Tuesday, June 11, 2013

পেঁচা রুটিন, অ্যালার্ম ক্লক এবং অসমাপ্ত আত্মজীবনী!!



ইদানিং আমার মধ্যে বাদুড় বা পেঁচার লক্ষণ দেখা দিয়েছে। পেঁচা যেমন গাছের ডালে বসে চোখ গোল করে তাকিয়ে থেকে কাটিয়ে দেয় সারা রাত, আমিও তেমনই কম্পিউটারের দিকে চোখ গোল করে তাকিয়ে কাটিয়ে দেই সারারাত। বাংলাদেশ থেকে আমার মেয়ে প্রায়ই আমাকে হুস হুস! যাহ! যাহ! করে তাড়াতে চেষ্টা করে, জবাবে আমি শুধু ডানা ঝাপটাই। ভোর পাঁচটার দিকে ঘুম দেই, সকাল নয়টা বা দশটায় ঘুম ভাঙ্গে। তারপর তো দিনের শুরু, ঘর-দোর ঝাঁটপাট, টুকীটাকি রান্না সেরে টিফিনের কৌটা হাতে চলি ওয়ালমার্টের দিকে। ওয়ালমার্টে যেতে ইচ্ছে করেনা, মনে হয় একটু ঘুমাতে পারতাম। পেঁচারাও দিনের আলোয় ঘুমায়, আমি ঘুমাইনা। মন মেজাজ খারাপ করে কাটিয়ে আসি দিন ও সন্ধ্যারাত মিলিয়ে আট/নয় ঘন্টা।কারণ আমার কাজের শিডিউল থাকে বেলা ১২ টা থেকে রাত নয়টা। আমার মত পেঁচার জন্য ভাল, তাই এই একতরফা শিডিউল নিয়ে কখনও আপত্তি করিনা।

তারপরেও কী করে যেন ওয়ালমার্ট কম্পিউটার আমার আজকের শিডিউলে গন্ডগোল করে ফেলেছে, টাইম দিয়েছে সকাল ৮টা থেকে বিকেল ৫টা। গতকাল ছিল অফ ডে, সারাদিন ঘুমাতে পারতাম, কিন্তু একদিনের রাণী সাজার শখ হয়নি। গতকাল সন্ধ্যায় উত্তম কুমারকে দফায় দফায় অনুরোধ করে রেখেছি, সকাল ৭টায় যেন আমাকে ডেকে দেয়। উত্তমের এটা বাধ্যতামূলক চাকুরী, আমি যদি হই পেঁচা, উত্তম হচ্ছে অ্যালার্ম ক্লক। যার যখন প্রয়োজন, অ্যালার্ম ক্লককে জানিয়ে রাখলেই চলে। তবে এই অ্যালার্ম ক্লক খুবই অভিজাত ক্লক, একবার বা দুইবারের বেশী বাজেনা। সেদিন শুনছিলাম, উত্তম তার বন্ধুকে বলছে,  সে নাকি বাংলাদেশে ফোন করেছে মেয়ের ঘুম ভাঙ্গানোর জন্য, কারণ মেয়ে নাকি এসএমএস পাঠিয়ে অ্যালার্ম দিয়েছে।

আজ সকাল সাতটায় অ্যালার্ম ক্লক একবারই বেজেছে, এক লাফ দিয়ে বিছানা ছেড়ে ছোটাছুটি শুরু করে দিয়েছি। তখনও বুঝতে পারছিলামনা, আমি কেন সাতটায় উঠলাম! পরে খেয়াল হলো, আরে, আজ আর কাল তো সকাল আটটায় কাজ। ঝটপট রেডী হয়ে গেলাম, উত্তম ক্লাসে চলে গেছে, মিথীলা ঘুমে। আগে ওয়ালমার্ট যাওয়ার সময় ব্যাগে করে মোটা মোটা গল্পের বই নিয়ে যেতাম। লাঞ্চ ব্রেকে বাড়ী ফিরতামনা, ওখানেই বসে গল্পের বই পড়তাম। তখন ওয়ালমার্টের পরিবেশ ভাল লাগতো, কাজেও আনন্দ পেতাম। এই বছরই সব কেমন পানসে ও বিরক্তিকর হয়ে গেছে। কত রকমের মানুষ আসে, আগে তাদের সাথে কত রকমের গল্প করতাম, ইদানিং মুখ ভোঁতা করে থাকি, যদিও কাজে ফাঁকী দেইনা, গ্রাহক সুবিধা দেয়ার ব্যাপারে আমি খুবই নীতি মেনে চলি। যাই হোক, আজ মনে হলো, গত বছর বাংলাদেশ থেকে 'শেখ মুজিবুর রহমান' রচিত " অসমাপ্ত আত্মজীবনী" কিনে নিয়ে এসেছিলাম। ধীরে ধীরে পড়বো বলে সময় নিচ্ছিলাম, হঠাৎ করে মা মরে গেল, আমিও আউলা হয়ে গেলাম। এক বছর বইটার খবরও নিলামনা।

আজ সকালটা অন্যরকম ছিল, যে সকালে আমার ঘুমানোর কথা, সে সকালে কাজে যাচ্ছি, অন্যরকম সকাল তো বটেই। অসমাপ্ত আত্মজীবনী' বইটির কথা মনে পড়তেই চট করে বুকসেলফ থেকে বইটি নিয়ে গাড়িতে গিয়ে বসলাম। ওয়ালমার্টে পৌঁছে  'ক্লক ইন' করে টী রুমে হাতের ব্যাগ রাখতে গিয়ে দেখি, বই সাথে নেই। মেজাজটা খারাপ হওয়ার কথা, কিন্তু বেশী খারাপ হওয়ার সুযোগ পেলো না। আমাকে ডিপার্টমেন্ট ওপেন করতে হবে, বই নিয়ে ঘ্যাজর ঘ্যাজর করে লাভ নেই। আমেরিকায় কাজের সময় কাজ, কাজের সাথে কোন কম্প্রোমাইজ নেই। আমাদের ফোন সার্ভিস ওপেন হয় সকাল নয়টায়, আটটা থেকে গোছগাছ শুরু হয়, তাই করছিলাম,  সাড়ে আটটায় ফোন বাজতে শুরু করলো। ফোন তুলতেই নন আমেরিকান অ্যাকসেন্টে  এক মহিলা কন্ঠ বললো,
-হ্যালো, মে আই তক তু ফোন লেদী?
-হ্যাঁ বলছি, তোমাকে  কীভাবে হেল্প করতে পারি?
-আই হ্যাভ 'তি-মোবিল' ফোন, বাত, নো সিম কার্দ। হাউ  কুদ আই  ইউস মাই ফোন এগেইন?

তাকে প্রয়োজনীয় তথ্য জানালাম, ফোন রেখে ভাবলাম, আমি যাই বঙ্গে, আমার কপাল যায় সঙ্গে। সকালে এলেও এরা আমাকে খুঁজে বের করে, বিকেলে এলেও এরা আমাকে খুঁজে বের করে।  ত্রিশ মিনিটও পার হয়নি, এক সুন্দরী বুড়ী ফোন সেন্টারে এসে উপস্থিত। তার গলায় ঝুলছে বড় দানার অদ্ভুত সুন্দর মুক্তোর মালা, মাথার চুল সাদা শোন পাপড়ির মত,  হাসি দিতেই ধবধবে সাদা সাজানো পাটির দাঁত দেখলাম। বুঝলাম ইনিই সেই ফোনের লেডী যখন উনি বললেন,
" ইত ওয়াজ মী। আই কলদ ইউ। সী, আই হ্যাফ মেনি ফোনস, বাত, নো ওয়ান ওয়ার্কস। উদ ইউ হেলফ মি তু ফাইন্দ আউত এ গুড ফোন। নত এক্সপেনসিভ, আই হ্যাফ হোম ফোন, দিস ফোন ফর ত্র্যাবেলিং'।
 

বুঝলাম, কী ধরনের ফোন তার প্রয়োজন, ফোন দেখালাম, ফোন কার্ড ঠিক করে দিলাম, পরে দেখি বুড়ি আব্দারি কন্ঠে বলে, উদ ইউ সেত দ্য ফোন ফর মি, প্লিজ!!
-ঠিক আছে, দিচ্ছি। তুমি কী অনেক ট্র্যাভেল করো? কোথায় কোথায় যাও?
-আই ত্র্যাবেল এ লত। আই ত্র্যাবেলদ কানাদা, মেক্সিকো, লনদন, গ্রীস~~~
-তুমি তো আমেরিকান নও, কোথায় তোমার জন্মস্থান?
-গ্রীস।
ও আচ্ছা, ফোন অ্যাক্টিভেট করতে তোমার নাম এবং জন্মতারিখ লাগবে।
-মাই নেম ইস দেইজি পোরোস (Daisy Poros), বার্থ দেইত, তেনথ মার্স, তুয়েন্তি এইত ( 10th March, 1928)।
জানালো, আমেরিকায় আছে ৪৫ বছর ধরে! আরও কথা হলো, যাওয়ার সময় বললো, থ্যাঙ্ক ইউ রিতা, ইউ আর সো কাইন্দ, সো নাইস, সো হেলফফুল!!!
আরেক দম্পতি অপেক্ষা করছিল, নাহলে আরও কিছুক্ষণ এই বুড়ীমার সাথে কথা বলতাম। নিজে কিছু বলতাম না, বুড়িমাকে দিয়ে বলাতাম। কী যে মিষ্টি লাগছিল বুড়ীমার কথা শুনতে। ৪৫ বছর ধরে আমেরিকায় আছে, কিন্তু গ্রীক অ্যাকসেন্ট রয়ে গেছে পুরোপুরি। আমাদের সাথে কোথায় যেন মিল খুঁজে পেলাম। আমরা কথা বললেও আমেরিকানরা বলে, ভারী  অ্যাকসেন্টে কথা বলি। অবশ্য তাতে কিছুই যায় আসেনা, আমরা তো তবুও কথা বলি, আমেরিকানরা তো নিজেদের দেশ ছাড় আআর কিছুই চিনেনা। বুড়ীমা'কে বিদায় জানিয়ে অপেক্ষমান দম্পতীর দিকে মনোযোগ দিলাম।

এই দম্পতীর দুজনেই বিশালদেহী, কালো আমেরিকান, মহিলা বসে আছে হুইল কার্টে, ভদ্রলোক মহিলার পাশে দাঁড়ানো। উনারাও এসেছেন, পুরানো ফোন হাতে করে। ফোন ডি-অ্যাক্টিভেটেড হয়ে আছে, খেয়াল করেনি, আমার কাছে এসেছে যদি রি-অ্যাক্টিভেট করে দেই। আমরা সব সময় নতুন নাম্বার অ্যাক্টিভেট করি, পুরানোগুলো করিনা, তারপরেও কিছু কিছু মানুষের জন্য নিয়মের বাইরে গিয়ে সাহায্য করি, কারণ গ্রাহকসেবা নিশ্চিত করা আমাদের কর্তব্য। কী আর করা, ভাবি, আমি যদি কোন বিপদে পড়ি, কেউ যদি আমাকে হেল্প না করে, তখন কেমন লাগবে! যাই হোক, এই দুই বিশালদেহীকে বললাম, " আমাদের তো নিয়ম নেই পুরানো ফোন রিঅ্যাক্টিভেট করার"। ভদ্রলোকের মুখ কালো হয়ে গেল, অসহায় দেখা গেল, তাছাড়া একটু দূরে দাঁড়িয়ে ওরা দেখেছে আমি বুড়ীমা'কে হেল্প করেছি, তারা তো জানেনা, বুড়ীমা নতুন ফোন নিয়েছে, মায়া লাগলো, বললাম,
"ঠিক আছে, দাও, চেষ্টা করে দেখি।"
ফোন রিঅ্যাক্টিভেট করে দিলাম। দুজনেই খুব খুশী। বিশালদেহী ভদ্রলোক বলে,
-তোমাকে একটা হাগ দিতে পারলে খুশী হতাম।
ওয়ালমার্টে চাকুরী করে যত নতুন জিনিস শিখেছি, তার মধ্যে 'হাগ দেয়া ( জড়িয়ে ধরা) অন্যতম। হাগ দিতে সম্পর্ক বিচার করার কিছু নেই। হাগ দিয়ে পারস্পরিক কৃতজ্ঞতা, সহানুভূতি, আনন্দ, সুখবর, ধন্যবাদ, সান্ত্বনা জাতীয় যে কোন অনুভূতি শেয়ার করা হয়। আমি বাংলাদেশে বড় হয়েছি, খুব বেশী হলে মহিলাদেরকে 'হাগ' দিতে পারি, কোন পুরুষকে তো 'হাগ' দিতে পারবোনা। কিন্তু যস্মিন দেশে যদাচার! ওরা তো আর জানেনা 'বিন্দুতেই' আমাদের জাত যায়, সতীত্ব যায়, ধর্ম যায়, কূল যায়, মান যায়!!  তাই রেজিস্টারের এই পাশ থেকে দুই হাত দিয়ে 'হাগ' দেয়ার ভঙ্গী করে বললাম, থ্যাঙ্ক ইউ। ভদ্রলোক এবং ভদ্র মহিলা একসাথে বললেন, " তুমি আমাদের বাঁচালে। আমরা ফোনের কিছুই বুঝিনা, অথচ নাতিকে ফোন করতে হবে, তাই ফোন দরকার ছিল। গড ব্লেস ইউ!!

বুঝলাম, আজ গড আমাকে শুধুই ব্লেস করবে।  অলরেডী দুটো ভাল কাজ করে ফেলেছি। গেলাম রেস্টরুমে, সাবান দিয়ে হাত ধুচ্ছি, আয়নায় নিজেকে দেখছি, গুনগুন করছি
"তুমি কোন কাননের ফুল, কোন গগনের তারা"
 

একটি ছোট বাচ্চা মেয়ে আমার পাশে এসে দাঁড়ালো। তাকিয়ে দেখি, ওর সাথে আর কেউ আসেনি। পাবলিক বাথরুম, এক সারিতে অনেকগুলো বেসিন, বাচ্চাটা সাবানের কেইস নাগাল পাচ্ছেনা। হেসে দিলাম, বাচ্চাটা ইশারায় আমাকে বললো, সাবানের কেইস থেকে ওকে সাবানের ফোম দিতে। আমি বাচ্চাদের খুবই ভালোবাসি, বাচ্চাদের সাথে এক মুহূর্তে আমার বন্ধুত্ব হয়ে যায়। আমি সাবানের কেইসে চাপ দিতেই সাবানের ফেনা মেয়েটির কনুইয়ের কাছাকাছি গিয়ে পড়লো। আবার চাপ দিলাম, একই কান্ড, মেয়েটির হাত টান দিয়ে আরেকটু সামনে এনে কেইসে চাপ দিলাম, এবার হাতের তালুর কাছাকাছি পড়েছে। দুজনেই খিলখিল করে হেসে উঠলাম। বললাম,
" ভাল করে সাবান ঘষো, এভাবে করো, আঙ্গুল ঘষো, আঙ্গুল ঘষো,~~~
মেয়েটি সমানে আঙ্গুল ঘষে চলেছে, তবুও আমি বলেই চলেছি, " আহা! আঙ্গুল ঘষতে বলছি"
মেয়েটি এবার পূর্ণ চোখে আমার দিকে তাকালো, আমি নিজের ভুল বুঝতে পারলাম। আমি বলতে চাইছিলাম, নখ গুলো পরিষ্কার করো, কিন্তু বার বার আঙ্গুল ঘষো বলছিলাম বলে ও বুঝতে পারছিল না কেন বার বার আঙ্গুল ঘষার কথা বলছি। এত বড় জিভ বের করে বললাম, " ঊপস!! সরি!" ( এভাবেই বাচ্চারা এখানে কথা বলে)
মেয়েটি খিলখিল করে হাসলো। নাম জিজ্ঞেস করলাম, বললো, ' ম্যাকাইয়া'। বললাম, ' ম্যাকাইয়া, এখানে আয় তো সোনা, তোর হাত গুলো এয়ার ড্রাই করে দেই। তুই কার সাথে এসেছিস?"
'মায়ের সাথে এসেছি"।
 

ম্যাকাইয়ার হাত শুকিয়ে দেই আর ভাবি, এই বাচ্চাটির মা নিজেই হয়তো এখনও কিশোরীকাল পার করেনি, তাই বুঝতেই পারেনা, বাচ্চাকে নিজে হাতে আদর যতন করে বড় করার মধ্যে কী আনন্দ। আহারে! ম্যাকাইয়াও জানেনা, বাংলাদেশে থাকলে আজকে ওর মা বাইরে দাঁড়িয়ে বয় ফ্রেন্ডের সাথে ফোনে' হি হি ' না করে ওর সাথে বাথরুমে আসতো। ওমা! আজকের দিনটাই দেখি অন্যরকম, ছোট্ট ম্যাকাইয়াও আমাকে 'থ্যাঙ্ক ইউ বলে"! উত্তরে বললাম, " ইউ আর মোস্ট ওয়েলকাম গুডুলী বুডুলী'। ম্যাকাইয়া তো জানেনা, 'গুডুলী বুডুলী'র মানে কী? দুই চোখ সরু করে আমাকে একটু দেখে [ পাগল ভেবেছে বোধ হয়] হি হি করে হেসে বাথরুম থেকে বেরিয়ে গেল।

যেইমাত্র আমার জায়গায় ফিরেছি, দেখি বোবা লোকটা আমার দিকে এগিয়ে আসছে। এই বোবা লোকটি প্রায়ই আসে ওয়ালমার্টে, তবে আমার সাথে কখনও কথা হয়নি। ওর বন্ধু [ সেও বোবা'] সব সময় সরাসরি আমার কাছে আসে, আমার সাথে আকারে ইঙ্গিতে গল্প করে। বন্ধুটিকে নিয়ে আমি একটি লেখা লিখেছিলাম। যাই হোক,  লোকটি এসে এক টুকরো কাগজ ধরিয়ে দিল আমার হাতে। কাগজে লেখা, " ডিলিট আইটেমস"।  লোকটির দিকে তাকিয়ে ইশারায় বললাম, " কী ডিলিট করবো"? মুখে অবোধ্য আওয়াজ তুলে সে আমাকে বুঝিয়ে দিল, তার স্ক্রীন থেকে মিসড কল এবং পুরানো কল থেকে আসা নাম্বারগুলো ডিলিট করে দিতে। আমি ওকে বললাম, " আমি কীভাবে করছি, লক্ষ্য করো, নেক্সট টাইম এভাবেই ডিলিট করে দিবে"। এত সহজ একটি কাজ সে এতদিন জানতো না!!! এমন ভঙ্গী করে সে মাথা চাপড়াতে লাগলো কিছুক্ষণ। এরপর নিজের কালো হাত দুটো আমার হাতের দিকে এগিয়ে দিল, আমি হ্যান্ড শেক করে ওকে আশ্বস্ত করলাম, " আমরা আছি, সমস্যা হলে এসো"।

বিকেল ৫টা বাজতেই মন নেচে উঠলো, কখন আমার এই অভিজ্ঞতার গল্প লিখবো, হায় হায়, বাসায় ফিরেই তো রান্না করতে হবে। ওয়ালমার্ট থেকে বের হয়ে গাড়ীতে উঠে পাশের সীটে নজর পড়তেই দেখলাম, যুবক বয়সের বঙ্গবন্ধু মুখ টিপে হাসছেন 'অসমাপ্ত আত্মজীবনী'র কভার পেজে। বইটা সীটের মধ্যেই পড়েছিল সারাদিন। গাড়ী স্টার্ট দেয়ার আগে বইটি হাতে নিলাম, বইয়ের পেছনে তাকালাম, বঙ্গবন্ধু বলছেন, " কামাল তার হাচু আপাকে বলছে, আপা আমি তোমার আব্বুকে একটু আব্বু ডাকি"? আমার খুব কান্না পেয়ে গেল। মানুষের জীবন কত অনিশ্চিতে ভরা। যে কুট্টি ছেলেটি জ্ঞান হয়ে তার আব্বুকে দেখেনি, যে ছোট্ট ছেলেটি অনেকদিন পর্যন্ত জানতো, এই মানুষটি শুধুই হাসু আপার আব্বু, যার আব্বু সারাজীবন জেলে কাটিয়েছে, যার আব্বু একটি দেশের স্বাধীনতা এনে দিয়েছে, সেই আব্বুর সাথে স্বাধীন দেশে যখন ছেলেটি বসবাস শুরু করলো, ঠিক তখনই একদল বিশ্বাসঘাতকের বুলেটের আঘাতে সেই আব্বুর সাথেই তার এবং পরিবারের সকলের  প্রাণ বেরিয়ে গেল! এমনকী আব্বুর আগেই ওরা তার প্রাণটি কেড়ে নিল। বীভৎস মানুষ, বীভৎস তার রুচী! কী যে পাপে ধরেছিল এই দেশটাকে, পাপের ঘরা ভারী হতেই থাকলো!

No comments:

Post a Comment