Thursday, February 14, 2013

স্মৃতিময় ১৪ই ফেব্রুয়ারী!!

১৪ই ফেব্রুয়ারী, ২০১৩ আমার জন্য খুব বেশীঘটনাবহুল হয়ে গেছে। আর দশজনের কাছে ১৪ই ফেব্রুয়ারী শুধুমাত্র ভ্যালেন্টাইন'স ডে, অন্যান্যবার আমার কাছেও ভ্যালেনটাইন'স ডে ছাড়া আর নতুন কিছু মনে হয় না। তাও  গত কয়েক বছর আবার ভ্যালেনটাইন'স ডে পুরোপুরিভাবে কার্যকর হতো না। দুটো কারণ; প্রথম কারণ হচ্ছে আমরা মিসিসিপির মত 'ম্যান্দা মারা' জায়গায় বছরের পর বছর ধরে বাস করতে করতে নিজেরাও 'ম্যান্দা' মেরে গেছি। বিশেষ করে আমার উত্তম কুমার তো সারাদিন রাত লিভিং রুমের এক কোনে থাকা আরাম কেদারায় এমন আরাম করে বসে থাকেন যে তার বোধ হয় ইচ্ছে করে না এক ফাঁকে ওয়ালমার্ট ঘুরে এক গুচ্ছ গোলাপ কিনে আনতে। আমি অবশ্য প্রতি বছর উত্তমের জন্য দারুণ সুন্দর সুন্দর কার্ড কিনে নিয়ে আসি। দুই নাম্বার কারণ হচ্ছে আমার কাজের স্কেজিউল। এদেশের জাতীয় ছুটির দিন গুলোতে আমার অফ ডে থাকে না। কারণ, আমার মাথায় শুধু  ২১শে ফেব্রুয়ারী, ২৬শে মার্চ, ১৪ই এপ্রিল আর ১৬ই ডিসেম্বারের কথা মনে থাকে। এদেশের কোন ছুটির দিন তারিখ মাথায় থাকেও না, আগে থেকে ছুটিও চাওয়া হয় না।

আমার অনেক সৌভাগ্য বলতে হবে, এ বছরের ১৪ই ফেব্রুয়ারী আমার ডে অফ ছিল। আমার এমনই অভ্যাস হয়ে গেছে যে খেয়ালেই ছিল না, আমার ডে অফ পড়েছে ভ্যালেনটাইন'স ডে তে।  গত সপ্তাহে কেউ একজন ফেসবুকে লিখেছে এবার সরস্বতী পূজো আর ভ্যালেন্টাইন'স ডে একই দিনে পড়েছে। ভ্যালেনটাইন'স ডে নিয়ে আমার অত তাড়া ছিল না, আমি জানি, দুনিয়ায় ঝড় বয়ে গেলেও আমি আমার উত্তমের জন্য সুন্দর দেখে কার্ড কিনে আনবো। খুশী ছিলাম এই ভেবে যে এ বছর সরস্বতী পূজো নিষ্ঠান্ডাভাবে করতে পারবো। বিদ্যার দেবী সরস্বতী, আমার স্বামী, কন্যারা পড়াশুনার সাথে জড়িত, এ বছর থেকে আমি নিজেও লেখালেখির সাথে জড়িয়ে গেছি, আমাকে তো বাগ দেবীর অর্চ্চনা করতেই হবে!

আমি গতকাল কাজ থেকে ফেরার সময় পূজোর জন্য যাবতীয় বাজার করে এনেছি। ছোটবেলায় শিখেছি, সরস্বতী পূজোর দিন বই খুলতে হয় না, যদিও আমার বাবা বলতেন " শোন, আজ সরস্বতী মা পূজা নিতে আসবে, আজকেই তো বেশী করে পড়ালেখা করা উচিত।  দেবী সরাসরি বিদ্যা দান করবে।" আমরা যদি গাঁইগুঁই করতাম তাহলে বাংলার আশুতোষ রায়ের কথা বলতেন, আশুতোষ রায় নাকি সরস্বতী পূজার দিন বেশী করে পড়তেন। কে শোনে কার কথা,  আশুতোষ রায় কী করতেন না করতেন, সেটা ধরে থাকলেই হবে? একদিন ফাঁকী দিতে পেরে আনন্দে আটখানা হয়ে যেতাম। সেই ছোটবেলার সংস্কারের কথা মাথায় ছিল বলেই রাত দুইটা পর্যন্ত লেখালেখি চালিয়ে ঘুমাতে গেছি। জানিতো, সারাদিন পূজোতে আটকে থাকবো, লেখালেখি করতে পারবো না। কিন্তু ঘুম ভেঙ্গেছে সকাল সাড়ে আটটায়। আমার এমন আলসেমী লাগছিল যে বিছানা থেকে নামতেই ইচ্ছে করছিল না। মনে মনে ফাঁক খুঁজছিলাম, এমন কী হতে পারে যে আজকে সরস্বতী পূজো না, হয়তো কালকে পূজো। ঠিক ঐ মুহূর্তেই আমার কাছে দেশ থেকে এক বন্ধুর এসএমএস এলো। আমাকে সুপ্রভাত জানিয়ে জানতে চেয়েছে, আমার আজকের দিনের কর্মসূচী সম্পর্কে। বলেছি, আজ সরস্বতী পূজো করবো। এরপরেরটুকু জানিনা। বন্ধু জানালো, " আমাদের দেশে আগামীকাল সরস্বতী পূজো। আপনারা বারো ঘন্টা পেছনে থেকেও কী করে আজ পূজো করেন?" বন্ধুর কাছ থেকে আমার আকাংক্ষিত সংবাদ পেয়ে এক লাফে বিছানা থেকে নেমে গেলাম। হুররে!!! সারাটা দিন হাতে পেলাম,  আমি বরং একটা লেখা শেষ করে ফেলি। আগামীকাল না হয় পূজো দেবো। দেশে ছোটমাসীকে ফোন করে তিথি এবং লগ্ন সম্পর্কে নিশ্চিন্ত হয়ে ফেসবুক খুললাম। একই সাথে সিদ্ধান্ত নিলাম, পূজো আজ বিকেলে করবো, তাহলে আমার উত্তম আর মিথীলা পুষ্পাঞ্জলী দিতে পারবে।

ফেসবুক খুলতেই দেখি এক তরুণ বন্ধু মোমবাতির ছবি সহ পোস্টার আমাকে ট্যাগ করেছে। সেখানে বলা আছে, সন্ধ্যে সাতটায় দেশে সবাই একসাথে মোমবাতি প্রজ্বলণ করবে। আমিও যেনো ছবিটা দশ মিনিটের জন্য হলেও প্রোফাইল পিকচার করি। আরে! এমন একটি আবেদনে সাড়া না দিয়ে থাকা যায়! দেশে থাকলে তো আমার শাহবাগেই থাকার কথা ছিল। সকাল সাড়ে নয়টায় সেই মোমবাতির ছবিটি প্রোফাইল পিকচার করে ফেললাম। ইদানিং টিভি দেখি খুব কম। আজ টিভি অন করে চ্যানেল আই ধরলাম, বাংলা খবর হচ্ছে। খবরে সন্ধ্যে সাতটায় শাহবাগসহ সারা দেশে যে মোমবাতি প্রজ্বলণ করা হয়েছিল, সেই আবেগময় ছবি দেখাচ্ছিল। আমার খুব ভালো লাগছিল। কম্পিউটারে বসে টাইপ করি আর খবরে শাহবাগ দেখি। দারুণ মজা।

সকাল সাড়ে দশটার খবরে আরও ডিটেলসে সব দেখাচ্ছিল। শাহবাগ, সংসদ ভবন, ঢাকার রাস্তাঘাটে মানুষ আর মানুষ, হাতে মোমবাতি ধরা, চোখে মুখে কী শান্তি, কী তৃপ্তি, সব পাওয়ার আনন্দ! আমার বুক মুচড়ে উঠলো। মায়ের কথা মনে পড়লো। মায়ের কথা মনে হলেই আমি আর স্থির থাকতে পারি না। খুব কাঁদলাম, মা আর দেশ তো সমার্থক। কান্না তো আসবেই। চেয়ার ছেড়ে উঠে শোবার ঘরে গিয়ে মায়ের ছবিটা হাতে নিয়ে প্রাণ ভরে কেঁদে নিলাম। বিদেশ বিভুঁইয়ে একাকী জীবন টেনে নিয়ে যাওয়া, আর ভালো লাগে না। মনটা দেশে পড়ে থাকে। বৃদ্ধ বাবার জন্য বুকে হু হু করে। চোখ মুখ মুছে আবার এসে কম্পিউটারে বসলাম। লিখি আর ভাবি, দুপুরের জন্য কী রান্না করবো। আমি তো খাব না, কিন্তু উত্তম কুমার আসবে ক্লাস থেকে, বিকেলে মিথীলা আসবে স্কুল থেকে। ওরা জানে আমি পূজো করে ওদের জন্য প্রসাদ রেখে দেবো। তার উপর আজকে আবার ভ্যালেন্টাইন'স ডে। মিথীলার ধারণা, আজ হেভী খানা হবে। তবে মিথীলা সদ্য টিন এজে পা রেখেছে তো, তাই খুব স্বাস্থ্য সচেতন হয়ে গেছে। আগের মত উলটো পালটা খায় না।

দুপুরে নুডুলস বানিয়েছি। বেলা আড়াইটার দিকে আমার পিসী ফোন করেছে। কেমন আছি, কী করছি খোঁজ খবর নেয়ার জন্যই ফোন করেছে। পিসীর সাথে কথা বলছিলাম, এমন সময় উত্তম কুমার বাড়ী ফিরেছেন। একটু আগেই পিসীকে জিজ্ঞেস করেছিলাম, ভ্যালেন্টাইন'স ডে তে উনার ভ্যালেন্টাইন উনাকে কী উপহার দিলো? আমার পিসী খুব হিউমার জানে, বললেন, " ভ্যালেনটাইন'স ডে নামে কোন দিন আছে , তাই তো জানিনা। তোর পিসেমশায় এত রোমান্টিকও না। বরং তুইই বল, তোরে তোর উত্তম কুমার কী দিল"!
বললাম, " পিসী শোন, আমার উত্তম কুমারও  আমাকে আর ভালোবাসেনা। সে আমাকে উপহার দিবে কি? আমি যে কাল রাত বারোটার সময় খুব সুন্দর একখানা কার্ড তার শিয়রের পাশের টেবিলে রেখে দিয়েছিলাম, সে তো সেটাও খেয়াল করে দেখেনি। এবার বুঝে দেখো অবস্থা!"

পিসী জানতে চাইলো, " এত কার্ড কার্ড করছিস, কী এমন মধু লেখা আছে কার্ডে? একটা ফুল না কিছু না, শুকনা একটা কার্ড নজরে পড়বে কিভাবে"?

বললাম, পিসী, তুমি জানো, আমি এখন একজন ফুলটাইম লেখিকা, আমার পছন্দ করা কার্ডকে অত তুচ্ছ তাচ্ছিল্য করো না। ফুল ঠিক আছে, কিন্তু ফুলের মধ্যে মনের কথা লেখা থাকে না। কার্ডের মধ্যে মনের কথা লেখা থাকে"।

" তোর কার্ডে কী মনের কথা লেখা আছে ক তো, দেখি আমার মনের কথার সাথে মিলে কিনা!"

"অন্য বছরেরটা মিললেও মিলতে পারতো, কিন্তু এ বছরেরটা মিলবে না। এ বছরের কার্ডে কী লেখা আছে শোন,

 ইট'স ভ্যালেন্টাইন'স ডে অ্যান্ড আই মাস্ট রাইট এ পোয়েম, অ্যাবাউট দ্য নাইট, উই ফেল ইন লাভ"!!

-বাবারে! অনেক তত্বকথা। বেশী হাই থটের কথা। ঠিকই বলছস, আমার সাথে মিলবো না।



আমি যখন কথাগুলো বলছিলাম, উত্তম কুমার তখনই ঘরে ঢুকেছে, সে হাঁটে বেড়ালের মত, খুব আলতো করে, আমার মত হাড়ুম দুড়ুম করে বাড়ি কাঁপিয়ে হাঁটে না। ফলে তার পায়ের আওয়াজ শুনিনি। নুডুলস খেয়ে সে বললো যে সে একটু ক্ষণের জন্য বাইরে বের হচ্ছে। আমার সাথে পিসীর কথাও শেষ হয়ে গেলো। আমি আবার অসমাপ্ত লেখাতে হাত দিলাম। চারটে বাজতেই মিথীলা চলে এলো। নুডুলস দেখে খুব খুশী। আমাকে জিজ্ঞেস করলো, পাপা কোথায়? বললাম, বাইরে গেছে জানি, কোথায় গেছে জানিনা। এরপর মিথীলাকে তাড়া লাগালাম, " মিথীলা, বাবলু সোনা, শোন, খেয়েদেয়ে স্নান করে নাও, আমার সাথে পূজো দিবে।" মিথীলার মাথায় আকাশ ভেঙ্গে পড়ার অবস্থা। মাত্র স্কুল থেকে ফিরেছে আর মা বলে কিনা স্নান করে পূজো দিতে হবে! বললাম, " মনা শোন, সরস্বতী দেবী কিন্তু বিদ্যার দেবী, তোমার সামনেই সায়েন্স ফেয়ার আছে, পূজোতে আমাকে হেল্প করো, তাহলে সরস্বতী মা খুশী হবে"। মিথীলার বাবা এর মধ্যে চলে এলো।

উপরে উঠে মিথীলা বললো, " মা, তুমি একটু নিচে যাও তো, কী যেন একটা জিনিস আছে, দেখে আসো তো"। বললাম, " জিনিস টা কী তোমার পাপা নিয়ে এসেছে"? মিথীলা বলে, " আরে না! অন্য একটা জিনিস"।
" কী এনেছে তোমার পাপা'/ মিথীলা আর পারলো না অভিনয় করতে। আমার এই গুণটা মিথীলা পায় নি, বাপের মত স্বচ্ছ স্বভাব পেয়েছে। বলল, " তুমি কী করে বুঝলে, পাপা কিছু এনেছে"? তোমার কথা বলার ভঙ্গী দেখে। নীচে থেকেই যদি ডাকতে আর বলতে, মা একটু আসো, আমার একটু হেল্প লাগবে", তাহলে আমি নীচে যেতাম। হাহাহাহহাহাহা!


একটু পর উত্তমই উপরে উঠে এলো, হাতে এক গুচ্ছ তাজা গোলাপ। তিন ধরণের রঙ, সাথে ক্যান্ডি বার। "হ্যাপী ভ্যালেন্টাইন'স ডে' উইশ করে ফুল আমার হাতে দিল। ফুল খুবই আনন্দের সাথে গ্রহণ করলাম, আর বললাম, " এত দাম দিয়ে গোলাপ আনতে গেলে কেন? আচ্ছা যাও, গোলাপগুলো একটা ফুলদানীতে জলে ভিজিয়ে রাখো"। কথাটা বলেই মনে মনে প্রমাদ গুনলাম। এইরে! এখনই হয়তো বলবে, " সব সময় এত এত দামী এত দামী করো কেন? তোমার স্বভাবটা একটুও পাল্টালো না"। কিন্তু উত্তম কুমার তো, তাই এমন সুন্দর মুহূর্তে আর কঠিন কিছু বললো না। মুচকী হাসি দিয়ে নীচে নেমে গেল। এবার আমাকে উঠতেই হয়। সন্ধ্যে ছয়টা বাজে, এখনও যদি টেবিল না ছাড়ি, রান্না করবো কখন, পূজোই বা দিব কখন। নীচে গিয়ে দেখি, কিচেনের কাউন্টার টেবিলের উপর দুই বাক্স গ্রিলড চিকেন। সিদ্ধান্ত নিয়ে ফেললাম, মটরশুঁটি দিয়ে ভুনা খিচুড়ি, বেগুন ভাজা, গ্রিলড চিকেন আর আনারসের চাটনি। ভ্যালেনটাইন'স ডে কাম সরস্বতী পূজোর খাওয়া। ঝটপট রান্না বসিয়ে দিলাম, খিঁচুড়ি চাপিয়ে স্নানে চলে গেলাম। মা আর মেয়ে একসাথে বসে গেলাম পূজোর আয়োজন করতে। মিথীলা কবে থেকে যে এত কাজের হয়ে গেলো, জানতেই পারলাম না। অনেক হেল্প করেছে আমাকে। পূজো শেষে পুষ্পাঞ্জলী দিতে ডাকলাম দু'জনকে। বাপ আর মেয়ে আমার পাশে খুব ভক্তি নিয়ে বসেছে। উত্তমের ইদানিং মেঝেতে বসতে খুব কষ্ট হয়। তবুও মেঝেতে কোমড় বাঁকিয়ে বসে পুষ্পাঞ্জলী দিল। অঞ্জলী শেষে যখন সে আবার তার আরাম কেদারায় যাওয়ার জন্য প্রস্তুত, বললাম,

" অ্যাই শোন না, বেগুন কেটে হলুদ আর লবন মাখিয়ে রেখেছিলাম, আমার আরও কিছুটা সময় লেগে যাবে এদিকটা শেষ করতে, তুমি নন স্টিক প্যানে অল্প তেলে বেগুন গুলো ভেজে ফেলো না গো"!

উত্তম কুমার একটু চমকে উঠেছে। বুঝলাম না, চমকালো কেনো? বেগুন ভাজতে বলেছি বলে, নাকি অনেক অনেক দিন পর অমন আহ্লাদী সুরে কথা বলেছি বলে। আমি অনেকদিন হয়ে গেলো, অমন ঢং করে কথা বলা ভুলেই গিয়েছি। যাক, ভ্যালেন্টাইন'স ডে বলে কথা। আমরা দুজনেই দু'জনের ভ্যালেনটাইন, কাজেই রেডি করে রাখা বেগুন ভাজতে আর কষ্ট কী! উপরে বসে থেকেই কড়াই-খুন্তির টুং টুং আওয়াজ পাচ্ছিলাম। যাক! নিশ্চিন্ত হওয়া গেলো। এবার আমি নিশ্চিন্ত মনে দেবী সরস্বতীর কাছে আরেকটু বিদ্যে -বুদ্ধি চাওয়ার চেষ্টা করলাম। নিজের জন্য চাইলাম, উত্তমের জন্য চাইলাম, তিন কন্যার জন্য চাইলাম, আত্মীয়-পরিজনের জন্য চাইলাম, ব্লগারদের জন্য চাইলাম, সকল বন্ধুর জন্য চাইলাম, সর্বোপরী বাংলাদেশের তরুণ-তরুণীদের জন্য চাইলাম, এদের হাতেই তো দেশের ভবিষ্যত, বিদ্যার্জণ না হলে দেশ চালাবে কী করে!

No comments:

Post a Comment