Wednesday, April 18, 2012

আহা! বৈদেশে আমরা কতই না সুখে আছি!

সেদিন এক বন্ধুকে ফোন করেছিলাম। নতুন বন্ধু, ফেসবুকের সূত্র ধরেই বন্ধুত্ব হয়েছে। বন্ধু আবার মিডিয়াতে বেশ পরিচিত উজ্জ্বল মুখ। বাম রাজনীতি ঘেঁষা একটু, তাই শুরুতেই আমা্র আমেরিকা থাকা নিয়ে আমাকে একটা খোঁচা মেরেছে। আমিতো হাসি, আরো অনেকেই আমাকে এমন খোঁচা মারে। আমার এই নতুন বন্ধু কম খোঁচা মেরেছে, অনেকেতো আরো কঠিন আঘাত করে যেনো বুশ বা ক্লিন্টন বা ওবামা যা সিদ্ধান্ত নিতেন বা নিচ্ছেন তা বুঝি আমার সাথে আলাপ আলোচনা করেই করেন। তারা আমাকে সুযোগ পেলেই শুনিয়ে দেয়, এই শ্রেনীশত্রুদের কাছে মাথা নোয়ানোর চেয়ে দেশের খেটে খাওয়া মানুষের পাশে দাঁড়ানো অনেক সম্মানের। আমি আবারও হাসি। হাসি কারন আমি অনেক যত্ন করে, ধৈর্য্য ধরে অনুশীলনের মাধ্যমে এই হাসি আয়ত্ব করেছি। মুখে হাসি ধরে রাখতে পারলে অনেক অপ্রিয় পরিস্থিতি সামাল দেয়া যায়।
যখন অনেক ছোট ছিলাম, আমরা খুবই সাধারণ মধ্যবিত্ত পরিবারে বড় হয়েছি, সাধারন চাকুরীজীবি বাবা সবদিক সামলে শেষ পর্যন্ত আর পেরে উঠতেননা, হিসেবের বাইরে কিছু করার। তাই স্বপ্ন দেখতে শিখিয়েছেন, সেই স্বপ্ন দেখতে গিয়েই কখন যে মনের অজান্তে বিদেশে যাওয়ার ইচ্ছে পোষন করতে শুরু করেছি, এখন আর তা মনে পড়েনা। শুধু একটা দিনের ছোট্ট একটা ঘটনা মনে আছে, আমি যখন ষষ্ঠ শ্রেণীতে পড়ি, তখন ক্লাস চলাকালীন সময়ে আমাদের ক্লাসরুমে এসে ঢুকেছে এক মেয়ে, প্যান্ট-শার্ট পড়া, লম্বা চুল বেণী করে পিঠের উপর ফেলা, ঢুকেই টিচারকে সালাম করল। আমিতো অবাক হয়ে দেখছি বিদেশ ফেরত মেয়েটিকে, জানতে পারলাম রাশিয়া থেকে পড়াশুনা করে, দেশে এসেছে বেড়াতে। ওইদিন স্কুল থেকে হেঁটে বাড়ী ফিরছিলাম আরেক মেয়ের সাথে, তাকে আমি বলছিলাম যে একদিন আমিও বিদেশে যাবই যাব। ক্লাসের ফার্স্ট গার্ল ছিলাম বলেই বোধ হয় সেই মেয়ে সত্যিই বিশ্বাস করেছিল যে একদিন আমি বিদেশ যাব।
মনে আছে, স্বাধীনতার পরে সোভিয়েত ইউনিয়নে ছাত্র ছাত্রীদের যাওয়ার ধুম পড়ে গিয়েছিল। আমি তখন অনেক ছোট। আমার বড় ভাই তখনও কলেজে পড়ে, আশ্বাস পেয়েছিল আমার ভাই, ইনটারমিডিয়েট পাশ করলেই রাশিয়া যেতে পারবে। কারণ, আমার ভাই পড়াশুনাতে অত্যন্ত ভালো ছিল। কিনতু ’৭৫ এর পট পরিবর্তনের সাথে সাথে আমার ভাই ও আমাদের পরিবারের সমস্ত স্বপ্ন প্রথমবারের মত ভেঙ্গে গেল। রাশিয়া যাওয়া হলোনা, এরপর ভাই দেশে থেকেই প্রকৌশল বিশ্ববিদ্যালয়ে পড়তে লাগল। আমার বড় ভাই কিনতু মনে মনে তখনও একটা আশা পুষে রেখেছিল যে বিদেশে সে যাবেই যাবে। এক সময় সে ঠিক কানাডাতে চলে আসে। আমার বাকী দুই ভাই বিদেশ যাওয়ার পক্ষে ছিলনা তাই সমস্ত সুযোগ থাকার পরেও তারা দেশেই থেকে যাওয়ার সিদ্ধান্ত নেয়।( বছর তিনেক আগে আমার ছোট ভাই দুই মাসের এক প্রোগ্রামে শিক্ষা মন্ত্রনালয় থেকে নির্বাচিত হয়ে লন্ডন যায় আরো বেশ কিছু অধ্যাপকের সাথে। ফিরে এসে সে প্রতিজ্ঞা করে আর কোনদিন সে দেশের বাইরে যাবেনা) , কিনতু আমি বরাবর স্বপ্ন দেখতাম, উচ্চশিক্ষার জন্য আমি দেশের বাইরে যাব। অনার্স ক্লাসে ভর্তি হওয়ার পর থেকেই আমার বন্ধুদের সাথে প্ল্যান করছিলাম কিভাবে সুইডেনে যেতে পারি। এমন কঠিন পরিকল্পনা যে আর অনার্স ফাইনালের জন্য তর সইছিলনা। অনার্স ২য় বর্ষেই ঠিক করে ফেলেছি সুইডেন চলে যাব, এর মধ্যে হঠাৎ করেই আমি সবার সাথে বিশ্বাসঘাতকতা করে ঐ বছরেই বিয়ে করে ফেলেছি। ফলে আমাদের সুইডেন যাওয়ার স্বপ্ন ঐখানেই শেষ হয়ে যায়।
বিয়ের আগে আমার হবু বরের সাথে কথা প্রসঙ্গে একদিন বলেছিলাম যে আমার খুব বিদেশ যাওয়ার শখ( নির্দিষ্ট কোন দেশের নাম বলতামনা, শুধুই বিদেশ যাব বলতাম)।তখন থেকেই মনে হয় আমার স্বামী ভেবে রেখেছিলেন যে আমাকে বিদেশ দেখাবেন। যদিও আমার স্বামী গ্রামের ছেলে, গ্রামেই শৈশব কেটেছে, তা হলেও সে গ্রামের বাড়ীতে থেকেই আমেরিকা যাওয়ার স্বপ্ন দেখেছিল এবং অসম্ভব মেধার জোরে সে ঠিকই আমেরিকা গিয়েছিল। আমেরিকার প্রতি তার ভীষন দূর্বলতা ছিল (এখনও আছে) তবে সেটা দেশের ধন ভান্ডারের প্রতি কোন ভক্তি না, এই দেশের উচ্চশিক্ষার প্রতি দূর্বলতা, এই দেশেই জন্মানো মনীষীদের প্রতি দূর্বলতা। যাই হোক আমার স্বামী আমাকে প্রথম সত্যিকারের বিদেশ বলতে নিয়ে যান অস্ট্রেলিয়াতে।
আমি যেমন কেউ বিদেশে থাকে শুনলেই মনে করতাম, তারা কতই না সুখে আছে, আমাদের বেলাতেও এমনটা ভাবার লোকের অভাব হয়নি। অনেকেতো মুখের উপর আমার সৌভাগ্য নিয়ে নানারকম কৌতুক করতে শুরু করেছিল। তারা তখন ভুলেই যেত, বিয়ে না হলেও আমার নিজের যোগ্যতাতেই উচ্চশিক্ষার জন্য বাইরে যাওয়ার মত ক্ষমতা আমার ছিল। গায়ে মাখতামনা লোকের কথা, অনেকের মনে ধাক্কা দিয়ে আমি স্বামীর সাথে চলে গেলাম অস্ট্রেলিয়া, সাথে দুই মেয়ে নিয়ে। কিনতু প্লেন থেকে নেমেই মেলবোর্ণের প্রচন্ড শীতের এক ঝাপ্টা খেয়ে চমকে উঠে আমার স্বপ্নের বিদেশের মাটিতে পা রাখলাম।
মেলবোর্ণে প্রথম উঠেছিলাম বিশ্ববিদ্যালয়ে আমার সিনিয়র এক দিদির (শিউলী ব্যানার্জী) বাড়ীতে। ছিমছাম সাজানো বাড়ি, কত কিছু রান্না করে রেখেছে দিদি। বাড়ী পৌঁছাতেই তাদের আন্তরিকতাপূর্ণ ব্যবহারে আমার প্রথম পরিচয়ের জড়তা কেটে গিয়েছিল। জড়তা কেটেছিল ঠিক, কিনতু আমার মনের ভেতরে যে কি হচ্ছিল তা আমি বুঝাতে পারছিলামনা। তিনদিনের জার্নিতে দেশে বাবা-মায়ের সাথে যোগাযোগ করতে পারিনি। আমি তাঁদের একটিমাত্র মেয়ে, আমার দুই মেয়ে তাঁদের প্রাণের টুকরা, আমার স্বামী তাঁদের নয়নের মণি, তিনদিন আমাদের কোন খবর না পেয়ে তাঁরা কেমন ছিলেন, তা আর বলার অপেক্ষা রাখেনা। কিনতু ওদের বাড়ীতে ঢুকেইতো আর বলা যায়না যে আমি এখন দেশে ফোন করতে চাই। ফোন তখন অনেক খরচান্ত ব্যাপার, আমি বাংলাদেশে ফোন করবো, ফোন করেইতো আর মা কে বলতে পারবোনা যে এখানে ফোন অনেক পয়সার ব্যাপার, তাড়াতাড়ি ছেড়ে দাও। তবু লজ্জার মাথা খেয়ে বলেই ফেলেছিলাম যে দেশে ফোন করতে চাই, ফোন করেছি, পাশের বাড়ীতে, আমার মা ফোন ধরেই জোরে জোরে কাঁদতে শুরু করেছেন। আমার মা বাইরে থেকে খুব কঠিন, সেই মা এভাবে কাঁদবেন আমি ধারণাও করিনি, তাই আমি নিজে না কেঁদে শান্তভাবে বলেছি নিজেদের সুন্দর এক পরিবারে আশ্রয়ের কথা। ফোন রেখে আমি আর ঠিক থাকতে পারিনি, ঐ যে ভেঙ্গে পরলাম, আর কোনদিন বিদেশ নিয়ে আদিখ্যেতা করতে পারলামনা। তিন বছর ছিলাম মেলবোর্ণে, দেশে সবাইকে বলতাম, খুব ভালো আছি, খুব সুখে আছি। কিনতু সত্যি কি সুখে ছিলাম! যেখানে যা কিছু দেখি, মনে হয় যেন ঠিক আনন্দ পাচ্ছিনা। মনে হতো সাথে কেউ থাকলে ভালো কিছু দেখে সুখ, ভালো কিছু পেয়ে সুখ। আমি প্রথম যেদিন টের পেলাম যে ভালো কোন কিছু একা দেখে বা একা পেয়ে কোন আনন্দ নেই, সেদিন থেকেই ঠিক করে ফেললাম যে একটা নির্দিষ্ট সময় পরে দেশে ফিরে যেতেই হবে আমাকে। আমার সেই ফেসবুক ফ্রেন্ডদের ভাষাতেই বলেছি নিজের মনে, সবার সাথে থাকব, তার চেয়ে বড় সুখ আর কি আছে জীবনে!
সত্যি চলে গেলাম দেশে। এরপর দেশে চার বছর ছিলাম, মেয়েদের নিয়ে আমাদের অনেক স্বপ্ন ছিল। আমাদের মেয়েদেরও খুব ইচ্ছে ছিল যেনো স্টেটসে গিয়ে পড়াশুনা করতে পারে। ওদের এমন ইচ্ছে হওয়ার একটা কারনও ছিল, আমি আমার মেয়েদের শুধু আগলে আগলে রাখতাম, একা একা স্বাধীনভাবে বাইরে ঘুরাফেরা করতে দিতামনা। আমি চাইতামনা, কোনভাবেই আমার মেয়েরা কোন অপ্রিয় কিছুর সম্মুখীন হোক। যেটা ইদানীং বেড়ে গেছে বলে মনে করা হয়, সেই ‘ইভটিজিং’ আগেও ছিল। আগে মেয়েরা প্রতিবাদ করতোনা, বাসে-ট্রামে, রাস্তা-ঘাট, বাজার বা কোন শপিং সেন্টারে কিছু অসভ্য ছেলেপেলে সব যুগেই অপেক্ষা করে মেয়েদেরকে নানাভাবে উত্যক্ত করার জন্য। জানি, এগুলো মেনে নিয়েই সবাই থাকছে, এখনও মেয়েরা প্রতিবাদ করতে শেখেনি, সামাজিক লজ্জার ভয়ে কেউ মুখ খুলেনা। মুখ খুলবে কি, দোররা মারের ভয়েই চুপ থাকে, না হয় আত্মহননের পথ বেছে নেয়। তবে আমি ব্যক্তিগতভাবে চাইনি আমার মেয়েদের কোন খারাপ অভিজ্ঞতা হোক। ফলে যে বয়সের যে ধর্ম, বন্দী জীবন ভালো লাগেনি বলেই আমার মেয়েরা আরও বেশী করে চাইত যেন আমরা আমেরিকা চলে আসি।
এবার আমি সব জেনেবুঝেই এসেছিলাম আমেরিকাতে, জানতাম আমার ভালো লাগবেনা। সত্যি আমার ভালো লাগেনা। ১০ বছর ধরে আছি, এমনিতে খাওয়া-পরার অভাব নেই, বিলাস-ব্যসনের অভাব নেই কিনতু কোন কিছুতেই সুখ যে নেই! অস্ট্রেলিয়াতে থাকার সময় দেশে ফোন করতাম মাসে একবার, অনেক এক্সপেন্সিভ ছিল, কিনতু এখানে এখন ফোন করা আগের মত ততটা কঠিন ব্যাপার নয়। এখনতো আরও সুবিধা হয়ে গেছে স্কাইপ থাকাতে। জীবন অনেক সহজ হয়ে গেছে। তবু কেন ভালো লাগেনা! কাজে আমাকে অনেকে জিজ্ঞেস করে আমার এখানে কেমন লাগছে! তারা অনেক আশা নিয়েই আমাকে জিজ্ঞেস করে যেনো আমি বলবো, আমার খুব ভালো লাগছে এখানে। কিনতু আমি তা বলিনা, আমি সরাসরি বলে দেই যে আমার এখানে ভালো লাগছেনা। একটুও না।
আমার সেই বন্ধুটি আমাকে বইমেলাতে যেতে বলেছে। সে না বুঝেই আমাকে বইমেলার কথা বলে ফেলেছে। সেই থেকে আমার কিচ্ছু ভালো লাগছেনা, এই মাসেই দূর্গাপূজা গেলো। গত ১০ বছর ধরে দেশে থেকে পূজা উদযাপন করা হয়না। আমরা এখানে কাজের ছুটি, ভ্যেনুর নিশ্চয়তা দেখে পূজার দিনক্ষণ ঠিক করি। একদিনেই ষষ্ঠী, সপ্তমী, অষ্টমী, নবমী, দশমী পূজা সেরে ফেলি। সবাই ব্যস্ত, সকালে ঊঠেই কাজে যেতে হয়। আয়োজন করি ঠিকই, কিনতু আনন্দ পাইনা। মনে হয় যেনো খুব আরোপিত আনন্দ! কিনতু দেশে মা-বাবাকে বলি, আমরা এখানে খুব আনন্দ করছি। বলি কারন যাতে করে তারা তাদের সময়টুকু আনন্দে কাটাতে পারে। ঈদের বাজার, পূজার বাজার করা থেকেইতো শুরু হয় উত্তেজনা। আমরা বাজার করবো কি, এখানে ঈদ বা পূজাতে দিনক্ষণ ঠিক করতে গিয়ে জামা কাপড় কেনার কথা ভুলে যাই। নতুন থাকলে ভালো, নাহলে পুরানো কাপড় দিয়েই চালিয়ে দেই।
সাত সকালে উঠেই কাজে যেতে হয়, ফিরতে ফিরতে রাত হয়। কখনও কখনও যে একটু আয়েস করে, দেরী করে কাজে যাব সে উপায় নেই। দেশে যেমন অনেক ঝামেলা আছে তেমনি আবার কিছু কিছু কাজে সুখও আছে। সরকারী চাকুরীতে তো শুধু ক্ষমতা খাটানোর সুখেই অনেকে সুখী। কেউ কেউ সুখী বেলা ১২টার পর লাঞ্চ ব্রেকে বের হয়ে আর ফিরে না এসে। কেউ কেউ সুখী পিয়ন বা আর্দালীকে ধমক ধামক দিতে পেরে।কেউ কেউ সুখী ঘুষ খেতে পেরে, কেউ কেউ ঘুষ দিতে পেরে। মা-বোনেরা খুশী থাকে সংসারে রহিমার মা বা টেপিকে পেয়ে। কিছু মহিলা সুখী থাকে কাজের মেয়েদের পিটিয়ে। গাড়ী চালাতে হয়না, ড্রাইভার আছে। রান্না করতে হয়না, বুয়া আছে। ঘরে থেকে বোরড হতে হয়না, চাইলেই বন্ধুদের সাথে আড্ডায় মেতে উঠা যায়। মাঠে গিয়ে ক্রিকেট খেলা দেখা যায়, ফুটবল খেলা হলে আবাহনী/মোহামেডান নিয়ে তর্ক করা যায়। দেশে থাকলেই রাজনীতি করা যায়, রাজনীতির অবধারিত অনুষঙ্গ হিসেবে হরতাল করা যায়, রোড মার্চ করা যায়, মিটিং-মিছিলের উত্তেজনায় অংশগ্রহণ করা যায়, আরো কত কি করা যায়।
আমাদের এখানে যান্ত্রিক জীবন। উঠতে বসতে থ্যাঙ্ক ইউ, সরি করতে করতে ঘুমের মাঝেও থ্যাঙ্কস/সরি বলে ফেলি। কাজে দেরী করে যাব, সে উপায় নেই। লেট মার্ক পড়ে যাবে। চাকুরীর বাজার মন্দা, যে কোনদিন চাকুরী চলে যাওয়ার ভয়। ঘুম থেকে উঠেই জুতা সেলাই থেকে চন্ডীপাঠ পর্যন্ত সব নিজেকে করতে হয়। বাচ্চাদের মুখে আধো উচ্চারণে বাংলা শুনতে হয়, জোর করে দেশী খাবার খাওয়াতে হয়, নানারকম সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজন করতে হয় যাতে করে বাচ্চারা নিজেদের শেকড় হারিয়ে না ফেলে। আরেকটা যন্ত্রনাদায়ক ব্যাপার আছে, সব সময় ভয়ে ভয়ে থাকতে হয়, এই বুঝি দেশ থেকে কোন খারাপ সংবাদ এলো। আমাদেরতো দেহটাই শুধু পড়ে থাকে বিদেশের মাটিতে, মনটাতো সারাক্ষন দেশের আনাচে কানাচেই ঘুরে বেড়ায়।
আসলে কেউ জানেনা আমরা এখানে কেমন থাকি। দেশে সবাই জানে এবং বিশ্বাস করে, ডলারের মোহে আমরা এখানে পড়ে আছি। রাজনীতিবিদরা বক্তৃতা দেয়ার সময় শুধু বলে আমাদের পাঠানো টাকায় দেশের বৈদেশিক আয়ের প্রবৃদ্ধি বেড়েছে, কিনতু বলেনা আমরা দেশের বাইরে থাকায় দেশের উপর এতগুলো মানুষের চাপ কিছুটা হলেও লাঘব হয়েছে। বন্ধুরা বাঁকা কথা বলে, কেউ কেউ রীতিমত বিদ্রূপের সুরে কথা বলে। আমাদের কিনতু অনেক কষ্ট হয় মনে। আমরা বিদেশে থাকি বলেই দেশ কি জিনিস সেটা অনেক বেশী অনুভব করি। আর তাই বাংলাদেশের কিছু তরুণের ঐকান্তিক প্রচেষ্টায় ২১শে ফেব্রুয়ারী আন্তর্জাতিক মাতৃভাষা দিবস হিসেবে বিশ্বে স্বীকৃতি পেয়েছে। কক্সবাজার সমুদ্রসৈকতের নাম, সুন্দরবনের নাম বিশ্বের সাত সেরা প্রাকৃতিক সৌন্দর্য্যের প্রতিযোগীতায় প্রথম সারিতে আছে। মাঝে মাঝে মনের ভেতর বেশ অভিমান জন্মে, মনে হয় দেশের বাইরে আছি বলে আমাদেরকে দেশে অনেকেই আর আপন ভাবেনা। দেশে বেড়াতে গেলে সেটা টের পাওয়া যায়। সবাই ধরেই নেয়, দুইদিনের জন্য এসেছে, অতিরিক্ত খাতির যত্ন করে, যেটাতে আন্তরিকতা থাকে, তবে সেটা অনেকটাই যেনো আরোপিত আন্তরিকতা মনে হয়। তারপরেও কিছু প্রবাসীতো আছেই যারা দেশ নিয়ে মাথা ঘামায়না, দোষ ঢাকার জন্য বলে এই পৃথিবীটাই নাকি তাদের দেশ, তাদের সংখ্যা খুব কম। তাদের নিয়ে আমরাও মাথা ঘামাইনা। অনেক শখ ছিল বিদেশ আসার, শখ পূরণ হয়েছে। কিনতু কি যেন হারিয়ে গেছে, খুঁজি আর খুঁজি। কিনতু এমন কোথাও হারিয়ে গেছে যা আর এই জীবনেও খুঁজে পাবনা। আমাদের মনের অবস্থা অনেকটাই এমন, “আমার সুখ নেইকো মনে, নাকছাবিটি হারিয়ে গেছে হলুদ চাঁপার বনে”।

2 comments:

  1. Jamil Shibli commented on http://www.facebook.com/​rita-roy-mithu/2011/10/24/​5665.html.

    I am humbly expressing
    my innate Feelings from my Heart !
    I was born in Hobigonj, Sylhet Division.
    To be or Not to Be? Yes, I had no Hesitation in Quitting Bangladesh. I had a "Dream" and that was to become a Deshantory (Emigrant), The Dream grew since 1969, I thought it would become a reality in 1978 after the HSC but due to Non-cooperations & oppositions from my Family's elders...Emigration was Delayed and finally in 1986, at last I was able to Quit that Depressing Country(BD) and Emigrated to New Zealand and Lateron Settled in Canberra (Australia). Yes, I never ever felt the So Called 'Home Sickness'. I felt that my adopted two Countries are my Two Real Homes [ Australia and New Zealand ].
    I reckon that Those Misfits always groan/moan about the former country [ Country of Birth ], only the Fittest go forward and move on with the present life ( in our cases the Die hard Emigrants ). Think about the positives in.
    the Developed Countries[the So called "Bidesh"] and forget the negatives here. The BD could not really give us what we can really get here, So Be Loyal to the Present Country where You exist & Legally belong now, just integrate, prosper and Please Don't Worry! Be Happy! By the Grace of Almighty, yes, I have had seen 28 Different Countries around the World. Certainly, Living in a Better developed Country is the Prize of Your Life, it's a Blessing from Heaven and So, be grateful to our Creator for granting this opportunity. Like many others I am optimistic and thus I never regretted to Leave that old country to permanently reside/settle in a new Chosen Country. Thanks to all readers.

    Cordially Yours,

    Jamil Shibli, J.P.
    E-mail: jamilshibli@y7mail.com

    ReplyDelete
  2. http://ritaroymithu.blogspot.com/2012/04/blog-post.html?m=1

    ReplyDelete