Tuesday, April 2, 2013

হ্যাঁ, ঠিকই বলেছেন, আমি ‘সংখ্যালঘু’ হীনমণ্যতায় ভুগি!

গত কয়েকদিন আগে, প্রয়াত রাষ্ট্রপতি জিল্লুর রহমানকে উপলক্ষ করে আমি ‘প্রিয় ব্লগ’ এ একটি রাজনৈতিক লেখা পোস্ট করেছিলাম। রাষ্ট্রপতিকে নিয়ে লেখা, স্বাভাবিকভাবেই সেখানে সংখ্যাগুরু বা সংখ্যালঘু নিয়ে কোন কথা ছিল না। তারপরেও জনৈক পাঠক, খুব কড়া ভাষায় সমালোচনা করেছেন এবং পরামর্শ দিয়েছেন, রাজনৈতিক লেখা না লিখে ওয়ালমার্টের জীবন নিয়ে যেন ধারাবাহিক লিখে যাই। পরের দিন আরেক পাঠক প্রথম মন্তব্যকারীর বক্তব্যকে সমর্থণ করেছেন এবং বোনাস হিসেবে আমার সমন্ধে বলেছেন,
“মিঠু দিদি কেন যে আজকাল একটু তালকাটা ধরণের আগডুম বাগডুম করছেন; বিষয়টা আমিও ধরতে পারছি না। মাঝে মাঝে দিদি কালকে সাদার সাথে মিশিয়ে ভুল করে বসেন। নিজেকে সংখ্যালঘু বিবেচনা করে তিনি বরাবরই একটু হীনমণ্যতায় ভোগেন;”।
আমি মন্তব্যের জবাবে লিখেছি,
” হ্যাঁ, আমি বরাবরই হীনমণ্যতায় ভুগি। এটাই নিয়ম, যারা হীন, তারা হীনমণ্যতায় ভোগে। আমাদের তো পেশীর জোর নেই বা গলার জোরও নেই, আমাদের দেবী মূর্তির দেহে প্রাণও নেই, আমাদের ধর্মের জোরও নেই, ধর্মের শ্রেষ্ঠত্ব প্রমানে লড়াই করার মত তেমন জোরালো যুক্তিও নেই, ধর্মকে নিয়ে বড়াই করারও ক্ষ্যামতা নেই, এমনই কোমড়ভাঙ্গা পাবলিক আমরা। আমাদের মত এমন কাপুরুষ বাংলাদেশে কত পার্সেন্ট আছে বলেন তো! আমরাতো সংখ্যায় খুবই কম, সংখ্যায় কম মানেই তো সংখ্যালঘু!
আমাদের সংখ্যা এতই নগন্য যে সংখ্যাগুরুদের চোখেই পড়ে না। আর তাই গণতান্ত্রিক শাসন ব্যবস্থায়, মুক্তিযুদ্ধের চেতনায় বিশ্বাসী সরকারের নাকের ডগায়, বিরোধী দলের ( সরকারবিরোধী যত দল) উস্কাণীর মুখে, আমাদের তুলসী মঞ্চ ভেঙ্গে ফেলা হয়, দেবী মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হয়, ঘরবাড়ী জ্বালিয়ে দেয়া হয়, আপনারা চেয়ে চেয়ে দেখেন। আর নিরাপদ দূরত্বে থেকে আমার মত দুই একজন যখন নিজেদের জন্মভূমির মাটিতে থাকার দাবী তুলি, আপনাদের মত জ্ঞাণী গুণী, উচ্চশিক্ষিত ব্যক্তিদের মুখে শুনতে হয়, আমি সংখ্যালঘু হীনমন্যতায় ভুগি। আপনাদের মত জ্ঞানী গুনী পন্ডিত ব্যক্তিবর্গের কারোরই জানা নেই, সংখ্যালঘু কী জীব, সংখ্যালঘুরা দেখতে কেমন হয়।
এরপর থেকে কয়েকটি দিন আমি অনবরতঃ ভেবেই চলেছি। কোন দিকে যাচ্ছে আমাদের এই দেশ।
আজ থেকে বিয়াল্লিশ বছর আগে আমাদের দেশটির জন্ম হয়েছে, সেই বিয়াল্লিশ বছর আগের সরকার কতটা গণতান্ত্রিক, অসাম্প্রদায়িক চেতনার ছিল যে স্বাধীন দেশের সংবিধানে ‘সেক্যুলারিজম’ বা ধর্মনিরপেক্ষতা যোগ করা হয়েছিল। সংবিধান প্রণেতাগণ সংবিধান প্রনয়ণ করেছিলেন, কিন্তু উনারা ধারণা করেননি, কিছু শ্রেণীর মানুষের কাছে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’র মানে ‘ধর্মহীনতা,’ ধর্মনিরপেক্ষতার মানে সংখ্যাগুরু হয়েও সংখ্যালঘুদের কাছে ‘নীচু’ হয়ে যাওয়া, ধর্মনিরপেক্ষতা মানেই পেশীক্ষমতা প্রদর্শনের পথ রুদ্ধ হয়ে যাওয়া। সেই কতিপয় মানুষ বিষয়টিকে ভালো মনে মেনে নেয়নি। শুরু হয়ে যায় সরকারের বিরুদ্ধে ষড়যন্ত্র।
দিন যায়, মাস যায়, বছর যায়, আসে পঁচাত্তরের পনেরই আগস্ট, বাংলাদেশের স্থপতি, স্বাধীন বাংলার রূপকার, বাঙালী জাতির পিতাকে নির্বংশ করার জন্য পরিবারের কনিষ্ঠতম সদস্যটিসহ সকলকে নিষ্ঠুরভাবে হত্যা করা হয়। পথের কাঁটা সরিয়ে দেয়া হয়, সংবিধানকেও কাটাছেঁড়া করে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কে বাদ দেয়া হয়। বাংলাদেশ থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা উঠে যায়, অলিখিতভাবে দেশের জনগণকে দুই ভাগে ভাগ করা হয়, সংখ্যাগুরু এবং সংখ্যালঘু। দেশের মুসলমান জনগণ হয়ে যায় ‘সংখ্যাগুরু, বাকীরা হয় ‘সংখ্যালঘু’, আরও স্পষ্টভাবে বলা যায়, হিন্দু ধর্মাবলম্বীরা হয়ে যায় সংখ্যালঘু।।
পঁচাত্তরের পটপরিবর্তণের পর সারা দেশের মানুষ এক ধাক্কা খেয়েছে, ঘটনার আকস্মিকতায় অনেকেই স্তব্ধ হয়ে গেছে, তাই সংবিধান কাঁটাছেঁড়া নিয়ে কেউই কোন উচ্চবাচ্য করার সাহস পায়নি। অথবা এমনও হতে পারে, সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’ কেটে ফেলে দেয়ায় দেশের সংখ্যাগুরুরা খুশীই হয়েছেন, তাই বোধ হয় বঙ্গবন্ধুর তত্বাবধানে যে মহান কর্মটি ( সেক্যুলার সংবিধান রচনা) বিংশ শতাব্দীতে সাধিত হয়েছিল, একবিংশ শতাব্দীর গোড়ায় দাঁড়িয়ে সেই মহান কর্মটি পুনরায় করার মত সাহস বা চেতনা কারো মধ্যেই আর দেখা যায় নি। একটি মুসলমান প্রধান রাষ্ট্রের সংবিধান রচিত হয়েছিল ধর্মনিরপেক্ষতার ভিত্তিতে, এমন সাহসী এবং মহান সিদ্ধান্তের জন্যও বঙ্গবন্ধুকে সর্বকালের শ্রেষ্ঠ বাঙালী নেতা বলা যেতে পারে।
সংবিধান থেকে ধর্মনিরপেক্ষতা বাদ দেয়া হয়েছিল প্রেসিডেন্ট জিয়াউর রহমানের শাসনামলে, তখনও ‘সংখ্যালঘু’ কথাটি এখনকার মত এত ঘন ঘন উচ্চারিত হতে শুনিনি। হিন্দু বা অন্য ধর্মাবলম্বীদের প্রতি যা কিছু অসাম্যতা, অবজ্ঞা, অবহেলা করা হতো, সবই নীরবে চলতো। ’৯১ সালের পর থেকেই যেনো সংখ্যালঘু কথাটি গতি পায়। বিশেষ করে ‘৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বার তারিখে ভারতে রাম মন্দির বনাম বাবরী মসজিদ দাঙ্গা শুরু হতেই বাংলাদেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর প্রথম ঝড় বয়ে যায়। উন্মুক্ত হয়ে পড়ে সাম্প্রদায়িকতার ভয়াল চেহারা। সুদূর অযোধ্যায় মসজিদ-মন্দির নিয়ে দাঙ্গা হচ্ছে, তার সাথে বাংলাদেশের কোমড় ভাঙ্গা সংখ্যালঘু হিন্দুদের কী সম্পর্ক, সে প্রশ্ন কেউ তোলেনি, তুললেও উত্তর পাওয়া যেতো বলে মনে হয় না। সেই থেকে শুরু, সরকারে ছিল বিএনপি, যে দলের স্রষ্টা বাংলাদেশের সংবিধান থেকে ‘ধর্মনিরপেক্ষতা’কে কেটে দিয়েছিলেন, সংখ্যালঘু হিন্দুদের প্রতি সে দলের দৃষ্টিভঙ্গী আর যাই হোক, কখনওই মাতৃসুলভ বা বন্ধুসুলভ ছিল না। এই সুযোগে সাম্প্রদায়িক শক্তিগুলো দূর্বার গতিতে মাথা চাড়া দিয়ে উঠে।
তাছাড়া দূর্বল হিন্দুকে ভয় দেখাতে খুব বেশী কথা খরচ করতে হয় না। বাড়ীর কর্তাকে ‘মাইয়া তুইল্লা লইয়া যামু’ বললে অথবা কালো চাদরের আড়ালে লুকিয়ে রাখা ছোরা দেখালেই যথেষ্ট। রাজাকার, আলবদরদের দাপটতো আর ফুরিয়ে যায় নি, একাত্তরে কত হিন্দুকে মুসলমান বানিয়ে হাত পাকিয়েছে তারা, তাদের হুমকী শুনে ভয় পাবে না, এমন বাঘা হিন্দু কী আর বাংলাদেশে অবশিষ্ট আছে?
’৯১ থেকে ধারাবাহিকভাবে সংখ্যালঘু নির্যাতন চলে আসলেও ইদানিং নানা টকশো, বক্তৃতা, বিবৃতিতে সুশীলগণ মুখে পরিতৃপ্তির হাসি নিয়ে বলেন, বাংলাদেশে সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতির নহর বয়ে যাচ্ছে। সরকার থেকেও বলা হয়, বিরোধী দল থেকেও বলা হয়, বিশ্বের যে কোন দেশের সংখ্যালঘু জনগণের তুলনায় বাংলাদেশের হিন্দুরা নাকি অনেক বেশী ভাল আছে। এমন কথা শুনে আমাদের ক্ষত স্থান ফুলে উঠে, দগদগে ঘা আরও দগদগে হয়, কিছুতেই ভুলতে পারিনা, ’৯২ সালের ৬ই ডিসেম্বারের রাতে আমাদের ঘরের দরজায় লাথি পড়ার শব্দ, সাথে “ অই মালাউনের বাচ্চারা, দরজা খোল” হুমকী, কী করে ভুলি ২০০১ সালে কী নারকীয় অত্যাচার নেমে এসেছিল হিন্দুদের উপর। কোন রাখ ঢাক না রেখেই তৎকালীন সরকার দলীয় ক্যাডারেরা হিন্দুদের কুপিয়েছিল, মায়ের সামনে, বাপের সামনে কোমলমতি হিন্দু মেয়েদের ধর্ষণ করেছিল, মা’কে আহাজারি করে বলতে হয়েছিল, “ বাবারা আমার মাইয়াটা ছোট, তোমরা একজন একজন কইরা আস”। এগুলোই ছিল প্রায় প্রতিদিনের চিত্র। ২০০৫ সালের মধ্যে কত হিন্দু পরিবার ভিটেছাড়া হয়ে গেছে! এরপরও সুশীলেরা তৃপ্তির ঢেঁকুর তুলেন সংখ্যালঘুরা ভালো আছে বলে, জনৈক পাঠক আমাকে তিরস্কার করেন সংখ্যালঘু হীনমণ্যতায় ভুগি বলে।
গত দুই মাস ধরে যুদ্ধাপরাধী বিচারকে কেন্দ্র করে সারা দেশে যে তান্ডব শুরু হয়েছে, সে সম্পর্কে আমার আলাদা করে কিছু বলার নেই, সারা বিশ্বে সকল বাঙালীরা জেগে উঠেছে। বাঙালীর এই জাগরণ ছিল আমাদের দেশের জন্য আশীর্বাদ, কিন্তু অভাগা জাতি সেটাও যেন সামাল দিতে পারলো না। যুদ্ধাপরাধীদের বিচার কাজ শুরু হয়েছে এবং একটি রায় তরুণ প্রজন্ম মেনে নিতে পারেনি, প্রতিবাদস্বরূপ তারা দল বেঁধে শাহবাগের মোড়ে দাঁড়িয়ে রায়ের বিরুদ্ধে অহিংস প্রতিবাদ আন্দোলনের ডাক দিয়েছিল। তারা আন্দোলন শুরু করেছে গত ৫ই ফেব্রুয়ারী থেকে, প্রজন্ম মঞ্চ বানিয়ে। মূলতঃ কয়েকজন ব্লগারের উদ্যোগেই শুরু হয়েছিল এই প্রজন্ম আন্দোলন। স্বাভাবিকভাবেই মুক্তিযুদ্ধের বিরোধী শক্তির প্রজন্ম চত্বরের আন্দোলন পছন্দ হয় নি, একটি বিশেষ গোষ্ঠী থেকে অপপ্রচার শুরু করা হয় তরুণ ব্লগারদের বিরুদ্ধে। যারা ব্লগ কী জানে না, ব্লগে কী করা হয় জানে না, ইন্টারনেট ব্যবহার করতে জানে না, তারাও দেখি ব্লগারদের বিরুদ্ধে তুমুল হৈ চৈ শুরু করেছে।
বাংলাদেশের সংখ্যাগরিষ্ঠ জনগণ মুসলমান এবং সরল ধর্মভীরু। তারা ইসলামের বিরুদ্ধে কোন বিরূপ মন্তব্য পছন্দ করেনা, মেনেও নেয়না। এই সুযোগটি কাজে লাগিয়েছে সেই দুষ্টচক্র। বর্তমান হাই টেকের যুগে কম্পিউটারে দিনকে রাত বানানো যায়, রাতকে দিন। তারাও দিনকে রাত বানিয়েছে, ব্লগারদের নামে ইসলাম বিদ্বেষী পোস্টার ছাপিয়ে সারাদেশে প্রচার করে সরল ধর্মপ্রাণ মানুষের মনে আঘাত দিয়েছে। যে দুই একজন ব্লগার তাদের ব্যক্তিগত প্রোফাইলে নিজের অভিরুচী অনুযায়ী লেখা লিখেছে, সে সকল লেখা ব্লগারের ব্যক্তিগত প্রোফাইলের গন্ডী পেরিয়ে কুচক্রীদের মারফত সারাদেশে প্রচার করা হয়েছে। রাজীব হায়দার নামের এক ব্লগারকে হত্যা করা হয়েছে। এখন দাবী উঠেছে, ব্লগার মানেই নাস্তিক, যুদ্ধাপরাধীদের পরিবর্তে এই নাস্তিকদের বিচার নিয়ে সবাই মেতে উঠেছে।
শুধু ব্লগারদের বিরুদ্ধে বিচার চেয়েই ক্ষান্ত নয় কেউ, ব্লগারদের বিরুদ্ধে আন্দোলন-প্রতিবাদের অংশ হিসেবে সারা দেশের শত শত হিন্দুদের ঘর-বাড়ী আগুনে জ্বালিয়ে দেয়া হয়েছে এবং এখনও হচ্ছে, মন্দিরে ঢুকে পুরোহিতকে হত্যা করা হয়েছে, এবং প্রায় প্রতিদিন হিন্দুদের দেব দেবীর মূর্তি ভেঙ্গে ফেলা হচ্ছে। সরকার থেকে বলা হচ্ছে, বিএনপি-জামাত এগুলো করছে, আর বিএনপি থেকে বলা হচ্ছে, আওয়ামীলীগ এগুলো করছে। যাক, একটি ব্যাপার পরিষ্কার হয়ে গেছে, দেশে সংখ্যালঘু হিন্দুদের উপর অত্যাচার চলছে, তা সে যে পক্ষই করুক না কেন। সরকার থেকে হুঁশিয়ার করে দেয়া হয়েছে, কেউ যেন ইসলামের বিরুদ্ধে কোন কটুক্তি না করে, ব্লগেও যেন কেউ ইসলাম অবমাননা করে কিছু না লিখে। আমি মাননীয় সরকারের এই অত্যন্ত মূল্যবান সিদ্ধান্তের সাথে সহমত পোষণ করছি, তবে, এটাও জানতে চাইছি, হিন্দুরা তো ইসলাম বা অন্য কোন ধর্ম নিয়ে কোন কটু মন্তব্য করেনি। তাহলে আজ কেন হিন্দুদের উপর এই অত্যাচার নেমে এসেছে। আর কেন কোন রাখঢাক না রেখেই হিন্দুদের বাড়ীঘরে হামলা হচ্ছে? আজ আপনাদের সকলের সামনে যখন মন্দিরে হামলা হচ্ছে, দেব দেবীর মূর্তি ভাংচুর হচ্ছে, তখন আমাদের দেবদেবীর এই অপমানকে কী দৃষ্টিতে দেখছেন সকলে? নাকি কেউই দেখতে চাইছেন না লজ্জা পাবেন বলে! নাকি গালে হাত রেখে ভাবছেন, “সংখ্যালঘুদের আবার ধর্ম কি? আমাদের দেশ সাম্প্রদায়িক সম্প্রীতিতে টইটুম্বুর করছে, এখানে সংখ্যালঘু বলে কিছু আছে নাকি?”
উত্তর একটাই, যে দেশে সংখ্যা বিচারে একটি ধর্মকে রাষ্ট্রীয়ভাবে প্রতিষ্ঠা করা হয়, সে দেশে অন্যান্য ধর্মাবলম্বীদের হয় ‘সংখ্যালঘু’ হয়ে থাকতে হয়, নাহলে নিজ ধর্ম বিসর্জন দিয়ে সংখ্যাগুরুদের সাথে মিশে যাতে হয়। এতকিছুর পরেও এতটাকাল বর্তমান গণতান্ত্রিক সরকারের প্রতি সংখ্যালঘুদের (এভাবেই আমরা পরিচিত) অবিচল আস্থা ছিল। কিন্তু এ আস্থায় টান ধরেছে, খুবই স্পস্ট মনে হচ্ছে, বর্তমান সরকারের আমলেই যেন সংখ্যালঘু নিধন কাজ খুব বেশী দ্রুততার সাথে বেড়েই চলেছে এবং হিন্দুদের সংখ্যা ক্রমে ক্রমেই কমে আসছে ( মানবাধিকার চেয়ারম্যানের রিপোর্ট পড়ে যা বুঝেছি)।এই যদি হয় বাস্তবতা, প্রাণ বাঁচাতে এক সময় হয়তো দলে দলে সংখ্যালঘুরা ধর্মান্তরিত হতে চাইবে, মানের বিনিময়ে প্রাণটা তো বাঁচবে। তখন সুশীলেরা কী বলবেন, সংখ্যালঘুদের আবার ধর্ম কি? যদি তা না বলেন, তাহলে দ্রুত ছড়িয়ে পড়া এই সমস্যার সমাধান কী? বড় বড় বই থেকে বুলি আওড়ালে তো ঘরহীন, সংসারহীন সংখ্যালঘুর সমস্যার সমাধান হবে না। তাদের পোড়া ভিটে থেকে চাল পোড়া গন্ধই বের হবে, সাম্প্রদায়িক দাঙ্গার (শাহরিয়ার কবিরে বলেন, দাঙ্গা কথাটি ঠিক নয়, দাঙ্গা হয় দুই দলে, বাংলাদেশে হয় একতরফা) আগুনে পোড়া চালের ছাই সরিয়ে এক দানা রতনও পাওয়া যাবে না।
মাত্র দুইদিন আগেই ‘আমার ব্লগ’ নামের ব্লগটিকে বাংলাদেশের জন্য নাকি বাজেয়াপ্ত করা হয়েছে, ‘আমার ব্লগের’ তিনজন ব্লগারকে ডিবি পুলিশ ধরে নিয়ে গেছে। হায়, সারা পৃথিবীর মানুষ যখন ইন্টারনেটে গুগল সার্চ করে দুনিয়া জেনে ফেলছে, আমার দেশের অসহায় মানুষ তখন ধর্মীয় জুজু’র ভয়ে সাধারণ একটি ‘ব্লগ’ কে সহ্য করতে পারছে না। পৃথিবীর একদিকে আলো, আমার এদিকটায় শুধুই অন্ধকার ঘনিয়ে আসছে।
কিন্তু অন্ধ হলেই কী প্রলয় বন্ধ থাকে!! যে মুহূর্তে ঘরের বন্ধ জানালাগুলো খুলে দেয়া উচিৎ, সেই মুহূর্তে খোলা জানালাগুলোকেও বন্ধ করে দেয়া হচ্ছে! গুমোট গরম আর অন্ধকার স্যাঁতস্যাঁতে পরিবেশে থেকে দম ফেটে মরে যাওয়ার চেয়ে জানালার গরাদে সূক্ষ্ম তারজালির পর্দা সেঁটে দেয়া অনেক বুদ্ধির নয় কি! বাইরের আলো-বাতাসও এলো, ধূলা-ময়লাগুলো তারজালির পর্দায় আটকে গেলো! কে কাকে বুঝাবে!

No comments:

Post a Comment