Wednesday, April 25, 2012

আমেরিকান কনের বাংলাদেশী ‘বর’ পছন্দ!!!

আমার সহকর্মী ওরা। রেজিনা, চ্যাসিটি, শেইলা, টেরী, মাইশা। টেরী এবং শেইলা আমার বয়সী, চ্যাসিটি সবার ছোট ২২ বছর বয়স ওর। মাইশা ও রেজিনার বয়স ২৭ অথবা ২৮। ওদের একটু আলাদা করে পরিচয় করিয়ে দিলে লেখাটি পড়তে সহজ হবে।

রেজিনাঃ কৃষ্ণাঙ্গ তরুণী, বিবাহিত। রেজিনা ফোন সার্ভিসে চাকুরী করার পাশাপাশি অনলাইনে ‘অফিস ম্যানেজমেন্ট’ এর উপর পড়াশুনা করছে। ওর স্বামী গাড়ী সারাইয়ের দোকানে মেকানিকের কাজ করে। ওরা সুখী দম্পতি। রেজিনা কাজে আসার পর থেকে ওর বর প্রতি ঘন্টায় ফোন করে, বউয়ের খোঁজ নেয়। আমি মাঝে মাঝেই মজা করে বলি, আমার বরটাকে তোমার বরের কাছে পাঠিয়ে দেবো, বউ খুশী করার কিছু টিপস শিখে আসবে। রেজিনার স্বামী রেজিনার মায়ের বাড়ীতেই থাকে। অনেকটা ঘর-জামাইয়ের মত।

চ্যাসিটিঃ বাচ্চা একটি মেয়ে। কৃষ্ণাঙ্গ হলেও গায়ের রঙ আমাদের মতই বাদামী। সিঙ্গল মায়ের একমাত্র মেয়ে, বিলাসী, স্টাইলিশ। গত এক বছরে তিনবার ‘আইফোন’ বদলেছে। ইমেলদা মার্কোসের পরেই মনে হয় চ্যাসিটির নাম আসবে, এত জোড়া জুতা ওর। চ্যাসিটি চাকুরী করে, কলেজে পড়াশুনাও করে। ওর একটি তিন বছর বয়সী মেয়ে আছে। ওর বয়ফ্রেন্ডের সাথে এখন ওর কাট-আপ হয়ে গেছে। মেয়েকে নিয়ে চ্যাসিটি ওর মায়ের কাছেই থাকে। তবে অপেক্ষায় আছে বয়ফ্রেন্ডের সাথে সম্পর্ক জোড়া লাগার জন্য। বিয়ে নিয়ে চিন্তা করছেনা। কি ধরনের ছেলে ওর পছন্দ জিজ্ঞেস করতেই বলেছিল, পয়সাওয়ালা ছেলে। যে ওকে রাজসুখে রাখবে।

শেইলাঃ শেইলাকে আমরা ডাকি শেলী বলে। শেলী বিবাহিত। কৃষ্ণাঙ্গ রমণীর দুই ছেলে মেয়ে। ছেলে কুমারীকালীন সন্তান, মেয়ে বিবাহিত জীবনের সন্তান। ছেলে মেয়ের মা এক, বাবা ভিন্ন। মেয়ে অন্তঃপ্রাণ। ৭ বছরের বিবাহিত জীবন ওর। সেদিন কথায় কথায় বলছিল, যদি কোন কারনে ওর স্বামী ওর আগে মারা যায়, তাহলে ও আর বিয়ে করবেনা। বাকী জীবন একা থাকবে। শেলীর স্বামীও কোন কারখানাতে চাকুরী করে।

টেরীঃ শ্বেতাঙ্গীনি টেরীকে সকলেই পছন্দ করে। ওর পূর্ব পুরুষ আমেরিকান ইন্ডিয়ান। ওর চেহারার মধ্যে রেড ইন্ডিয়ানদের কিছু আদল আছে। টেরী বিবাহিত। এটা তার চতুর্থ বিয়ে। সাত বছরের বিবাহিত জীবন। দুই মেয়ে টেরীর। দারুন সুন্দরী মেয়ে দুটি। বড় মেয়ে ওর প্রথম স্বামীর সন্তান আর ছোট মেয়ে ওর তৃতীয় স্বামীর সন্তান। চতুর্থ স্বামী মিলিটারীতে চাকুরী করতো, এখন রিটায়ার্ড। তিনটি স্বামীকেই ও ডিভোর্স দিয়েছে। ব্যক্তি জীবনে স্বামীদের নাক গলানো সহ্য করতে না পেরেই নাকি তাদেরকে ‘কিক আউট’ করে দিয়েছে। বর্তমান স্বামী তা করছেনা বলেই এখনও তার ঘর করে চলেছে। তবে আর বিয়ে করার ইচ্ছে নেই।

মাইশাঃ সিঙ্গল মাম। পাঁচ বছর বয়সী বাচ্চার মা। মাইশা কৃষ্ণাঙ্গ গোত্রের হলেও ওর গায়ের রঙ আমার চেয়েও উজ্জ্বল। মাইশা ডিভোর্সড। ওর একজন বয়ফ্রেন্ড আছে বর্তমানে। মাইশার স্বভাব খুব মিষ্টি। সাধারণ কালো মেয়েদের মত মুখরা নয়। বয়ফ্রেন্ডের কাছ থেকে প্রপোজেল পাওয়ার অপেক্ষায় দিন গুনছে।

উপরের সহকর্মীদের প্রত্যেকেই নিজেদের মধ্যে প্রায়ই সংসার খরচ নিয়ে কথা বলে। আমি সব সময় চুপ করে শুনে যাই। স্বামীর সংসার বা মায়ের সংসার, সবখানেই ওদের খরচ দিতে হয়। আমাকে ওরা কখনওই গ্যাস, বিদ্যুত, ওয়াটার বিল নিয়ে কথা বলতে শোনেনি। আমি কখনওই ট্যাক্স রিটার্ণ নিয়েও কথা বলিনা কারো সাথে। কারন আমি এগুলো নিয়ে কখনও ডিল করিনা। ওরা জানে যে আমার হাজব্যান্ড ইউনিভার্সিটিতে প্রফেসারী করে। ওদের ধারনা হয়েছে, আমার বুঝি অনেক টাকা পয়সা আছে।

গতকালকে ওরা আমাকে জিজ্ঞেস করেছিল প্লেনের টিকিট কেটেছি কিনা। ওরা জানে আমি প্রতি দুই বছরে একবার হোমে যাই। টিকিট কাটতে কত লেগেছে জিজ্ঞেস করতেই ডলারের অংকটা বলে দিলাম। শুনে ওদের চোখ কপালে উঠে গেছে। জানতে চাইলো কে দিয়েছে এই টাকা। বললাম যে আমিই দিয়েছি। তখন ওরা আরও অবাক হয়ে জানতে চাইলো, সংসারের বিল দিয়ে আমার কাছে কিভাবে এতো টাকা থাকে! বললাম যে সংসারে আমাকে কোন খরচ দিতে হয়না। পরের প্রশ্ন তাহলে আমি কেনো চাকুরী করি। বললাম সময় কাটে এবং দেশে যাওয়ার প্লেন ভাড়াটা উঠে যায়। প্লেন ভাড়া নিয়ে ওরা আর উৎসাহ না দেখিয়ে জানতে চাইলো, সংসারে কোন খরচ না দিয়ে ২৬ বছর ধরে এক স্বামীর ঘর কিভাবে করছি! এমন প্রশ্ন ওরা আমাকে প্রায়ই করে। আমি বললাম, আমাদের দেশের ছেলেরা বিয়ে করার সময় বউ এর ভরণ-পোষণসহ যাবতীয় দায়িত্ব কাঁধে নিয়ে ফেলে। বাকী জীবন দায়িত্ব পালন করে যায়।

ওদের প্রশ্ন ছিল আমি সংসারে কোন কাজ করি কিনা, প্রতিদিন রান্না করি কিনা, স্বামী যা করতে বলে তাই করি কিনা, ওয়াশিং মেশিন চালাই কিনা, লন মো করি কিনা যার বিনিময়ে আমার স্বামী আমার সাথে সংসার করছে! আমি বললাম, সব কাজ আমি করিনা। যেটা করতে ভালো লাগে যেমন রান্না করতে ভালো লাগে বলেই আমি প্রতিদিন রান্না করি, আবার আমি যখন কাজে থাকি তখন বাড়ীর অনেক কাজ আমার স্বামী করে ফেলে। এভাবেই মিলে মিশে কাজ করি। শীলা জানতে চাইলো আমি স্বামীকে জামা কাপড় কিনে দেই কিনা। বললাম যে নানা উপলক্ষে গিফট কিনে দেই। মেয়েদের পড়াশুনার খরচ কাউকেই দিতে হয়না। স্কলারশীপের টাকাতেই ওদের চলে। তবে আমার টাকাটা আমি জমিয়ে রাখি দেশে যাওয়ার জন্য। আমার বরতো দেশে যেতে চায়না, আমি একা একা যাই। আমার বর যেহেতু দেশে যায়না তাই দেশে যাওয়ার টাকা আমি তার কাছ থেকে নেইনা, ধরে নাও এটা আমার এক ধরনের অভিমান। আমি চাই সকলে মিলে বেড়াতে, কিনতু আমার বর প্লেন চড়তে ভয় পায় বলে দেশেই যাওয়া বাদ দিয়ে দিয়েছে, এটাতো আমি মেনে নিয়েছি, তাহলে আমার বর কেনো মানবেনা আমার আবদার। আমাদের সম্পর্কটা একটা ভালো বোঝাপড়ার মধ্যে টিকে আছে। বোঝাপড়া ঠিক থাকলে সবার সম্পর্কই দীর্ঘস্থায়ী হয়।

এবার চ্যাসিটি বলে উঠলো, ‘ রীটা দেশ থেকে আমার জন্য একটা ছেলে নিয়ে এসো, বিয়ে করবো’। শীলা বললো, ” আমার জন্যও তোমার দেশী ছেলে নিয়ে এসো, বিয়ে করবো”। একে একে বাকী তিনজনই একই কথা বললো। তারা আর সংসারের বিল শেয়ার করতে চায়না। তারা চায় আমার মত নিশ্চিন্ত হয়ে ঘুরতে। তারা চায় রোজগারের টাকা নিজের ইচ্ছেমত খরচ করতে। আমি হেসে ফেললাম। আমি বললাম, চ্যাসিটি আর মাইশা অবিবাহিত, ওদের জন্য নাহয় ছেলে আনতে পারি, কিনতু তোমাদের জন্য ছেলে নিয়ে আসলেতো তোমাদের স্বামীরা আমার গলা টিপে ধরবে। হাসতে হাসতেই শেলী বলে ফেললো, তোমার গলা টিপে ধরার আগেই স্বামীকে ‘কিক আউট’ করে দেবো। এরপরেই রেজিনার দিকে তাকিয়ে জানতে চাইলাম, ওর স্বামী প্রতি ঘন্টায় খোঁজ নেওয়ার পরেও ও কেন বাংলাদেশী ছেলে বিয়ে করবে! ওকে জানালাম বাংলাদেশী ছেলেরা বউয়ের খোঁজ নেয়াকে কাপুরুষতা মনে করে। তখন চ্যাসিটি হাসতে হাসতে বললো, রেজিনার বরের মত ছেলেরা আসলে ভালোবেসে খোঁজ নেয়ার পাশাপাশি বউয়ের উপর নজরদারীও করে। রেজিনা অবশ্য চ্যাসিটির কথা অগ্রাহ্য করে বললো যে ভালোবাসারও একটা লিমিট থাকতে হয়, এতো বেশী ভালোবাসা সব সময় ভালো লাগেনা।

আমি হেসে ফেললাম, কিনতু মনে মনে বললাম, “বন্ধুরা, সব দেশেই মানুষের মাঝে ভাল-মন্দ আছে। তোমরা স্বাধীন, টেরীর মত ভালো না লাগলেই যখন তখন স্বামীকে ডিভোর্স করতে পারো। আমাদের দেশে একজন বিদ্রোহী নারী এই কাজটি করতে পেরেছে, মতে মিলেনি বলে স্বামীদেরকে ছেড়ে দিয়েছে, কিনতু অন্য নারীরাই তার সমালোচনা করেছে। তিনি একজন লেখিকা। নারীর পক্ষে বলতে গিয়ে সেই লেখিকা ‘বিতর্কিত’ উপাধী পেয়েছে। পুরুষেরা তাকে দেশছাড়া করেছে। সরকারীভাবেই সে আজ দেশে নিষিদ্ধ। মত প্রকাশের স্বাধীনতা আমাদের দেশের মেয়েদের নেই। আমাদের দেশের সুখী মেয়েদের মনের ভেতর তোমাদের মতই অনেক যন্ত্রনা আছে। তোমাদের মত যন্ত্রণা প্রকাশের স্বাধীনতা নেই বলে মুখ বুজে সংসার করে, না হয়তো কিল গুঁতা খায়। অনেক মেয়েকে আত্মাহুতিও দিতে হয়। সম্পর্ক তৈরী করতে গেলে পুরুষ ও নারী, দুজনকেই সমানভাবে চেষ্টা করতে হয়। নিজেদের মধ্যে অত বেশী হিসেব নিকেশ করে যেমন সুখী হওয়া যায়না, আবার সবকিছুতে একক কর্তৃত্ব ফলাতে গেলেও পারস্পরিক সুখী হওয়া যায়না। দুজনের সম্পর্কে আসলে পারস্পরিক বোঝাপড়াটাই আসল, তা যে কোন দেশে যে কোন সম্পর্কের বেলায় প্রযোজ্য।

5 comments:

  1. Have you told them your effort to your family as a working mother? If you tell them what a working mother has to do for her family, they will probably change their mind!

    ReplyDelete
  2. Nice post! Just so that you know, from a man's perspective, your husband may not mind at all if you want to pay the bills once in a while or so...will help both of you feel like 'equals' you know!

    ReplyDelete
    Replies
    1. Neelakash, thanks for your nice comments! Hahahaha!! you are right. That's why I always keep the money in a common place and never count whatever left! We just spend. Isn't it fair????????

      Delete
    2. Yup! fair enough I think...but I like the way these American women act independent though...what better way could be to be treated like an equal than shouldering the household burdens equally!...decent men here do the same thing with children too. btw, have you read any of Taslima Nasrin's works? since when profanity and willful disrespect of religious beliefs became synonymous with women's rights (or anybody's right per se) in BD?

      Delete