Sunday, April 21, 2013

একটি নেমন্তন্ন, যেনো বৈশাখী গরমে এক পশলা বৃষ্টি!

দৈনিক জনকন্ঠ পত্রিকার 'নববর্ষ' সংখ্যায় ' প্রবাসে পহেলা বৈশাখঃ বাঁশী আর আগের মত বাজে না' নামে আমার লেখা একটি নাতি দীর্ঘ ফীচার ছাপা হয়েছে। সেখানে আমি লিখেছিলাম, পহেলা বৈশাখ উপলক্ষ্যে আমরা পর পর দুই শনিবার আনন্দানুষ্ঠান করবো। প্রথম শনিবারের অনুষ্ঠানে আমি যাই নি, টিভিতে ফটিকছড়ির নৃশংস ঘটনার ভিডিও দেখে হতবিহবল হয়ে গেছি, বিক্ষুব্ধ হয়েছি, তাই নীতিগত কারণে পহেলা বৈশাখের অনুষ্ঠানে যাই নি। কিন্তু দ্বিতীয় অনুষ্ঠানটি এককভাবে আয়োজন করেছে মারুফ এবং রান্তা। মারুফ-রান্তা দম্পতিকে আমরা সকলেই খুব পছন্দ করি।  আগের লেখাতেই আমি মারুফ-রান্তা, শাহীন-নিশো, আহাদ-তাসমিন, ফারহান-সনি'র নামোল্লেখ করেছি। রান্তার মা এসেছেন বাংলাদেশ থেকে, এ উপলক্ষ্যেই ওরা সবাইকে নতুন বছরের দাওয়াত দিয়েছে। আমার নিজেরও একটু ব্রেক দরকার ছিল। গত দুই মাসে নানা হতাশা, গ্লানি, ক্ষোভ, ঘৃণা জমে জমে মনটাই বিপর্যস্ত হয়ে যাচ্ছিল। কোন না কোনভাবে একটু ব্রেক চাইছিলাম।  তাই  মারুফ-রান্তার নিমন্ত্রণ উপেক্ষা করার মত বোকামী করিনি। কারণ এই তরুণ দম্পতী শুধু রান্না-বান্না করে খাওয়ায়ই না, ছোট্ট পরিসরে দারুণ উপভোগ্য সাংস্কৃতিক অনুষ্ঠানের আয়োজনও করে। এ ব্যাপারে রান্তার সৃজনী শক্তি, উদ্যম এবং একাগ্রতার প্রশংসা না করলেই নয়। অনুষ্ঠানে পুরষ্কারও দেয়া হয়, এর আগেও ওদের বাড়ীতে এমন আনন্দানুষ্ঠান হয়েছে।

আজকের নিমন্ত্রণের ভ্যেনু ছিল মারুফ-রান্তার অ্যাপার্টমেন্ট, সময় দেয়া হয়েছিল দুপুর সাড়ে বারোটা,  মেন্যু ছিল পোলাও, ডিনের কোরমা, চিকেন কোর্মা, বোনলেস চিকেন কারী, তিন রকমের সব্জী, সালাদ, এবং আরও দু'একটা আইটেম। ডেজার্টে ছিল 'ম্যাঙ্গো লস্যি', বলে রাখি, ম্যাঙ্গো লস্যির চেয়ে লস্যির গ্লাসের ডেকোরেশান ছিল অনেক বেশী আকর্ষনীয়! বাঙালী কখনও টাইম মেইনটেইন করতে পারে না বলে যে দূর্নাম আছে, সেই দূর্নামের ধারা অব্যাহত রাখার জন্যই বোধ হয় আমরা নির্দিষ্ট সময়ের চল্লিশ মিনিট পরে ওদের বাড়ী পৌঁছেছি। গিয়ে দেখি আমাদের আগেই বাকী সবাই উপস্থিত হয়ে গেছে। তবে আমার বেলায় 'সাত খুন মাফ', ওরা সবাই আমাকে দারুণ ভালোবাসে, আন্টি ডাকে, তবে আমার সাথে ওরা বন্ধুর মত আচরণ করে। ওরাও হয়তো জানে, আমি ওদের সবাইকে কত ভালোবাসি। দেরী করে পৌঁছেই 'সরি, সরি' বলে মাথা নীচু করেছি, ব্যস সাতখুন মাফ হয়ে গেছে।

রান্তা বেশ কিছুদিন আগেই আমাকে মেসেজ করেছিল, ওর অনুষ্ঠানে যেন শাড়ী পড়ে যাই, শাড়ীর রঙ যেনো লাল অথবা সবুজ হয়, সাথে আরেকটু যোগ করেছে, যেন খুব সেজেগুজে যাই, ওর আম্মুকে দেখাতে চায়, এখানে ওরা কত আনন্দে আছে। ওদেরকে নিয়ে আম্মু যেনো কোন টেনশান না করে। আমি রান্তার  আকাংক্ষার মর্য্যাদা রাখতে সাধ্যমত চেষ্টা করেছি। আমাকে দেখেই রান্তা খুব খুশী হয়েছে এবং অনুষ্ঠানচলাকালীন সময়ে সকলের ঊদ্দেশ্যে কথাটি বলেওছে যে ওর অনুরোধের ভাষা নাকি আমি ঠিক বুঝতে পেরেছি। আমি খুব খুশী হয়েছি রান্তার খুশী হওয়া দেখে।

খাওয়া -দাওয়া পর্বশেষে রান্তা শুরু করে দিল ওর বিশেষ আয়োজন। প্রথমেই ছোট একটি টেবিলকে সামনে রেখে 'মঞ্চ' বানানো হয়েছে। আগের রাতেই কাগজ কেটে  ফুল বানিয়ে দেয়ালে ডিজাইন করেছে, রান্তার স্বামী, আমাদের প্রিয় মারুফ, যে এ বছর 'আউটস্ট্যান্ডিং পিএইচডি স্টুডেন্ট' পুরষ্কার পেয়েছে স্টেট ইউনিভার্সিটি থেকে, সেই মারুফ খুবই সাবলীল ভঙ্গীতে ল্যাপটপ, সাউন্ড সিস্টেম, আরও কী কী সব তারে প্যাঁচানো ইলেকট্রনিক ডিভাইস ফিট করে দিয়েছে, এরপরেই রান্তা তার অনুষ্ঠান শুরু করেছে। ও প্রথমেই অতিথিদের নাম ধরে ধরে, যার যার চারিত্রিক বা কর্মধারা অনুযায়ী খেতাব দেয়া 'ব্যাজ' সকলের পোশাকে আটকে দেয়ার ব্যবস্থা করেছে। আমার উত্তম কুমারকে দিয়েছে ' এভারগ্রীন' ব্যাজ, ব্যাজ পরিয়ে দেয়ার আগে খেতাবটি সকলের কাছে গ্রহণযোগ্য করে তোলার জন্য দুই লাইন করে মন্তব্যও করেছে। এভারগ্রীন ব্যাজ পরানোর আগে রান্তা বলেছে,

" আঙ্কেল আমার বাবার বয়সী হলেও উনি এখনও খুবই প্রাণবন্ত, আমাদের সকলের সাথে খুবই বন্ধুর মত ব্যবহার করেন, সব সময় হাসিখুশী থাকেন, তাই আঙ্কেলকে 'এভারগ্রীণ' খেতাব দিলাম"। সকলেই দেখলাম, " ঠিক, ঠিক' ভোটে প্রস্তাব পাশ করে দিল। আমার পালা আসতেই আমি চট করে ওর সামনে গিয়ে দাঁড়ালাম, আর অমনি রান্তা হই হই করে বলে উঠলো,
" মিঠু আন্টি, আমি তো এখনও আপনাকে মঞ্চে আসতে বলি নাই, আগে আমাকে বলতে দেন"। কী আর করা , ফিরে এসে সোফায় বসলাম, ততক্ষণে বাকী সবাই হেসে খুন। আমাকে নিয়ে ওরা অনেক মজা করে। বিশেষ করে পিঙ্কী। কলকাতার মেয়ে পিঙ্কী, আমার সাথে ননদ-বৌদি সম্পর্ক, সব সময় আমার 'লেগ পুলিং' করবেই। পিঙ্কীর হাসি থামিয়ে দিয়ে রান্তা শুরু করলো,
" আপনারা সবাই জানেন, মিঠু আন্টি লেখালেখি করে, আমি আন্টির লেখা পড়ি, ইদানিং আন্টি গরম গরম লেখা দেয় ফেসবুকে, সব সময় আন্দোলন মার্কা কথা, তাই আন্টির খেতাব দিছি, ' বিদ্রোহী নারী', সবাই তালি দেন জোরে জোরে"।
ব্যাজ আনতে গেলাম ওর কাছে, ফিস ফিস করে বললাম, বিদ্রোহী না, বলো 'বিপ্লবী'। পটাতে পারলাম না। বিদ্রোহী নারীর খেতাব নিয়ে এভারগ্রীন স্বামীর পাশে এসে বসলাম। উত্তম কুমারের চেহারার দিকে আর তাকাতে সাহস হলো না, কী জানি, ্কখন আবার আমার চেহারায় বিদ্রোহী স্ত্রীর ছায়া এসে পড়ে!

দ্বিতীয় রাউন্ডের খেলা ছিল প্রতিযোগীতা। রান্তার লিস্ট থেকেই রান্তা যাকে যাকে ডেকেছে, শুধু তাকে তাকেই ওখানে পারফর্ম করতে হয়েছে। বিষয়বস্তু ও নির্বাচন করে দিয়েছে। দর্শকদের কাজ ছিল, প্রত্যেকের পারফরম্যান্স খুঁটিয়ে দেখা, অনুষ্ঠান শেষে ভোটের ব্যবস্থা ছিল, দর্শকের ভোটে প্রথম, দ্বিতীয়, তৃতীয় স্থান নির্বাচন করা হয়েছে। রান্তার লিস্টিতে সবার প্রথম ছিল রনি। রনিকে জিজ্ঞেস করা হয়েছে নিউটনের তিনটি সূত্র। উপস্থিত সকলেই ধাঁধায় পড়ে গেছে। আমি তো বিদ্রোহী খেতাব পেয়েছি, তাই নিউটনের তৃতীয় সূত্রটিকেই মনে রেখেছি। রনিকে বলেছি, ' বলো, প্রত্যেকটি ক্রিয়ার বিপরীত প্রতিক্রিয়া আছে"! হা হা হা! মজা হয়েছে, কারো মাথায় আসছিল না, পিঙ্কী ওর আই ফোনে চলে গেছে গুগল সার্চে। পাশে থেকে আহাদ দ্বিতীয় সূত্রটি জোড়াতালি দিয়ে বলে দিয়েছে। সবাই খুব মজা পাচ্ছিল, প্রত্যেকেই প্রত্যেকের লেগ পুল করছিল। কারণ উপস্থিত সকলের মধ্যে ৮০% বুয়েট থেকে এসেছে, বাকীরাও সায়েন্সের স্টুডেন্ট, এমনকি আমিও। যাক, আমার ভাগ্যে এসেছে, একটি গান করার সুযোগ। এক বছর আগেও আমি খুব দরাজ গলায়, খুবই উৎসাহ নিয়ে গান করতাম। এক বছর পরের ঘটনা হচ্ছে, খুব টেনসড থাকি,  গানের স্কেল ঠিকমত ধরতে পারি না,গলা ক্র্যাক করে, সবচেয়ে অবিশ্বাস্য ব্যাপার হলো, গানের কলি ভুলে যাই। কিছুই মনে পড়ে না। তারপরেও প্রতিযোগীতা বলে কথা, হটে আসতে রাজী নই। গেয়ে ফেললাম, হেমন্ত মুখোপাধ্যায়ের সেই বিখ্যাত গান " কতদিন পরে এলে, একটু বসো"। গানটি আমার খুবই পছন্দের গানগুলোর মধ্যে অন্যতম, গানটি শুনলেই মনে হয়, পৃথিবীর কোন এক প্রান্তে আমার অপেক্ষায় কেউ বসে আছে, কেউ আমার প্রতীক্ষায় আছে ভাবলেই বেঁচে থাকার আনন্দ বেড়ে যায়।

তৃতীয়  রাউন্ডে ছিল দম্পতীদের জন্য গেম। দশটি প্রশ্ন স্বামী সম্পর্কে, এমন একটি প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে চারজন নারীর হাতে, আর একই প্রশ্ন 'নিজের' সম্পর্কে, এমন প্রশ্নপত্র দেয়া হয়েছে চার পুরুষের হাতে। প্রশ্ন হাতে নিয়ে আমার মাথা ঘুরে গেছে। আমি তো স্বামীর পছন্দ-অপছন্দগুলো কিছুই জানি না মনে হলো। অযথাই উত্তম কুমারকে নিয়ে বড়াই করি! মনে হচ্ছিল, পরীক্ষার হলে বসে আছি। আমার পাশে বসেই দিপি ভাবী দেখি ফটাফট উত্তর দিয়ে পরীক্ষা শেষ করে খাতা জমা দিয়ে দিয়েছে। আরেক পাশে থাকা নতুন বউ সনি'কে দেখলাম পরীক্ষক রান্তাকে ডেকে প্রশ্ন বুঝতে চাইছে, রান্তাও খুব সিরিয়াস ভঙ্গীতে সনি'কে প্রশ্ন বুঝিয়ে দিয়েছে। নিশো মাঝে মাঝেই আমার দিকে হতাশ নয়নে তাকায়। আর আমি তো কলম তুলেই বসে আছি। আমার স্বামীর 'সকার' এর প্রিয় খেলোয়াড় কে? আমার মাথায় ঘুরছিল শাহবাগ, বঙ্গবন্ধু স্টেডিয়াম, আবাহনী ক্লাবের ছবি। উত্তমের বয়স বিবেচনা করে বসিয়ে দিলাম 'সালাহউদ্দিন' এর নাম।  আরেকটি প্রশ্ন এসেছে, আমার রান্না খাবারগুলোর মধ্যে কোন আইটেমটি আমার স্বামীর কাছে অসহ্য মনে হয়?  উত্তর জানা নেই। ভাবলাম, উত্তম কুমার নিশচয়ই লিখবে, আমার বউয়ের রান্না সব খাবারই ভাল। তাই উত্তর লিখলাম, ' নাথিং'। পরীক্ষার সময় শেষ, আর বাড়তি টাইম দেয়া যাবে না, বলে সবাই চেঁচাচ্ছিল। আমি বলি, প্রশ্ন কঠিন, আরেকটু সময় দাও, ফেল করবো তো। আরেকটা প্রশ্ন ছিল, আমার স্বামীর প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে? আমি অবলীলায় লিখে দিলাম, বারাক ওবামা। কারণ উত্তম কুমার সকালে ঘুম থেকে উঠে বারাক ওবামার নাম নিয়ে, ঘুমাতে যায়ও ওবামার নাম নিয়ে, তাহলে তো প্রিয় ব্যক্তিত্ব বারাক ওবামাই হবে।  একটি প্রশ্ন ছিল, আমার স্বামীর স্কুল, কলেজ, বিশ্ববিদ্যালয় জীবনের মধ্যে কোন জীবনটিকে সে খুব মিস করে? উত্তমের মুখে তার স্কুল জীবনের গল্প শুনিনি, নটরডেম কলেজে পড়ার সময়কার গল্প শুনেছি, বিশ্ববিদ্যালয়ের গল্পও শুনিনি। আমি অবলীলায় লিখে দিয়েছি, কলেজ জীবন।  আমার স্বামী কোন টুথপেস্ট ব্যবহার করতে পছন্দ করে? এই রে! বাজার করি আমি, যা এনে দেই, তাই দিয়েই তো সে দাঁত মাজে। কোন ব্র্যান্ডের পেস্ট যেনো আনি! মনে পড়ছে, গত সপ্তাহে 'কলগেট' এনেছিলাম, ভাবলাম, উত্তমের তো অনেক বুদ্ধি, যেটা দিয়ে এখন দাঁত মাজছে, নিশ্চয়ই সেই পেস্টের নামই লিখবে। লিখে দিলাম 'কলগেট'। উত্তরপত্র টেনে নেয়ার আগ মুহূর্তে উত্তরপত্র জমা দিয়ে দিলাম।

এর মধ্যেই এক রাউন্ড চা খাওয়া হয়ে গেছে। এবার ফল জানানোর পালা। আমি বললাম, " প্রশ্ন অনেক কঠিন ছিল"। নিশো সমর্থণ দিয়ে বললো, " গত পাঁচ বছরের সিলেবাসে এমন কঠিন প্রশ্ন ছিল না"। দিপী ভাবী বললো, " কোথায়, প্রশ্ন তো ভালই ছিল"। বললাম, " গত অনুষ্ঠানে চ্যাম্পিয়ান হয়েছি, আর এই অনুষ্ঠানে জিরো পাব"। নিশো তার স্বামীকে ডেকে বললো, " হানি, ভুল হলে আমার দোষ নেই, প্রশ্ন কঠিন ছিল।' এরপরেই আমার দিকে তাকিয়ে বলল, " আন্টি গতবার তো আমরাও চ্যাম্পিয়ান হয়েছিলাম, যুগ্ম চ্যাম্পিয়ান হয়েছি, এবার যে কী হবে"। রান্তা এবং মারুফ ফলাফল ঘোষণা করতে শুরু করলো।

চার দম্পতীর মধ্যে আমি-উত্তম কুমার সবচেয়ে পুরানো, আর ফারহান-সনি সবচেয়ে নতুন। ফলাফল নতুন দম্পতী থেকে শুরু, ওরা তো মাত্র কয়েক মাস ধরে সংসার শুরু করেছে, তাই ওদের উত্তরগুলো বেশী মিলে নি। এরপর খালেদ ভাই-দিপি ভাবীর পালা। গত অনুষ্ঠানে উনারা মাত্র দুটো উত্তর সঠিক দিয়েছিল। [সেই অনুষ্ঠানে ছিল উলটো। স্ত্রীদের পছন্দ স্বামীরা জানে কিনা! সেই পরীক্ষায় আমি-উত্তম এবং শাহীন-নিশো যুগ্মভাবে জয়ী হয়েছিলাম]। এবার দেখলাম উনারা তিনটি সঠিক, একটি অর্ধ সঠিক উত্তর দিয়েছেন। নিশো-শাহীন দম্পতী আমাদের সকলের কাছেই খাঁটি দম্পতী বলে বিবেচিত। ওরা পাঁচ বছর প্রেম করে চার বছর হলো সংসার করছে। নিশোকে সবাই পছন্দ করে ওর আহ্লাদীপনার জন্য। ওর আহ্লাদীপনাতে দারুণ এক সৌন্দর্য্য আছে। নিশো-শাহীনের সাতটি উত্তর সঠিক হয়েছে। সবশেষে আমাদের পালা। দেখা গেল, পারি না পারি না করেও আমরা পাঁচটি উত্তর সঠিক করেছি।  ভুল উত্তর ছিল, " উত্তমের প্রিয় খেলোয়াড়, ম্যারাডোনা। উত্তমের প্রিয় টুথপেস্ট 'ক্রেস্ট' ( কলগেটের নাম নাকি মনে আসছিল না)। আমার রান্না খাবারের মধ্যে 'বাঁধাকপি' তার কাছে অসহ্য লাগে। সে নাকি 'স্কুল জীবন' মিস করে।( হায়রে! জীবনেও স্কুলের গল্প করলো না) এবং তার প্রিয় ব্যাক্তিত্ব 'উত্তম কুমার' [ সে নাকি ভেবেছে, আমার প্রিয় ব্যক্তিত্ব কে, এটা জানতে চেয়েছে। হুম, এত বড় প্রফেসারও তাহলে প্রশ্ন উলটা বুঝে]।

দ্বিতীয় দফা চা খাওয়া হলো। ভোটাভুটি শুরু হলো। প্রথম রাউন্ডে যে ইনডিভিজুয়াল পারফর্ম্যান্স হয়েছিল, তার উপর ভোটাভুটি। উত্তম কুমারকে ডাকা হলো প্রথম। যে কোন তিন জনকে একটি করে ভোট দিতে হবে। উত্তমের পরে আরও তিন জন গিয়ে ভোট দিয়ে এলো। হঠাৎ দেখি উত্তম কুমার ' সেরেছে, বিরাট ভুল করেছি' বলে উঠে দাঁড়িয়েছে। প্রিজাইডিং অফিসার রান্তার কাছে গিয়ে জিজ্ঞেস করলো, " তোমার আন্টিও কি প্রতিদ্বন্দ্বি নাকি? ওর নাম তো দেখিনি। এখন কী ভুল সংশোধন করা যাবে?" রান্তা ব্যালট পেপারে আমার নামের দিকে আঙ্গুল দিয়ে দেখিয়ে বললো, ' ভোটাভুটি শেষ হলে আপনার আবেদন বিবেচনা করে দেখবো"। রান্তার কথা শুনে উত্তম কুমার বলল, " না না ঠিক আছে, যা দিয়েছি, সেটাই চলুক"। কাছে আসতেই জিজ্ঞেস করলাম, " তুমি আমাকে ভোট দাও নি!! আমি বিশ্বাস করতে পারছি না।" উত্তর দিল, " তোমার নাম সবার নীচে, চোখই যায় নি"।

ভোট গননা শেষে ফলাফল। "তৃতীয় হয়েছেন, আমাদের মিঠু আন্টি, আঙ্কে্‌ আপনি যদি ভুল না করতেন, ফলাফল অন্যরকম হতো। দ্বিতীয় হয়েছে নিশো ভাবী এবং প্রথম হয়েছে সনি। একেক জনের নাম ধরে ডাকবো,  এসে পুরষ্কার গ্রহণ করবেন। প্রথমেই ডাকছি মিঠু আন্টিকে। আন্টির হাতে পুরষ্কার তুলে দিবেন আমার আম্মু"। আমি এত খুশী হয়েছি যে বলার নয়। রান্তার আম্মুকে আমার খুব পছন্দ, বেশী দিন হয় নি উনার স্বামী মারা গেছেন, উনার চেহারার মধ্যে গভীর বিষাদের ছায়া, খুব পর্দানশীল, দারুণ আধুনিক মনোভাবাপন্ন এক নারী। সিলেটের অধিবাসী এই ভাবীর মুখে সিলেটি ভাষা শুনলে মন চলে যায় সুদূর সিলেট-সুনামগঞ্জে, আমার অনেক প্রিয়জনের বাস ওখানে। সব অনুষ্ঠান শেষে দারুণ পরিতৃপ্তি নিয়ে বাড়ী ফিরেছি। বাড়ী ফিরতেই মন চলে গেল উত্তপ্ত রাজনীতির মাঠে। স্মৃতিতে রয়ে গেল দারুণ আনন্দময় পাঁচটি ঘন্টা। রান্তা-মারুফের কল্যাণেই এমন সুন্দর সময় কাটালাম, মনে হলো, এ যেনো বৈশাখী গরমে এক পশলা বৃষ্টি!

No comments:

Post a Comment