Monday, November 5, 2012

ফার্স্ট লেডী পিয়ারী বানু

৫ই নভেম্বারের সকালে পিয়ারী বানুর ঘুম ভেঙ্গেছে পেটে প্রচন্ড ব্যথা নিয়ে। ব্যথার ব্যাপারটা পিয়ারীকে চিন্তায় ফেলে দিয়েছে। ক্রনিক ইউরেনারী ট্র্যাক ইনফেকশান আছে তার। মাত্র সাত আট মাস আগেই ডাক্তার দেখিয়েছে, তখনই ডাক্তার বলে দিয়েছিল, ইনফেকশানটা বছরে দুই তিনবার হলে অবশ্যই চিন্তার বিষয়! হিসেব করে দেখা গেল, আজকেরটা নিয়ে গত দশ মাসে তিনবার ইনফেকশান হয়ে গেল। পিয়ারী আমেরিকার হেলথ পলিসির উপর মহাক্ষ্যাপা। প্রতিমাসে হেলথ ইনসিউরেন্স থেকে প্রিমিয়াম বাবদ  কেটে নিচ্ছে মোটা দাগে, তার উপর আবার ৫০০০ ডলার ডিডাকটেবল। আমেরিকাতে আসার পর পিয়ারী এই ডিডাকটেবলের হিসেব ভাল বুঝতো না। এখনও খুব বেশী বুঝেনা, শুধু বুঝে, চিকিৎসা খরচ ৫০০০ ডলার পর্যন্ত তাকেই পে করতে হবে, ৫০০০ এর বেশী হলে, তখন ইনসিউরেন্স কোম্পাণী ৮০% পে করবে। তখনই পিয়ারী বলেছিল, -মরণ আমার! আমার রোগের মধ্যে হয় শুধু মাথা ব্যথা, মাঝে মাঝে স্কিনে চুলকোনি, এই সমস্যা নিয়ে সারা বছর ডাক্তারের কাছে গেলেও তো ৫০০০ ডলার হবে না! অথচ মাসে মাসে আমাকে প্রিমিয়াম দিয়ে যেতে হবে।

এই কারনেই পিয়ারী বাংলাদেশের হেলথ পলিসি ভালোবাসে। যে কেউ যখন তখন ফার্মেসী থেকে এন্টিবায়োটিক,  স্যালাইন, যে কোন অয়েন্টমেন্ট কিনে নিয়ে আসতে পারে। ডাক্তার না দেখালেও চলে। পিয়ারীর মেজ ভাইয়া প্রতিদিন  মাথা ব্যথায় 'নাপা' খায়,  আর পেটের ব্যথায় খায় 'সিপরোসিন'। মেজ ভাইয়াকে সবাই 'মোবাইল ফার্মেসী' ডাকে। অসুবিধা কিছুই দেখেনা পিয়ারী বানু। বেঁচে তো আছে সবাই, আমেরিকাতে থেকেই বা কী এমন হাতী ঘোড়া করে ফেলছে পিয়ারী। ডাক্তারের বিল দিতে হবে ভয়ে সে ডাক্তারের কাছে যায় না। এদিকে ফার্মেসীতে গিয়েও কোন এন্টিবায়োটিক পাওয়া যায় না, ডাক্তারের প্রেস্ক্রিপশান চায়। যত্তসব ফাজলামো! আরে! পৃথিবীর সবাই কি তোদের মত আকাট মূর্খ নাকি? আমাদের দেশের নামে এত বদনাম, তোদের দেশের এক প্রেসিডেন্ট বাংলাদেশকে বলেছিল, 'তলাবিহীন ঝুড়ি'? সেই তলা বিহীন ঝুড়ির দেশের মানুষের মাথায় যতখানি বুদ্ধি আছে, তার এক ছটাক বুদ্ধিও তো 'তলাওয়ালা  ঝুড়ি'  আমেরিকার  একজনের মাথায় নাই!  এরা কী জানে, গলায় ব্যথা হলে 'ইরিথথ্রোমাইসিন' খাওয়া যায়, মুখে ব্রন হলে টেট্রাসাইক্লিন খাওয়া যায়,  আর সর্বরোগে মহৌষধ এন্টিবায়োটিক 'পেনিসিলিন তো আছেই। এখন মেজ ভাইয়া যেটা খায়, ' সিপরো', তার তো তুলনাই নেই। গেলো বার যখন পিয়ারীকে মুমূর্ষু অবস্থায় ফ্যামিলি মেডিক্যাল সেন্টারে নিয়ে যাওয়া হলো, সেই ডাক্তার তো 'সিপরো' খেতে দিল।  দেশে থাকলে কি আর এমনটা হতো? কম্পাউন্ডার সাহেবরে জিজ্ঞেস করলেই ওষুধ দিয়ে দিত। মাঝখান থেকে কতগুলো ডলার বিল করে দিল।

পিয়ারী এখানে কাছাকাছি একটি মলে 'বুক স্টোরে' চাকরী করে। বেতন খুব বেশী না, তার উপর হেলথ ইনসিওরেন্স প্রমিয়াম তো দিতেই হয়, মূল বেতন থেকে অনেকটা টাকা চলে যায়।  এইজন্যই  পিয়ারী এক বন্ধুকে দিয়ে বাংলাদেশ থেকে দুই বাক্স 'সিপ্রোসিন', দুই বাক্স ফ্ল্যাজিল, আর পেনিসিলিন ক্যাপ্সুল আনিয়ে রেখেছিল।  তবে ওষুধের বাক্স রেখেছে ওর স্বামী জোবেদ আলী, সেদিন বিকেলেই বলছিল কোন ড্রয়ারে রাখার কথা। আজ সকাল থেকে সেই চেনা ব্যথা শুরু হতেই আর দেরী না করে 'সিপরো' খাওয়ার সিদ্ধান্ত নিয়ে নিল। কিনতু সমস্যা হলো,  সেই ডাক্তার কী ডোজে খেতে দিয়েছিল, পিয়ারী তা কোনভাবেই মনে করতে পারছিল না। স্বামী জোবেদ আলীকে ফোন করতে গিয়ে দেখে ল্যান্ড ফোন কাজ করেনা।  রাগের চোটে ওবামার ঊদ্দেশ্যে একটা গালি ছুঁড়ে দিল। বাংলাদেশের অভ্যাস এটা, কিছু খারাপ হলেই 'হাছিনার দোষ! মোবাইল ফোনে কল দিতেই জোবেদ আলী ফোন ধরলো,

-কী ব্যাপার? এতক্ষনে ঘুম ভাঙ্গলো?
-শোন, আমি 'সিপরো' খুঁজতেছি, কই রাখছিলা?
-কী খুজতেছ? সিপরো আবার কি জিনিস?
-'সিপরো কি জিনিস জানোনা? তুমিই না এইবার দেশ থিকা 'সিপরো' আনাইলা আবেদের সাথে?
-কী জানি, আমার মনে পড়তেছে না।
-কী মুশকিল, আমি বলছিলাম এমোক্সাসিলিন আনাইতে, তুমিই কইলা, থাক সিপরো আনাই, এটাই এখন ধন্বন্তরী ওষুধ। মন কই থাকে? আমার মনে আছে আর তোমার মনে নাই?
-তোমার তো মনে থাকবই, নিজে নিজে ডাক্তারী করবা, তোমার মনে থাকবোনা? আমার আসলেই মনে নাই। সমস্যা কী?
-আমার আবার ইউ টি আই সমস্যা হইতেছে। আর দেরী করতে চাইনা, এই মুহূর্তে 'ওষুধ শুরু করতে চাই।
-নিজে নিজে ডাক্তারী কইরো না কইলাম, ডাক্তার দেখাইয়া ওষুধ খাও।

-ঠিক আছে, তুমি আস, আমারে ডাক্তারের কাছে লইয়া যাও।
-আরে! আমি কাজ ফেলে এখন কিভাবে আসবো? তুমিই তো ডাক্তারের কাছে চলে যেতে পারো।

-এই সোনার দ্যাশে তো কইলেই আমি ডাক্তার পামু না, ডাক্তারের এপয়েন্টমেন্ট লওন লাগবে।
-হ্যাঁ ফোন কইরা এপয়েন্টমেন্ট নাও।\
- সবই আমাকেই করতে হবে?  আমি খুব অসুস্থ, আমাকেই ফোন করতে হবে, আমাকেই গাড়ি ড্রাইভ করে মেডিক্যাল সেন্টারে যেতে হবে? তাইলে আর তোমারে দিয়া আমার কোন উপকারটা হইতেছে, শুনি!  এপয়েন্টমেন্টটাও  তুমি লইয়া দিতে পারবা না?
-কী যন্ত্রনা, একটা কাজও তো পারনা, খালি খ্যাচর খ্যাচর।
-এই শোন, আমার মেজাজ খারাপ কইরো না, আমি তোমারে জিজ্ঞেস করছিলাম, ওষুধ কই রাখছো, আর তুমি আমার সাথে লেকচার ঝাড়তেছো। আমার এখন কোন কিছু শুনতেই ভাল লাগতাছেনা।
-তোমার কিছুই ভাল লাগবেনা, কবেই বা তোমার ভাল লাগে শুনি?
-ধ্যেৎ তেরিকা, ফোন রাখলাম।

পিয়ারী বানু নানা ড্রয়ার খুঁজে খুঁজে পেয়ে গেল 'সিপরোসিনের প্যাকেট। আবার জোবেদ আলীকে ফোন করলো,
-শোন, ওষুধ পাইছি, এখনই একটা খাইতেছি। তুমি একটু ইন্টারনেটে যাও, গিয়ে দেখো ডোজ টা কী?
-তুমি বাক্স থেকে লিটারেচার বের করে পড়ে দেখো, কয় বেলা খাওয়ার নিয়ম।
-শোন, তুমি কি বুঝতে পারতেছো, আমার পক্ষে যদি সম্ভব হইতো, তাইলে আমিই সব করতাম। তোমারেও কইতাম না, তোমার পিরীতের ওবামারেও কইতাম না।
-আমারে কইতেছো কও, ওবামারে টানতেছো কেন?
- কারন সে আমাদের প্রেসিডেন্ট, সে যেন নির্বাচনে জিতে, তার জন্য তুমি জান লড়ায়ে দিতেছো। অসুস্থ বউকে নিয়ে হাসপাতালে যাওয়া দরকার, সেই কথাও মাথায় নাই। উলটা বউরে বকাঝকা করতাছো।  কী বুঝে এমন আদাজল খেয়ে নামছো, তা জানিনা। ওবামা জিতলে কি তোমার এক তারা হোটেল পাঁচতারা হইয়া যাইব?

-কে জানে, যাইতেও পারে। আমি তো সুবিধা লওনের জন্য কিছু করি না। আদর্শের জন্য কাজ করি। যাই হউক, শরীর খারাপ কইতেছো, আবার ফোনের উপর দিয়া আগুন ছুটাইছ। ওষুধ খাইয়া শুইয়া থাক। আমার অনেক কাজ।

-কী আমার কাজ রে!  তোমার পীরিতের 'ওবামা'  এই বাজে হেলথ পলিসিটাও পাল্টাইলো না, আমাদের জন্য কোন সুবিধাই নাই,  দেশে থাকলে কি আর তোমার পা ধরতাম? ঘর থিকা ফোন করলেই ফার্মেসী থিকা ওষুধের বাক্স লইয়া কম্পাউন্ডার সাহেব ছুইট্টা আইত।  পেটের যন্ত্রনায় আমার কিছুই ভাল লাগে না। এই জন্যই গেলবার চাইছিলাম, হিলারী ক্লিন্টন প্রেসিডেন্ট হউক। হিলারী প্রেসিডেন্ট হইলে মেয়েদের দুঃখ বুঝতো।

- -'ওবামা' রে টানো কেন? তোমাদের মত আকাট মূর্খ রুগীদের জন্য ঠিকই আছে আমেরিকার হেলথ পলিসি। যে ওষুধের লিটারেচার পড়তে জানেনা, আবার বড় বড় কথা কয়, তাদের জন্য এই সবই ঠিক।    হিলারী তো নমিনেশানই পায় নাই, সেইটা তো আর ওবামার দোষ না। হেলথ পলিসি চেঞ্জ হবে, তার জন্য মানুষটাকে আরেকবার ক্ষমতায় আসতে দিতে হবে।

-হুহ! হিলারী পাইব কেমনে নমিনেশান, তোমরা ভাবো, দেশ বুঝি শুধু পুরুষেই চালাইতে জানে। যাউক গা, তোমার সাথে প্যাঁচাল পারা আর গাছের সাথে কথা কওয়া একই। তুমি আমারে ঠিক চার ঘন্টা পরে জানাইবা, আমি পরের ডোজ ঠিক কয়টার সময় খাব। আর না হইলে তোমার 'ওবামা'রে ভোট দিমুনা।

- যাও যাও, তোমার ভোটের লাইগা বইসা রইছে ওবামা। শোন, আর কথা কওয়া ঠিক না, একটা ভুল ঠিক কইরা দেই, আমরা যা কিছুই ভাবি না কেনো,  আমাদের দেশে গত ২২ বছর ধইরা দুই মহিলা দেশ চালাইতেছেন, এইবার রাখি।

-মনে থাকে যেনো কথাটা, আরেকবার যদি অনুরোধ করছো, ওবামারে ভোট দেওয়ার জন্য, তোমার খবর কইরা ছাড়ুম।



'সিপরোসিন' খাওয়ার দুই তিন ঘন্টা পর পিয়ারীর মাথাটা একটু একটু ঠান্ডা হতে শুরু করলো। পেটের ব্যথা কমা মানেই ওষুধে কাজ করছে। এই মুহূর্তে ওবামার উপরেও রাগটা কমেছে, জোবেদ আলীর উপর রাগটা এখনও আছে। ওবামার কথা উঠলেই এই ভদ্রলোক কেমন যেনো গদগদ হয়ে যায়। আরে, এত গদগদ হওয়ার কী আছে। আমরা কি মাগনা থাকি নাকি আমেরিকাতে। প্রতি পদে পদে ট্যাক্স দেই, আমাদের টাকাতেই আমরা খাই, এত মিঁউ মিঁউ করার কি আছে? আমাদের দেশে তো ট্যাক্সও দেওন লাগেনা, পুরাটাই ফাঁকী দেওন যায়। তবুও দেশের মাইনষের কী চোট, প্রত্যেক দিন একবার কইরা  খালেদা-হাছিনারে গদি থিকা নামায় আবার গদীতে বসায়। আর এই দেশে ট্যাক্স দিয়াও চিকিৎসা পাইনা, নিজের দেশ থিকা ওষুধ আইনা খাই।

দুপুরে লাঞ্চ ব্রেকে জোবেদ আলী বাড়িতে ফিরেই গটগট করে বসার ঘরে চলে গেল। আগামীকাল আমেরিকার প্রেসিডেন্ট নির্বাচন, জোবেদ আলী নিজ দায়িত্বে ক্যাম্পেইন করে যাচ্ছে। অযথাই এইগুলা করতেছে। এই দেশে যার যার ভোট সে ঠিক সময়ে গিয়া দিয়ে আসে। আমাদের দেশের ঠিক উলটা। এইখানে কোন সাড়া-শব্দ পাওয়া যায়না। পিয়ারী বানুর মনে হয়, জোবেদ আলী খামাখাই টেনশান করতেছে, ক্যাম্পেইন কে করতে কইছে? কোন মানে হয়? ঘরের খেয়ে বনের মোষ তাড়ায় কে? আর ক্যাম্পেইনের কী ভাষা! আহা! মরি মরি ভাষা। ওবামা অনেক ভাল, ওবামার মধ্যে 'ইসলামিক ব্লাড আছে, ওবামা বুশের মত যুদ্ধবাজ না, ওবামা খুব স্ত্রী ভক্ত, তিনি স্ত্রী এবং দুই কন্যাকে খুবই ভালোবাসেন। ক্লিন্টনের নামে স্ক্যান্ডাল থাকলেও মহামতি ওবামার বিরুদ্ধে কোনই স্ক্যান্ডাল নাই। কাজেই সবার উচিত ওবামাকে ভোট দেয়া। প্রেসিডেন্টের বউ প্রীতি নিয়ে যার এত দরদ, সেই কিনা নিজের  বৌ এর শরীর খারাপ জানার পরেও বেডরুমে ঢুকে একবার জিজ্ঞেস করার প্রয়োজন মনে করলো না?  পিয়ারী বানু ব্যাপারটা খেয়াল করলো, মাথাটা আবার গরম হতে চায়। খাবার পরিবেশন করার উছিলায় পিয়ারী শোয়া থেকে উঠে কিচেনে গেল।

খাবার পরিবেশন করে জোবেদ আলীকে জিজ্ঞেস করলো, তোমাকে বলেছিলাম আমার ওষুধের ডোজটা বলে দিতে। তুমি কি ইন্টারনেট দেখছো?

জোবেদ আলী অযথাই গলা খাঁকারী দিল, তারপরেই মিহি গলায় বললো, আরে আর বইলো না, কালকেই নির্বাচন, শেষ সময়ের ক্যাম্পেইন নিয়া ব্যস্ত ছিলাম, আর কিছু করার সময় পাই নাই, সমস্যা নাই,  এখনই লিটারেচার পইড়া দেখতেছি। আর তুমিও তো পারতা কাগজটা পইড়া দেখতে। সব কিছু একেবারে মুখের সামনে তুইলা না ধরলে হয় না!

পিয়ারী বানুর মুখ থমথমে, চিবিয়ে চিবিয়ে বললো,  অন্যে হইলে আমি এইটা কইতাম না, তুমি বইলাই বলতেছি। তুমিই না সবার কাছে বলে বেড়াও, ওবামার মত স্ত্রী ভক্ত স্বামী খুব কম আছে, ওবামা তার বউয়ের জন্মদিনে কোন রেস্টুরেন্টে বউরে লইয়া ডিনার করছে, সেইটা নিয়া তোমাদের কত আহ্লাদ, কত গল্প! আমি তো ভাবছি, বাহ! এইতো বুঝি আমার কপাল খুইল্লা গেলো। সামনেই আমার জন্মদিন, নিশ্চয়ই আমারে নিয়াও আমার 'ওবামা' সারপ্রাইজ ডিনার করাইব।

-এই টা তো গল্প করার মতই ব্যাপার! প্রেসিডেন্ট হইয়াও সে তার এক সময়ের প্রেমিকা, তারপরে স্ত্রী, মিশেলকে এখনও আগের মতই ভালোবাসে। যে স্ত্রী সন্তানকে ভালোবাসে, সে দেশের মানুষকেও ভালোবাসে।

- আইচ্ছা, একটা কথা জিজ্ঞেস না কইরা পারতেছি না,  মিশেলের চেহারা তো ভালো না, যদিও  আমি মানুষের চেহারা নিয়ে মন্তব্য করিনা, কিনতু মিশেল দেখতে আমার চেয়ে সুন্দরী না, এইটা আমি ভাল কইরাই জানি, তুমিও জান। তা তোমার প্রেসিডেন্ট যদি তার এমন কালটুস বউ নিয়া নাচানাচি করতে পারে, তুমি তাঁর ভাবশিষ্য হইয়াও আমার মত 'আপেল সুন্দরী' রে নিয়া একটা দিন 'কফিশপ এও যাওনা, আবার আমার কাছ থিকা মধুর ব্যবহার আশা কর, এইটা তো ঠিক না।  শোন, আরেকটা কথা কই,  তোমার 'কাইল্লা ওবামার' থিকা 'লালটুস ক্লিন্টন' অনেক ভাল আছিল। তার জইন্য যদি ক্যাম্পেইন করতা, সেইটা সাপোর্ট করতাম।

-মাইয়ালোক সব সময় ঈর্ষা করে। তুমি ফার্স্ট লেডির সাথে নিজেরে তুলনা করতাছ?
-করুম না কেন?  মাইয়ালোক মাত্রই যদি ঈর্ষা করে, আমিও তো মাইয়া লোক, তাই আমিও ঈর্ষা করি। মিশেল ম্যাডামও মাইয়ালোক, খোঁজ লইয়া দেখো, তিনিও ঈর্ষা করেন। সত্যি কথা বললে খারাপ লাগে?  ফার্স্ট লেডির সাথে তুলনা করছি, ঠিকই করছি। আমার সংসারে আমি ফার্স্ট লেডি, ঈর্ষা করি আর যাই করি, মিশেলের চেয়ে আমি অনেক অনেক গুন সুন্দর সেইটা তো আর মিথ্যা না। আর গুন? আমার গুন কি কম আছে? মিশেল স্বামীর সাথে বাইরে বাইরে খায়, আর আমি পিঁয়াজ, রসুন, হলুদ, মরিচ মাখাইয়া মাছ রাইন্ধা খাওয়াই স্বামীরে। মিশেলের নাম যদি সুন্দর হয়, আমার নামও সুন্দর, পিয়ারী, নামের অর্থও কত সুন্দর।  এইবার আস সংসারের কথায়, মিশেলের দুই মেয়ে, আমার চার মেয়ে। মিশেলের মেয়েরা এখনও মাটির সাথে কথা কয়, মানুষ হইতে এখনও অনেক দেরী। বাঁইচ্চা থাকলে দেখুম, এত বিত্ত বিলাসে থাইকা মাইয়াগোরে কেমুন মানুষ করছে! দেখছিলাম তো, লরা বুশের মাইয়া গো, হুহ! কি বিরাট মানুষ কইরা ফেলছে!  আর আমি পিয়ারী কত দুঃখ কষ্টের মইধ্যে থাইকাও মেয়েদের সব কয়টারে নাচে গানে , লেখায় পড়ায় শিক্ষিত কইরা তুলতেছি।

- আচ্ছা থাক থাক, বুঝছি, তুমিই ফার্স্ট,  এই যে ওষুধের ডোজ, প্রতি বারো ঘন্টায় একটা করে। বাপরে বাপ! এত কথা বলতে পারে মানুষ!! এত কথা কও কেন? শরীর খারাপ কইতেছো, আবার হাউ কাউ করতেছো।  এইবার মাথা ঠান্ডা কইরা আমারে একটু কও, ওবামার প্রতি তোমার এমন রাগ কেনো?

-শুধু ওবামা না, কারো উপর আমার কোন রাগ নাই। আমেরিকান প্রেসিডেন্ট ইলেকশান নিয়া আমার কোন মাথাব্যথাও নাই। আমার রাগ শুধু তোমার উপর।  জানা বিষয় নিয়া অযথা কচকচানিকরতে আছো গত একটা মাস ধইরা। অসহ্য লাগে!

-কোন জানা বিষয়ের কথা বলতেছো?

- এই যে, ওবামা, ওবামা কইরা আমার মাথাটা খারাপ কইরা ফেলতেছ। আমি তো আমার কাজের জায়গায় আর কাউরে দেখি না, তোমার মত এমন করতে!  কী আশ্চর্য্য, এইটা তো জানা কথা,  প্রেসিডেন্ট হয় ঘুরে ফিরে দুই দলের থেকে, ডেমোক্র্যাট এন্ড রিপাবলিকান। কোন তো চেঞ্জ নাই। তারপরেও কথা আছে,  প্রত্যেক  প্রেসিডেন্ট দুই টার্ম করেই থাকে, এইটাই হয়ে আসছে, এইবারও হবে, একই নিয়মেই ওবামাই প্রেসিডেন্ট হবে। আমেরিকার জনগনই এইটা চায়, তারা তো আর আমাদের দেশের মানুষের মত এত অস্থির না, ক্ষমতায় বসাইয়াই কেউ গাছের আপেল খাইতে চায় না। গাছে আপেল ধরনের জন্য সময় দেয়।  এই একটা জায়গাতে আমেরিকানরা আমাদের থেকে একটু আগাইয়া আছে।  এইবার আমার রাগের কারন কই,   আমেরিকার হেলথ পলিসি আমার ভাল লাগেনা, ট্যাক্স পলিসি ভাল লাগেনা,  পদে পদে ট্যাক্স দিতে হয়, সেইটাও ভাল লাগেনা। কয় টাকা বেতন পাই, তার অর্ধেক তো এইভাবেই নিয়ে নেয়।  আমার বয়স হইতেছে, এতদিন নাহয় তালিবালি কইরা চালাইছি, এখনতো ডাক্তার না দেখাইয়া পারুম না, অথচ হেলথ পলিসিতে আজ পর্যন্ত কোন পরিবর্তন আসলো না। কিছু কিছু মানুষ 'মেডিকেইড' পাবে আর আমাদের মত অভাগীরা ৫০০০ ডলার ডিডাকটেবল দেয়ার ভয়ে দেশ থেকে এন্টিবায়োটিক আনায়া খাবে। 

-আর কী দোষ আছে?

-এইবার একটা মজার কথায় আসি, ভোট পাওয়ার জন্য ওবামা 'গে ম্যারেজ' সাপোর্ট করে। এইটা একেবারে অসহ্য। ছিঃ ভাবতেই তো গা ঘিন ঘিন করে। এর চাইতে রিপাবলিকান অনেক ভাল। তারা কনজারভেটিভ। ভোট তারাও চায়, কিনতু 'গে' দেরকে কোনভাবেই উৎসাহিত করে না।

-দেখ, এইটা নিয়া কথা বলবা না, আমেরিকাতে যার যার খুশীমত বাঁচার অধিকার আছে বইলাই আমার প্রেসিডেন্ট 'গে ম্যারেজ' নিয়া প্রতিবাদ করে না। তাছাড়া  বুইঝা না বুইঝা এত বেশী কথা কও কেন? একটা গ্রুপ দাবী তুলছে তাদের অধিকার প্রতিষ্ঠার, এখনই তো আর সবকিছু আইন হইয়া যায় নাই। আর কিছু কইবা?


-ওবামা নিজে তার 'কাইল্লা বউ' লইয়া বাইরে ডিনার করতে যায় অথচ তোমাদের মত ডেডিকেটেড কর্মীদেরকে  উদ্বুদ্ধ করতে পারলো না, যাতে করে তোমরাও মাসে দুই একদিন বউ লইয়া আর কোথাও না হোক, ডানকিন ডোনাটে গিয়াই না হয় খাওয়াও!!

-হা হা হা হা!!!  বার বার কেন কাইল্লা বউ কইতাছো? মাইনষে তোমারে রেসিস্ট কইব। তারপরেও  তোমার কাছে হার মানলাম। সত্যিই তো, তুমি তো আমাদের পরিবারের ফার্স্ট লেডী, তোমার দাবী তো থাকতেই পারে পরিবারের প্রেসিডেন্টের সাথে বাইরে বেড়াতে যাওয়ার ব্যাপারে। ঠিক আছে, আমার ভুল স্বীকার করলাম।

-হা হা হা হা! ধন্যবাদ ক্লিন্টন সাহেব, এইজন্যই আমি ক্লিনটনকে এত পছন্দ করি। ভুল করেছিল, তা ঠিক আছে, মানুষ মাত্রেই ভুল করে, আর মনিকা তো ছিল --যাই হোক, ওগুলো তাদের ব্যক্তিগত ব্যাপার। হিলারীকে তো আমি সব সময় পছন্দ করি, কী চমৎকার জুটি ক্লিন্টন-হিলারী। একজন ক্ষমা চাইলো, আরেকজন তার ভালোবাসার হাত বাড়িয়ে দিল!

-ঠিক আছে, তুমি না হয় হিলারী, এটাতে তো আপত্তি নাই, হিলারী তো আর কাল্টুস না, তোমার মতই সুন্দর। তা হিলারী এবং ক্লিন্টন, দুজনেই কিনতু ওবামার হয়ে ক্যাম্পেইন করছে, তাহলে কী আমিও তোমার কাছে  ওবামার জন্য তোমার ভোটটা চাইতে পারি!

-ঠিক আছে। কাল সকালে গিয়ে দিয়ে আসবো ভোট, কাকে দিব তা বলবো না, তবে কাইল্লা যদি আবার জিতে, তারে বলবা, হেলথ পলিসি আমাদের জন্য সহনীয় করে দিতে!

- আবার 'কাইল্লা' কইতেছো! তোমার মত রেসিস্ট মানুষ লইয়া ঘর করা কত বিপদজনক! যে কোন সময় জেলে নিব।

- 'কাইল্লা' রে কাইল্লা কইছি, এতে রেসিস্ট কইবো কেনো আমারে? তাছাড়া 'ব্ল্যাক' মানে তো কালো। আমি আমার অঞ্চলের ভাষায় 'কাইল্লা' কইছি। যদি আমারে কেউ রেসিস্ট কয়, তাগো সামনে তোমারে দাঁড় করায় দিমু। আমি যদি রেসিস্ট হইতাম, বিশ বছর ধইরা ' ব্ল্যাক ডায়মন্ড' লইয়া ঘর করতে পারতাম?

-এই তো, ব্ল্যাক ডায়মন্ড শুনতেও ভাল লাগে, কাইল্লা না কইয়া প্রেসিডেন্ট সাহেবরে ব্ল্যাক ডায়মন্ড কইও।

- মাথাডা তোমার আউলায় গেছে! তোমারে ব্ল্যাক ডায়মন্ড কই বইলা এখন দুনিয়ার সব কাইল্লা রে ব্ল্যাক ডায়মন্ড ডাকলে তোমার মান-ইজ্জত থাকবো?
- মাশাল্লাহ! সুন্দরীদের বুদ্ধি কম হয় জানতাম, কিনতু আমার 'আপেল সুন্দরী'র বুদ্ধি দেইখা খুশী হইছি। এইবার রেস্ট লও। রোগটা বেশী ভাল না। হেলথ পলিসি যা ইচ্ছা তা হউক, তোমারে ডাক্তারের কাছে নিয়া যাইতে হবে, কালকে ইলেকশানটা হইয়া যাক।





-

No comments:

Post a Comment