Wednesday, January 16, 2013

ঘুম ভেঙ্গে দেখিঃ

একজন নবীন ও বয়সে তরুণ প্রকাশক তাঁর ম্যাগাজিনে আমাকে একটি নতুন গল্প লিখে জমা দিতে বলেছেন, গল্পের থিম বলা আছে, ( মুক্তিযুদ্ধ, বঞ্চিত নারী, অথবা বীর নারী, যুদ্ধাপরাধী, -----), শব্দসীমা ১৫০০ বলা আছে, গল্প জমা দেয়ার লাস্ট ডেটও বলা ছিল, ১৬ই জানুয়ারী।

আমি বুঝেই উঠতে পারছিলাম না, কী করে ১৫০০ শব্দের ভেতর থিম অনুযায়ী গল্প লিখবো! আমি তো 'জন্মেই লেখিকা' নই, মুখেও কথা বলি খই ভাজার মত, লিখতে গেলে লেখা শেষ না হতেই কলমের কালি ফুরিয়ে যায়!! সীমিত শব্দে থিম অনুযায়ী গল্প লেখা যে কত কঠিন আমার মত শখের লেখকের জন্য, তা কিছুটা বোধ হয় টের পেয়েছি। তবে শখের লেখক হলেও আমার মধ্যে এক ধরণের ‘শেষ না দেখে ছাড়বো না’ জাতীয় জেদ আছে, সেই জেদকে সম্বল করেই গল্প লিখতে শুরু করেছি।

কাল রাতে কাজ থেকে ফিরে লেখা শুরু করেছি, অতি কষ্টে লেখা শেষ করে দেখি ১৯৭৭ শব্দ। এই সেরেছে! কিছুদিন আগেই আরেকটি গল্প পাঠিয়েছিলাম, শব্দ সংখ্যা দাঁড়িয়েছিল, ৩০০০ এর উপর, তরুণ খুব বিনয়ের সাথে জানিয়েছে, এত বড় গল্প প্রথম সংখ্যায় ছাপানো খুব কষ্টের হয়ে দাঁড়িয়েছে! বলেছি, ঠিক আছে, থাকুক, আবার লিখবো। অনেক ভেবে ১৯৭৭ শব্দে ‘আমাদের বহ্নিশিখা’ লিখলাম। ১৯৭৭ শব্দ? এটা পাঠানো যাবে না। শুরু হলো ছাটাই পর্ব। নিজের ফ্যাক্টরী থেকে শ্রমিক ছাটাই করা যায়, কিন্তু নিজের সংসার থেকে তো সন্তানকে ছাটাই করে দেয়া যায় না। আমাকে সেই কাজটিই করতে হয়েছে। নিজের লেখার সংসার থেকে 'ডিলিট' নামক ছুরী দিয়ে কাটা শুরু করেছি।

'ডিলিট' খুব ভালো ব্র্যান্ডের ছুরী। একবার বাটনে টিপ দিলেই হলো, লেখা ভ্যানিশ! খুন-জখমের চিহ্নও থাকেনা, পুলিশ দারোগার বাবারও ক্ষমতা নেই, হারিয়ে যাওয়া লেখাকে খুঁজে পাওয়া অথবা খুনীকে গ্রেফতার করা। যাই হোক, ছাটাই করে গল্প দাঁড়িয়েছে ১৫৬৭ শব্দে। গল্পের নাম ‘ আমাদের বহ্নিশিখা’ থেকে দাঁড়ালো ‘বহ্নিশিখা’। ‘আমাদের’ শব্দটিই ছিল ছাটাইকৃত শেষ শব্দ, এর বেশী আর সম্ভব হলো না। গল্প তরুণ প্রকাশকের কাছে মেইল করে দিলাম। ক্ষমাও চাইলাম অতিরিক্ত ৬৭ শব্দকে ছাটাই করতে পারিনি বলে, এবং তাঁর উপর ওদের ভাগ্য ছেড়ে দিলাম।

সকালে ঘুম থেকে উঠেছি দেরী করে, মানুষ ঘুম ভেঙ্গে ঈশ্বরের নাম নেয়, আমি নেই 'ফেসবুক' এর নাম। ফেসবুক খুলতেই পেলাম সেই তরুণ প্রকাশকের মেসেজঃ

প্রিয় মিঠুদি,
অসাধারণ................ আপনার লেখাগুলোর মধ্যে সেরা লেখা এটা...
প্লিজ লেখা থামাবেন না............
কম লেখেন কিন্তু এরকম থিম ধরে ধরে লেখেন... সময় নিয়ে লেখেন..............
ভালো লেখা অল্পই যথেষ্ট...........................
দেশে এলে হোটেল প্রিন্সে চা খাওয়াবো আপনাকে, আমার খুব পছন্দের চা হোটেল প্রিন্সের চা............
ধন্যবাদ দিয়ে ছোট করব না। আমি বিমোহিত।
আপনার সুন্দর দীর্ঘ জীবন কামনা করি।
এরকম লেখা হলে কয়েক’শ শব্দ কমবেশী হলেও কোন ব্যাপার না................
চিয়ার্স..
আপনার নাম কি লিখব? রীতা রয় নাকি রীতা রয় মিঠু... নামের বানান সহ নামটা একটু কনফার্ম করেন প্লিজ....
এটা কি রিসেন্টলি লিখলেন? নাকি .. উফ.. দারুণ.............
ইতি-
ধ্রুব।
***ভাগ্যে থাকলে হয়তো বা এবারের বইমেলায় নতুন প্রকাশিত ম্যাগাজিন ‘তেজপাতা’ তে থাকবে রীতা রায় মিঠুর লেখা গল্প ‘বহ্নিশিখা’!

****ভাগ্যে থাকুক আর না-ই থাকুক, ‘বহ্নিশিখা’ সকলের সামনে প্রকাশিত হোক আর না-ই হোক, তরুণ আলীম হায়দার ধ্রুবকে অনেক ধন্যবাদ ও কৃতজ্ঞতা জানাচ্ছি, তাঁর ‘তেজপাতা’ তে আমাকে ডেকে নেয়ার জন্য। ‘তেজপাতা’ প্রকাশিত হোক, সুগন্ধ ছড়িয়ে দিক চারিদিকে!!

No comments:

Post a Comment