Saturday, January 20, 2018

প্রস্তর যুগের পথে!


ধর্ষণ তাও আবার উন্মুক্ত উঠোনে, স্বামী-সন্তানের সামনে? কখন এমন ঘটনা ঘটে? যুদ্ধক্ষেত্রে ঘটে, যেমনি ১৯৭১ সালে মুক্তিযুদ্ধের সময় ঘটেছিল বাংলাদেশে। পাকিস্তানী মিলিটারী আর বাংলাদেশের রাজাকার, আলবদরেরা প্রতিদিন বাঙ্গালী মেয়েদের 'মুরগী ধরা'র মত ধরে নিয়ে যেত, দিনরাত ধর্ষণ করে শরীরের ক্ষিদে মিটিয়ে মেয়েগুলোকে মেরে ফেলতো। মেরে ফেলার আগে ফ্যানের আংটার সাথে চুল বেঁধে ঝুলিয়ে মেয়েগুলোর স্তন কেটে দিত, ঠোঁট কেটে দিত, সারা শরীর কামড়ে ক্ষত বিক্ষত করে দিত, শেষে বেয়নেট বা বন্দুকের নল মেয়েদের নিম্নাঙ্গে ঢুকিয়ে দিয়ে উল্লাস করতো।
সেতো ১৯৭১ সালের কথা, এখন ২০১৬ সাল। বাংলাদেশ স্বাধীন হয়েছে ৪৫ বছর আগে। আমরা এখন বিশ্বে মধ্যম আয়ের দেশ! বিশ্বে 'বাংলাদেশ'-এর নাম এখন অনেকেই জানে। বাংলাদেশ এখন 'মডারেট' মুসলিম দেশ। 'মডারেট' দিয়ে কি বুঝানো হয় তা আমার জানা নেই। বাংলাদেশের সরকার, বিরোধীদল, বুদ্ধিজীবীদের সকলেই বলেন, বাংলাদেশ একটি 'অসাম্প্রদায়িক' দেশ। অত্যন্ত আনন্দের কথা, বঙ্গবন্ধু শেখ মুজিবুর রহমানতো এমনই একটি বাংলাদেশের স্বপ্ন দেখেছিলেন।
বঙ্গবন্ধু স্বপ্ন দেখেছিলেন অসাম্প্রদায়িক বাংলাদেশের, স্বপ্নের বাস্তবায়ন করে যেতে পারেননি। স্বপ্ন বাস্তবায়নের শুরুতেই তাঁকে পরিবার পরিজনসহ পৃথিবী থেকে সরিয়ে দেয়া হয়েছে। তবুও ভাগ্য ভালো বাংলাদেশের, বঙ্গবন্ধুর দুটি কন্যা প্রাণে বেঁচে গেছিলেন। নাহলে আজ বাংলাদেশের নাম বদলে বাংলাস্তান হয়ে গেলেও অবাক হওয়ার কিছু ছিলনা। বঙ্গবন্ধুর কন্যা শেখ হাসিনা বাংলাদেশটাকে 'বাংলাস্তান' হয়ে যেতে দেননি। তাই দেশের বুদ্ধিজীবী, মন্ত্রী, বিরোধী নেতাগণ মিথ্যে করে হলেও বাংলাদেশ নামের সাথে 'মডারেট, অসাম্প্রদায়িক, উদার' বিশেষণ যোগ করে তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলতে পারছেন।
২০০১ সালের কথা, রাষ্ট্র ক্ষমতায় এসেছিল বেগম খালেদা জিয়ার বিএনপি। শেখ হাসিনার আওয়ামীলীগের নৌকায় ভোট দেয়ার অপরাধে হিন্দু বাড়িগুলো আক্রান্ত হয়। পূর্ণিমা রাণী শীল, ১৪ বছরের কিশোরী, বিএনপির ক্যাডাররা দলবেঁধে পূর্ণিমাকে ধর্ষণ করে। ধর্ষণ করার মজাই আলাদা, মিনি মাগনা মেয়ে শরীর পেয়ে যাওয়া, সেই শরীর কিশোরীর নাকি যুবতীর, নাকি তিন বছরের শিশুর তা দেখার দরকার কি। নারী অঙ্গ হাতের মুঠোয় পাওয়া গেলেই হলো, আর সেই নারী অঙ্গ যদি নৌকায় ভোট দেয়া কোন হিন্দু

বাপের মাইয়ার হয়, তাহলেতো কথাই নেই। সে গণিমতের মাল, সবাই চেটেপুটে খাওয়ার জিনিস। পূর্ণিমাকেও ওরা চেটেপুটে খেয়েছিল, লুকিয়ে চুরিয়ে খায়নি। পূর্ণিমার বাবাকে স্বাক্ষী রেখে, পূর্ণিমার মাকে স্বাক্ষী রেখেই খেয়েছিল। ওরা এতজন এসেছিল পূর্ণিমাকে খেতে যে পূর্ণিমার মা ভয় পেয়ে বলেছিল, " বাবারা, একজন একজন কইরা যান, আমার মাইয়াডা ছোট"।
২০১৬ সালের জানুয়ারীর ঘটনা, বানিয়াচং-এর ঘটনা। এক হিন্দু রমনীর দেহের দিকে নজর যায় একজনের, এবার আর নৌকা বনাম বিএনপি নয়। এখন দেশে বিএনপি নেই, সবাই আওয়ামীলীগ হয়ে গেছে। তেমনই এক আওয়ামীলীগ নেতার ইচ্ছে হয়েছে হিন্দু বউটাকে চেখে দেখার। বউটাতো লাল টকটকে আপেল, লোভ সামলানো দায়। লাল আপেল কচকচ করে খাওয়ার মজাই আলাদা, আওয়ামী নেতা কচ কচ করে আপেল খেলেন, তাই দেখে আপেলের মালিক মানে বউটার স্বামী পুলিশে বিচার দেবে বলায় আওয়ামী নেতা বউটাকে আরেকবার খেলো, এবার খেলো বউটার স্বামী আর সন্তানের চোখের সামনে।
২০১৬ সালের জানুয়ারী। আরেকটি লোমহর্ষক ঘটনা, ঘটনার সূত্রপাত মামীর প্রতি ভাগ্নের যৌনক্ষুধার ছোবল! এ ঘটনা কিন্তু কোন হিন্দু পরিবারের ঘটনা নয়, এটি একটি মুসলিম পরিবারে ঘটে যাওয়া হৃদয় বিদারক ঘটনা। নারায়ণগঞ্জে একই পরিবারে পাঁচজন খুন হলো। কি কারণ? ২০ বছর বয়সী মামী লামিয়াকে তার ভাগ্নের খেতে ইচ্ছে হয়েছে। মামীতো নয়, যেন চৌধুরী বাড়ির লাল টুকটুকে মুরগী। ভাগ্নের মুরগী খেতে ইচ্ছে হয়েছে, মুরগীকে খাবে বলে কত রকমের ফন্দী, বাড়ির মালিক টের পেয়েছে জেনে ভাগ্নে তার মামী মুরগী, মুরগীর বাচ্চাসহ পাঁচজনকে কেটেকুটে খেয়ে ফেলেছে। কোন জমানায় বাস করছি আমরা?
এই হচ্ছে আমার প্রাণপ্রিয় দেশ, এই দেশটার জন্য আমরা দূরে বসে কাঁদি। বৃষ্টি বাদলা, তুষারপাত উপেক্ষা করে কাজে যাই, হাড়ভাঙ্গা পরিশ্রম করি, দেশে টাকা পাঠাই, বৈদেশিক মুদ্রার রিজার্ভ বাড়ে। রাতের নিরলে ফেসবুকে বসে দেশের ছোঁয়া পাই, দেশের গন্ধ নাক মুখ ভরে নেই, পরম তৃপ্তি নিয়ে ঘুমাতে যাই। ঘু্মের মধ্যে স্বপ্ন দেখি সবুজ ধানের ক্ষেত, নয়তো হলুদ সরষের ক্ষেত। সুন্দর মন নিয়ে ঘুম থেকে জাগি।
এমনইতো হওয়ার কথা, কিন্তু সব সময় এমন হচ্ছেনা আজকাল। মাঝে মাঝেই স্বপ্নে দেখি ভূত, আমার চারদিকে ভূত। ঘুম ভাঙ্গতেই শুনি সত্যি সত্যি ভূত এসেছিল, বাংলাদেশের কিছু কিছু বাড়িতে। ভূতগুলো বাড়ির সকলের ঘার মটকে দিয়েছে, কাউকে প্রাণে, কাউকে মানে মেরেছে। এই আমার প্রাণপ্রিয় দেশ।
আদিম যুগে মানুষ ঘরবাড়ি বানানোর বুদ্ধি বের করতে পারেনি তাই গুহায় বাস করতো, আগুন জ্বালাতে জানতোনা তাই কাঁচা মাংস খেতো, পোশাকের ব্যবহার জানতোনা, পোশাকের প্রয়োজনীয়তা বুঝতোনা, তাই উলঙ্গ হয়ে ঘুরতো, সকলেই উলঙ্গ থাকতো বলে লোকলজ্জার ব্যাপার ছিলনা।। রিপুর তাড়না সকল প্রাণীর মধ্যেই ছিল, উলঙ্গ মানুষের মধ্যেও ছিল। জৈবিক কামনা নিবৃত্ত করতে তাদের আড়ালের প্রয়োজন হতোনা। বাপ-কন্যা, ভাই-বোন, মা-পুত্র, স্বামী-স্ত্রীর ব্যাপার ছিলনা। উলঙ্গ নারী দেহ দেখে উলঙ্গ পুরুষের কাম রিপু জেগে উঠতো, যাকে সামনে পেতো তার সাথেই কাম ক্রিয়ায় মেতে উঠতো।
ধীরে ধীরে মানুষের বোধ বুদ্ধি জাগ্রত হয়েছে, বুঝতে শিখেছে দেহের উপরিভাগ (মুশশ্রী) সুন্দর হলেও নীচের অংশ ( যৌনাঙ্গ) সুন্দর নয়, এটাও বুঝতে শিখলো যে অসুন্দরকে সকলের চোখের আড়ালে রাখার কথা। শুরু হলো গাছের ছাল বাকল দিয়ে নিম্নাঙ্গ আবৃত করার প্রয়াস। শিখে গেলো পোশাক পরার প্রয়োজনিয়তা। আগুন জ্বালতে শিখলো, শুরু হলো মাংস পুড়িয়ে খাওয়ার প্রয়াস, শিখে গেলো রান্না।
সে মানুষ সভ্য হয়েছে, জামাকাপড় পরতে শিখেছে, গাছের আড়ালে গিয়ে 'হাগু মুতু' করতে শিখেছে, সকলের সামনে নর-নারীর কামক্রিয়া বন্ধ হয়েছে। বাবা-কন্যা, ভাই-বোন,-মা-ছেলের সম্পর্ক বুঝতে শিখেছে, পাড়া-প্রতিবেশী, বন্ধু বান্ধবসহ আলাদা আলাদা সম্পর্ক দিয়ে মানুষ সমাজ গড়েছে।
ধীরে ধীরে মানুষ সুন্দর হয়েছে,সৃষ্টি হয়েছে ধর্মীয় বোধ, শিক্ষিত হয়েছে, আধুনিক হয়েছে, ধার্মিক হয়েছে, বৈজ্ঞানিক হয়েছে। 'হাগু মুতু করার জন্য আলাদা ঘর বানিয়েছে, ঘুমানোর জন্য ঘর বানিয়েছে, নর নারীতে শুধুই কামড়া কামড়ি নয়, প্রেমের আকুতি, প্রেমের অনুভূতি, ভালোবাসার সম্পর্ক থাকার প্রয়োজনিয়তা বুঝেছে। মানুষ আরও বুঝেছে, শুধু শরীরের ক্ষিদেই নয়, নর নারীর দৈহিক মিলনের ক্ষেত্রে মনের চাহিদা, দুজনের পারস্পরিক অনুমতি গ্রহণের ব্যাপার আছে।
শরীরের ক্ষিদে মেটায় পশু-পাখী, পশু-পাখির মনে ক্ষিদে থাকেনা অথবা মনের ক্ষিদে তারা অনুভব করেনা, ঐজন্যই তারা মানুষ নয়। মানুষও যখন পশু-পাখির পর্যায়ে ছিল তখন মানুষের মনের ক্ষিদে ছিলনা, শারীরিক মিলনের মাধ্যমে শরীরের ক্ষিদে মেটাতো।
এগুলো প্রস্তর যুগের কথা, এখন ডিজিটাল যুগ। এখনকার মানুষ হবে অনেক বেশী যুক্তিবাদী, অনেক বেশী বুদ্ধিমান, অনেক বেশী মানবিক। এখন মানুষ মানুষকে চিনবে বুদ্ধির বিচারে, জ্ঞানের বিচারে। ধর্মের প্রচার শুরু হয়েছিল মানুষের মধ্যে বিবেক, ভালোবাসা, প্রেম, মানবতা, পরমত সহিষ্ণুতা জাগ্রত করার জন্য। বিভিন্ন সময়ে বিভিন্ন মহামানবের আবির্ভাব হয়েছিল এই পৃথিবীতে, প্রত্যেক মহামানব মানুষের কল্যাণেই ধর্মের বাণী প্রচার করেছিলেন, সৃষ্টি হয়েছিল হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান, ইহুদি, শিখ, জৈন --বিভিন্ন ধর্মীয় সম্প্রদায়। সকল ধর্মীয় সম্প্রদায়ের ধর্মীয় পুস্তকে মহামানবের বাণীর মূল সুরে বিবেক,ভালোবাসা , প্রেম, মানবতা, পরমত সহিষ্ণুতার কথা বলা হয়েছে।
এতদিনে আমাদের সত্যিকারের মানুষ হয়ে ওঠার কথা। কিন্তু কেন জানি আমরা মানুষ নাহয়ে হিন্দু, মুসলমান, বৌদ্ধ, খৃষ্টান হওয়ার পর থেমে গেছি। আমাদের আর সামনে এগোনো হচ্ছেনা। সামনে এগোনোর পথ আছে, কিন্তু আমাদের কোমড়ে জোর নেই, পায়ে জোর নেই, তার চেয়েও বড় কথা মাথায় ঘিলু নেই। মাথার ঘিলু পচে গোবর হয়ে গেছে, গোবরে পোকা ধরেছে। ইদানিং ঘিলু নামক গোবরের পোকাগুলো আমাদের কামড়াচ্ছে, অহর্নিশ কামড়াচ্ছে। আমরা বিবেক, লজ্জা, আত্মমর্যাদা, মানবতা, অনুশোচনা, গ্লানিবোধের ব্যাপারগুলো ভুলে যাচ্ছি।
এখন আমরা মানুষকে মানুষ হিসেবে দেখিনা, মানুষকে দেখি পুরুষ আর মহিলা হিসেবে। মহিলাকে একজন নারী হিসেবে দেখিনা, দেখি একতাল মাংসের শরীর হিসেবে। অনেক পুরুষ আছে যারা নিজেকে পুরুষ হিসেবে দেখেনা, নিজেকে দেখে যৌনক্ষুধা আক্রান্ত রোগী হিসেবে। যৌনক্ষুধা আক্রান্ত পুরুষগুলোর এখন আর ভাতের ক্ষিদে পায়না, ওদের সারাক্ষণ ঊর্ধ্বাঙ্গ-নিম্নাঙ্গ জুড়ে চলে যৌনক্ষুধার দাবদাহ।
যৌনক্ষুধা আক্রান্ত পুরুষটি তাই মায়ের শরীরে নিজের ক্ষুধা মেটানোর পথ খুঁজে পায়, মামীর দেহে, বোনের দেহে, অবুঝ শিশুর কচি দেহে, রাস্তার উলঙ্গ পাগলীর দেহেও ক্ষুধা মেটানোর পথ খুঁজে পায়। এইসব ক্ষুধার্ত কামার্ত পুরুষগুলো প্রতিবেশী নারীর দেহে ক্ষুধা মেটানোর রসদ খুঁজে পায়। কামার্ত পুরুষ হিন্দু মুসলমান বিচার করেনা, দেশে ক'টাইবা হিন্দু আছে? অথচ শহরে গ্রামে প্রতিদিন কত নারী ধর্ষিত হচ্ছে, ধর্ষিত নারী খুন হচ্ছে। এদের শরীরে ধর্ম লেখা নেই, এরা শুধুই কমজোরী নারী। নারী যদি অন্য কোন পুরুষের বউ হয়, তখন যৌনক্ষুধাক্রান্ত পুরুষটির ক্ষুধা বেড়ে যায়।
এমনই পাগলা যে ভুলেই গেছে, অন্যের স্ত্রীকে উলঙ্গ করে ধর্ষণ করার সময় নিজেকেও উলঙ্গ হতে হয়েছে। তার কুৎসিত, কদাকার পুরুষ যন্ত্রটি যা প্রস্তর যুগের মানুষ গাছের ছাল বাকল দিয়ে আবৃত করে রাখতো, সেই কুৎসিত দর্শন যন্ত্রটি ধর্ষণের উসিলায় উন্মুক্ত হয়ে গেছে।
বাংলাদেশে মানুষের পোশাক পরিচ্ছদে ধর্মীয় ভাব অনেকটাই বেড়েছে, এর সাথে যদি ধর্মীয় মূল্যবোধ ধর্মীয় চেতনাটুকু বৃদ্ধি পেতো, তাহলে দেশের জন্য, দেশের মানুষের জন্য মঙ্গলজনক হতো। ধর্মীয় মূল্যবোধ মানেই বিবেক,ভালোবাসা , প্রেম, মানবতা, পরমত সহিষ্ণুতা। বাংলাদেশের মানুষের মধ্যে এই বোধগুলো ক্রমেই কমে আসছে, এখন হাজার মানুষের উপস্থিতিতে একজন নিরস্ত্র মানুষ খুন হয়ে যায়, কেউ বাঁচাতে আসেনা। নিরপরাধ বিশ্বজিত প্রাণভয়ে এদিক ওদিক ছুটোছুটি করে, হাতে চাপাতি নিয়ে তথাকথিত রাজনৈতিক নেতারা বিশ্বজিতের পিছু ধাওয়া করে, এই দৃশ্য ভিডিও করার মানুষ ছিল প্রচুর, বিশ্বজিতকে কিভাবে কোপানো হলো, তাও ভিডিও করা হয়েছে, কিন্তু হাতের ভিডিও ক্যামেরাটি দিয়ে কেউ একজন চাপাতিওয়ালার হাতে আঘাত করে বলেনি, " ওকে ছেড়ে দাও, মেরে ফেলোনা"।
বাংলাদেশে বিচার ব্যবস্থাতেও গতি আসছেনা, রাজনৈতিক মূল্যবোধ ব্যাপারটি বই পুস্তকে বন্দী হয়ে গেছে। অপরাধী ধরা পড়লেও আইনের ফাঁক দিয়ে বের হয়ে আসছে।
বাংলাদেশের নারীরা দেশের কল্যাণে নিরলস কাজ করে যাচ্ছে, দেশের প্রধানমন্ত্রী থেকে শুরু করে সংসদ নেত্রী, বিরোধী নেত্রীসহ প্রশাসনের গুরুত্বপূর্ণ স্থানে নারীগণ অধিষ্ঠিত থাকার পরেও বাংলাদেশে নারী নির্যাতন, নারী/শিশু ধর্ষণ বন্ধ হচ্ছেনা। বাংলাদেশে ধর্ষকের বিচার হয়না। ধর্ষকরা শাস্তি পাচ্ছেনা, ফলে ধর্ষণ একটি 'উপভোগ্য খেলা'য় পরিণত হয়েছে।
বাংলাদেশের প্রায় সকলেই কথায় কথায় পাশ্চাত্যের দেশগুলোর বিশেষ করে আমেরিকার নারীদের পোশাক নিয়ে সমালোচনা করে, পাশাচাত্যের নারী পুরুষ অবাধ মেলামেশার সমালোচনা করে। বাংলাদেশের কয়জন মানুষ জানে যে আমেরিকান পুরুষগণ আমেরিকান নারীদের পোশাক নিয়ে মাথা ঘামায়না, প্রকাশ্যে কোন টিটকারি দেয়না, অশোভন বা অশ্লীল মন্তব্য করেনা। বাস, ট্রেনের ভীড়ে অপরিচিত কোন মেয়ের বুকে বা পাছায় হাত দেয়না।
আমেরিকান ছেলেমেয়েদের স্কুল শিক্ষার এক পর্যায়ে 'সেক্স এডুকেশান' দেয়া হয়। সবাই জানে, মেয়েদের প্রতিটি অঙ্গ দেহের একটি অংশ বিশেষ, নারীর দেহের বিশেষ অঙ্গ নিয়ে আমেরিকান পুরুষ বিশেষভাবে মাথা ঘামায়না। এদেশে কোন কিছু নিয়েই রাখঢাক নেই বলেই যৌন সুড়সুড়ি দেয়া কোন ছ্যাঁচড়ামি নেই। পোশাকের ব্যাপারেও সমালোচনা করার কিছু দেখিনা। যস্মিন দেশে যদাচার, আরব দেশে মেয়েরা ওদের রুচী অনুযায়ী পোশাক পরে, আমেরিকান মেয়েরা তাদের রুচী অনুযায়ী পোশাক পরে। তাই বলে কি আমেরিকায় মেয়েরা ধর্ষিত হয়না? আরব দেশের মেয়েরা ধর্ষিত হয় না?, আমেরিকায় মেয়েরা ধর্ষিত হয়, তবে ধর্ষকের বিচার হয়, শাস্তি হয়।
বাংলাদেশেও পুরোমাত্রায় নাহলেও স্কুলের শেষ পর্যায়ে ছাত্রছাত্রীকে পরিমিত পর্যায়ে সেক্স এডুকেশান দেয়ার ব্যবস্থা করা ভাল যাতে প্রতিটি ছেলেমেয়ে নিজেদের ভাল-মন্দটুকু বুঝতে পারে। আর অতীব প্রয়োজন ধর্ষক, নারী নির্যাতনকারীর কঠোর শাস্তি। নাহলে আমরা পায়ে পায়ে, ধীরে ধীরে প্রস্তর যুগের দিকেই ফিরে যাবো।  (January 22, 2016)

2 comments:

  1. লিখেছেন অনেক কষ্ট করে তাই পড়েই নিলাম

    ReplyDelete
    Replies
    1. দয়া করে আমার কষ্টের লেখা পড়েছেন, আন্তরিক ধন্যবাদ দিয়েই ফেললাম!

      Delete