Wednesday, January 30, 2013

'কলিজু' কাহিণী

 আমার 'তুতোবোন' টাকে  গত সাতদিন ধরে ফোন করে চলেছি, সে ফোন ধরে না। তাকে মেসেজ রাখি, নো রিপ্লাই। আজ সকালেও ফোন করেছি, ফোন বেজে চলে। মেসেজ অপশনে গিয়ে শুধু 'এক শব্দে'  মেসেজ রেখে  কাজে চলে গেছি। যখন আমার টি ব্রেক চলছিল, সে আমাকে ফোন করেছেঃ

'হ্যালো ফুলদিভাই!

-বলো, আমার 'কলিজু'!

- কী, কী বললে? কলিজু!

-হ্যাঁ, কলিজু

-সূর্য্য কোন দিকে উঠেছে আজকে? মেসেজে দিলে গালি, আর এখন একেবারে 'কলিজু'।

-হুম! কলিজু। নতুন শুনলাম শব্দটা। হাহাহাহাহহাআহ

- কে বলছে? দাদাভাই?

-হ, দাদাভাইয়ের তো আর খেয়েদেয়ে কাজ নাই, আমাকে অমন সুন্দর করে ডাকবে!

-তাইলে, কার কাছ থেকে শুনছো?

-বাবারে! তোরে এগুলো বলা যাবে না। সব নষ্টকাহিণী!

- কীসব বলো, নষ্টকাহিণী মানে কি?

-নষ্টকাহিণী মানে নষ্ট কাহিণী। এক মহিলা তার গোপন প্রেমিককে ফোনে 'কলিজু' বলে ডাকছিল। প্রেমিক আবার বাংলাদেশে অতি পরিচিত, এক নামে সবাই তাঁকে চিনে। বর্তমানে তো দেশে এই ঘটনা নিয়েই তোলপাড় চলছে।

-তুমি এত শয়তান হলে কবে থেকে? অন্যের  ফোনে আড়ি পাতো, আবার তাদের প্রেমালাপ শোন!

-আরে! আমি শয়তান না হতে চাইলেও  মাঝে মাঝে  শয়তানী করে ফেলি!  কী করবো বল, আমি কী কারো ফোনে আড়ি পেতেছি নাকি?  কালকে ইউটিউব------

-কথা শেষ করো! থামলে কেনো?

-বাদ দে! এগুলি সব ফাউল কথা বার্তা! তোর শুনে কাজ নেই। ছোটমানুষ,  বয়স্ক লোকের কেরামতি বুঝবি না।  ইউটইউবে গেলেই বুঝা যায় সব। তাছাড়া দেশের কোন খবর রাখস না, এমন একজন পরিচিত লোকের কাহিণী এটা, আমি বেট ধরতে পারি, নাম শুনলে তুই বলবি, 'এই বেটা আবার কে?"

-ভালো হইছে, তুমি দেশপ্রেমিক, তুমি ইন্দিরা গান্ধী, তুমিই শুধু দেশের খবর রাখো, আমরা তোমার মত দেশপ্রেমিক না।

-আরে, রাগ করস কেনো? ইচ্ছে করেই বলছি না। আমেরিকার মত দেশেও এখন ফোনে আড়িপাতা হয়, কার কথা কখন টেপ হয়, কার কথা কখন ফাঁস হয়ে যায় তার ঠিক নাই। হা হা হা হা! মজার কথা শোন, বললাম না যে এক মহিলা তার প্রেমিককে 'কলিজু' বলে ডাকছিল,  আর কলিজু ডাক শুনে সেই প্রেমিকের সে কী গদগদ কথা! আঞ্চলিক ভাষায় কথাবার্তা চলছিল, সব কথা বুঝিও না। একবার শুনি প্রেমিকরে তার বউ ফোনে শাসাইতেছে।
বইন রে বইন, বিশ্বাস কর, প্রেমিকের বৌ ভাই জিনিস একজন। কী তেজ, কী সাহস রে! কী বকা যে বকছিল স্বামীরে, স্বামী তার বৌরে একবার ধমকায়, আরেকবার মাফ চায়!!!!!!!!!   অথচ এই লোকই আবার দেশের সব মান্য গন্য মানুষদেরকে অভিশাপ দিয়ে চলছে। হা হা হা !!

-ফুলদিভাই, আর এইসব আলতু ফালতু জিনিস শুনোনা তো!

-নাহ! আমি এগুলি শুনিনা। গতকালকে সারাদিন খুব কান্নাকাটি করছিলাম, সন্ধ্যার পরে ইউটিউবে গান শুনতে গিয়ে এই অবস্থা।  দাঁড়া, আরও দশ মিনিট বাকী আছে ব্রেক শেষ হতে। তোরে খোলাখুলি বলি, নাহলে আমাকে খারাপ ভাববি।


-তোমাকে কোনদিনও খারাপ ভাবি না। এমনিতেই বললাম। বলো শুনি তোমার 'কলিজু' কাহিণী।

-শোন, আমি যখন কথা বলবো, তুই শুধু শুনে যাবি, হ্যাঁ হুঁ করবি, এর বেশী কিছু না।

-আচ্ছা ঠিক আছে, বলো।


 আমি গতকাল সারাদিন কেঁদেছি আর নিজের প্রয়োজনীয় লেখা লিখেছি। লিখতে লিখতে একসময় খুব ক্লান্ত লাগছিল, চলে গেলাম ইউটিউবে। বেশ কিছুক্ষণ গান শুনলাম। মান্না দে, কিশোর শুনে সার্চে গিয়ে শ্যামল মিত্র টাইপ করা শুরু করেছি। শ্যামল এর এস টাইপ করার সাথে সাথে এস আদ্যক্ষরের আরেকজনের নাম চলে এসেছে ( অবশ্য এস তাঁর নামের শেষ অংশের আদ্যক্ষর, তাঁর নামের শেষ অংশ দিয়েই তাঁকে সবাই চিনে, নামের প্রথম অংশের আদ্যক্ষর অবশ্য 'ডি')। বর্তমান সময়ের খুব আলোচিত অডিও কালেকশান, সিরিয়্যালী চলে এসেছে। এই লিঙ্কটা প্রায় বিশ দিন আগেই আমাকে আমার কিছু বন্ধু পাঠিয়েছিল ই-মেইল করে, সাথে সাথে ডিলিট করে দিয়েছিলাম। কাল ইউটিউবের সিরিয়াল থেকে একটা অডিও অন করলাম, ভাবলাম, দেখি না কী ব্যাপার! কী এত কথা হয়েছিল তাহার সনে!  আমি কোন সিকোয়েন্স ধরে শুনিনি। এমনি খেয়ালের বশে যেটাতে প্রথম ক্লিক করেছি, সেটাই শুনেছি।  মিথীলাকে আমার কম্পিউটার চেয়ারে বসে থেকেই দেখতে পাচ্ছিলাম, কানে হেডফোন লাগিয়ে ল্যাপটপে গান শুনছে। নিশ্চিন্ত হলাম, ইউটিউবের কথা ওর কান পর্যন্ত পৌঁছাবে না!  এদিকে আমি আমার ইয়ার ফোন খুঁজে পাচ্ছিলাম না। আমি তো সারাক্ষণ বাংলা গান চালিয়ে রাখি যেনো মিথীলার কানেও যায়। তাই ইয়ারফোনের খোঁজ রাখিনি। ইয়ারফোন ছাড়াই সেই অতি বিখ্যাত অডিও শোনা আরম্ভ করেছি।

বাবারে!!  শুনবো কি, হাসতে হাসতে গড়িয়ে পড়ি। আমি আমার উত্তমকে  কোকিল সুরে ডাকার জন্য কোন জুতসই সম্বোধণই খুঁজে পাই না,  আর এই অডিও টেপের মধ্যে দেখি সম্বোধণের প্রতিযোগীতা চলেছে। একজন যদি বলে 'সোনা পাখী', আরেকজন বলে ' ময়না পাখী'! একজন যদি বলে 'যাদু মানিক', আরেকজন বলে ' কলিজু'। কলিজু শোনার পর আমি আর নিঃশব্দে হাসতে পারলাম না। খিলখিল করে হাসি, মিথীলার কান ঢাকা আছে হেডফোনে, তাই ও অডিওর কথা শোনেনি, বেঁচে গেছি।  যা সমস্ত কথাবার্তা হচ্ছিল কী বলবো! ভাগ্যিস ও কিছু শোনেনি, কিন্তু ও আমাকে দেখতে পাচ্ছিল, জিজ্ঞেস করলো,

" মা, তুমি এত হাসছো কেনো? কোন নাটক দেখছো? মা, তুমি আবার নাটক দেখা শুরু করেছো?

আমি তো আগে ইউটিউবে রেগুলার নাটক দেখতাম, মুভী দেখতাম। তখন আমার মুড খুব ভালো থাকতো।  আমার মুড ভালো থাকা মানেই বুঝতে পারিস, আশপাশের দুনিয়া ভালো থাকে। গত তিনমাস আমাকে তো মিথীলা হাসতে দেখেনি। তাই আমাদের দুনিয়া খুব অন্ধকার যাচ্ছে! তার উপর, গতকাল সন্ধ্যেবেলা দেখেছে, কম্পিউটার টেবিলে বসেই আমি খুব কাঁদছিলাম।  তুই তো জানস, আমার হাসি বা কান্না, দুইই খুব জোরালো হয়। কাজেই কিছুক্ষণ আগে ক্রন্দনরত মা'কে দেখেছে সে, এর মধ্যেই এমন কী ঘটলো যে মা এভাবে খিলখিল করে হাসছে! সরাসরি তো আর বলতে পারেনা যে মা 'পাগল' হয়ে গেছে! তাই বোধ হয় ঘুরিয়ে জানতে চেয়েছে আমি নাটক দেখছি কিনা!

বললাম, -নাটক দেখছি না, নাটক শুনছিলাম!

-ওটা কী খুব হাসির নাটক?

-হাসি বলতে হাসি? এটা 'হাসির বাবা' নাটক। হা হা হা হা

-কী হয়েছে নাটকে, আমাকে একটু বলো না।

-একজন আরেকজনকে 'কলিজু' ডেকেছে।

- কলিজু কী একটা হাসির ওয়ার্ড?

-অবশ্যই হাসির ওয়ার্ড! নাহলে আমি হাসবো কেনো!

-মা, শুধু একটা ওয়ার্ড শুনেই তুমি এভাবে হাসছো!

-নাহ! রে মা, হাসি এসেছে অন্য কারণে।  তোমাকে বলা যাবে না। তুমি বুঝবে না।

-ওকে, বাট আমি কলিজু ওয়ার্ডটা লাইক করলাম। কলিজু ওয়ার্ড শুনেই তো তুমি হাসছো। আজ তো তুমি অনেক কেঁদেছো, একজন কলিজু বলাতেই তো অ্যাট লিস্ট তুমি হাসছো!!


- হা হা হা !! ফুলদিভাই, আমিও মিথীলার সাথে সুর মিলায়ে বলি, করুক তারা ফোনে প্রেম, হোক পরকীয়া,  কলিজু শুনে তবু তো তুমি হাসছো। আবার  মেসেজে আগের মত আমাকে একটা 'গালিও' দিছ। আমি তো মেসেজে তোমার গালি শুনে অবাক হয়ে গেছি। আরে! ফুলদিভাই তো দেখি আগের ফর্মে ফিরে আসছে! মাঝে মাঝে শুইনো, এরকম কলিজু কাহিণী যদি ফ্রী পাও, তো খাও কলিজু ভর্তা খাও! হা হাহাহ!

এইবার রাখি বইন। থাক, তুই আবার ইউটিউবে গিয়ে এসব দেখিস না। ফালতু ফালতু। তবে আমি মানুষের চরিত্রের রঙিলা দিক দেখে অবাক হয়ে গেছি। বিশ্বাস কর, মানুষ যে কত খারাপ আর বিটকেল হতে পারে, এই তোতালাপ শুনে বুঝলাম! বাইরে থেকে শোনায় ঈশ্বরের বাণী, আর ভেতরে ভেতরে প্রেমধ্বনি! যত্তসব!


ভালো থাকিস, রাখি। আচ্ছা, যা, পারমিশান দিলাম, যে কোন ব্লগে যাবি, ইউটিউবে যাবি, গিয়ে শুধু  'ডি' 'এইচ' 'এস' টাইপ করবি। তবে সাবধান, পড়তে চাইলে নিজ দায়িত্বে পড়বি, পড়ার পরে যদি 'বমি' করস, সেই দায়িত্ব কিন্তু আমি নেবো না।

-ফুলদিভাই, প্রথমে তুমি বলেছিলে, নাম শুনে আমি বলবো, এই বেটা আবার কে?  আমাকে অত কাঁচা ভাববার কোন কারণই নাই। আমি ডি এইচ এস শুনেই বুঝে গেছি, কার কথা বলছো!

-বলতো কার কথা!

-নাম বললে তো আবার বিপদ আছে, তুমিই বলেছো। তবে তার কাম-কাজের কথা বলি, সে মাইকে ওয়াজ মাহফিল করে। সবাইরে ধর্মজ্ঞান দেয়। পৃথিবীতে কী পাইলা সেইসব হিসেব না করেই বেহেশতে গিয়ে কী পাইবা, সেইসব স্বপ্ন দেখায়। আর কিছু শুনবা?

-সাবাশ বইন সাবাশ! তুই তো দেখি এক্কেবারে বিচ্ছু'বাহিণীর সদস্য হয়ে গেছস! বিচ্ছু বাহিণী বুঝস তো? মুক্তিযুদ্ধের সময় ছিল ওরা, গেরিলা যোদ্ধা, আমরা চরমপত্র শুনতাম, ঐখানে বিচ্ছু বাহিণীর কথা থাকতো। বাদ দে, এত কথা তুই বুঝবি না। তবে আমার টি ব্রেক টা তুই আনন্দময় করে দিছস! এই জন্য তোরে আবার পারমিশান দিলাম, যা, অডিও টেপ শোন, নিজের মনে চিন্তা করে দ্যাখ, আমি মুখ ফুটে যা বলতে পারি নাই, কান পেতে শুনে দ্যাখ, মানুষ কত খবিস হতে পারে! আর সেই সকল 'বিচ্ছুবাহিণীর' সদস্যদেরকে সালাম জানা, যারা ফোনালাপ রেকর্ড করে সর্বত্র ছড়িয়ে দিয়েছে! কাজটা অবশ্যই অন্যায়, তবে মাঝে মাঝে অন্যায়গুলোই বেঁচে থাকার জন্য শক্ত হাতিয়ার হিসেবে কাজ করে। বিচ্ছুবাহিণী এই অন্যায় কাজটুকু না করলে কেউই জানতেই পারতোনা, মুখে যার মধু ঝরে, অন্তরে তার কত বিষ জমে থাকে!



** আমার 'বইন'টি কাল্পনিক!

No comments:

Post a Comment