ইস্টার সানডের সকালে ইস্টার বানির আগমন!!
আজ
ইস্টার সানডে! শিশুদের জন্য পরম আনন্দের দিন। ভোর সকালে চকোলেটের ঝুড়ি হাতে ঝুলিয়ে
ধবধবে সাদা খরগোশটি লাফিয়ে লাফিয়ে সবার বাড়ীর উঠোন পেরিয়ে যাবে, যাওয়ার সময় ঝুড়ি
থেকে ডিম ফেলে ফেলে যাবে, ডিমগুলো কখনও ঝোপের আড়ালে থাকবে, কখনওবা নরম ঘাসের ফাঁকে
ফাঁকে থাকবে। দুরন্ত খরগোশ এমনভাবেই ডিমগুলোকে ফেলে যায় যে, ছোট সোনামনিদের
খরগোশের ডিম খুঁজে পেতে কোন অসুবধাই হয় না। ইস্টার সানডে’র সকালের এই ধবধবে সাদা
খরগোশটির নাম ‘ইস্টার বানি’।
বাংলাদেশে
যেমন বারো মাসে তেরো পার্বণ,পশ্চিমা দেশগুলোতেও তেমনি বারো মাসে তেরো-চৌদ্দ পার্বণ
লেগেই থাকে। বিশেষ করে আমেরিকাতে প্রতি মাসে একটা না একটা কিছু পরব আছেই। এবং
শুধুমাত্র শিশুদের জন্য বিশেষ উৎসব হচ্ছে ইস্টার সানডে’র ইস্টার বানি উৎসব এবং
ক্রিসমাস ডে’র স্যান্টা ক্লজ উৎসব। শিশুরা চকোলেট, ক্যান্ডি ভালোবাসে বলে ইস্টার
বানি এবং স্যান্টা ক্লজ ওদের জন্য চকোলেট, ক্যান্ডিসহ নানা বর্ণের উপহার নিয়ে আসে।
যদিও ক্রিসমাস ও ইস্টার পরবের সাথে ধর্মীয় ভাবগাম্ভীর্য্যের সম্পর্ক আছে, কিন্তু
এরই সাথে আছে শিশুতোষ আনন্দের সম্পর্ক। ক্রিসমাস মানেই যেমন স্যান্টা ক্লজ, তেমনি
ইস্টার সানডে মানেই ইস্টার বানি বা খরগোশ! এবারের ইস্টার সানডেতেও ঝুড়ি ভর্তি ডিম
(চকোলেট) নিয়ে ইস্টার বানি ছুটে গিয়েছে এবাড়ী থেকে ওবাড়ী, আর রেখে এসেছে শিশুদের
জন্য সাথে নিয়ে আসা উপহার।
কেনো খরগোশ!
চান্দ্রমাসের
হিসেব অনুযায়ী ইস্টার উদযাপিত হয় বসন্তকালে। যে কোন উৎসবেরই মূল ভাবনা হচ্ছে
জীবনের কল্যান। দ্বিতীয় শতাব্দীতে শুরু হওয়া ইস্টার উৎসবের ঐ সময়কালীন প্রেক্ষাপটে
সমাজের বিস্তৃতি ও সমৃদ্ধিই ছিলো জীবনের মূল চেতনা। বিস্তৃতি ও সমৃদ্ধির ধারণাটিকে
ঠিক রেখেই ইস্টার সানডে উৎসবের লোগো করা হয়েছে খরগোশ। ইস্টার খরগোশকে নিয়ে অনেক
মিথ চালু থাকলেও, প্রানীকুলের মধ্যে খরগোশকে ‘সিমবল অফ ফার্টিলিটি’ বলা হয়ে থাকে। একমাত্র
খরগোশই একেকবারে প্রচুর বাচ্চা প্রসব করে। বসন্তের এই সময়টাতেই খরগোশ বাচ্চা প্রসব
করে। তাই সমৃদ্ধির প্রতীক হিসেবেই খরগোশকে ‘ইস্টার বানি’বলা হয়। ইস্টার বানিকে
বানিজ্যিকভাবে সফল করেছে বানিজ্যিক সংস্থাগুলো। বিশেষ করে চকোলেট কোম্পাণীগুলোই চকোলেট
দিয়ে খরগোশের নানা প্রতিকৃতি, খরগোশের ডিম তৈরী করে শিশুমনের কল্পনাতে এক বিরাট
ভুমিকা রেখেছে।
ইস্টার বানি এপ্রিল মাসে আসার কথা থাকলেও এ বছর আরেকটু আগেই চলে এসেছে। এ বছর
এপ্রিলের পরিবর্তে ৩১শে মার্চ ‘বানি’ এসেছে। সাধারণতঃ মার্চের প্রথম সপ্তাহ থেকেই
এখানের স্টোরগুলোতে সাজ সাজ রব পড়ে যায়। প্রতি বছর নানা সাইজের খরগোশ ও নানা রঙের
ডিম দিয়ে দোকানগুলো সাজানো হয়। স্টাফড খরগোশ, গল্পের বইয়ে খরগোশ, এনিমেটেড ছবিতে
খরগোশ, ডিভিডিতে খরগোশ, বাচ্চাদের পোষাকে খরগোশ, চুলের হেয়ার ব্যান্ডে খরগোশ,
বাচ্চাদের প্লেট গ্লাস, ওয়াটার বটল, পায়ের জুতা মোজা সবকিছুতেই খরগোশের লোগো থাকে।
ডিমগুলো হয় রঙ বেরঙের। বসন্তকালীন উৎসব বলেই হয়তো প্রকৃতির সাজের সাথে মিল রেখে
ডিমগুলোকে রাঙানো হয়ে থাকে। ডিম ছাড়াও চকোলেটের তৈরী নানা আকৃতির খরগোশ থাকে।
প্লাস্টিকের রঙ্গীন ডিমের ভেতরে থাকে চকোলেট, রঙ বেরঙের রাংতা কাগজে মোড়ানো থাকে
নানা সাইজের চকোলেট। এমন দৃষ্টিনন্দন জিনিস সকলেরই দেখতে ভালো লাগে। একমাস ধরেই
চলে চকোলেট কোম্পাণীগুলোর আকর্ষণীয় বিজ্ঞাপন ও বিপনন। এবারেও তার ব্যতিক্রম হয়নি।
মার্চের তৃতীয় সপ্তাহ জুড়ে ছিল ফটোসেশান। দোকানে, শপিং মলে, খরগোশের কস্ট্যুম পড়ে
‘মানুষ বানি’ সব বয়সের বাচ্চাদের সাথে ছবি তুলেছে, আর ইস্টার সানডের সকাল থেকে
বাচ্চাদের হাত ভরে চকোলেট দিয়েছে।
এগ হান্টিং
ইস্টার
উৎসবের মূল আনন্দই হচ্ছে এগ হান্টিং। বাচ্চাদের ধারণা, ইস্টার বানি তাদের জন্য
চকোলেট ডিম নিয়ে এসে বাড়ির চারিদিকে লুকিয়ে রেখে যায়। পরের দিন সবগুলো ডিম খুঁজে
বের করাই তাদের একমাত্র কাজ। অনেক কঠিন এই খেলা, কারন বানি বাচ্চাদের সাথে মজা
করতে ভালোবাসে। সে চকোলেট ডিম বাগানে রাখে, বারান্দার কোনে কোনে রাখে, ঘরের ভেতর ঢুকে
কত জায়গায় যে লুকিয়ে রাখে তার ঠিক নেই। বালিশের নীচে, খেলনার ঝুড়িতে, বুকসেলফ এর
আড়ালে, টিভির আড়ালে (এটা বিপদজনক, চকোলেট খুঁজতে গিয়ে টিভি উলটে পড়ে দূর্ঘটনা
ঘটেছে অনেকবার), কিচেনে, চিনির বোয়ামে, এমনি আরও নানা জায়গায়। সারাটাদিন পার হয়ে
যায় ডিমগুলোকে খুঁজে বের করতে। শুধু কি নিজের বাড়িতে এগ হান্টিং চলে? গ্র্যান্ডমা,
আন্টি, আঙ্কলদের বাড়িতেও যেতে হয়, বানি ওখানেও রেখে আসে ডিম।
বাচ্চারা
শনিবারের রাতেই তাদের মাথার টুপী বা বাস্কেট বাগানের গাছের ঝোপে রেখে দেয়। তারা
জানে, ইস্টার বানি রাতের আঁধারে এসে বাস্কেটগুলো ভরে দিয়ে যাবে ‘চকোলেট এগ’ দিয়ে।
রবিবার ভোরে ঘুম ভেঙ্গেই বাচ্চারা ছুটে যায় বাগানে। আগের রাতে রেখে আসা হ্যাট বা
বাস্কেট ভর্তি নানা রঙের ডিম দেখে তাদের খুশীর সীমা থাকেনা। বাগানের হান্টিং শেষে
তারা ঘরে হান্টিং শুরু করে। দিনের শেষে দেখা যায় ঝুড়ি উপচে পড়ছে চকোলেট ডিম।
ইস্টার বানি বাচ্চাদের বন্ধু। স্যান্টা ক্লজের মতই বানিও সারা পৃথিবী দৌড়ে বেড়ায়
আর বাচ্চাদেরকে ঝুড়ি ভর্তি ডিম দিয়ে আসে। ডিম ছাড়াও বানি বাচ্চাদের জন্য নানা
ধরণের উপহারও নিয়ে যায়। বানির কাছ থেকে পাওয়া চকোলেট বাচ্চারা সবার সাথে শেয়ার করে
খায়। এভাবেই বাচ্চারা ছোটবেলা থেকেই শেয়ারিং শিখে।
ইস্টার বানি কেনো আসে
স্যান্টা
ক্লজ অথবা ইস্টার বানির কাছ থেকে বাচ্চারা শুধু নিতেই শিখে না, দিতেও শিখে। বাচ্চা
বয়সে শেখা এই মহৎ গুনগুলো জীবনের শেষ পর্যায় পর্যন্ত বহন করে যাওয়া খুবই কঠিন।
কৈশোর পেরোলেই মানুষের মনে স্বার্থচিন্তা ঢুকে যায়, তখন মানুষ দিতে চায় না, নিয়ে
সুখ পায়। আজ পৃথিবীতে এত হানাহানি, এত স্বার্থপরতা, এত বেশী আগ্রাসন! তাই বুঝি
এমনই অশান্তিময় সময়ে স্যান্টা ক্লজ বা ইস্টার বানি বছরের নির্দিষ্ট সময়ে নেমে আসে
এই ধরণীতে, ছুটে ছুটে যায় প্রতিটি শিশুর কাছে। চেষ্টা করে শিশুদের মধ্যে ভালোবাসার
বীজ বপন করে দিতে। শিশুরা নির্মল, শিশুরা পবিত্র, এই শিশুরাই আগামীর ভবিষ্যত।
প্রতি একশত শিশুর মধ্যে একজন শিশুও যদি পারে জীবনের শেষ দিনটি পর্যন্ত আর্তের জন্য
নিজেকে উৎসর্গ করতে, তাহলেই পৃথিবীটা হয়ে উঠবে অনেক আনন্দের, অনেক ভালোবাসার। এই
আশাতেই স্যান্টাক্লজ ও ইস্টার বানি এখনও পিঠে উপহারের ঝোলা নিয়ে ছুটে ছুটে আসে এই
ধরণী মাঝে, শিশুদের কাছে।
No comments:
Post a Comment