Tuesday, November 27, 2012

আগামীকাল ওয়ালমার্টের সকলের জন্য পাঠাচ্ছি 'সারপ্রাইজ কেক"!!

ওয়ালমার্ট সুপার সেন্টারের স্টাফদের মাঝে প্রচলিত একটি রীতি হচ্ছে, সহকর্মীদের যে কারোর খুব নিকটজন কেউ মারা গেলে, স্টোরের পক্ষ থেকে সমবেদনা কার্ড তৈরী করে শোকে মুহ্যমান সহকর্মীটিকে দেয়া হয়। কার্ডের ভেতরে থাকে সকলের স্বাক্ষর, সাথে ডলার। স্বাক্ষর করার সময় যার যেমন খুশী, ডলার ভরে দেয় খামের ভেতর
। এরপরে আর কিছু আমি জানিনা। আমিও চেনা-অচেনা যে কারো কার্ডে স্বাক্ষর করে ডলার ভরে দিয়েছি খামে, অনেকবার। জানতেও চাইনি, এই ডলার কেনো দেয়া হয়? ভেবে নিয়েছি, হয়তো কফিনে ফুল দেয়ার জন্যই টাকা দেয়া হয়। যদিও ধরেই নিয়েছি, নিয়মটি শুধুই আমেরিকানদের জন্য প্রযোজ্য, কিনতু শুরু থেকেই এই রীতিটি আমার খুব ভালো লাগে। আমার মায়ের মৃত্যু সংবাদ শুনেও সকলেই আমার প্রতি সমবেদনা জানিয়েছে, কারো কারো সমবেদনা ছিল কর্তব্য করার মতো, অধিকাংশের সমবেদনার ভাষা ছিল হৃদয়ের গভীরে পৌঁছে যাওয়ার মত। সময়মত কাজে যোগদান করেছি, সকলেই মৌখিক সমবেদনা জানিয়েছে, ধরেই নিয়েছি ব্যাপারটি ওখানেই শেষ হয়ে গেছে।

দশ দিন আগে আমার সুপারভাইজার আমার হাতে একখানি 'সমবেদনা কার্ড' ধরিয়ে দিয়ে বিরাট এক 'হাগ' দিয়েছে। এমন ঘটনায় আমি এতটাই 'সারপ্রাইজড' হয়েছি যে মুখে কোন কথা সরছিল না, দু চোখ বেয়ে শুধুই অশ্রু ঝরছিল। এই প্রথমবার আমি আমেরিকানদের প্রতি কৃতজ্ঞতা বোধ করলাম। কৃতজ্ঞতা বোধ করেছি এই ভেবে, আমাকেও ওরা ওদের একজন হিসেবে স্বীকৃতি দিয়েছে! আমেরিকান সহকর্মীদের এই কৃষ্টি দেখে মুগ্ধ হলাম।

আমাকে এমন মমতা , সমবেদনা দেখিয়ে যেভাবে ওরা চমকে দিয়েছে, আমিও তাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর উপায় খুঁজছিলাম। আজকেই একমাস পূর্ণ হলো আমার মায়ের মৃত্যু হয়েছে। গতকাল মুহূর্তের মধ্যেই মাথায় আইডিয়া চলে এসেছে, চলে গেলাম বেকারী সেকশানে। আমার পরম শুভাকাংক্ষী ডেবী (বেকারীর ম্যানেজার) কাছে আসতেই তাকে বললাম, " ডেবী, আমি ওয়ালমার্টের সবাইকে ধন্যবাদ জানাতে চাই, আমার কষ্টের সময়ে আমার পাশে থাকার জন্য। তোমার হেল্প চাই। আমাকে সবচেয়ে বড় সাইজের, সবচেয়ে সুস্বাদু একখানা কেক বানিয়ে দাও। কেকের রঙ হবে ধবধবে সাদা, এককোনে থাকবে হলুদ গোলাপ, লেখা থাকবে , থ্যাঙ্কস এভরিবডি ফর বিয়িং উইদ মি। কেকটা চাই আগামী শুক্রবার, যেদিন মোটামুটি সকলেই উপস্থিত থাকবে। আমার হাজব্যান্ডকে বলেছি, একখানা ধন্যবাদ কার্ড বানিয়ে দিতে। আমার প্রতি যে ভালোবাসা তোমরা দেখিয়েছো, তোমাদের প্রতি কৃতজ্ঞতা জানানোর আর অন্য কোন উপায় খুঁজে পেলাম না"।

আমার প্রস্তাব শুনে ডেবী বেশ কয়েক মুহূর্ত তাকিয়ে থাকলো আমার দিকে, তারপরেই আমাকে জড়িয়ে ধরে শুধু বললো, " তুমি স্পেশ্যাল, তুমি শুদ্ধ আত্মার এক মানুষ, তোমাকে আমি কী পরিমান ভালোবাসি তা তুমি আন্দাজ করতে পারবেনা। আমি অনেক যত্ন করে কেক বানিয়ে দেবো। তোমার এই প্রস্তাবে আমি অবাক হয়েছি, এর চেয়ে সুন্দর আর কিছু হতে পারেনা। ২২ বছর হয়ে গেলো আমি ওয়ালমার্টে চাকুরী করছি, তুমিই প্রথম, যে সিমপ্যাথী কার্ডের বিপরীতে এভাবে ধন্যবাদ জানাতে চাইছো। সবাই খুশী হবে, সকলেই সম্মানিত বোধ করবে। আই ফিল প্রাউড ফর ইউ"!

(ডেবীর বয়স ৬৫ বছর, বি এ পাশ, সময় কাটানোর জন্য চাকুরী করে, অবসরে আমার মতো সেও গল্পের বই সামনে নিয়ে বসে থাকে, চার সন্তানের সকলেই আর্মীতে চাকুরী করে, স্বামী-স্ত্রী সুখে সংসার করে)

No comments:

Post a Comment