Thursday, December 13, 2012

ডিসকাউন্টের ক্ষ্যাতা পুড়ি!!

ডিসকাউন্ট শব্দটি যে কোন ক্রেতার কাছে অত্যন্ত প্রিয় একটি শব্দ। তা যে দেশেই হোক না কেনো! আমাদের দেশে সারা বছর গাউছিয়া মার্কেট, ঢাকা নিউ মার্কেট, হকার্স মার্কেটের প্রত্যেক ফ্লোরে বিশাল বড় বড় ব্যানার টাঙানো থাকে, যেখানে লেখা থাকে 'অমুক ফ্যাশান হাউজে বিরাট মূল্যহ্রাস"!  মূল্যহ্রাসে জিনিস কেনা কারো কারো নেশা, কারো বা প্রয়োজন, কিছুটা সুলভে জিনিস ক্রয় করা গেলে মন্দ কি! আমি প্রথম দলভুক্ত। কোথাও যদি মূল্যহ্রাসের খবর শুনতাম, পড়িমরি করে গিয়ে হাজির হতাম, অপ্রয়োজণীয় জিনিস কিনে এনে ঘর ভরাতাম, তবুও মনে এক ধরণের প্রশান্তি পেতাম, আমি শাড়ীটা অন্যদের তুলনায় অনেক কমদামে পেয়েছি ভেবে।

আমার স্বামী  এসব কাজে আমাকে  বাধা না দিলেও অনেক আগেই শুনিয়েছে, মূল্যহ্রাস বলে সত্যি কিছু নেই। ব্যবসায়ীরা মূলদাম অনেক বেশী দেখিয়ে মূল্যহ্রাসে যে দামের কথা লিখে, ওটাই আসলে ওদের সত্যিকারের বিক্রয়মূল্য। স্বামীর কথা বিশ্বাস না করলেও চলে, কারণ তারতো আর শাড়ীর ব্যবসা নেই, সে জানবে কী করে, কোথা দিয়ে কী হয়! তবে তার কথা ফেলে দেইনি,  কোন বাক বিতন্ডায় না গিয়ে নিজেকে সংবরণ করে নিয়েছিলাম।

আমেরিকায় এসে তো  দেখি  চারদিকেই রমরমা সেলের ব্যবসা। আমি তখনও ওয়ালমার্টে চাকুরী শুরু করিনি, তাই আমার কাছে সেলের আপডেটস থাকতো না। তবে যখন ওয়ালমার্টে চাকুরীতে ঢুকলাম, ধীরে ধীরে দেখি, ওদের সেল মানে সত্যিই সেল। দামের ট্যাগ পালটায় না। পূর্বমূল্য যেমন থাকে, সেখানেই সেল প্রাইস লাগানো হয়। সাত বছর চাকুরী করে এটা জেনেছি, এরা জাত ব্যবসায়ী। কাস্টমারকে এর টপ প্রায়োরিটি দেয়, ঠকায় না। কাজেই এখানে সেল মানে সত্যিই সেল।

সেল ছাড়াও আমাদের প্রতিটি এসোসিয়েটকে ওয়ালমার্ট ১০% ডিসকাউন্ট কার্ড দিয়েছে সারা বছর ব্যবহার করার জন্য।  গ্রোসারী বাদে যে কোন কিছু কিনলেই আমরা ১০% ডিসকাউন্ট পাই। তাছাড়া বছরে একবার ২০% ডিসকাউন্ট দেয়, যে কোন একটা আইটেমের উপর।  খুব দামী কিছু কিনতে হলে ২০% ডিসকাউন্টের জন্য অপেক্ষা করি। এবার ওয়ালমার্ট কর্তৃপক্ষ একটা আইটেমের বদলে এক ট্রলী আইটেমের উপর 'ওয়ান চান্স' ২০% ডিসকাউন্ট ব্যবহার করার সুযোগ দিয়েছে। তবে সাথে একটা সতর্কবাণীও বলে দিয়েছে, " ৬ ও ৭ ডিসেম্বার এর যে কোন একদিন তুমি প্রথম পারচেজের সময় ২০% ডিসকাউন্ট পাবে। কাজেই তোমার ডিসকাউন্ট কার্ডটি  ব্যবহার করার আগে দ্বিতীয়বার ভেবে নিও।   অসতর্কতা বশতঃ যদি কেউ একটা পানির বোতলও কেনে, ডিস্কাউন্ট কার্ড ব্যবহার করার সাথে সাথে অটোমেটিক ২০% ডিসকাউন্ট হয়ে যাবে। এক ট্রলি ভর্তি জিনিস যেখানে ২০% ডিসকাউন্টে পেতে পারতে, একটা পানির বোতলেই তা ব্যবহাত হয়ে যাবে। কাজেই সাবধান!

আমার হিসেব পাকা ছিল, কর্তাকে বলেছি বিকেলে ওয়ালমার্টে চলে আসতে, আমার এক ঘন্টা লাঞ্চ ব্রেক থাকবে, তখন দুজনে মিলে ট্রলি ভরে বাজার করবো, আর ২০% ডিসকাউন্ট পাবো। বলতে ভুলিনি, " শোন, নিজে নিজে কিছু কিনে ফেলো না, তাহলে কিন্তু প্রথম চান্সেই ডিস্কাউন্ট চলে যাবে"।  আমার পাকা হিসেবের সাথে আমার কর্তার হিসেব কখনও মিলে না। তার মতে,  ডিস্কাউন্টের ফাঁদে পা দিলে, ডাবল খরচ হয়। অপ্রয়োজণীয় জিনিস বেশী কেনা হয়। ২০ % ডিসকাউন্ট পেতে বাকী ৮০% পকেট থেকে বের হয়। আমি একেবারেই অমত করি না কর্তার হিসেবের সাথে, কারণ তার মত আমারও সাধারণ গণিতের মাথা খুব পরিষ্কার। কিন্তু ফাঁদে পা দেয়া যার স্বভাব, গণিতে পিএইচডি করা থাকলেও সে ফাঁদে পা দেবেই।

যাই হোক, টী ব্রেকে গেলাম কিছু খাবার কিনতে। আমার কিন্তু পেটে ক্ষিদে ছিল না, আমার আরেক লেখাতে আমি বলেছিলাম, আমার দৃষ্টি ক্ষিদে আছে। আমেরিকানদের অনেকেই সুযোগ পেলেই শুধু খায়, আর ওয়ালমার্টে যারা কাজ করে, তাদের খাওয়া দাওয়ায় বিরতি দেখি না। ব্রেক রুমে সবাইকে খেতে দেখলে আমারও খেতে ইচ্ছে করে। সেই ইচ্ছের চাপে পড়েই 'সুইট এন্ড সাওয়ার চিকেন' এর কয়েকখানা পিস তুলে নিলাম। চেক আউট করতে গিয়ে ২০% ডিস্কাউন্টের কথা বেমালুম ভুলে গিয়ে অভ্যাসবশতঃ আমার ডিসকাউন্ট কার্ড ব্যবহার করতেই অটোমেটিক পদ্ধতিতে ২০% ডিস্কাউন্ট ব্যবহার করা হয়ে গেলো! চিকেনের টুকরোর মোট মূল্য ছিল দুই ডলার। ২০% ডিসকাউন্টে তার দাম পড়েছে এক ডলার ষাট সেন্টস। মাথাটা ঘুরে গেলো! ব্রেক রুমে ফিরে গিয়ে মুরগীর টুকরো মুখে দেই, কেমন যেনো বিস্বাদ লাগে! বুকটা ধড়ফড় করে, নিঃশ্বাস ভারী হয়ে আসে। কী ব্যাপার! হার্ট অ্যাটাক করবে না তো! এই যখন অবস্থা, স্বামীকে ফোন করে বিকেলে আসতে মানা করে দিলাম। কিন্তু স্বামীর কন্ঠস্বরে কোন তাপ উত্তাপ টের পেলাম না। এটা খারাপ লক্ষ্মণ, কোট করে রেখেছে, কোন এক আসরে সেটা ভাঙ্গবে। যাক গিয়ে, মরে তো আর যাই নি, নাহয় কিছু কিনবো না, সত্যিইতো, এইসব সেল-ফেলের ব্যাপার খুবই ভেজালের। বাজে জিনিসই সেলে দেয়, ভালো হলে তো আর সেলে দিতনা! মনকে স্বান্ত্বণা দেই, পাগল মন তো সান্ত্বণা মানে না। আবার স্বামীর শরনাপন্ন হলাম,

- আচ্ছা, কত বড় ক্ষতি হয়ে গেলো, বলোতো! আজ আমার খাওয়ার ইচ্ছে ছিল না, নিয়তি আমাকে টেনে নিয়ে গেছে"!

-তোমার শরীর ঠিক আছে তো! কথা শুনে তো মনে হচ্ছে, বিরাট ক্ষতি হয়ে গেছে তোমার! আরে! তুমি কি বুঝো না, এগুলি ওয়ালমার্টের বিজনেস পলিসি! রাখো তোমার ডিসকাউন্ট!

ফোন রেখে দিলাম। যার নুন খাই, তার গুণ গাই। ওয়ালমার্টের বদনাম সহ্য করতে পারি না। ওয়ালমার্টের দোষ কি! ভুল তো ওয়ালমার্ট করেনি। থাক, লাগবেনা আমার ডিসকাউন্ট। ডিসকাউন্টের ক্ষ্যাতা পুড়ি!

মাত্র ছয় দিন আগেই  ডিসকাউন্টের  ক্ষ্যাতা পুড়লাম,  লজ্জা থাকলে আর কখনও এ পথে পা বাড়ানোর কথা না! তবে আমি আবার পা বাড়িয়েছি।  গতকাল ব্রেকরুমে বসে চা খাচ্ছিলাম। এক টেবিল দূরে তিন চারজন কৃষ্ণাঙ্গী একসাথে বসেছে। তাদের মাঝে একজন  বিখ্যাত 'সাবওয়ে'র সাব স্যান্ডুইচ খাচ্ছিল আর চার জনে খাবার নিয়ে কথা বলছিল।  ওয়ালমার্টে 'সাবওয়ে'র একটা স্টল আছে। সাব ওয়ে স্যান্ডুইচকে সবাই খুব 'হেলদি খাবার' হিসেবে ধরে। কারণ এই স্যান্ডুইচে তেলে ভাজা কিছু ব্যবহার করা হয় না। সব বেক করা, আর ভেজটেবল থাকে ভেতরে। আমার মেয়েরাও ভালোবাসে সাবওয়ের স্যান্ডুইচ। আমার ভালো লাগে না। ওরা বলাবলি করছিল, ডিসেম্বার মাসে ওয়ালমার্ট এসোসিয়েটদের জন্য ৬ ইঞ্চি সাব স্যান্ডুইচ মাত্র দুই ডলারে দেয়া হবে।  ছয় ডলার দামের স্যান্ডুইচ মাত্র দুই ডলারে? নিশ্চিত হওয়ার জন্য ওদের জিজ্ঞেস করলাম, " এটা কি কোন এক বিশেষ ধরণের স্যান্ডুইচ, নাকি যে কোন ছয় ইঞ্চি স্যান্ডুইচ"? ওরা বলল, যে কোন ছয় ইঞ্চি স্যান্ডুইচ। আমি তো বাইরের খাবার খুব একটা খাই না, আমার মেয়েরা খায়। তাই ভাবলাম, ঠিক আছে, মিথীলা  সাব স্যান্ডুইচ এত পছন্দ করে, প্রতিদিন মিথীলার জন্য নিয়ে যাব স্যান্ডুইচ। 'সাবওয়ে'কে মনে মনে ধন্যবাদ জানালাম।

বাড়ী ফিরেই আমি মিথীলাকে বলেছি, পরের দিন স্কুল থেকে ফিরেই সে তার প্রিয় খাবার পাবে। মিথীলা ভদ্রতা করে অবশ্য খুব আস্তে করে ' না, থাক লাগবে না' বলেছে, আমি তা হেসে উড়িয়ে দিয়েছি। বলেছি, ' কী যে বলো, দুই ডলারে দিচ্ছে যখন, পুরা ডিসেম্বার মাসে তোমার জন্য সাব স্যান্ডুইচ আনা হবে"। আজ আমার লাঞ্চ ব্রেক ছিল দুপুর দেড়টায়। আমি সরাসরি সাবওয়ে' তে ঢুকে দুইটা স্যান্ডুইচের অর্ডার দিলাম। মিথীলা ও মিথীলার পাপার জন্য। মেয়েটা জিজ্ঞেস করলো, স্যান্ডুইচের ভেতর কী কী ফিলিং চাই। বললাম, চিকেন দাও।

-ভেজিটেবল বা চীজ দেবো?
-অবশ্যই দিবে। এখানে যা যা আছে, তার সবই দাও একটু একটু করে।
মেয়ে দুটো স্যান্ডুইচ সাজাচ্ছিল, আমি ভাবছিলাম, এমন হেভী স্যান্ডুইচ ওরা কিভাবে দুই ডলারে দিচ্ছে! সবশেষে মেয়েটি জানতে চাইল, কোন সস দেবো?
সসের কথা বলতে সংকোচ হচ্ছিল। এমনিতেই কত কিছু দিয়েছে, আবার সস চাই কোন মুখে! অথচ আমি জানি,  মিথীলা হানি মাস্টার্ড সস, র‌্যাঞ্চ ড্রেসিং, মেয়োনিজ খুব পছন্দ করে। বলবোনা বলবো না করেও বলেই ফেললাম, দাও একটু মাস্টার্ড সস দিয়ে দাও। স্যান্ডুইচ র‌্যাপ করে আমার কাছে দিয়ে বিল করলো, দশ ডলার।

-দশ ডলার কেনো? তোমাদের দুই ডলার স্যান্ডুইচ  পুরো ডিসেম্বার মাস জুড়ে চলার কথা তো?
-সেটা অন্য ডিল। মিটবল স্যান্ডুইচ, সাথে কোক। দুই ডলার।
-আর এটা কী ডিল? রেগুলার ডিল?
-হ্যাঁ, রেগুলার ডিল।
-ঠিক আছে, দাম রাখো। তোমরা ডিস্কাউন্ট কার্ড নাও না?
-ডিসকাউন্ট কার্ড নেই, তবে অন্য স্যান্ডুইচের সাথে।
-বাপ রে!, এত রকম সকম কেন?
-আচ্ছা, তোমার থেকে ডিসকাউন্ট রাখছি, তুমি দাও আট ডলার পঁচাত্তর সেন্ট।
-ক্রেডিট কার্ড তো তোমার কাছেই দিয়েছি, যা রাখার রেখে দাও।

স্যান্ডুইচের ব্যাগ হাতে গাড়ীতে উঠলাম। একটু বোকা বনে গেছি, তবে মেয়ের জন্য, মেয়ের বাবার জন্য খাবার নিচ্ছি, দাম কোন ব্যাপার না। ব্যাপারটা হচ্ছে, সেল বা ডিস্কাউন্ট শুনলেই এখনও আমার মাথা 'আউলা' হয়ে যায়, এটা ভেবেই বিব্রত হচ্ছি। কী বোকা বনে গেলাম! কী ছাতার স্যান্ডুইচ, তাও আবার নয় ডলার! ধুস! মেজাজটাই খারাপ হয়ে গেলো।

 গাড়ী চালিয়ে যাচ্ছি বাড়ীর দিকে, উলটো দিক থেকে ঊর্ধ্বশ্বাসে ছুটে আসছে পুলিশের গাড়ী, পরপর কয়েকটা। পুলিশ আমার কোন ক্ষতি করে নি আজ পর্যন্ত, তারপরেও পুলিশ বা পুলিশের গাড়ী দেখলেই ভয়ে আমার বুক কাঁপে। পুলিশের তাড়া দেখে ভাবছি, হয়তো কাছে পিঠে কোথাও বিরাট  অ্যাকসিডেন্ট হয়েছে। বাড়ী পৌঁছে আধঘন্টা সময় থেকে আবার কাজে ফিরে যাচ্ছিলাম।  কাজে ফিরে যাওয়ার সময় আমার সামনে একটি স্কুলবাস, পেছনে আমার গাড়ী। হঠাৎ করেই স্কুলবাসটি ডানদিকে ঢুকে যেতেই দেখলাম সামনের দিকে পুলিশের গাড়ী থামানো, চকরি বকরি আলো ঘুরছে। বুঝতে পারছিলাম না, কি করা উচিৎ। স্কুল বাসের পেছনে পেছনে ডানদিকে চলে গেলেই হতো, তা না করে আমি সোজা গেলাম। ঠিক যে স্টপ সাইনে আমি রাইট টার্ণ নেবো, সেই টার্নের মুখেই চার পুলিশ দাঁড়িয়ে আছে, পাশে দুইটি আলো ঝলকানো গাড়ী থামানো। সবাইকে ইশারায় সামনে যেতে বলছে। আমি পড়ে গেছি বিপদে, আমার দরকার ডানে ঘোরা, আমি সামনে গিয়ে কোথায় যাবো? পেটের ভেতর মোচড়াতে লাগলো। আমি তো রাস্তা-ঘাট চিনিনা, উলটো ঘুরাণোর উপায়ও নেই। ভাবলাম, পুলিশকে বলি, আমাকে ওয়ালমার্ট যেতে হবে। আমার গাড়ী স্লো হতে দেখে দূর থেকে পুলিশটা মনে হয় আমাকে একটা বকা দিল, গাড়ী নিয়ে এগিয়ে যাচ্ছি না বলে। পেছন থেকে অন্য গাড়ী হর্ণ বাজাতেই ভয়ের চোটে আমি আন্দাজেই সামনে ছুটিয়ে দিলাম। ডানে বা বাঁয়ে পার্ক করে যে স্বামীকে ফোন করবো, সেই উপায়ও নেই।  সামনে যেতে যেতে আন্দাজেই ডানপাশের এক রাস্তায় ঢুকে গেছি। এই রাস্তা দিয়ে আমি জীবনেও আসিনি। রাস্তা কেমন যেনো ঢালু হয়ে নীচে নেমে গেছে। কোথাও থামানোর জায়গা নেই। ঢালু দিয়ে নামতে নামতে সামনেই দেখি একটা স্টপ সাইন দেখা যাচ্ছে, সেখানে তিন জন ফায়ার ব্রিগেড কর্মি দাঁড়িয়ে গল্প করছে, পাশেই ছোট ফায়ার ব্রিগেড  ট্রাক থামানো আছে। আমি স্টপ সাইনে থেমে হাত ইশারা করে ওদের দৃষ্টি আকর্ষণের চেষ্টা করছিলাম। কিন্তু ওরা গল্পে মশগুল, দিলাম একটা হর্ণ বাজিয়ে। আওয়াজ শুনে সবাই আমার দিকে তাকাতেই আমি হাত তুলে দেখালাম। এই হাত তুলার মানে সকলেই বুঝে, নীড হেল্প। একজন কাছে এগিয়ে আসতেই জানালার কাঁচ নামিয়ে বললাম,

-আমি এখন ওয়ালমার্টে ফিরে যাচ্ছি, রাস্তা ঘুরিয়ে দিয়েছে পুলিশ, আমি জানিনা এখান থেকে কিভাবে যেতে হয়!

ভদ্রলোক হেসে দিয়েছে, আমাকে দেখিয়ে দিয়েছে, " চিন্তা নেই, সোজা যাও, ওই যে স্টপ সাইন দেখছো, ওখানে রাইট টার্ণ করবে, তারপর সোজা গিয়ে লেফট টার্ণ করলেই তোমার চেনা রাস্তায় পড়বে"।

-অনেক ধন্যবাদ। মনে হয় পারবো।

তার নিশানামত এগিয়ে দেখি সেখানেও তিন গাড়ী পুলিশ। কী অবস্থা! কোথায় কী হয়েছে কে জানে! চারপাশে তো কোন অ্যাকসিডেন্টের চিহ্নও নেই! আমার চেনা রাস্তায় পড়তেই মনটাতে শান্তি ফিরে পেলাম। প্রতিজ্ঞা করলাম, জীবনে আর ডিসকাউন্ট, সেল, মূল্যহ্রাসের মত 'ফালতু' ব্যাপারে নিজেকে জড়াবো না। দুই ডলারে সাব স্যান্ডুইচের কথা শুনে যদি না নাচতাম, তাহলে লাঞ্চ ব্রেকে ওয়ালমার্টের ব্রেকরুমে বসে নিজের খাবার খেতাম আর উপন্যাসের পান্ডুলিপি এডিট করতাম। এরেই বলে পোড়া কপাল।  যত্তসব, ডিসকাউন্টের ক্ষ্যাতা পুড়ি!  মাঝখান থেকে পুলিশের বকা খেয়ে চরকী ঘুরে আসলাম!

আচ্ছা, পুলিশটা কি আমাকে সত্যি সত্যিই বকা দিয়েছিল? তার তো বকা দেয়ার কথা না, আমি বিপদগ্রস্ত পথিক, আমাকে সাহায্য না করে বকা দিবে কেন? আফসোস হচ্ছে, ভাল করে খেয়াল করে দেখলেই হতো, সত্যিই বকা দিয়ে থাকলে পুলিশের বিরুদ্ধে 'স্যু' করে দেয়া যেতো। 'স্যু' শব্দটি আমেরিকায় এসেই শিখেছি। এদেশে সকলেই সকলের বিরুদ্ধে 'স্যু' করার হুমকী দেয়। তা আমিও না হয় দিলাম একটা হুমকী! মামলায় জিতলে অনেক টাকা তো পেতাম! ঐ যে দেখো, আবার ফাও তালে খাওয়ার শখ হচ্ছে! স্বভাব যাবে কোথায়!


1 comment:

  1. রিতুদি এই লেখাটা কিন্তু পাঠাতে পারেন। মেইলটা আরেকবার লিখে দিলাম। কাল পাব আশা করি।
    news@timesworld24.com

    ReplyDelete