Wednesday, December 19, 2012

অফ ডে'র কাসুন্দি!

ওয়ালমার্টের চাকুরীতে উইকএন্ড বলে কিছু নেই। সাত দিনে যে কোন দুই দিন অফ থাকার কথা, তাই থাকে। কপাল ভালো হলে, অফ ডেগুলো উইকএন্ডের সাথে মিলে যায়। আমার কপাল অবশ্য তত ভাল নয়। অটোমেটিক উইক এন্ড আমার ভাগ্যে জোটে না বলেই মাসের দ্বিতীয় শনিবার এবং চতুর্থ রবিবার 'অফ ডে' চয়েসে এনট্রি করে দিয়েছিলাম।এই থেকে মাসে একটি শনিবার এবং একটি রবিবারের ছুটি সম্পর্কে আমি নিশ্চিন্ত থাকি। ওয়ালমার্টের শিডিউল সিস্টেমে আরেকটি নিয়ম আছে, তা হলো, বিশেষ দিনে ছুটি প্রয়োজন হলে কমপক্ষে তিন সপ্তাহ আগে তা কম্পিউটারে লগ ইন করে জানাতে হবে। কাজের শিডিউল (স্কেজিউল) তিন সপ্তাহ আগেই সকলের জানা হয়ে যায়।

আমাদের  দুই মেয়ে থাকে দুই স্টেটে, ছোট মেয়ে থাকে আমাদের সাথে। আমার এক বোন ( আপন বোন নয় কিন্তু, তুতো বোন, এইরে! এই লেখা ওর চোখে পড়লে আমার খবর আছে)  থাকে অন্য আরেক স্টেটে। ক্রীসমাসের ছুটি চলে এসেছে। আমাদের সকলেই এই ছুটির জন্য অপেক্ষা করছে। বড় মেয়ের বিয়ে হয়েছে এ বছরের জুন মাসে। বিয়ের পর মনীশকে নিয়ে আমাদের এখানে ওর আসা হয় নি। আমার 'তুতো বোন' গত পাঁচ বছরে একবারও আসতে পারেনি। এবার ওরা সকলেই আসবে আমাদের এখানে। আমি খুব খুশী, কতদিন পর সবাই একসাথে হবো।

আগে আমি প্রতি বছর ক্রীসমাসে আমাদের বাড়ীতে বন্ধু-বান্ধবদের নেমন্তন্ন করে খাওয়াতাম। তখন কোমরে জোর ছিল, একা একা সব সামলাতে পারতাম। এখন টেংরীর জোর কমে গেছে, একা হাতে এত মানুষ নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে ভয় পাই। এ কারণেই আমার পুরাণো বন্ধুদেরকে আর ডাকা হয় না। বন্ধুরাও এর পালটা নেয়। নিজেরা নিজেরা অনেক পার্টি করে, আশপাশের সকল বাঙ্গালীকে নেমন্তন্ন করে, আমাদেরকে শুধু বাদ দেয়। খুব যে মনোকষ্টে ভুগি তা নয়, তবে খারাপ লাগে। কী আর করা, একা একা এত কাজ সামলাতে পারিনা বলেই সমাজচ্যুত হয়ে পড়ছি, ব্যস, সহজ হিসেব মেনে নিয়েছি। তারপরেও ট্র্যাডিশান বজায় রাখতে প্রতি বছর ক্রীসমাসের সময় কিছু কিছু ছেলেমেয়েকে নেমন্তন্ন করে খাওয়াতে চেষ্টা করি। এবার কেনো যে মনে হলো, আমার পুরণো বন্ধুদের নেমন্তন্ন করে খাওয়ানোর কথা! শুধুই কয়েকটি পরিবার মিলে গেট টুগেদার করবো বলে নিয়ত করেছি। মাথা গুনে হিসেব করেছি, আমাদেরকে নিয়ে গোটা পঁয়ত্রিশ জন মানুষ হবে।  যে দিনটি নেমন্তন্ন খাওয়ায়নোর জন্য ঠিক করেছি, দিনটি মাসের চতুর্থ রবিবার, আমার অটোমেটিক ছুটি। রবিবার দুপুরে সবাইকে আসতে বলেছি। রান্না করবো কি কি? রান্না করবোই বা কখন? গত সাত দিন ধরে এই চিন্তা করে যাচ্ছি। চিকেনের একটি আইটেম তো থাকবেই, মাছের একটা আইটেম থাকবেই, সাথে শাক-সব্জী। শাক-সব্জী যখন তখন কেনা যাবে, গত সপ্তাহে বিশ পাউন্ড মুরগী কিনেছি, তারও আগে আটলান্টা থেকে বাংলাদেশের রুই মাছ আনিয়ে রেখেছি, চিংড়ি মাছকে তো মাছ হিসেবে গণ্যই করা হয় না, ঠিক আছে, চিংড়ি পোকা আনিয়েছি। সব কিছু এনে ফ্রীজারে রেখে দিয়েছিলাম।

স্কেজিউল পেপারে দেখে রেখেছিলাম, মঙ্গলবার আর শুক্রবার আমার অফ ডে। আজ ছিল মঙ্গলবার, আমার অফ ডে।  সামনের রবিবার পঁয়ত্রিশজন অতিথি খাবে আমার বাড়ীতে। এখন থেকেই ফাঁকে ফাঁকে কাজ এঁটে না রাখতে পারলে বিপদে পড়ে যাব। সকলেই জানে ( বিশ্বাস করে কিনা জানিনা), আমাদের রান্নাঘরে মূল কাজগুলো আমাকে করতে হয়। উত্তম কুমারের দোষ নেই, বিবাহিত জীবনের শুরুতেই যাকে মহানায়কের ভূমিকায় রেখেছি, তাকে দিয়ে তো আর 'আবদুল' এর কাজ করানো যাবেনা। সেজন্য উত্তম কুমার নায়কের ভূমিকাতেই থাকে, আমি মাঝে মাঝে চরিত্র বদল করি। বেশীর ভাগ সময় 'রহিমার মা'র ভূমিকাতে অভিনয় করি। তবে আধুনিক রহিমার মা। ব্রেনে সব সময় ছক কষতে থাকি, কখন কোন কাজটা করলে আমার শিডিউল ঠিক থাকবে।

আমি আগেই সিদ্ধান্ত নিয়েছিলাম, মঙ্গলবার মাছ আর মাংস কেটে বেছে ধুয়ে রাখবো। শুক্রবার মাছ, মাংস, আর ডেজার্টের জন্য মিষ্টি বানিয়ে রেখে দেবো। শনিবার রাতে অর্ধেক সব্জী রাঁধবো, রবিবার সকালে স্ন্যাকস বানাবো। অন্য সময় আমার মেজো মেয়ে স্ন্যাকস বা ডেজার্ট বানাতে সাহায্য করে, কিন্তু এবার ওদের কারো কাছ থেকে সাহায্য নেবো না ঠিক করেছি। কারণ, কিছুদিন আগে আমার উত্তম হঠাৎ করেই ছবি বিশ্বাসের ভূমিকায় অভিনয় করে ফেলে। আমার উপর কঠিন আদেশ জারি করে, আমি যেনো তার মেয়েদের উপর জুলুম, নির্যাতন না করি। ছবি বিশ্বাসের আদেশ শুনে আমার মনে ভয়ের বদলে অভিমান জন্মেছে। এ কেমন কথা! তার মেয়ে মানে? দশ মাস পেটে রাখলাম আমি আর এখন বলে তার মেয়ে! ঠিক আছে, আমি না হয় জনমদুঃখী মায়ের ভূমিকায় অভিনয় করবো। এই ভেবেই গত রাতে ফ্রীজার থেকে বিশ পাউন্ড মুরগীর পা ( থাই ও রান সহ, এখানে বলে লেগ কোয়ার্টার) , ছয় পাউন্ড রুই মাছের টুকরো ( আঁশ সহ),  দুই পাউন্ড খোসাসহ চিংড়ি পোকা, দুই পাউন্ড খাসীর মাংস ( মনীশের জন্য) বাইরে বের করে রেখেছি 'থ' করার জন্য।

কাল রাতে কম্পিউটারে একটি গল্প লিখা শুরু করেছিলাম, শেষ করতে পারিনি, ঘুমিয়ে পড়েছিলাম। আজ সকাল সাড়ে আটটায় মেয়ে মিশার ফোনে একবার ঘুম ভেঙ্গেছিল। মিশা জানতে চেয়েছিল, আটলান্টা থেকে আসার সময় কিছু বাজার করে আনতে হবে কিনা। ঘুমের চোখে কী বলেছি নিজেরও মনে নেই। ভাল করে যখন ঘুম ভাংলো, দেখি সকাল সাড়ে নয়টা। বিছানা ছেড়ে সবার আগে কম্পিউটার অন করলাম। এরপর মুখ চোখ ধুয়ে কম্পিউটারে বসে গেলাম। সিদ্ধান্ত নিলাম, সকাল দশটা পর্যন্ত লিখবো, গল্পটা শেষ করে এক বন্ধুকে মেইল করে দিয়ে তবে বাসি ঘর ঝাঁটপাট করবো। যখন লেখা শেষ হলো, দেখি সকাল এগারোটা বাজে। লাফ দিয়ে উঠে ঘর ঝাড়ু দিলাম, বিছানা ঠিক করলাম, রান্নাঘরে ঢুকে দেখি, উত্তম চা বানিয়ে রেখে দিয়েছে, মাইক্রো ওয়েভ ওভেনে চা গরম করতে দিয়ে নীচে কিছু টুকিটাকী কাজ সারলাম। চায়ের কাপ আর দুটো বিস্কুট হাতে আবার কম্পিউটার টেবিলে বসলাম। প্ল্যান করেছি, বেলা বারোটার সময় দুপুরের জন্য পরোটা বানাবো, লাঞ্চের পরে মাছ, মাংস নিয়ে বসবো। সাড়ে এগারোটা নাগাদ কিচেনে টুং টাং আওয়াজ পাচ্ছিলাম। ঘরে উত্তম ছাড়া আর কেউ তো নেই। উপর থেকেই হাঁক ছাড়লাম, " তুমি কী খাবার গরম করছো নাকি"?

উত্তর এলো, " হ্যাঁ, ক্ষিদে পেয়েছে, অল্প ভাত আছে, এটা দিয়েই আমার লাঞ্চ হয়ে যাবে।

বললাম, " আমি ভেবেছিলাম, পরোটা বানিয়ে দেবো"।

পরোটা উত্তমের খুব প্রিয়, একটু থমকালো, তারপর বললো, না থাক, ভাতেই চলে যাবে।

উত্তমের লাঞ্চ হয়ে যাচ্ছে, মিথীলা আসবে বিকেল চারটায়, আর কী চাই। কিছুক্ষণ সময় কাটাই চ্যাট করে। কতদিন হয়ে গেলো, কারো সাথে চ্যাট করা হয় না। অনেক দিন পর আমার অনেক প্রিয় এক ছোট ভাইকে অনলাইনে পেলাম। তার সাথে গল্প করছি তো করছি। এই ভাইটির সাথে আগেও গল্প করতে আমার ভালো লাগতো। আওয়ামী রাজনীতির ব্যাপারে সে অন্ধ। এত আত্মবিশ্বাস যে কোথা থেকে পায়, কে জানে! তার সাথে গল্প করতে করতে চল্লিশ মিনিট পার হয়ে গেলো। কথা শেষ করলাম। পেটে ছুঁচো ডন-বৈঠক শুরু করে দিয়েছে। বেলা বাজে আড়াইটা। এবার নীচে নামতেই হয়। আগে কিছু খেয়ে নিয়ে তারপর কাজে নামবো। ফ্রীজ খুলে মাছের মাথা দিয়ে রান্না করা সব্জীর বাটি বের করলাম, রাইস কুকারের ঢাকা সরিয়ে ভাত নিতে গিয়ে দেখি, রাইস কুকার ফাঁকা। ভাত নেই। কী করি! এখন আর রুটি বা ভাত, কোনটাই বানাতে ইচ্ছে করছে না। পাউরুটি খাওয়া যায়, কিন্তু খাব না। উত্তম কুমারকে আর উত্তম ডাকবো কিনা ভাবছিলাম, উত্তম না ডেকে 'ভোলানাথ' ডাকলে কেমন হয়! ভোলানাথ তো ভুলেই গেছে, ঘরে 'রহিমার মা' আছে, রহিমার মা দুপুরে কী খাবে, সেটা জিজ্ঞেস করতেও ভুলে গেছে। কী আর করা, ভোলানাথকে গিয়ে জিজ্ঞেস করলাম, চা খেতে চায় কিনা। কপাল ভাল, 'না' করে নি। ভোলানাথ যদি 'না' করতো, শুধু নিজের জন্য মরে গেলেও চা বানাতাম না। চায়ের জল বসিয়ে খাসীর মাংসের প্যাকেট আগে খুললাম। মাংস মোটামুটি পরিষ্কার আছে দেখে ভাল করে ধুয়ে টক দই, হলুদ, মরিচের গুঁড়ো, গরম মশলার গুঁড়ো, লবন দিয়ে মাখিয়ে জীপ লক ব্যাগে ভরে ফ্রীজে রেখে দিলাম। চায়ের জল ফুটতে শুরু করেছে। রুই মাছের তিন প্যাকেট বের করেছি, এক প্যাকেট খুলে ক্ষিপ্র গতিতে মাছের টুকরো থেকে আঁশ ছাড়াতে লাগলাম। মাছের টুকরোর চেহারা দেখে মন খারাপ হয়ে গেলো। পেটের টুকরোগুলো এত সরু আর এত ছোট, নিজেরাও ঘরে এত ছোট টুকরোর মাছ খাইনা। সিদ্ধান্ত নিলাম, পিঠের টুকরো দিয়ে হবে মাছের কালিয়া, পেটের টুকরো গুলো ভেজে, রঙ বেরঙের সব্জী সাথে দিয়ে স্টার ফ্রাই করবো। চায়ের জল শুকিয়ে গেছে, আবার জল দিয়ে নতুন করে বসালাম। এবার মাছের বাকী দুই প্যাকেটকেও সাইজ করে ফেললাম। মাছের টুকরো তে নুন, হলুদ মাখিয়ে জীপ লক ব্যাগে পুরলাম।



ভালো করে সাবান দিয়ে হাত ধুয়ে চা বানালাম। এক কাপ চা ভোলানাথকে দিয়ে আসলাম, আরেক কাপ চা নিজের জন্য। এক ফাঁকে দুই পীস ব্রেড টোস্ট করতে দিয়েছিলাম। ব্রেডে নতুন ধরনের ক্যারামেল স্প্রেড মিশিয়ে একটা কামড় দিতেই মনটা আবার খারাপ হয়ে গেল। কেনো খারাপ হলো, তা অবশ্য জানিনা। হতে পারে, কানেকটিকাট ম্যাসাকার নিয়ে গল্প লিখছিলাম, তার অনুভূতিগুলো তখনও মাথায় ঘুরছিল। যাই হোক, চা আর টোস্ট শেষ করেই চিংড়ি পোকায় হাত দিলাম। এবার মাটিতে গ্যাঁট হয়ে বসলাম। এতোক্ষণ দাঁড়িয়ে দাঁড়িয়ে কাজ চলছিল, এবার দেশ থেকে আনা বটি পেতে বসেছি। চিংড়ির খোসা ছাড়িয়ে, শুঁড়, দাড়ি, গোঁফ কেটে বাদ দিয়ে, মাথা আলাদা, শরীর আলাদা করে কেটে বেছে ধুয়ে, হলুদ নুন মাখিয়ে ফ্রীজে পাঠিয়ে মনে হলো, এবার উপরে গিয়ে আবার গল্পটা নিয়ে বসি। প্রথমবারে অনেক কিছু বাদ পড়ে গেছে, পরে এসে না হয় চিকেনের বস্তা নিয়ে বসবো। ঘড়িতে দেখি পাঁচটা বেজে গেছে। মত বদলালাম। নিজেকে চিনি, একবার উপরে উঠে গেলে চিকেন আর কাটা হবে না। কাল আমার সকালে কাজ, কাজেই মরি কী বাঁচি, এখনই মুরগী কাটবো। এক প্যাকেট খুলে পাগুলো বের করেছি। একেক প্যাকেটে চৌদ্দ-পনেরোটা করে পা। পায়ের সাইজ হচ্ছে, আট নয় মাস বয়সী স্বাস্থ্যবান ছেলের পায়ের সাইজের মত। মুরগীগুলো দেখতে কত বড় হয়, কে জানে! পায়ের গায়ে মোটা চামড়া লেগে থাকে, চামড়ার নীচে হলুদ বর্ণের মোটা স্তরের চর্বী, চামড়া এবং চর্বি, দুটোই আমার দু'চক্ষের বিষ। চামড়া কাটতে গেলে সব সময় আমার হাতের একটা আঙ্গুল কাটবেই কাটবে। ভেবেছি আজকে আর আঙ্গুল কাটবে না। মুরগী কাটতে কাটতে হঠাৎ করেই কপালের সামনে এক গোছা চুল এসে পড়েছে, অস্বস্তি হচ্ছিল, হাতের কব্জী তুলে চুলগুলো সরিয়ে দিতে গিয়ে হাতটা নাকের মধ্যে একটু গুঁতো খেয়েছে। পাত্তা না দিয়ে আবার মুরগী কাটায় মন দিয়েছি। মুরগী কাটার ফাঁকে ফাঁকে গল্পের প্লট নিয়ে ভাবছিলাম। গল্পকবিতা ডট কমে প্রতি মাসে একটা করে গল্প লিখে জমা দেই। প্রতিযোগীতা আর কি! আমার তো পরিচিত তেমন কেউ নেই, তাই পাঠক ভোটে অনেক পিছিয়ে পড়ি। তবুও লিখে যাই, লিখতে লিখতে হাত পাকা করছি। সেই গল্পের প্লট নিয়ে ভাববো কি, নাক জ্বালা করতে শুরু করেছে। এর মধ্যেই নাক দিয়ে জল গড়াচ্ছে, আবার হাত উঁচুতে তুলে নাকটা মুছতে গেছি, নাকের ভেতর কিছু ঝাঁঝ টের পেলাম। মরিচের গুঁড়োর গন্ধ। হাত উল্টিয়ে দেখি, হাতের কব্জীতে মরিচের গুঁড়া লেগে আছে। খাসীর মাংসে মরিচ দেয়ার সময় প্যাকেটের গা থেকে গুঁড়ো হাতে লেগেছিল।



তাড়াতাড়ি উঠে আবার সাবান দিয়ে হাত ধুলাম, নাক ধুলাম, আবার মাটিতে বসে মুরগী কাটায় মন দিলাম। এক প্যাকেট শেষ করেই আমার উঠে যেতে ইচ্ছে করছিল। একটা বুয়া থাকলে কত ভালো হতো। সেদিন সেলিনা হোসেনের সাক্ষাৎকারে পড়লাম, লেখিকা হওয়ার প্রথম ও শেষ শর্ত, একা হওয়া। উনি এমন কথা বলতেই পারেন, উনি একা হতে পেরেছেন কারণ উনার সংসারে দাস দাসী ছিল, আমি একা হবো কী করে? আমার এক বন্ধু বলেছে, বাইরে থেকে খাবার কিনে এনে খাওয়ার জন্য। কয়দিন খাবার কিনে খাব? পয়সাও যাবে, বাইরের খাবার স্বাস্থ্যসম্মতও না। কান্না পাচ্ছিল, আমি কী তবে সত্যি সত্যি লেখক হতে চাইছি? এত সোজা নয়, লেখক হওয়া, গায়ক হওয়া এমন কী নায়ক হওয়া। হঠাৎ করেই ঘ্যাঁচ করে পরিচিত আওয়াজ টের পেলাম, বুড়ো আঙ্গুল চোখের সামনে নিয়ে এলাম, কেটে গেছে, রক্ত বের হতে সময় লাগবে। আমি অ্যানিমিক, কেটে ছড়ে গেলে রক্ত বের হতে একটু সময় লাগে। বটিতে কাটা, আঙ্গুল টিপে রক্ত বের করলাম, কে জানে, যদি সেপটিক হয়ে যায়। সেপটিক হওয়ার চেয়ে কয়েক ফোঁটা রক্ত বের করে দেয়া ভাল। রক্ত পড়া বন্ধ করতে এক খাবলা চিনি নিয়ে চেপে ধরলাম কাটা জায়গায়। রক্ত পড়া বন্ধ হয়ে গেলো। মুরগীর পা গুলোকে আছাড়াতে ইচ্ছে করছিল, পায়ে চাপা বটিটাকে ঢিল মেরে ফেলে দিতে ইচ্ছে করছিল, কিন্ত এর কোনটাই করলাম না। মুরগী কাটা শেষ করে সবকিছু ধুয়ে মুছে পরিষ্কার করে বিশ পাউন্ড মুরগীকে ম্যারিনেট করে রাখলাম। হঠাৎ করেই  মনে হলো, মনীশ মিষ্টি খেতে ভালোবাসে। যতই বলি, আমার শাশুড়ী হতে ইচ্ছে করে না, যতই মনীশকে বলি না কেনো, আমাকে 'মাসী' ডাকতে, তারপরেও মনীশ আমার মেয়ের জামাই, আমি আইনত মনীশের শাশুড়ী।  কাজেই মনীশকে একটু পিঠে-পায়েস খাওয়াতে হবে। সব কিছু আগে আগে করে রাখার একটাই কারণ, মনীশকে ফিরে যেতে হবে দু'দিন পরেই। আমি ছুটি পাইনি, তাই রান্নাগুলো আগে সেরে রাখলে, ওরা নিজেরা নিয়ে খেতে পারবে। পাটিসাপ্টা পিঠে বানাবো, আগেই ভেবে রেখেছি। পাটিসাপ্টা পিঠেতে আমি খাঁটি ক্ষীর দেই পুর হিসেবে। শুধুই ক্ষীর, নারকেল মিশাই না। ক্ষীর বানানোর জন্য দুধ ঘন করে রাখলাম। কাল কাজ থেকে ফিরবো বিকেলে, সন্ধ্যাবেলা পিঠে বানানোর সরঞ্জাম রেডী করে রাখবো।



রাইস কুকারে ভাত রান্না করলাম, আগে থেকে রেঁধে রাখা মাছ, তরকারী, ডাল গরম করে উত্তম ( সব কাজ শেষ হয়ে গেছে, রাগ কমে গেছে, তাই ভোলানাথ আবার 'উত্তম' হয়ে গেছে) কুমারকে ডাকলাম। ঘড়িতে বাজে পৌণে আটটা। হাত মুখ ধুয়ে ফ্রেশ হয়ে কম্পিউটারে বসে 'হলদে বাড়ীর আঙিনায়' মাত্র খুলেছি, রিটাইপ করছি, আঙ্গুল কোন একটা বাটনে চাপ লেগে পুরা স্ক্রীণ বদলে গেলো। কাহাতক ভালো লাগে! ডাকলাম মিথীলাকে, মিথীলা এসে কী টেপাটেপি করলো, কোনই লাভ হলো না, শেষে পরামর্শ দিল, মজিলা ফায়ার ফক্স বাদ দিয়ে গুগল ক্রোমে যেতে। দাঁতে দাঁত চেপে গেলাম গুগল ক্রোমে। গল্পটাকে ঠিক করে এক বন্ধুর কাছে মেইল করলাম। দেখি, পত্রিকায় ছাপা হয় কিনা। 'অফ ডে' টা এভাবে পার করে দেবো? আমার ফেসবুক পাঠকের জন্য নতুন কিছুই লিখবো না? তাই কী হয়? লিখে ফেললাম, আমার 'অফ ডে'র কাসুন্দি।

No comments:

Post a Comment