Monday, April 22, 2013

মা'কে ছাড়া মেজদার প্রথম জন্মদিন!

সকাল সাতটা বাজতেই আমার মেজদা'কে একটা কল দিয়েছি। আজ বাইশে এপ্রিল, দুনিয়া উলটে যাবে, কিন্তু মেজদাকে ফোন করবোই। তবে সমস্যা হলো, মেজদার ফোনে শুধু " আমার সারাটা দিন, মেঘলা আকাশ, বৃষ্টি তোমাকে দিলাম" বাজতেই থাকে। ওপাশ থেকে মেজদা 'হেলো' বলে না। যদি এই নিয়ে অভিযোগ করি, তাহলে বলবে,

"মিঠু, ইচ্ছে করে ফোন ধরি নি, এই গানটা তো তোর খুব প্রিয়, তাই ভাবলাম, গানটা শুনতে থাক।"  আর  নাহলে  বলবে, " মিঠু,  আমার ফোনটায় সমস্যা আছে। অনেকেই বলে, ফোন করলে আমি ফোন ধরি না, কথাটা ঠিক না রে!  আমি তো কোন রিং শুনতে পাই না"।

আমার জবাবও রেডী থাকবে,
" মেজদা,  মনে আছে তোমার, মা তোমাকে ফোন করতো, তুমি ফোন না ধরলেই মা বলতো, " তোর  আকাশের  মেঘ কোনকালেই কাটবে না! ফোন করলে ফোন ধরে না, শুধু মেঘলা আকাশ মেঘলা আকাশ করে"!! মেজদা আমার কথা শুনে হাসতে থাকবে, মা'র কথাটা রিপিট করবে, আবার হাসবে। তারপরই মন খারাপ করবে, বলবে,
" এইবারই প্রথম মা'কে ছাড়া জন্মদিন। মিঠু, এই ফোন নিয়ে যে মা কত কথা শুনাত। একদিন কী হয়েছে শোন, মা যখন খুব অসুস্থ, আমাকে কাছে ডাকছে,  আমার হাতে ৫,০০০ টাকা দিয়ে বলে, এই টাকাটা তোরে দিলাম। টাকাটা দিয়ে তুই একটা নতুন ফোন সেট কিনে ফেল। আমি তোরে উপহার দিলাম"।

সাথে সাথে আমাদের দুই ভাই বোন কিছুক্ষণ নীরব হয়ে থাকবো, একই সাথে একই দৃশ্য কল্পনা করবো।  গত ৫ই অক্টোবার ছিল মায়ের জন্মদিন। আমি আর মেজদা, দুজনে একসাথে সকালবেলাতেই হসপিটালে গিয়ে হাজির হয়েছি। আমি নেভী ব্লু জমিন, লালা জড়িপাড়ের তাঁতের শাড়ী পরেছি, কপালে বড় লাল টিপ, আমার সাজ দেখে মেজদা প্রশ্ন তোলার আগেই বলে দিলাম, " আজকে মা'র জন্মদিন, আমাকে মা সেই কোন ছোটবেলা থেকে শাড়ী পরিয়ে রাখতো, সালোয়ার কামিজ পরতেই দিত না, গত দুই দিন সালোয়ার কামিজ পড়ে এসেছি, এইটাই মায়ের শেষ জন্মদিন, আজকে মায়ের সামনে মায়ের পছন্দমত সাজ করেই যেতে চাই, সুন্দর দৃশ্য দেখে যাক মা"!

মেজদার মনে পড়ে গেল, মা ৫,০০০ টাকা দিয়েছিল, টাকাটা মা'কে ফিরিয়ে দেয়ার জন্য মেজদা অনেক কৌশল খুঁজছিল, কিন্তু মত বদলে ফেললো,  আমাকে বলল,
" মিঠু, তোর ফোনটা আমাকে একটু দিবি? মা'কে দেখাব, বলবো, মা তোমার টাকা দিয়ে নতুন ফোন কিনলাম। মা'কে নিয়ে ব্যস্ত ছিলাম, নতুন একটা সেট কেনার সময়ই পাই নি রে! ঠিকই বলছিস, মা'কে একটু  খুশী করি তোর ফোনটা দেখিয়ে। বিকেলে মার্কেটে গিয়ে মায়ের টাকাটা দিয়েই একটা ফোন সেট কিনবো"।

আমরা দুই ভাই বোন দশ মিনিটের অনুমতি নিয়ে আইসিইউতে গেলাম, মায়ের দেহ বিকল, কিন্তু পুরোপুরি  জ্ঞানে আছে। ভাই বোন মিলে ডাক দিলাম, " মা, শুভ জন্মদিন!"
মা হঠাৎ করেই খুব অস্থির ভঙ্গীতে মুখের ভেতরে থাকা মোটা নলটিকে কামড়ে ছিঁড়ে ফেলতে চাইছিল, জিভ দিয়ে ঠেলে বের করে দিতে চাইছিল। কিছু বলতে চায় সামনে দাঁড়িয়ে থাকা অসহায় ছেলে মেয়ে দুটিকে।  আমি মা'কে শান্ত করার চেষ্টা করলাম, মেজদা বোকার মত কান্না শুরু করে দিল।  মেজদাকে আমরা কেউ কখনওই কাঁদতে দেখিনি। ছাত্রাবস্থায় মেজদা খুব চঞ্চল ছিল, পড়ালেখায় ফাঁকীও দিত, ক্লাসের বইয়ের নীচে লুকিয়ে রেখে গল্পের বই পড়তো। গল্পের বইগুলোও আবার তেমনই ছিল, স্বদেশী আন্দোলনের বই, মায়ের সংগ্রহ ছিল সব। লেখাপড়া ছাড়া আমাদের বাবা আর কিছুই বুঝতে চাইতেন না, তাই স্কুল থেকে নালিশ আসলেই  বাবা  মেজদাকে বেদম প্রহার করতো,  আমি হাউ মাউ করে কাঁদতাম আর বলতাম, " বাবা, মেজদা মরে যাবে, আর মেরো না, আর মেরো না"! মেজদা কিন্তু একটুও কাঁদতো না, পিটানিগুলো কায়দা করে ঠেকাতে চেষ্টা করতো। হয়তো স্বদেশী আন্দোলনের বই পড়ে 'মাইর ঠেকানো' কায়দা আয়ত্ত করে ফেলেছিল।
পরে মেজদাকে নিয়ে আমরা খুব হাসাহাসি করতাম।  আমার মেজদাটা এতই ভাল যে আমাদের সকলের অত্যাচার হাসিমুখে মেনে নিত। শুধু তো বাবা অত্যাচারী ছিলেন, তা-ই নয়, মায়ের অত্যাচার ছিল আরও মারাত্মক!  মেজদার উপর ক্ষেপে গেলেই  মা  মেজদাকে ' মোশতাক খন্দকার'  বলে গালি দিত। আমরা অনেক বড় হয়েও 'মোশতাক খন্দকার' নিয়ে হাসাহাসি করতাম।
'মোশতাক খন্দকার' যে কী ভয়ানক গালি, এটা আমি ততটা না বুঝলেও মেজদা বুঝতো। চঞ্চল প্রকৃতির কিশোর, চঞ্চলতার জন্য পিটানি খেতে পারে, তাই বলে এমন একটি কুখ্যাত লোকের সাথে তুলনা!!! মেজদার মুখটা মলিন হয়ে যেত, আমি মেজদার খুব কাছের মানুষ, দুই ভাইবোনে ভাবও ছিল, কামড়া-কামড়ি সম্পর্কও ছিল। একবার তো আমি সত্যি সত্যি মেজদাকে কামড়ে দিয়েছিলাম। সেদিন মায়ের প্রতিক্রিয়া দেখে বুঝেছিলাম, যতই একমাত্র কন্যা হই না কেন, মায়েদের টান থাকে পুত্র সন্তানের প্রতি বেশী। ভাই বোন ঝগড়া লেগেছি, মেজদা আমার হাঁটু বরাবর এক লাথি মেরেছিল, আমাকে হয়তো  মহাভারতের দূর্য্যোধন ভেবেছিল, আর নিজে সেজেছিল ভীম, গদা না পেয়ে লাথিতেই হাঁটু ভেঙ্গে ফেলার উপক্রম করেছিল। যন্ত্রণা সহ্য করতে না পেরে একেবারে মেজদার বাহুতে দিয়েছি মরণ কামড়! আহারে! আমার ভাইটা প্রস্তুত ছিল না এমন প্রতি আক্রমনের, এমন জোরে চীৎকার দিয়েছিল, সেই চীৎকারের আওয়াজ এখনও, প্রায় ৩৬ বছর পরেও আমার মনে আছে। আরও মনে আছে, মা আমার যন্ত্রনার প্রতি বিন্দুমাত্র ভ্রূক্ষেপ না করেই মেজদার হাতে খুঁজে পেল, দাঁত বসে গেছে, রক্ত বের হচ্ছে ক্ষত স্থান থেকে। মা কী এক ঘৃণার দৃষ্টিতে আমার দিকে তাকিয়েছিল, আমি আজও ভুলিনি। মা কাঁদছিল মেজদার জন্য, আর আমি কাঁদছিলাম আমার প্রতি মায়ের অবজ্ঞার জন্য!  কত কথাই যে মনে পড়ে যায়।
মেজদাকে ইশারায় কান্না থামাতে বললাম। মেজদা চোখ মুছে গলার স্বর পালটে মা'কে বলল,
" মা, তুমি আমাকে ৫,০০০ টাকা দিয়েছিলে, একটা ফোন কিনতে। এই যে দেখো, ফোন কিনেছি" বলে আমার ফোনটা দেখালো।  মাথা কাত করে মা 'আচ্ছা' ভঙ্গী করলো, দুই চোখের কোল বেয়ে জল পড়তে লাগলো। মা'কে সহজ করতে চাইলাম, বললাম,
" মা, তোমার কী মনে আছে, আজ তোমার কততম জন্মদিন?"
মা খুব একটা উৎসাহ দেখালেন না, অথবা যন্ত্রণায় অস্থির ছিলেন বলে খেয়াল করতে পারলেন না। আমরা দুই ভাই বোন মিলে আবার চেষ্টা করলাম মা'কে সহজ করতে। বললাম, " মা, আজ কী তোমার পঁচাত্তর বছর, নাকি চুয়াত্তর বছর, নাকি ছিয়াত্তর বছর বয়স পূর্ণ হলো", 
মা,  নল গোঁজা মুখেই বোবাদের মত ভঙ্গীতে বলল, " পঁচাত্তর"। ভাই বোন খুব খুশী হওয়ার অভিনয় করলাম। মায়ের মাথায় হাত বুলিয়ে দিলাম, মা দুই চোখ বুজে ফেললো, চলে গেল চেতনার গভীর অতলে।

আমরা  এই দুই ভাই বোন কেউই মায়ের গায়ের রঙ পাইনি, বাবার মত শ্যামলা হয়েছি।  আমার বড়দা আর ছোট ভাই পেয়েছে মায়ের গায়ের রঙ। মেজদাকে অবশ্য আমার চেয়ে একটু বেশী কালো দেখা যেতো, তাই মা মেজদাকে  মাঝে মাঝে ঠাট্টা করে ডাকতো 'কালিদাস'।  রেগে গেলে বা ঝগড়া লাগলে আমি মেজদাকে 'মেজদা' না ডেকে ডাকতাম ' কাইল্লা'। কাইল্লা বলার সময় নিজের চেহারার দিকে তাকাতাম না এবং কোন এক অজানা কারণে কেউই আমাকে 'কালি' বলতো না। এমন কী মেজদাও কোনদিন আমাকে কালি বলে পালটা প্রতিশোধ নিত না।  আমাদের জন্ম তারিখেও ঊনিশ আর বিশ তফাৎ! আমার জন্মতারিখ ২১, মেজদার ২২। দুজনেই পিঠোপিঠি ভাই বোন, তাই খাতিরও  প্রায় সমান সমান, হয়তো আমি মেজদাকে ভালোবাসি বিশ, মেজদা আমাকে ভালোবাসে ঊনিশ। ঝগড়া-ঝাঁটিও ঊনিশ-বিশ পরিমানেই হয়। আমি ঝগড়ায় বিশ, মেজদা ঊনিশ। গল্পের বই পড়ার বেলায় মেজদা অবশ্য আমার থেকে অনেক এগিয়ে। ছোট বেলায় চুরী করে বই পড়তো, আমি আর ছোট ভাই পাহাড়া দিতাম, বাবা বা মায়ের পায়ের আওয়াজ পেলেই মেজদাকে ইশারা করে দিতাম। মেজদা শুধু চুরী করে বইই পড়তো না, চুরী করে দুধের সর খেয়ে ফেলতো, বাজারের ফর্দ থেকে পয়সা চুরী করতো, মায়ের কাছে ধরা পড়ে যেত, তারপরেও করতো। খুব বেশী না, হয়তো এক আনা কী  দুই আনা। বড় দাগে চুরী করেছিল একবার বৈশাখী মেলার সময়। আমি ছোটবেলায় ছিলাম হাড়কিপ্টে, পারলে পিঁপড়ার মুখ থেকে চিনি কেড়ে রেখে দিতাম, এক পয়সা, দুই পয়সা করে জমিয়ে জমিয়ে কাঁচের বোয়াম ভরে ফেলেছিলাম। মায়ের কাছে ' টিনের ট্রাঙ্কে গোডরেজ তালার ভরসায় বোয়ামটি রাখা হয়েছিল। দুর্গাপূজায় খরচ করব বলে রেখে দিয়েছিলাম। একদিন মা ট্রাঙ্ক খুলে দেখে বোয়াম পুরোটাই খালি। বিশ টাকা জমেছিল, মেজদা সব সাফা করে দিয়েছে। এর জন্য কী মার খেয়েছিল মেজদা? মনে পড়ে না।

এই গল্পগুলো আমাদের দুই ভাইবোনেরই মনে আছে। দুজনেই মায়ের প্রখর স্মৃতিশক্তি পেয়েছি।  মায়ের বাবা , মানে আমাদের দাদু ছিলেন প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী, ৯৫ বছর বয়সেও আইনের ধারাগুলো বলতে পারতেন, আমাদের মা ৭৫ বছর বয়সেও মহাভারত পুরোটাই বলতে পারতেন। ইদানিং যদি মুক্তিযুদ্ধ সময়কালীন দুই একটি ঘটনার কথা জিজ্ঞেস করতাম, মা অবশ্য বলতেন , " কী জানি, এখন অনেক কিছুই ভুলে গেছি"। মেজদা'কে যদি জিজ্ঞেস করি, মেজদাও বলে, " এখন অনেক কিছু ভুলে গেছি মিঠু"। সেদিন মেজদাকে দিয়েছি এক প্রচন্ড ধমক, বলেছি, " সবাই যদি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি ভুলে যাও, তাহলে কী করে হবে? তোমাদের এই অপরাধের ক্ষমা নেই। আমার অনেক কিছুই মনে আছে, আমার একটু সাহায্য চাই, মেজদা আমাকে সাহায্য করো। রুটগুলির নাম উলট পালট মনে আছে, ঘটনা বলতে হবে না, শুধু রুটগুলোর নাম বলে দাও"।

জবাব পাই, " মিঠু, তিন বছর আগে যে অ্যাকসিডেন্ট হলো, মাথায় তো প্রচন্ড আঘাত পেয়েছিলাম, এরপর থেকে আমার অনেক কিছুই আর মনে থাকে না।"

বললাম, " মনে পড়াতে হবে, আমি মুক্তিযুদ্ধে দেখা ঘটনাগুলো লিখে রাখতে চাই। মেজদা, দুইটা পায়ে পড়ি, প্লীজ, একটু মনে করার চেষ্টা করো, তুমি সব সময় এক ধরণের হীণমণ্যতায় ভুগো যে তোমাকে কেউ ভালোবাসে না। কথাটা ঠিক না, মেজদা, যদি আমি মুক্তিযুদ্ধের স্মৃতি নিয়ে কিছু লিখি, তুমিই হবে সেই কাহিণীর মূল নায়ক"।
এবার একটু নরম হয়েছে, বলেছে, ঠিক আছে, চেষ্টা করে দেখবো। তবে বেশী ভাবতে পারি না, মাথা ব্যথা করে। এরপরই সে যোগ করলো,
" মিঠু, তোদের টিভিতে কী চ্যানেল '৭১ দেখা যায়?"
-হ্যাঁ, দেখা যায়।
-একটা ভিডিও দেখালো সেদিন, আওয়ামীলীগের চারটি কর্মীকে কীভাবে পিটিয়ে, কুপিয়ে মেরে ফেললো। বইন রে! কী হবে এগুলো  নিয়ে লেখালেখি করে!
-কী হবে জানিনা, নিজের বিবেকের কাছে পরিষ্কার থাকবো।


চট্টগ্রাম থেকে প্রকাশিত ম্যাগাজিন, 'দখিনা' তে আমি নিয়মিতভাবে লিখছি। 'দখিনা'র সম্পাদক  ভ্রাতৃপ্রতিম রাফসান গালিবের অনুমতিক্রমে মুক্তিযুদ্ধের শৈশবকালীন স্মৃতি নিয়ে ধারাবাহিকভাবে লিখতে শুরু করেছি। রাফসানকে বলেছি, আমার লেখাটি হবে পুরোপুরি একটি শিশুর চোখ থেকে দেখা। মুক্তিযুদ্ধের সময় আমি নিতান্তই শিশু ছিলাম, কিন্তু মুক্তিযুদ্ধের দিনগুলো এমনই ঘটনাবহুল ছিল যে স্মৃতিতে জ্বলজ্বল করে জ্বলছে। আমার খুব ইচ্ছে, শিশুর স্মৃতি থেকে লিখলেও, লেখাটি যেন বিশ্বাসযোগ্য হয়ে উঠে, তা নিশ্চিত করা। এ ব্যাপারে আমাকে সবচেয়ে বেশী সাহায্য যে করতে পারে, সে আমার মেজদা। অসম্ভব প্রখর স্মৃতিশক্তির অধিকারী সে। মুক্তিযুদ্ধের সময় সে ছিল নয় বছর বয়সী এক বালক। যে দুটি পর্ব আমি লিখেছি, সেখানে আমার মেজদা হচ্ছে মূল চরিত্র।

মেজদা, তোমাকে কী যে ভালোবাসি! আমরা সবাই তোমাকে ভালোবাসি। মায়ের মৃত্যুতে তুমি একেবারেই স্তব্ধ হয়ে গেছো। ব্যাপারটি আমাদের সকলকে খুব কষ্ট দিচ্ছে। তুমি মায়ের সাথে আষ্টে-পৃষ্ঠে জড়ায়ে ছিলে, মায়ের বকা খেতে হাসিমুখে, মায়ের যত আবদার পূরণ করতে হাসিমুখে।  সময় নেই- অসময় নেই, মা তোমাকে ফোন করে আসতে বলতো, তুমি চলে আসতে। কয়েকদিন পর পর  প্রায় অচল, নোংরা টাকার নোট তোমাকে দিত, ব্যাঙ্ক থেকে বদলে ঝা চকচকে নোট এনে দিতে, তুমি তাই করে দিতে, সবই হাসি মুখে। মা যখন তোমাকে 'মোশতাক খন্দকার' বলে বকা দিত, তখনও তোমার মুখে হাসি লেগেই থাকতো, বিষন্ন হাসি। তোমাকে তো মা ঠাট্টা করে মোশতাক খন্দকার বলতো, মোশতাক খন্দকারের ভাবী ছিলেন মায়ের সহকর্মী, খন্দকার আপা। সেই খন্দকার আপা স্কুলে এসে সবার কাছে খন্দকার মোশতাকের নামে বিচার দিত। মোশতাক খন্দকারের চাপা চিমসে ছিল, তোমার যখন উঠতি বয়স, তখন  তোমারও দুই গালে হাড় উঁচু হয়ে বের হয়ে থাকতো, তখনই মা তোমাকে দেখে বলতো,

" এই যে, খনকার সাব আসছে। আর মানুষ পাইল না, আমার ছেলে হইছে চোরা খন্দকারের মত দেখতে"। আমি তখন প্রতিবাদ করতাম, " মা, খন্দকার মুশতাকতো খুনী, বঙ্গবন্ধুকে মেরে ফেলছে, মেজদা তো কিছু করেনি, তাহলে কেন ্মেজদাকে এই চোরের সাথে তুলনা দিবে?" মা মিটিমিটি হাসতো।  তুমিও হাসতে, তবে হা হা করে হাসতে! সেই তুমি হাসতে ভুলে গেছো। এটা ঠিক নয় মেজদা। মা কিন্তু সবই দেখছেন, তোমার মলিন মুখ দেখলে মায়ের কষ্ট হবে, ঠিক যেমন কষ্ট পেয়েছিল তোমাকে কামড়ে দিয়েছিলাম দেখে, মা আমার সাথে অনেকদিন কোন কথা বলে নি। মেজদা, তোমাকে আমরা সবাই ভালোবাসি। আমরা মনের ভাব প্রকাশ করতে পারি না ঠিকমত, তাই মুখ ফুটে বলতে পারিনা, " মেজদা তোমাকে আমরা ভালোবাসি"। কিন্তু ভালো যে বাসি, তা পোস্টেড ছবিগুলোর দিকে তাকালেই বুঝবে। কত যত্ন করে রেখেছি ছবিগুলো।

 মা নেই, মা'কে ছাড়া তোমার প্রথম জন্মদিন! জানি, তোমার ভেতর ক্ষয়ে যাচ্ছে, কিন্তু আমরাতো আছি, আমরা থাকবো আজীবন একইভাবে, পুরানো স্মৃতি নিয়েই কাটাবো সামনের দিন!
তোমার আজকের দিন শুভ হোক, তোমার কালকের দিন শুভ হোক, তোমার বাকী জীবন সুখের হোক!
শুভ জন্মদিন মেজদা!!!!!!!!!!

No comments:

Post a Comment