Wednesday, January 2, 2013

ঘুম ভেঙ্গেই সাত মিলিয়ন ডলার!!!



আমেরিকার নেভাদা রাজ্যের কারসেন সিটিতে বাস করতেন ওয়ালটার সামেসকো জুনিয়র নামে এক ভদ্রলোক। গত জুন মাসে নিজ বাড়ীতে তাঁকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করা হয়। খবরে প্রকাশ, সামেসকো ওয়াল্টার হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে মৃত্যুবরণ করেন। মৃত্যুকালে তাঁর বয়স হয়েছিল ৬৯। ব্যক্তিজীবনে সামেসকো অবিবাহিত এবং সম্পূর্ণ একাকী ছিলেন। তাঁর বাড়ীতে কোন আত্মীয়-স্বজন, বা বন্ধুবান্ধবের যাতায়াত ছিল না। আশেপাশের প্রতিবেশীদের সাথেও সামেসকো দূরত্ব বজায় রাখতেন। ফলে মৃত্যুকালে তাঁর পাশে কেউই ছিল না। জুন মাসের প্রথম দিকে সামেসকোর বাড়ীর চারপাশ থেকে দূর্গন্ধ ভেসে আসতেই প্রতিবেশীদের একজন পুলিশ কল করে। পুলিশ এসে দরজার তালা ভেঙ্গে ভেতরে প্রবেশ করে সামেসকোকে মৃত অবস্থায় উদ্ধার করে। ময়নাতদন্তে জানা যায়, মে মাসের কোন এক সময় হৃদরোগে আক্রান্ত হয়ে তাঁর মৃত্যু হয়।

মৃতদেহ সৎকার করার পূর্বে তাঁর নিকট আত্মীয় স্বজনের খোঁজ করতেই জানা যায়, দূরসম্পর্কের এক কাজিন ছাড়া এই পৃথিবীতে সামেসকোর আর কেউ ছিল না। কাজিন আর্লিন ম্যাগাঞ্জ থাকেন ক্যালিফোর্ণিয়ায়, একটি স্কুলে অস্থায়ীপদে শিক্ষকতা করেন। পুলিশের তত্বাবধানেই সামেসকোর শেষকৃত্য সম্পন্ন হয়। শেষকৃত্য সম্পন্ন শেষে দেহাবশেষ শিকাগোতে তার মায়ের সমাধিস্থলে নিয়ে যাওয়া হয়।
কারসেন সিটি কর্তৃপক্ষের পক্ষ থেকে সামেসকোর বাড়ী-ঘর ধোয়া মোছার ব্যবস্থা করা হয়। বাড়ীঘর পরিষ্কার করতে এসে ক্লীনারগণ তাঁর বাড়ীর ভেতর এবং গ্যারাজে অনেক বাক্স দেখতে পায়। বাক্সের গায়ে মার্কার দিয়ে ‘বুকস’ লেখা ছিল। কর্তৃপক্ষের উপস্থিতিতে বাক্সের মুখ খোলা হয়, এত এত বাক্সের ভেতর কী এমন বই আছে তা পরখ করতে গিয়েই উপস্তিত সকলের চোখ ছানাবড়া হয়ে যায়। প্রতিটি বাক্স স্বর্ণমুদ্রায় ভর্তি ছিল। অন্যের দৃষ্টি থেকে আড়াল করবার জন্য প্রতিটি বাক্সে মার্কার দিয়ে ‘বুকস’ লিখে রাখা হয়েছে। ‘বুকস’ লিখা বাক্সের পাশেই ক্যানফুডের বাক্সও রাখা ছিল। আপাতঃদৃষ্টিতে খুবই সাধারণ গেরস্ত বাড়ী যেমনভাবে সাজানো থাকে, ঠিক একইভাবে সামেস্কো নিজের বাড়ীটিকে সাজিয়েছিলেন। তাঁর বাহ্যিক জীবনযাত্রা দেখে আশপাশের সকলেই তাঁকে দরিদ্র মনে করতো। উদ্ধারকৃত স্বর্ণমুদ্রার বাজারমূল্য সাত মিলিয়ণ ডলারের অনেক বেশী। কিছু কিছু মুদ্রা বহু পুরাণো, যেগুলোর গায়ে ব্রিটিশ এবং অস্ট্রিয়া নামাংকিত করা আছে, সময়কাল ১৮৭০ সাল। সাত মিলিয়ন ডলার মূল্যমানের স্বর্ণমুদ্রার পরিমান এত বেশী ছিল যে, বাক্সগুলোকে ট্রাকে তুলতে হুইলকার্টের প্রয়োজন হয়েছে। স্বর্ণমুদ্রাভর্তি বাক্সগুলোকে প্রথমে ব্যাঙ্ক ভল্টে নেয়া হয়, এরপর ওগুলোকে ইস্পাত কঠিন সিন্দুক গাড়ীতে তোলা হয়।

মায়ের একমাত্র সন্তান ছিলেন তিনি, সেই মা মারা গেছেন ১৯৯২ সা্লে শিকাগো শহরে। এরপর থেকে নেভাদা’তে তিনি ছিলেন একা, খুব হিসেবী ছিলেন, একটি পয়সা নিজের আরামের জন্য ব্যয় করেননি বলেই প্রতিবেশীদের চোখে উনি ছিলেন দুঃস্থ ও গরীব। মৃত্যুর পর তাঁর বাড়ীর ভেতর স্বর্ণভান্ডার দেখে সকলেই তাঁকে ‘হাড়কেপ্পন’, ‘কঞ্জুস’ নামে অভিহিত করে। এবিসি নিউজ ডট কমে এক সাক্ষাৎকার দেয়ার সময় কারসেন সিটি ক্লার্ক অ্যালান গ্রোভার বলেন, ‘মানুষটি ছিল অত্যন্ত কৃপন। তার বাড়ী এবং গ্যারাজে কার্টুন ভর্তি জিনিস রেখে দেয়া আছে। নিজেও ভোগ করেনি, কাউকেও ভোগ করতে দেয় নি।
‘লাস ভেগাস সান’ পত্রিকার বরাত দিয়ে বলা হয়, সামেসকোর ব্যাঙ্ক একাউন্টে মাত্র দুইশত ডলার পড়ে থাকলেও, স্টক মার্কেটে ছিল এক লক্ষ পঁয়ষট্টি হাজার ডলারের বাজার চালু শেয়ার। সিটি ক্লার্ক গ্রোভার মন্তব্য করেন, “ সামেসকোর বাড়ীর ভেতর থেকে যখন বাক্স ভর্তি ভর্তি স্বর্ণমুদ্রা পাওয়া গেলো, আমার একটি কথাই মনে হয়েছে, কী লাভ হলো স্বর্ণমুদ্রা জমিয়ে রেখে! সংসার নেই, স্ত্রী, সন্তান নেই, কাদের জন্য এই কৃচ্ছসাধন? কোন দাতব্য প্রতিষ্ঠানে দান করার মত সদিচ্ছাও তার ছিল না। তাই তাঁর সম্পত্তি কাউকেই উইল করে দিয়ে যান নি। এত সম্পদ যার ঘরে লুটোয়, তার বাড়ীটি কিনা এত ছোট! মাত্র ১২০০ স্কয়ার ফিটের চল্লিশ বছরের পুরাণো বাড়ীতে সারাটা জীবন পার করে দিল! কোন শখ আহ্লাদের কিছুই নেই বারীর ভেতর। না ছিল কোন অ্যান্টিক, না ছিল ক্রিস্ট্যাল, না ছিল কোন জুয়েলারী! স্বর্ণখন্ড দিয়ে বাক্স ভর্তি করে একটির উপর আরেকটি সাজিয়ে রেখেছে। আহারে বেচারা”!

গ্রোভার শেষ পর্যন্ত সামেসকোর একমাত্র উত্তরাধিকারী হিসেবে কাজিন আর্লিন ম্যাগাঞ্জের খোঁজ পেয়ে যান। সামেসকোর মায়ের ফিউনারেলে যারা উপস্থিত ছিলেন, তাদের নামের লিস্ট দেখে আর্লিনকেই একমাত্র জীবিত উত্তরাধিকারী হিসেবে নেভাদা কোর্ট থেকে স্বীকৃতি দেয়া হয়। নেভাদা রাজ্যের কারসন সিটি জাজ গত মঙ্গলবার রায় ঘোষণা করেন, ওয়ালটার সামেসকো জুনিয়রের মৃত্যুর পর তার সম্পত্তির ওয়ারিশান হিসেবে তার কাজিন আরলিন ম্যাগাঞ্জ ছাড়া আর কারো কথা জানা যায় নি। কাজেই সামেসকোর সকল স্থাবর-অস্থাবর সম্পত্তির পূর্ণ মালিকানা আরলিনের উপর অর্শিত হলো।
আর্লিন ম্যাগাঞ্জ অবশ্য রায় ঘোষণার দিন নেভাদা এসে পৌঁছাতে পারেন নি। হঠাৎ করে এত সম্পত্তির মালিক হতে পেরে তাঁর অনুভূতি কি, তা অবশ্য জানা হয়নি।

No comments:

Post a Comment