আমেরিকাতে
আসার পর থেকে প্রতি দুই বছরে একবার দেশে যাওয়াটা আমার রুটিন হয়ে গেছে। আমেরিকাতে
এসেছিলাম ২০০১ সালে। প্রথমবার দেশে গেছিলাম ২০০৩ সালে। এরপর ২০০৬, ২০০৮, ২০১০ এ
গিয়েছি। এবার ২০১২ তে আবার যাচ্ছি। বরাবরের মত এবারও আমি খুবই এক্সাইটেড। আমি খুবই
হোমসিক। দেশে থাকা বাবা মা, ভাই বোন, আত্মীয়-স্বজন, বন্ধু বান্ধব আমাকে অহর্নিশি
হাতছানি দিয়ে ডাকে। প্রতিবার দেশ থেকে ফিরেই আবার খাতা কলম নিয়ে বসে যাই, বছর
গুনি, মাস গুনি এরপর দিন গুনি। দিন গোনা শেষ হলে মুহূর্ত গুনতে শুরু করি।
দেশে
যাওয়ার সময় আমি এতটাই এক্সাইটেড থাকি যে মাঝে মাঝে আমার বোধ বুদ্ধি লোপ পেয়ে যায়।
আমার সাথে থাকা মেয়েদের উপর সব দায়িত্ব ছেড়ে দেই। ওরাই আমাকে নিয়ে যায়, আবার ওরাই
আমাকে ফিরিয়ে নিয়ে আসে। আমার সংসারে আমিই মেইন ভয়েস। তবে স্বৈরাচারী নই। মেয়েদেরকে
শাসন করতে ভালো লাগে, তাই শাসন করি। আমি চাইলেই প্রতি বছর দেশে যেতে পারি, কিনতু
ভয়ের চোটে চাইনা। কারন আমি একা একা পথ চলতে জানিনা। অনেক টাকা পয়সা নেই বলে সবাই
মিলে প্রতিবছর দেশে যাওয়ার উপায় নেই। তাই কখনও সবাই মিলে, কখনও বা মেয়েদেরকে নিয়েই
দেশে যাই। মেয়েদের সাথে গেলেও দেশে যাওয়ার সময় হলেই আমার চেহারা পালটে যায়। মেইন
ভয়েস কেমন যেনো চুপসে যায়। কারন আছে। আনন্দের সাথে সাথে কিছুটা ভয়ও আমাকে গ্রাস
করে। ছোটবেলাতে একবার হারিয়ে গেছিলাম, এরপর থেকেই আমার কেবলই মনে হতে থাকে একা
চললেই আমি বোধ হয় হারিয়ে যাব, ঠিকমত প্লেনে উঠতে পারবোনা। এক টার্মিনাল থেকে আরেক
টার্মিনালে যেতে পারবোনা। ভুল করে ভুল প্লেনে উঠে যাব। আমার অবশ্য মনে থাকেনা দেশে
যাওয়ার পথে আমি কি কি উদ্ভট আচরন করে থাকি। দেশে যাওয়ার পরে দুইদিন দুইরাত মেয়েরা
সব আত্মীয়-স্বজনদের সাথে জলসা বসায়, জলসাতে আমাকে নিয়েই সংগীত রচিত হয়। আমি বোকার
মত সব শুনি আর সকলকে হেসে লুটিয়ে পড়তে দেখি।
আমি যতবার দেশে গিয়েছি, যাত্রাপথে কতরকম মজার
অভিজ্ঞতা হয়েছে, তা যদি লিখে রাখতাম কতই না ভালো হতো। অন্যের কথা কি বলবো, আমি
নিজেই আমার মেয়েদেরকে হাসির খোরাক যুগিয়েছি। একেকটা কাজ করি আর মেয়েরা আমাকে নিয়ে
হাসতে হাসতে লুটিয়ে পড়ে।
২০০৩
সালে ব্রিটিশ এয়ারওয়েজে করে বাংলাদেশ গেছি। ওয়েস্ট ভার্জিনিয়া থেকে আমরা প্লেনে না
উঠে ভার্জিনিয়ার ডুলাস এয়ারপোর্ট থেকে ফ্লাই করেছি। আমার স্বামীর এক আমেরিকান
ছাত্র আমাদেরকে এয়ারপোর্টে ড্রপ করে দিয়েছিল। ছেলেটির নাম কার্টিস আর ওর গার্ল
ফ্রেন্ডের নাম ছিল নাতাশা। কার্টিস আর নাতাশাকে দেখেই আমি অবাক হয়ে গেছি। কার্টিস
বিশাল মোটা আর নাতাশা একেবারেই বাঁশপাতার মত পাতলা ছিল। আমরা বাসা থেকে রওনা হয়ে
তিন ঘন্টা পরেই পথের মধ্যে একটি কান্ট্রি রেস্টুরেন্টে গাড়ী থামিয়ে ভেতরে ঢুকতেই
রেস্টুরেন্টটি আমার ভালো লেগে গেলো। কাঠের গুঁড়ির বেঞ্চ এবং ডাইনিং টেবিলে বসেই
খাবারের জন্য অপেক্ষা করতে থাকলাম। আমরা কেউই ক্ষুধার্ত ছিলামনা কার্টিস আর নাতাশা
ছাড়া। কিনতু সবাইকে অবাক করে দিয়ে আমার জন্যও খাবার অর্ডার করতে বললাম। প্লেটে
বিরাট বড় মুরগীর পা দেখে আমি খুশী হয়েই খেতে শুরু করলাম। কার্টিস দুই প্লেট খেয়ে
ফেলেছে দেখেই আমি বলে ফেললাম, “ এই রে! এই ছেলে এত খায় কেনো? ওর স্বাস্থ্যের যা
অবস্থা”। আমার মেয়েরা বললো, “ তুমি একটু আগেই বাসা থেকে পেট ভরে খেয়ে এসে যদি
এখানে ফুলপ্লেট খাবার অর্ডার দিতে পারো” বলতেই তাদের বাবা শরীর দুলিয়ে হাসতে
লাগলো। আমি আমতা আমতা করে বলতে লাগলাম, “ রেস্টুরেন্টে নেমেছি, কিছুতো খেতে হবে।
নাহলে ওরা যদি আমাদেরকে উঠিয়ে দেয়”! আমার স্বামী বললেন, “ আমাদের দেশে হলে উঠিয়ে
দিত। তাছাড়া তুমি এই কাজটি অনেক বছর আগেও একবার করেছিলে”। আমার মনে পড়ে গেলো বিয়ের
পরে আমাদের ঢাকার সংসার একটি ট্রাকে চাপিয়ে ঐ ট্রাকে করেই আমরা সাভার যাচ্ছিলাম।
মিরপুরের কাছাকাছি আসতেই ট্রাক থামানো হলো। রেস্টুরেন্টে ঢুকে ড্রাইভারকে খাবার
দিতেই আমিও খাবার অর্ডার করলাম। রেস্টুরেন্টটির নাম ছিল ‘কিছুক্ষন’। সাইনবোর্ডে
একটা ছাগল ও একটি মুরগীর ছবি আঁকা ছিল। ভেতরের পরিবেশ আমার জন্য মোটেও খুব একটা
আনন্দদায়ক ছিলনা। কেমন গা ঘিনঘিন করা পরিবেশ। এরমধ্যেই আমি শুধুমাত্র রেস্টুরেন্টে
ঢুকেছি বলেই ভদ্রতা করে বিস্বাদ সিঙ্গারা আর চা নিয়েছিলাম। খেতে ভালো লাগছিলনা
তবুও খাচ্ছিলাম দেখে আমার স্বামী (তখনও বিয়ের একমাস হয়নি) খুব নরম সুরেই বলেছিলেন,
“ তোমার ওগুলো খেতে হবেনা। নিলেই খেতে হবে? ভালো না লাগলে রেখে দাও”।
২০০৬
সালে দ্বিতীয়বার পরিবারের পাঁচজন মিলে দেশে গেছি। দেশে যাওয়ার সময় একমাস আগে থেকেই
হুলুস্থুল শুরু হয়ে যায়। পাঁচজন মিলে দশটি স্যুটকেস নিতে পারবো জেনে আমি পাঁচমাস
আগে থেকে বাজার শুরু করি। আহামরি কিছুই কিনিনা। তবে সবার জন্য টুকিটাকী কিনে নেয়ার
চেষ্টা করি। পাঁচমাসে একটু একটু করে কিনতে কিনতে দেখা যায় জিনিসের পাহাড় জমে গেছে।
একবার যখন কিনেইছি তখন সবকিছু লাগেজে না আঁটানো পর্যন্ত আমার শান্তি নেই। আমার
স্বামী ভদ্রলোক আমার এই ধরনের দৌরাত্ম্যপনা মুখ বুজে সহ্য করেন। মেয়েরা সহ্য না
করে যাবে কোথায়! দশটা লাগেজ ফাটিফাটি করা অবস্থায় নিয়ে যাই এয়ারপোর্টে। আমার
মেয়েরা প্রশ্ন করেনা কার জন্য এতকিছু নিয়ে যাই। ওরা জানে দেশে গিয়ে অমুক বুয়া,
ওপাড়ার বিন্তি থেকে শুরু করে মায়ের স্কুলের দারোয়ান, দপ্তরীদের জন্যও কিছু না কিছু
থাকে। জিনিস কেনা আমার কাজ, জিনিস স্যুটকেসে ঢুকানোও আমার কাজ কিনতু এয়ারপোর্টে পৌঁছে
ওভারওয়েইট লাগেজ টানাটানি থেকে শুরু করে চেক ইন করতে গেলে মেয়ে মিশাকে আমার পাশে
চাইই চাই। আমার মেজো মেয়েটি মায়ের চেয়ে অনেক বেশী পছন্দ করে তার বাবাকে। তারপরেও
আমার বিপদের দিনে সেইই আমার একমাত্র সহায়। লাগেজ চেক ইন করিয়ে দিয়ে আমার দিকে একটা
কৌতুক মিশ্রিত দৃষ্টি যখন হানে, আমি বুঝে যাই কি এর মানে।
সেবার
আমরা গিয়েছিলাম গালফ এয়ারে, কারন টিকিট একটু সস্তায় পাওয়া গিয়েছিল। এখানেও একটা
ব্যাপার আছে। আমার স্বামীর প্লেন ফোবিয়া আছে, ২০০১ এর প্লেন হাইজ্যাকিং এর পর থেকে
ফোবিয়া বাড়ছে। আমি সেই জন্য মিডল ইস্ট এর এয়ারলাইন্স পছন্দ করি। স্বামীকে অভয় দেই,
মিডল ইস্টের এয়ারলাইন্স কেউ হাইজ্যাক করবেনা। গালফ এয়ারে আমার কথাতেই টিকিট
কেটেছিল। এয়ারলাইনস হিথরো বিমানবন্দরে পৌঁছেই বেগড়বাই শুরু করেছে। প্রথমে বুঝিনি। আমাদের
লন্ডন টু ঢাকা ফ্লাইট ডিলে হতে দেখে আমার হুঁশ এসেছে। স্পীকারে জানানো হচ্ছিল ‘টেকনিক্যাল
ত্রুটির’ জন্য দেরী হচ্ছে। আমারতো ভয় ঢুকে গেছে মনে। পাশে বসা স্বামীকে বলি, “ এই
যাওনা, একটু দেখে আসোনা, কি সমস্যা হচ্ছে। চারঘন্টা অলরেডী পার হয়ে গেছে”। আমার
স্বামী হাসতে হাসতে বললেন, “ যাই ঘটে থাকুক, আমিতো এর কিছুই বুঝবোনা। চুপচাপ বসে
থাকো। প্লেন ঠিক হলে তোমাকে নিয়ে উড়বে”। আমি একটুক্ষন চুপ করে থেকে আবার খোঁচাই
স্বামীকে। এবার আমার বর বললো, “ তুমি নিজেওতো গিয়ে দেখে আসতে পারো। তোমার মনে যা
যা প্রশ্ন আছে ওদেরকে জিজ্ঞেস করে আসতে পারো”।
বুঝলাম
এই দিক থেকে সাহায্য পাবোনা। অথচ টেনশান বেড়েই যাচ্ছে আমার। এয়ারলাইনস থেকে
যাত্রীদের সবাইকে ম্যাঙ্গো জুস, কুকী খেতে দেয়া হচ্ছিল। বাঙ্গালীদের দোষ দেয় সবাই,
ঐদিন দেখলাম প্লেনের সকল যাত্রী হুমড়ী খেয়ে পড়েছে একটু জুস পাওয়ার আশায়। আমি
বাঙ্গালী ছিলাম সবার পেছনে। আমার চেহারাতে টেনশান দেখে এবার আমার মুশকিল আসান মেয়ে
মিশা দুই হাতে জুসভর্তি দুই কাপ এনে বললো, “ মা, টেনশান করে কোন লাভ নাই। নাও সাইড
লাইন দিয়ে ঢুকে তোমার জন্য জুস নিয়ে আসছি। আমি জানি তোমার মেয়ের এমন কীর্তিতে তুমি
খুশীই হবে। তাকিয়ে দেখো লাইনের অবস্থা, তুমি যেখানে দাঁড়িয়েছিলে, জুস আর পেতে না।
দেখো তোমার জন্য দুই কাপ জুস এনেছি। চুপচাপ বসে বসে জুস খাও। কেউ জানেনা কি হয়েছে,
জিজ্ঞেস করে এসেছি একজন এয়ারহোস্টেসকে, বলেছে টেকনিক্যাল সমস্যা”। আমি বলি, “
দেখনা চেষ্টা করে, কাউকে আবার জিজ্ঞেস কর, কত বড় সমস্যা, প্লেন আকাশে উঠেই কি
ভেঙ্গে পড়বে নাকি”? মিশা বললো, “ এবার দিদিসোনাকে পাঠাও। আমি বার বার যাবো কেনো”? বড়মেয়েকে
জিজ্ঞেস করে লাভ নেই, তবুও বললাম, “ ও মামনি, আমার ভয় লাগছে। তুইতো ভালো ইংরেজী
পারিস, যা না গিয়ে একটু ডিটেইলে জেনে আয়না মা, সমস্যা কতটা গুরুতর”। মেয়ের জবাব, “
তুমি নিজেওতো ইংরেজী বলতে পারো, তুমিই জিজ্ঞেস করো। তোমার ভয় পাওয়া মুখ দেখলেই ওরা
সব বলে দিবে। আমি যাচ্ছিনা, কারন প্রথম কথা, আমি জানি যতক্ষণ পর্যন্ত ওরা প্লেন এর
ত্রুটি সারাই না করতে পারবে প্লেন নিয়ে ওরা উড়বেনা। প্লেনে শুধু তুমি আর আমিই
যাচ্ছিনা, চারশ যাত্রী যাচ্ছে, পাইলট, ক্রু যাচ্ছে, তাদের জীবনের মায়া নেই? শুধু
শুধু টেনশান করে শরীর খারাপ করছো কেনো”? আমি শুধু বললাম, “ ফাজিল মেয়ে, বেশী
জ্ঞাণী হয়ে গেছো। এরপরে আর একটাও কথা শুনতে চাইনা তোমার কাছ থেকে”। আমার মত আর
কাউকেই এই ব্যাপারে চিন্তিত দেখলাম না। ঘুরেফিরে আবার স্বামীর কাছে যেতেই এবার
স্বামী বললেন, “ শোন, সবার যা হবে আমাদেরও তা হবে। প্লেনে এমন যান্ত্রিক গোলযোগ
হতেই পারে। এত দেরী হচ্ছে কারন ওরা ভাল করে খুঁজে খুঁজে দেখছে। ঠিক হলেই প্লেন
ছাড়বে”।
আমি
বললাম, “ আসলে আমরা মরে গেলে কোন ক্ষতি নেই। আমাদের মেয়েগুলো জীবনের কিছুই
দেখলোনা, কোন কারন ছাড়াই যদি এভাবে বেঘোরে ওদের প্রাণ দিতে হয় সেটা কেমন হবে”।
আমার বড় মেয়ে ফট করে বললো, “ মৃত্যু আসার আগেই তুমি মরে যাচ্ছো। নিজে টেনশান করছো
আমাদেরকেও ভয় দেখাচ্ছো। তুমি ঘুমের ট্যাবলেট খেয়ে ঘুমিয়ে পড়ো, প্লেন ঠিক হয়ে গেলে
আমরাই তোমাকে ধরাধরি করে প্লেনে বসিয়ে দেবো। ঘুমিয়ে ঘুমিয়ে দেশে গিয়ে চোখ খুলবে।
এর আগে না”।
আমি
বুঝতে পারছিলাম, আমি খুব বেশী রিএক্ট করে ফেলছি। এবার চুপ হয়ে গেলাম। তারপরেই
নিজের মনকে সান্ত্বণা দিলাম, পাইলট, এয়ারহোস্টেস সকলেইতো আমাদের সাথে উঠবে। প্লেন
একসিডেন্ট হলে ওরাওতো মারা যাবে। নিজের মৃত্যু কি কেউ চায়! তাহলে নিশ্চয়ই প্লেন
ভালো করেই ঠিক করবে। মনে মনে এগুলো বলছিলাম, আর কারো সাথেই কথা বলছিলামনা। এক সময়
মিশা আরেক কাপ জুস হাতে করে এসে বললো, “ ভালো খবর নিয়ে এসেছি। প্লেন এক্কেবারে ঠিক
হয়ে গেছে। একটু পরেই ছাড়বে। তুমি ম্যাঙ্গো জুস ভালোবাসো বলে এবার আরেক কাপ নিয়ে
এলাম তোমার জন্য। জুস শেষ হয়ে গেছে, এয়ারহোস্টেসের সাথে খাতির করে এক্সট্রা কাপ
এনেছি তোমার জন্য। আর রাগ করে না থেকে জুসটা খাও। এখনই প্লেন ছাড়বে”। আমার ঘাম
দিয়ে জ্বর ছাড়লো। প্রথমে ভেবেছিলাম মিশা আমাকে খুশী করার জন্য এমন ইতং বিতং করছে।
কিনতু পাঁচ মিনিটের মধ্যেই যখন প্লেন ছাড়ার এনাউন্সমেন্ট শুনতে পেলাম তখন বুঝলাম
মিশা সঠিক খবর নিয়ে এসেছে। এরপরে আর কোন অসুবিধা হয়নি। প্লেন ছেড়েছে ঠিকভাবেই।
প্লেনে
উঠেই চারিদিকে অনেক বাঙ্গালীর ক্যাঁচর ম্যাঁচর শুনতে পেলাম। আমার কি যে ভালো লাগতে
শুরু করলো। আমেরিকাতে যেখানে থাকি বাংলা কথা শুনতে পাইনা তেমন করে। এখন লন্ডনের
আকাশে সিলেটি বাংলা শুনে বেশ ভালো লাগতে শুরু করলো। বাচ্চাদের ট্যাঁ ট্যাঁ
শুনছিলাম। কানে তালা লাগার জোগাড়। তবু ভালো লাগছে। বাথরুমে যাওয়ার ইচ্ছে ছিল।
মিশাকে ইন্সপেকশানে পাঠালাম। মিশা এসে দুঃসংবাদ দিল। প্লেনের বাথরুমের ছোট্ট
ঘরটিতে নাকি বাচ্চাদের নোংরা ডায়াপার পড়ে আছে। এই এক সমস্যা। বাঙ্গালী পৃথিবীর যে
কোন প্রান্ত থেকেই প্লেনে উঠুক না কেনো, প্লেনে উঠেই তারা এটাকে নিজের ঘরবাড়ি
বানিয়ে ফেলে। গেলামনা আর বাথরুমে। প্লেন ঢাকার কাছাকাছি আসতেই বাংলাতে ঘোষণা শুনতে
পাচ্ছিলাম, “আপনারা দয়া করে বাথরুম নোংরা করবেন না। বাচ্চাদের নোংরা ডায়াপার ডাম্প
করার জন্য বাথরুমেই ট্র্যাশ ক্যান রাখা আছে। দয়া করে নোংরা ট্র্যাশ ক্যানে ট্র্যাশ
করুন”।
ঢাকাতে
প্লেন এর চাকা মাটি স্পর্শ করার সাথে সাথে আমার চেহারাতে আলো ফুটে উঠলো। ভুলে
গেলাম ঘটে যাওয়া যত ঘটনা-অঘটনা। এয়ারপোর্ট থেকে বেরিয়েই মিশে গেলাম রিসিভ করতে আসা
প্রিয়জনের মাঝখানে।
নিজের অভিজ্ঞতায় দেশের মাটির প্রতি টান আর গহীনে থাকা অনুভব, ছুঁয়ে দ্যায় এক অদ্ভুত বোধে । সরল, সহজিয়া উপলব্ধি, যেন নিজেকেই খুঁজে পাই এক অন্য আলোয়, অন্য দর্পণে । লেখিকার জন্য শুভেচ্ছা, নিরন্তর ।
ReplyDelete