেরীকে সবাই ক্রেজী লেডী হিসেবে জানে, ওর কাজ কারবার দেখলে না হেসে থাকা যায়না। টেরীকে জিজ্ঞেস করলাম, " টেরী, ফুলমুন সম্পর্কে তোমার কী ধারণা?"
টেরী বলে, " ফুলমুনের সময় কোন না কোন মেয়ে গর্ভধারণ করবে, এটা আমাদের মা নানীরা বলে"।
টেরী এমন উত্তর দিবে, এর মধ্যে কোন সন্দেহ নেই। বললাম, ফুলমুনের সময় তুমি কী করো?
-বাইরে বসে থাকি, বারবিকিউ করি, ড্রিংক করি!
-কখনও কেঁদেছো?
-হোয়াট!! কাঁদবো কেন? ফুলমুন তো হ্যাপীনেস! চারদিক কী সুন্দর লাগে দেখতে, আর তুমি বলছো, কাঁদি নাকি! শোন ফুলমুন মানে হ্যাপীনেস, ফুলমুন মানে ক্রেজীনেস! হা হা হা হা!! কারণ ফুলমুনে অনেকেই উলটাপালটা কাজ করে। 

জিমি বলল, কাঁদে, কেউ কেউ কাঁদে, অভিমানী মন চাঁদের আলোয় কাঁদে, এটাই চাঁদের শক্তি, তোমার উপর দারুণভাবে প্রতিক্রিয়া করবেই করবে।


No comments:

Post a Comment