Wednesday, May 29, 2013

'ধানী মরিচে'র জন্মদিনে!

আজ ২৯শে মে, আমার ছোট ভাই, 'ধানী মরিচে'র শুভ জন্মদিন। মা' কে ছাড়া প্রথম জন্মদিন। তাই মায়ের দেয়া নামেই আজ ওকে সম্বোধন করছি।   কাল রাত থেকেই আমি অপেক্ষা করছিলাম, আমাদের দুপুর একটা, বাংলাদেশ সময় রাত বারোটা বাজার সাথে সাথে আমি ধানী মরিচকে ফোন করে বার্থডে উইশ করবো। সকাল এগারোটায় অফিস গিয়েছি, দুপুর একটায় ওর নাম্বারে কল দিয়েছি, শুনি 'এই মুহূর্তে সংযোগ দেয়া যাচ্ছে না"! জানতাম, এমনটাই হবে। 'ধানী মরিচ'  ছোটবেলা থেকেই এরকম স্বভাবের। সন্ধ্যারাতেই কাঁথামুড়ি দিয়ে ঘুমালে নাকি স্বাস্থ্য ভাল থাকে, তাই রাত দশটা বাজতেই ধানী মরিচ ঘুমিয়ে পড়ে, শীত, গ্রীষ্ম বারোমাস।

ছোটবেলায় আমি, মেজদা আর ছোটভাই, একসাথে পড়তে বসতাম। একটা তক্তপোশে ( আমরা বলতাম 'চকি') তিন ভাইবোন গোল হয়ে বসে পড়াশোনা করতাম। রান্নাঘরে  মা হয়তো রাতের খাবারের জন্য রুটি  তৈরী করছেন, বাবা হয়তোবা তখনও রাতের অফিস সেরে বাসায় ফিরেননি। রাত আটটা বাজার সাথে সাথে  ছোটভাই বইখাতা মুড়ে রেখে লম্বা হয়ে শুয়ে পড়তো। ওর  একটা সবুজ রঙের গায়ের চাদর ছিল, চাদরের পাড়ে ছিল ছোট ছোট প্রজাপতি ছাপ। খুবই সস্তা দামের চাদর, শীতের সকালে গ্রামদেশে বাচ্চারা এই চাদর মুড়ি দিয়ে ঘুরে বেড়ায়। আমার ভাইটাও এই চাদরটাকে আশেপাশেই রেখে দিত। রাত আটটার মধ্যে যদি মায়ের রুটি বানানো শেষ না হতো, তাহলে ভাই সবুজ রঙের চাদরে পা থেকে মাথা পর্যন্ত ঢেকে শুয়ে পড়তো। শুয়ে পড়ার আগে অবশ্য মা'কে ডেকে বলতো, " মা, আমার পেটের মধ্যে জ্বর আইছে, আমি ঘুমায় থাকি"। এই বলে আর মুহূর্ত দেরী করতো না, কারণ দেরী হলেই বাবার চলে আসার সম্ভাবনা। বাবা বাসায় ফিরে আসা মানেই ইংলিশ বই নিয়ে পড়তে বসা। ও বেশী পড়াশুনা করতে চাইতো না। ঘরে সবার ছোট বলে আহ্লাদটা একটু বেশী পেত। আমার বা মেজদার সাহসে কুলাতো না বাবা বাসায় ফেরার আগে অমন করে সটান শুয়ে পড়তে। মায়ের পক্ষপাতিত্ব ছিল ছোট ছেলের প্রতি। বাবা বাসায় ফিরে ওর কথা জিজ্ঞেস করলেই মা  হেসে হেসে বলতো, " ওর নাকি পেটের মধ্যে জ্বর আসছে", অথচ আমার আর মেজদার নামে মা প্রতিদিন বাবার কাছে বিচার দিত, বিশেষ করে মেজদার নামে, আর বাবার হাতে উত্তম মধ্যম খেতাম আমরা। আমার ভাই টাইম সম্পর্কে সচেতন সেই ছোটবেলা থেকেই। আমার দাদু ঘড়ির আন্দাজ করতেন ভাইয়ের শুয়ে পড়া থেকে। রাত 'আটটা'র একচুলও এদিক সেদিক হতো না। ওর স্বাস্থ্য খুবই হালকা পাতলা ছিল বলে ও বলতো, ' আগে আগে শুয়ে পড়লে স্বাস্থ্য ভাল হয়'!

ছোটভাই সন্ধ্যারাতে ঘুমিয়ে পড়ার ফল ভোগ করেছিল একবার। তখন অবশ্য ও  ক্লাস এইটে পড়ে, হাফ ইয়ার্লি পরীক্ষায় 'হিন্দুধর্মশিক্ষা'য় ১৩ পেয়েছিল। প্রগ্রেস রিপোর্ট দেখে মায়ের তো মাথায় হাত। আমরা সবাই ক্লাসে ফার্স্ট হতাম আর ছোট ভাই পরীক্ষায় এক সাব্জেক্টে ফেল! তাও আবার আমার মায়ের মত এমন ধর্ম বিশেষজ্ঞের ছেলে হয়ে! আমার মা ছিলেন স্কুল শিক্ষিকা, সাধারণ গনিত, সমাজ বিজ্ঞান পড়ানোর পাশাপাশি হিন্দুধর্মও পড়াতেন। সেই মায়ের ছেলে হয়ে সে ধর্মের মত এত সহজ সাবজেক্টে ১৩ পায়!!! এরপর কয়েকদিন মা ছেলের পাশে বসে থেকে ধর্ম বই পড়িয়ে ছেলেকে ধর্মে মোটামুটি পন্ডিত বানিয়ে ছেড়েছেন। বার্ষিক পরীক্ষায় সে খুবই ভাল ফল করেছে, ১৩ থেকে এক লাফে ৭৬ পেয়েছে, ক্লাসে ফার্স্টও হয়েছে। বাবারও অনেক দূর্বলতা ছিল এই ছেলের প্রতি। আমাদের মধ্যে কেউ যদি কোন বিষয়ে সর্বোচ্চ নাম্বার না পেতাম, বাবার কাছে কৈফিয়ত দিতে দিতে জান বেরিয়ে যেত। আর ছোটছেলের বেলায় বাবা খুব আহ্লাদ করে বলতো,

" থাক গিয়ে, ওরা তো ডাক্তার -ইঞ্জিনীয়ার হইবো, বড়লোক হইয়া আমারে পাত্তা দিবনা, বুড়া বয়সে আমারে কে দেখবো? আমার এই ছোটছেলের তো পড়াশুনা বেশীদূর আগাইবো না, ওরে  সাথে নিয়া আমি একটা তেলেভাজার দোকান খুলবো। বাপ বেটাতে মিলে দোকান চালাবো।"
[*** বাবার একটি আশা পূরণ হয়েছে, বাবা-মা উনাদের অবসর জীবন থেকে এখন পর্যন্ত ছোট ছেলের সাথেই আছেন। ছোট ছেলে আর তার বউ, বাবা-মাকে মাথায় করে রেখেছে। কিন্তু বাবার তেলেভাজার দোকান খোলার স্বপ্ন আর পূরণ হয় নি। বাবার ছোট ছেলে, যাকে বাবা খুব ছোটবেলায় 'সাহেব' নামে ডাকতো, একটু বড় হওয়ার পরে 'ডুলাঝাড়া' বলতো, আরও একটু বড় হওয়ার পর তেলেভাজার ব্যবসার ভবিষ্যত সহকারী  ভাবতো, সেই ছেলে ম্যাট্রিকে কমার্স গ্রুপে দ্বাদশ স্থান পেয়েছে, উচ্চমাধ্যমিকে প্রথম বিভাগ, হিসাব বিজ্ঞান অনার্সে প্রথম শ্রেনী, মাস্টার্সে প্রথম শ্রেনী পেয়ে বিসিএস পরীক্ষার ফলাফলেও ২৯তম স্থান পেয়েছিল। সে এখন সরকারী কলেজে হিসাব বিজ্ঞান বিভাগের সর্বজনপ্রিয় অধ্যাপক!***]



আমাদের ছোটভাইটির কিন্তু অনেকগুলো নাম আছে, খুব ছোটবেলায় ও দেখতে খুবই সুন্দর ছিল, তাই বাবা, মা থেকে শুরু করে আত্মীয় -স্বজনদের মধ্যে থেকেও কেউ কেউ নিজের দেয়া নামে ওকে ডাকতো। গায়ের রঙ ছিল ধবধবে ফর্সা, তাই বাবা ডাকতো  'সাহেব', ওর পোশাকী নাম মা রেখেছিলেন, সেই নামে ও স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয়ে পরিচিত। মায়ের কোলপোঁছা ছেলে ছিলেন বলে মা তাঁর কোলপোঁছাকে আরও বহু বিচিত্র নামে ডাকলেও উনার দেয়া 'ধানী মরিচ' নামটিই তার স্বভাব ও চরিত্রের সাথে মানিয়ে গেছে। ছোটবেলায় যে ছেলে খুব বেশী রকম কোমল -সুন্দর ছিল, বড় হতে হতে সেই ছেলেই কী করে যেন 'কাঠখোট্টা আদর্শবান' হয়ে গেছে। নীতির বাইরে চলে না, নীতির বিরুদ্ধে কথা বলে না, আমাদের কারো কোন অন্যায় আবদারে সাড়া দেয় না, উলটো আরও কঠিন কথা শুনিয়ে দেয়, ওর এমন পরিনতি দেখে শেষ পর্যন্ত আমরা সকলেই ওকে আড়ালে ধানী মরিচ ডাকতে শুরু করেছি। নামটা মা নিজে দিয়েছে, মা অবশ্য 'ধাইন্যা মরিচ' ডাকতো, সেটাও ওর আড়ালে। সামনাসামনি ডাকতো না। আমাদের পরিবারের অবস্থাটা এমন দাঁড়িয়েছে যে, কোন একটি সিদ্ধান্ত নেয়া হলো, আমাদের সকলের মিলিত মতামতে কিছুই যাবে আসবে না, যতক্ষণ 'ধানী মরিচ' মতের পক্ষে সমর্থণ না দেয়, ততক্ষণ পর্যন্ত কেউ শান্তি পাই না। ধানী মরিচের সমর্থণ মানে নৈতিক সমর্থণের মত। অধ্যাপনা করে তো, তার উপর আবার 'হিসাব বিজ্ঞান' পড়ায়, ন্যায়-অন্যায়, পাপ-পুণ্য বিচার করে চলা মানুষ, সে 'হ্যাঁ' বলা মানেই যুদ্ধ না করে যুদ্ধজয়ের মত ব্যাপার! খুবই টেনশানে থাকি, নিজেদের মধ্যে কথা বলি, একজন আরেকজনকে জিজ্ঞেস করি, 'প্রফেসার কী বলে? প্রফেসার হ্যাঁ না করা পর্যন্ত তো 'বিল' পাস হবে না। তার উপর এই প্রফেসার হচ্ছে 'একগুঁয়ে', যাকে আমরা রাগের চোটে 'ঘাউরা' ডাকি, নাহলে বলি, 'ঘাড় ত্যাড়া' পোলা একটা।

আমি ব্লগে লেখালেখি করি, এইনিয়েও ভয়ে কাঁটা হয়ে থাকি। আমার বড়দা তো সরল মানুষ, আমার সব লেখাতেই 'হ্যাঁ' বলে, মেজদাকেও 'হ্যাঁ' বলতেই হয়, নাহলে আমার হাতে 'মাইর' খাওয়ার সম্ভাবনা থেকেই যায়, কিন্তু 'প্রফেসার' কে নিয়ে সমস্যা। সে বাবার কাছে নালিশ করেছিল একদিন, বাবা আমাকে ফোন করে এমন ধ্যাতানী দিয়েছিল যে অভিমানে আমি দুই মাস কারো সাথে কথা বলিনি। এতে করে হয়তো প্রফেসারের মনটাও কিছুটা ভিজেছে, হয়তো মনে পড়েছে ছোটবেলায় এই ফুলদি'র কোলে চড়ে বেড়িয়েছে, এই ফুলদি'কে সে 'তুতু' ডাকতো, সেই ছোটবেলার 'তুতু'র সাথে এত কঠিন হওয়া বোধ হয় ঠিক না, তার উপর মা'ও চলে গেলো, সবেধন নীলমনি একটাই বোন, সেও যদি এমন গাল ফুলিয়ে থাকে , তাহলে চলে কী করে! তাই হয়তো আর কখনও বাবার কাছে আমার বিরুদ্ধে নালিশ করেনি। আমিও সবদিক বিবেচনা করে, ভেবে চিনতে লেখালেখি শুরু করেছি। ভয়ে ভয়ে ওকে ফোন নয়া করে ওর বউকে ফোন করে ওর কুশল জানি, তবুও ধানী মরিচকে ফোন করি না। মাঝে মাঝে ছোটমাসীকে ফোন করে ধানী মরিচের কথা জিজ্ঞেস করি, মাসীও উত্তর দেয়, " মাগো মা, ওর কথা কইতে পারবো না, এই নীতিবাগীশ যখন মুখ খুলে, ভয়ে বুক কাঁপে"। এই যখন অবস্থা, তখন তাকে ধানী মরিচ নয়া দেকে করবো কী! ভালো কথা, যে বা যারা ধানী মরিচ সম্পর্কে কিছুই জানে নয়া, তাদের জন্য বলে রাখি, ধানী মরিচ দেখতে খুব ছোট হয়, কিন্তু এর ঝাল হয় আকাশ ছোঁয়া!

ছোট ভাইটাকে নিয়ে অনেক রসিকতা করলাম, কারণ আমার ভাইটি কঠিন নীতিবাগীশ হলেও  দারুণ রসিক, ওর হিউমার সেন্স খুবই ভাল। স্মৃতিশক্তিও খুব প্রখর, এতদিন ভেবেছি,  মায়ের প্রখর স্মৃতিশক্তি বোধ হয় আমার এবং মেজদার মধ্যেই আছে, কিন্তু এখন বুঝেছি, ধানী মরিচের স্মৃতিশক্তি খুবই প্রখর। সে কথা কম বলে, তাই তাকে সব সময় পরিমাপ করা যায় না। ছোটবেলার স্মৃতিকথা নিয়ে গল্প করতে আমি আর মেজদা বরাবরই ভালোবাসি, মায়ের সাথে বসে আমরা অনেক গল্প করতাম। ধানী মরিচকে গল্পের আসরে ডাকতাম না,  ভাবতাম, একেতো ও আমাদের চেয়ে অনেক ছোট, কিছুই মনে থাকার কথা না, তার উপর আবার পেশাগত জীবনে 'হিসাববিজ্ঞানের' অধ্যাপক, হিসেবের বাইরে কথা বলে না, কিন্তু ধারণা ভুল। ছোটবেলার অনেক কথা ওর মনে আছে। ওর মনে আছে, আমাদের ছোটবেলা কেটেছে খুবই সাধারণভাবে, একটি সাধারণ মধ্যবিত্তের সংসারে যতটুকু মেপেজুখে চলা সম্ভব, তার চেয়েও বেশী অর্থনৈতিক চাপাচাপির মধ্যে আমরা বড় হয়েছি। আমার এই ভাইটি অধ্যাপনা শুরু করার সাথে সাথে আমার মা-বাবার সংসারে স্বচ্ছলতা আসুক আর নাই আসুক, রান্নাঘরে প্রতিবেলাতে পাঁচ -ছয় পদের কম আইটেম রান্না হয় না। মা মাছ খেতে ভালোবাসতেন বলে মায়ের কোলপোঁছা ছেলে বাজারের সেরা মাছ এনে বারান্দা ভরে ফেলতো। অধ্যাপকের বউটিও হয়েছে ভারী লক্ষ্মী। স্বামীর এই সকল হুজ্জোতেপনা হাসিমুখেই মেনে নেয়। অধ্যাপক হয়তো বা বিকেলে কোথাও ঘুরতে বেরিয়েছে, ফেরার পথে দেখতে পেলো, টাটকা মাছের ঝুড়ি নিয়ে জেলে বসে আছে, অধ্যাপক সাথে সাথে কিনে ফেলবে সেই মাছ। বাড়ী নিয়ে আসবে, অধ্যাপকের মা বাজার দেখে আহ্লাদে মুখ গদগদ করে হাসি দিবে, ছেলের প্রশংসায় গলে গলে পড়বে, এটাই ছিল আমাদের বাসার পরিচিত দৃশ্য।

এ বছর দৃশ্যপট বদলে গেছে। মা নেই, চলে গেলো গত অক্টোবার মাসে, অধ্যাপক ছেলে এখনও বাজার থেকে রাশি রাশি মাছ কিনে আনে, মায়ের ছবির কাছে গিয়ে হয়তো মনে মনে বলে, " মা, তুমি এভাবে চলে গেলা, এখন বারান্দা ভরে মাছেরা খেলা করে, মাগুর, শিং, কই মাছ লাফালাফি করে, কাছে থেকে তো দেখতে পাও না, দূর থেকেই দেখো, তুমি না দেখা পর্যন্ত আমার শান্তি লাগে না"! মা হয়তো কোন না কোনভাবে উনার ছেলের মনের আকুতি বুঝতে পারেন, নাহলে তো আবার সমস্যা আছে, ' ধাইন্যা মরিচ' হয়তো রেগে গিয়ে বাজার করাই বন্ধ করে দিবে।

আর কিছু লিখতে চাই না। আমার ভাইগুলি একেকটি রত্ন, যাকে নিয়েই লিখতে শুরু করি, হাত ব্যথা হয়ে যায়, লেখা শেষ হয় না। কত কথা বলতে পারতাম আমার এই ছোট ভাইকে নিয়ে। কলেজে ছাত্রছাত্রী-সহকর্মীদের মধ্যে কী যে জনপ্রিয়তা, হবে নাই বা কেন, আমার ভাইটা তো আর একালের ব্যবসায়ী মনোবৃত্তি নিয়ে ছাত্র পড়ায় না! ও একজন আদর্শ শিক্ষক! যে কলেজেই ওর পোস্টিং হোক, সেখানেই কিছু গরীব ছাত্র ছাত্রীকে ও বিনে পয়সায় পড়ায়! সংসারেও ও খুব দায়িত্ববান, বাবা-মা, স্ত্রী, দুই ছেলেকে যথেষ্ট সময় দেয়, টিউশনী নামক যান্ত্রিক পেশায় নিজেকে জড়ায় নি। কখনও ছাত্র-ছাত্রীদের জীবন নিয়ে ছিনিমিনি খেলেনি, পড়ানোতে ফাঁকী দেয় না, সিলেবাস বাকী রাখে না, এমন একটি ভাইকে নিয়ে রসিকতা করতে 'সাহস' লাগে। আর কারো সেই সাহস নেই, আমার সাহস আছে বলেই এত কথা লিখলাম। 'সাহস' কী আছে? একটু আগেই তো ওকে ফোন করে বললাম,
" তোকে নিয়ে কিছু স্মৃতিচারণ করেছি, ওয়ালে পোস্ট করবো? রাগ করবি না তো"!
আমাকে অবাক করে দিয়ে সে বলে, " রাগ করবো কেন, তুমি দাও। ব্লগে লেখা নিয়ে একবারই রাগ করেছিলাম, তখন পরিস্থিতি কারো অনুকূলে ছিল না, সেইজন্য। এখনতো আর কিছু বলি না।"

সকালে ওকে ফোন করেছিলাম, ফোন তখনও বন্ধ। বাবার নাম্বারে কল দিলাম, বললাম, " বাবা, আজকে তো রানুর জন্মদিন।" বেচারা বাবা অবাক হয়ে গিয়ে উলটো প্রশ্ন করেছে আমাকে, " আজকে রানুর জন্মদিন? কই, আমি জানিনা তো"! বললাম, " যিনি জানাতেন, উনি তো এখন আর নাই, তাই তুমি জানো না, অসুবিধা নাই, আমিই তো এখন মায়ের দায়িত্ব নিয়েছি, তোমাকে জানালাম। তুমি ওকে প্রাণভরে আশীর্বাদ করো।" ফেসবুকে দেখি, অনেক আগেই বড়দা ওকে বার্থডে উইশ করেছে, মেজদাও করেছে, মেজ বৌদি করবে, সুনামগঞ্জ থেকে মাসী করবে, হবিগঞ্জ থেকে মিত্রা ফোন করবে, ওর ছাত্র ছাত্রীরা করবে, আদরের ভাগ্নী মিশা করবে!!! সবাই করবে, শুধু এই বছর ওর জন্য কালীবাড়ীতে কেউ পূজা পাঠাবে না, সেই মানুষটা তাঁর 'ধাইন্যা মরিচ'কে স্বর্গ থেকে আশীর্বাদ করবে। মায়ের বৌমা নিশ্চয়ই তার প্রফেসার স্বামীকে আমাদের  সকলের আগে 'হ্যাপী বার্থ ডে' বলেছে, আদরের টুকরা নাতি 'অতনু' বলেছে ' হ্যাপী বার্থডে বাবা', আরেক নাতি যীশু নিশ্চয়ই তার বাবার কাঁধে চড়ে বসে আছে!

শুভ জন্মদিন রানু, আমরা তোকে অনেক অনেক ভালোবাসি! কঠিন আবরণে নিজেকে ঢেকে রাখলেও তোর অন্তরের স্বচ্ছতা আমাদের কারো নজর এড়ায় না!!

No comments:

Post a Comment