Saturday, May 31, 2014

যুগের খেলা!

আজ এক বুড়ী মা-কে নিয়ে তাঁর মেয়ে এসেছিল ফোন কন্ট্র্যাক্ট রিনিউ করাতে। বুড়ী মায়ের বয়স ৮০, মেয়ের বয়স ৬২। মা-মেয়েকে দেখেই আমার খুব মনে ধরে গেলো, বিশেষ করে বুড়ী মা'কে। সারাক্ষণ মুখে হাসি, পুরানো মটোরোলা রেজার ফোন পালটে I phone 5c (আই ফোন ৫ সি) কিনতে চাইছে। আমার হাঁ করে থাকার মত অবস্থা, অন্য সময় হলে মনে মনে হতাশ হতাম, কারণ এই বুড়ীমা'কে ধরে ধরে সব শিখিয়ে দিতে গেলে অনেক কষ্ট হয়তো। কিন্তু আজ হতাশ হইনি, মা-মেয়ের এমন অন্তরঙ্গ ভাব দেখে মুগ্ধ হয়েছি। অ্যাক্টিভেশান শেষে হাস্যময়ী বুড়ীমা'কে ফোন ব্যবহারের প্রাথমিক ধাপগুলো শিখিয়ে দিতে চাইলাম। বুড়ীমা শিখবে কি, নীল রঙের পাতলা আই ফোন হাতে নিয়েই সে কি খুশী! আমি যা কিছু বলি, তার কোনটিই তাঁর কান দিইয়ে ঢুকছে বলে মনে হচ্ছিলনা। ভাব দেখে বুঝলাম, বুড়ীমা ফোন হাতে নিয়েই বসে থাকবে।

ফোন কেইস থেকে ব্যবহারবিধি কাগজ দেখিয়ে বলে দিলাম, ভালো করে পড়ে দেখতে। বুড়ীমা শুধুই হাসে, মায়ের হাসি দেখে মেয়েও হাসে। মা'কে খোঁচা দিইয়ে বলে, ' তুমি শিখে নাও কিছুটা'।
বুড়ীমা আমাকে শুধায়, " তোমারও কি আই ফোন?"
বুড়িমা'কে বললাম, '" মাথা খারাপ, আমার মত ডাম্ব আইফোন হাতে নিতেই থরথর করে কাঁপে, আমি স্মার্ট ফোনের কিছুই বুঝিনা"।
বুড়ীমা তেমন করে হাসতে হাসতেই বলে, " তাহলে তুমি কি আমাকে ভুল শেখাচ্ছো?"
বলি, " মাথা খারাপ, তোমার মত এমন স্মার্ট লেডীকে ভুল শেখাবো আমি? আমি এই জীবনে প্রথম দেখলাম মেয়ে ব্যবহার করে স্যামসাং ফ্লিপ ফোন আর ৮০ বছরের তরুণী ব্যবহার করবে আই ফোন ৫ সি!"
বুড়ীমা বলে, " আমি কি পারবো?"

বললাম, " অবশ্যই পারবে। তাছাড়া পারাপারির কিছু নেই, ফোন হাতে নিয়ে তুমি খেলা করবে, স্ক্রীনের প্রতিটি ছবিতে আঙ্গুল ছোঁয়ালেই নতুন স্ক্রীন আসবে, স্ক্রীন পড়ে দেখবে কি কি লেখা আছে। ফোন নষ্ট হওয়ার ভয় নেই, যদি মনে করো স্ক্রীন ভালো লাগছেনা, আবার আগের স্ক্রীনে ফিরে যেতে চাও অথচ ভুলে গেছো কি করে যেতে হয়, তাহলে এই হোম বাটনে চাপ দিলেই হোম স্ক্রীনে চলে যাবে। এভাবেই ফোনে থাকা প্রতিটা ফীচার শিখে যাবে। এই ফোনে অনেক ফীচার আছে, তোমার সময় খুব ভালো কাটবে। শুধু এই ফোনের ছবিওয়ালা ফীচারটা দেখে রাখো, কাউকে কল দিতে হলে এই ছবিতে আঙ্গুল ছোঁইয়াবে, টেলিফোন প্যাড আসবে, নাম্বার ডায়াল করে 'কল' এ আঙ্গুল ছোঁইয়ালেই হবে।"

বুড়ীমা বলে, " তুমি খুব ভালো করে বুঝাতে চেষ্টা করলে, আমার খুব ভালো লেগেছে।"
মেয়ে বলল, " মাদার, তুমি ফোন নিয়ে খেলবে"
বুড়ি বলে, "আধুনিক যুগটা অনেক ভাল, কত মজার জিনিস, আমাদের যৌবনে এগুলো কিছুই ছিলনা, এখনকার ছেলেমেয়েরা অনেক ভাগ্যবান, সব ভালো ভালো জিনিস পাচ্ছে।"

বুড়ীমার এই কথায় বুকটা মুচড়ে উঠলো, বুড়ীমা মনে করিয়ে দিল, সময় হয়েছে যাবার, বিদায় বেলায় কী-ইবা আছে পাবার!

হারিয়ে গেছে যে ছেলে!

জুনায়েদ নামটা শুনলেই বুকে ভীষণ ধাক্কা লাগে। জুনায়েদ নামের না-দেখা যুবক মেডিক্যাল থার্ড ইয়ারে উঠে ডাক্তারী পড়া ছেড়ে থিয়েটারের উপর এক বছরের কোর্স করতে পাকিস্তান থেকে মিসিসিপি চলে এসেছিল, মিশাকে ছোট বোনের মত স্নেহ করতো, মিশার সাথে আমাদের বাড়ী আসবে বলে বায়নাও ধরেছিল। মিশা যখন জুনায়েদের কথা আমাকে বলেছিল, আমি সোজা মানা করেছিলাম, পাকিস্তানী কোন ছেলে আমাদের বাড়ীতে আনা যাবেনা। আমি খুবই মায়াবী ধরণের মানুষ, মা সম্পর্কে এমনটাই আমার মেয়েরা বিশ্বাস করে, তাই আমার 'না' শুনে মিশা খুব আহত হয়েছিল।
পরেরবার মিশা বাড়ী এসে বলল, " জুনায়েদ ভাইয়া পাকিস্তানীদের সাপোর্ট করেনা, বাংলাদেশের পক্ষে, তোমাকে 'মাম্মী' ডেকেছে, তোমার সাথে দেখা করতে আসতে চায়"।
আমার মন গলে গেলো, এর আগে মিশা হোস্টেলে ফেরার সময় বাসা থেকে ঘরে তৈরী বিরিয়ানী, রসমালাই বাক্সে করে নিয়ে যেত, আমি ভাবতাম, ওর নিজের জন্য নিয়ে যায়। পরে একদিন জুনায়েদ আমাকে ফোন করে যখন বলে, " মাম্মী, তোমার পাঠানো রসমালাই খেয়ে মনে হয়েছে আমি আমার মায়ের হাতের রান্না খাচ্ছি, বিরিয়ানী খেয়েও আমার মাম্মীর কথা মনে হয়েছে। আমি তোমার সাথে দেখা করতে চাই"।
সব ভুলে আমি তখনই বলে ফেললাম, " অবশ্যই বাবা, তুমি অবশ্যই আসবে"।
জুনায়েদ আসতে পারেনি, কোর্স শেষ হতেই ওকে পাকিস্তান ফিরে যেতে হয়েছিল। কিন্তু ছেলেটি আমার সাথে ফেসবুকে যোগাযোগ রাখতো, আমার যে কোন ছবিতে স্বরচিত কবিতার ভাষায় কমেন্ট করতো, আমাকে 'মাম্মী' সম্বোধন করলেও উত্তম কুমারকে ডঃ রয় বলে সম্বোধন করতো।
পাকিস্তানের কোন এক বিশ্ববিদ্যালয়ে অধ্যাপনার চাকুরী পায়, এক বছরের মধ্যেই ও আন্তর্জাতিক কোন সম্মাননা পুরষ্কার পায়, সে কখনও এগুলো প্রকাশ করতোনা, তার বন্ধুরা যখন তার ওয়ালে কনগ্র্যাচুলেট করতো, তখনই জানতে পারতাম। যদি অনুযোগ করতাম, সাথে সাথে বিনয়ের সাথে বলতো, ওর এগুলো নিয়ে কথা বলতে লজ্জা লাগে।
হঠাৎ একদিন খবর পেলাম, জুনায়েদকে গ্রেফতার করা হয়েছে, গ্রেফতার করে কোথায় নেয়া হয়েছে কেউ জানেনা। এক পত্রিকার কাটিং পড়ে যেটুকু জেনেছি, ক্লাসে লেকচার দেয়ার সময় জুনায়েদ মৌলবাদের বিরুদ্ধে এমন কিছু বলেছিল যা মৌলবাদী ছাত্রছাত্রীদের পছন্দ হয়নি। ক্লাসের সবাই বোধ হয় হই চই করে একেবারে বিতিকিচ্ছিরি অবস্থা করে ফেলেছিল। ছাত্রছাত্রীদের অভিযোগ ছিল, জুনায়েদ নাকি প্রায়ই মৌলবাদ বিরোধী কথাবার্তা বলে, এবার আর তাকে ছাড়া হবেনা। বিশ্ববিদ্যালয় কর্তৃপক্ষ জুনায়েদকে বহিষ্কার করে, জুনায়েদ গ্রেফতার হয়, এরপর চিরতরে হারিয়ে যায় আমার ফেসবুক থেকে।
এরপর থেকে আমি জুনায়েদকে খুঁজি, পাইনা। আমার সব ছবি লক করে দিয়েছি যেখানে আমার এই পুত্রের মায়াবী কমেন্ট ছিল। শুধুই মনে পড়ে, পাকিস্তান ফিরে গিয়ে জুনায়েদ ওর মায়ের কাছে আমার গল্প করেছিল, আমাকে ইনবক্সে কতবার মেসেজ দিয়েছিল, " মাম্মি, আমি আবার আসবো আমেরিকা, তোমার সাথে দেখা করতে হলেও আসবো"।
এখনও সব মনে পড়ে, ভীষণ গ্লানি বোধ করি, অপরাধ বোধ হয়, ছেলেটি আমার কাছে আসতে চেয়েছিল, পাকিস্তানী বলে আমি মিশাকে 'না' করে দিয়েছিলাম, মিশার আহত দুই চোখের দিকে তাকাতে পারিনি। যে রসমালাই খেয়ে ছেলেটি তৃপ্ত হয়েছিল, ভেবেছিল 'মাম্মি পাঠিয়েছে, সেই রসমালাই আসলে আমি পাঠাইনি তো, মিশা নিয়ে গেছিল। তখন মিশা আন্ডারগ্র্যাড করছে, পাশের বিশ্ববিদ্যালয়ের হোস্টেলে এক বন্ধুর সাথে দেখা করতে গিয়ে সেখানেই জুনায়েদকে দেখেছিল, রুমের মেঝেতে পত্রিকা বিছিয়ে বসে ভাত খাচ্ছে, টমেটো সস দিয়ে মেখে। পরিচয়ের সূচনাতেই মিশার খুব মায়া লেগেছিল, এরপর থেকে যতবার মিশা বাসায় এসেছে, কিছু খাবার প্যাকেট করে নিয়ে গিয়ে সব বন্ধুদের খাইয়েছে, জুনায়েদও খেয়েছে। কেউ মিশার এই ভালোবাসা মনে রেখেছিল কিনা জানিনা, জুনায়েদ মনে রেখেছে।
জুনায়েদ কি বেঁচে আছে? মৌলবাদের বিরুদ্ধে কথা বললে পাকিস্তানী সেনাবাহিনী কাউকে বাঁচিয়ে রাখে? জুনায়েদের ফেবু অ্যাকাউন্ট তখনই ডিঅ্যাক্টিভেটেড হয়ে গেছে। আমি পারিনি ওর নাম আমার লিস্ট থেকে মুছে দিতে, কোনদিন পারবোও না। আমার একবার মনে হয়, জুনায়েদ বেঁচে আছে কারাগারের অন্ধ প্রকোষ্ঠে, আরেকবার মনে হয় নেই। একজন প্রতিভাবান যুবক, প্রতিভাবান কবি, প্রতিভাবান নাট্যকার হারিয়ে গেছে কোথায়! জুনায়েদরা আসলে হারিয়েই যায়, বাংলাদেশে থাকলেও হারিয়েই যেতে হতো। হায়! জুনায়েদ, আজ তোমাকে খুব বেশী মনে পড়ছে!

মঙ্গলময় দিনে কোন এক মঙ্গলের অপেক্ষায়!

আজ শনিবার, ৩১ শে মে, আমাদের ২৯তম "এনগেজমেন্ট বার্ষিকী", সৌভাগ্যক্রমে আজ আমার ছুটির দিন। আরও দশজন পুরুষের ন্যায় আমার স্বামীও আজকের দিনটির কথা মনে রাখেননি। অথচ সকাল থেকেই গ্রিল মেশিন নিয়ে খুটখাট শুরু করে দিয়েছিলেন। ব্যথানাশক এবং নিদ্রাসুখ প্যারাসিটামল খেয়ে ঘুম দিয়েছিলাম বলে বেশ দেরী করেই ঘুম ভেঙ্গেছে আমার। ঘুম ভাঙ্গার পর কনিষ্ঠ দূত মিথীলা সংবাদ দিল, আজ তার পাপা আমাদের জন্য লাঞ্চ তৈরী করবে। দূত মারফত সংবাদ পেয়ে আমি খুশীতে বিগলিত। অপেক্ষায় আছি, কখন খাওয়ার ডাক আসে।

বেলা সাড়ে বারোটায় 'বান্দরের খাঁচা' থেকে উত্তম ডাক পাঠালেন। পৌঁছে দেখি, এলাহী আয়োজন। এবার আর চিকেন গ্রিল নয়, চিকেন বার্গার বানানো হয়েছে, সাথে চিংড়ি, নানা রকমের সব্জী, পেঁয়াজ গ্রিল করে সাজানো, আস্ত আস্ত ভুট্টা গ্রিল করেছে, শসা কেটেছে, পাঁচ মিশেলী বাদাম, এবং টোস্টেড ব্রেড, সাথে পানীয় হিসেবে কোক। পাপাকে সব কাজে সহায়তা করেছে তার কন্যা গুড্ডু।

খেতে বসেছি তিনজন, মিথীলা বলল, " এই প্রথম পাপা শুধু আমাদের ফ্যামিলির জন্য সবকিছু গ্রিল করলো"। আমার কিন্তু খেয়ালে আসেনি বিষয়টা, মিথীলা সবকিছু খুব সূক্ষ্মভাবে নোটিশ করে। আজ কেন জানি আমার ভীষণ ক্ষিদেও পেয়েছিল, উত্তমের অনুমতি নিয়ে সবার আগে আমি খেতে শুরু করেছি। তিনজনেই খাচ্ছি, একসময় আমি উত্তমকে বললাম,

" আজকের দিনে আমাদের এনগেজমেন্ট হয়েছিল, শুভ একটি দিন, এইদিনেই কাকতালীয়ভাবে তুমি আমাকে যত্ন করে খাওয়াচ্ছো, আমি খুবই খুশী হয়েছি যে ২৯ বছর পেরিয়ে গিয়ে তুমি দিনটির কথা স্মরণ করেছো। আমার মনটা ভালো নেই, তবুও তোমার কাছ থেকে এমন আপ্যায়ন পেয়ে আনন্দিত নাহয়ে পারছিনা।"

উত্তম বলে ফেললো, " আমার তো মনে ছিলনা, গতরাতে গুড্ডু আমাকে বলেছে, আজকের দিনের কথা"।

আমার উত্তম এমনই মানুষ, কোন ছল-চাতুরীর মধ্যে নেই, আমার খুশী ধরে রাখতে ইচ্ছে করলে সে বলতে পারতো, " ওমা, দিনটা আমাদের দুজনের, দুজনেরই মনে থাকার কথা, আজ তোমার ছুটি, তাই এই সামান্য আয়োজন করেছি"।

কিন্তু উত্তম ভুলেও তা বলবেনা, এমন সরাসরি উত্তর শুনে আমি যে দুঃখ পেতে পারি, এটাও সে বুঝেনা, এমনই শুদ্ধমনের মানুষ সে। আমিও তাই এখন আর এসব ক্ষুদ্র বিষয়ে দুঃখ পাইনা, বরং এমন শুদ্ধসত্য মানুষের পাশে থাকার সুযোগ পেয়েছি, এতেই খুশী। খাওয়া-দাওয়ার মাঝে এবং শেষে আয়োজককে ধন্যবাদ জ্ঞাপন করার পাশ্চাত্য রীতি বরাবর মেনে চলি। রীতি অনুযায়ী আমার মুখোমুখি বসা শুদ্ধতম মানুষটিকে বললাম,

" আজকের দিনে তোমার কাছে একটা ছোট্ট অনুরোধ আছে, আমার চোখে দেখা শুদ্ধতম মানুষের মধ্যে তুমি অন্যতম। তুমি কি তোমার অন্তরের সমস্ত শুদ্ধতাকে জড়ো করে জুনায়েদের জন্য প্রার্থনা করবে?"

আমার এমন অপ্রাসঙ্গিক অনুরোধে উত্তম কুমার এতটুকুও চমকায়নি, ২৯ বছরে সে আমাকে চিনে ফেলেছে। ***আমার মধ্যে অনেক ক্ষুদ্রতা আছে, কখনও কখনও ব্যবহারে নীচতাও প্রকাশ পায়, আমার মধ্যে ঈর্ষা আছে, ক্রোধ আছে, জেদ আছে, একগুঁয়েমী আছে, এতগুলো দোষের মাঝখানে যে দয়ার সমুদ্র আছে, খুব কাছাকাছি থাকার কারণেই সেই দয়ার সমুদ্রের ছলাৎ ছলাৎ শব্দ উত্তমের কাছে পৌঁছে যায়।***
গত তিন দিন ধরে না-দেখা একটি ছেলের জন্য কান্নাকাটি করে চলেছি, ভাল-মন্দ না-বুঝেই ফেসবুকে এর কাছে, তার কাছে, সবার কাছে Raise your voice অনুরোধ করেই চলেছি। বেশীর ভাগ বন্ধু আমার এই ব্যাপারটিকে 'পাগলামী' হিসেবে নিয়েছে, কেউ নিয়েছে আমার একান্ত ব্যক্তিগত অনুযোগ হিসেবে, কেউ কেউ মানবিক দৃষ্টিকোণ থেকেই দেখেছে, কেউ নিয়েছে রাজনৈতিকভাবে, আর কেউ কেউ মনে করেছে, আমি তেঁতুল কচলে তেতো বানাচ্ছি, নিজের সম্মান ধূলায় মিশিয়ে দিচ্ছি। একটা বিষয় ভেবে খুব অবাক হচ্ছি,

***আওয়ামীলীগের প্রাক্তন এমপি, বাংলাদেশ প্রতিদিন পত্রিকার নিয়মিত লেখক **একজন কাদের মোল্লার** প্রশস্তি গেয়ে লিখেন, একজন ***দেলোয়ার হোসেন সাইদীর*** জন্য বিশাল প্রশস্তিসূচক লেখা লিখেন এবং হাজার হাজার পাঠক সেই লেখা মুহূর্তের মধ্যে শেয়ার করে, 'লাইক' করে, অথচ একজন নিরপরাধ, প্রতিভাবান, মেধাবী আলোকিত তরুণ অধ্যাপকের মুক্তির জন্য পোস্ট করা আবেদনে 'লাইক' করেনা, উলটো এহেন আবেদনকে নিছক প্যানপ্যানানি বলে মুখ ফিরিয়ে নেয়****

উত্তম এসবের কিছুই জানেনা, আমি বাইরের সংবাদ উত্তমকে দেইনা। তারপরেও সমুদ্রের ছলাৎ ছলাৎ তো সে শুনতেই পায়। সে এটাও জানে, যখন কোথাও থেকে কোন দিশা পাইনা, আশা পাইনা, শেষমেশ আমি উত্তমের শরণাপন্ন হই। উত্তম যা বলে, সেটাই শেষ উত্তর হিসেবে গ্রহণ করি। আমার অনুরোধটুকু শুনে মাথা হ্যাঁ বোধক দুলিয়ে জানালো, সে অবশ্যই প্রার্থনা করবে অন্ধকার কুঠুরীতে মৃত্যুর জন্য অপেক্ষা করতে থাকা আরেকজন শুদ্ধ মানুষের জন্য। উত্তমের সম্মতি পাওয়ার পর আমার মনের মেঘ কেটে যেতে শুরু করেছে, দয়ার সমুদ্রের ছলাৎ ছলাৎ শব্দও ক্ষীণ হয়ে আসছে, সমুদ্র শান্ত হচ্ছে কোন এক মঙ্গলের অপেক্ষায়, কোন এক মঙ্গলের আশায়।