Wednesday, December 19, 2012

ফোনালাপ, বোনালাপ!

হ্যালো, ফুলদিভাই! কেমুন আছ?
-ভাল আছি, তোরে না কইছি, আমি যখন কাজে থাকি, আমারে ফোন করবি না।
-তুমি ত সারাক্ষণই কাজে থাক, যখনই ফোন করি, ফোন ধরো না। এইটা কেমুন কথা। তোমার ওয়ালমার্ট কি তোমারে এতটুক স্বাধীনতাও দেয় না?

-চুপ থাক, আমি ত তোর মত চেয়ার টেবিলে বইসা অফিসারের চাকরী করি না। খাইট্টা খাই, ওয়ালমার্ট কী আমার মামা লাগে যে স্বাধীনতা দিব!  কি কইতে চাস, কইয়া ফ্যাল।

-আগে কও, তোমার কথা শোনার টাইম আছে কিনা!
-দরকারী কথা থাকলে শুনমু, আজাইরা প্যাচাল পারলে ফোন লাইন ঘচ কইরা দিমু।
-আমার প্লেনের টিকিট কাটা অইছে।
-গুড নিউজ। কবে আইবি?
-২৫ তারিখে।

-২৫ তারিখে কী রঙ দেখাইতে আইবি? আমার কী আগে পরে ছুটি আছে? এই একটা দিনই ছুটি পাইছি, তাও আইবি তুই ২৫ তারিখ বিকালে। আমারে এক সন্ধ্যা পাইবি।

-ফুলদিভাই, এইটা কেমুন কথা? আমি ২৫ তারিখে টিকিট অনেক সস্তা পাইছি, আগে কিনলে অনেক বেশী দাম দিয়া কিনতে অইব। তুমি কী দিবা আমার প্লেনের ভাড়া?

-আমার মত সাধারণ এক শ্রমিকের কাছে প্লেনের ভাড়া চাস, লজ্জাও করলো না?

-না লজ্জা করে না, তুমি শ্রমিকের কাজ করো ক্যান? তোমার কী ডিগ্রী কিছু কম আছে?

-কী আর করা, শত ডিগ্রী থাকলেও আমার শ্রমিকের কাজই ভাল লাগে। তোরা তো বাড়ীর ভিতরেও দেখস একই মুখ, অফিসে গিয়া টেবিল চেয়ারে বইসা দেখস একই মুখ। আমি ত ওয়ালমার্টে গিয়া পুরা মিসিসিপির মানুষ গো ক্যারিকেচার দেখি। বিশেষ কইরা কাইল্লাগুলির ক্যারিকেচার দেখতে দারুণ লাগে।

-এইজন্যই তোমারে তোমার মাইয়ারা 'রেসিস্ট' ডাকে।

-ডাকুক, আমি রেসিস্ট আছি, ভালো আছি। এখন তাড়াতাড়ি কইয়া ফেলেন, কি বলতে চান।
-ফুলদিভাই,  তোমার বাসায় গেলে আমারে কী খাওয়াইবা?
-কী খাইতে ইচ্ছা করে লিস্ট বানাইয়া আমারে দিস।
-লিস্ট বানান লাগতো না, আমারে বিরানী খাওয়াইবা।
-আইচ্ছা, বিরাণী খাওয়ামু, আর কি?
-মুরগীর রোস্ট। বাংলাদেশের বিয়া বাড়ীর মত।
-ঠিক আছে। আর কী?
-অহন মনে করতে পারতাছি না। তবে বিরাণী কিন্তু তিন বেলা খামু।
-ঠিক আছে, মাঝরাতে ঘুম ভাইঙ্গাও খাইতে পারবি। মাত্র এই দুইটা জিনিস?

-না, আমার অনেক কিছু খাইতে ইচ্ছা করে। তোমার হাতের রান্ধা খামু। আমারে স্বাস্থ্যটা ভাল কইরা দিবা।

-তোর স্বাস্থ্য ভালো করনের দরকার নাই, তোর মত স্লীম ফিগারের মেয়ের আমেরিকায় বহুত দাম। মিসিসিপিতে মোটকা মোটকা মানুষ দেখতে দেখতে আমার চোখ মাছের চউখের মত হইয়া গেছে।

-মাছের চউখ মানে!

-এইটাও বুঝস না! মাছের চউখের পাতা পড়ে না, মানে চক্ষুস্থির হইয়া গেছে।
-হা হা হা হা হা ফুলদিভাই,  তুমি একটা জিনিস বটে! আমি আইলে পরে আমরা  সবাই মিল্লা রাত জাইগা গল্প করুম। তোমার উত্তরার বাসায় থাকতে যেমনে আড্ডা দিতাম।
-আমি তো এখন আর রাত জাইগা আড্ডা দেই না। লেখালেখি করি।

-ওহো, তুমি ত আবার লেখিকা হইয়া গেছ।  যন্ত্রণা অইছে। বুড়া বয়সে ভিমরতী ধরছে তোমারে।  ঠিক আছে যাও, লেখালেখির ফাঁকেই নাহয় একটু সময় দিলা!

-তোরে যে আমার উপন্যাসের স্ক্রিপ্ট পাঠাইছি, সেইটার খবর কি?
-আমি একটু একটু কইরা পড়ি আর মার্ক কইরা রাখি।
-হাসাহাসি করছ না তো? হাসবিনা কিন্তু। মেজদাইয় কইছে, ভাষাতে এখনও দুধভাত গন্ধ আছে।

-ফুলদিভাই, ভাষা নিয়া আমার কোন মাথাব্যথা নাই। সুনীল গঙ্গোপাধ্যায় নিজে একটা লেখায় লিখছে, তাঁর প্রথম দিকের লেখা পড়লে নাকি তাঁর এখন হাসি পায়। তোমার প্রথম উপন্যাস একটু দুর্বল হইতেই পারে, লেখতে লেখতে সবল হইবা। আশাপূর্ণা দেবীরে ফেল ফালাইবা।

-ফাইজলামি করছ? যাহ! বিরাণী, চিকেন রোস্ট বাদ।

-ফুলদিভাই, ফাইজলামী করলেও কথা সত্য কইছি। তুমি অনেক ভাল লেখক হইবা, অলরেডী লেখক হইয়া গেছ। বিরাণী আর রোস্ট না খাওয়াইলে খুব খারাপ অইয়া যাইব।

-আইচ্ছা মাফ কইরা দিলাম। আমার লেখাটা ভাল কইরা সমালোচনা কইরা দিস। আরেকটা কথা, বাসাবাড়ী অগোছালো হইয়া রইছে। লেখিকার বাড়ী যেমন থাকে। তুই গুছাইয়া দিয়া যাইস।

-ফুলদিভাই, আমি আইতাছি রেস্ট নিতে, আর তুমি আমারে দিয়া এত কাজ করাইবা?
-বইন শোন, একজন অসহায় নারীকে আলোকিত জীবনের সন্ধান দিতে সাহায্য করতেছস, এইটাত একটা মহৎ কাজ।

-কী কইলা, তুমি অসহায় নারী? তুমি যদি অসহায় নারী হও, দজ্জাল নারী তাইলে-----
-থামলি ক্যান? কথা শেষ কর। আমি দজ্জাল?

-আরে নাহ! অন্য কথা কইতে চাইছিলাম। ম্যানেজার ডাক পাঠাইছে। পরে আবার কথা কমু। ভালো থাইকো।
-ঠিক আছে, যাহ, ম্যানেজারের হুকুম পালন কইরা আয়।দজ্জাল কইয়া থাইমা গেছস, এই দজ্জালের থিকা আবার কথা শুরু অইব। তোর খবর আছে দাঁড়া।

No comments:

Post a Comment